ফিলিস্তিনের দুর্গতির কারণ অনুসন্ধান: উত্তরণ কোন পথে? – সাইয়েদ আবুল হাসান আলি নদভি ও মুফতি মুহাম্মদ তাকি উসমানি

finding-the-cause-of-palestine-plight-how-to-recover

Date

Author

Blog Duration

22 minutes

সাইয়েদ আবুল হাসান আলি নদভি

ওহান

মুসলিম জাতির দুর্গতি বেড়েই চলেছে। চারিত্রিক অবনতিও ক্রমশ বেগবান হচ্ছে। সবরকম কাজেই বিশৃঙ্খলা ও পরিকল্পনাহীনতা প্রকট হচ্ছে। কম-বেশ অতীতেও এ সমস্যা ছিলো, তবে এতোটা ভয়ংকর কখনো নয়।। হিজরি চতুর্দশ শতাব্দীর শুরুর দিক তথা ইংরেজি উনিশ শতকের শেষভাগে এসেই তারা রীতিমতো এক নিঃস্ব জাতিতে পরিণত হয়েছে , যাদের শরীরে কোনো আত্মা-হৃদয় এমনকি রক্তও যেনো নেই আর। মুসলিম জাতি ছিলো একটি বিশাল অট্টালিকাসদৃশ। জীর্ণ খুঁটি আর ক্ষয়ে যাওয়া কাঠের টুকরো নিয়ে কোনোরকমে যা আজ দাঁড়িয়ে আছে। মানুষকে এটি আশ্রয় দিচ্ছে ঠিক, তবে দূর থেকে তাদের শঙ্কিতও করছে। এভাবেও বলা যায়- এরা ছিলো একটি বিশাল বটগাছের মতো, যার শেকড়গুলো একটি আরেকটিকে গিলে ফেলেছে। প্রধান শেকড়েও ধরেছে পচন। সামান্য সান্তনা হলো- এখনো তা উপড়ে পড়ে নি।

মুসলিম দেশগুলো পরিণত হয়েছে পরিত্যক্ত সম্পদে, যে যেভাবে পারছে তুলে নিয়ে যাচ্ছে, বাধা দেওয়ার যেনো কেউ নেই। হিং¯্র ডাকাত আর লোভী চোরেরা ইচ্ছামতো লুটপাট চালাচ্ছে। কিছুতেই কিছু রোধ করা যাচ্ছে না। এসবের মধ্য দিয়ে নবী কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ভবিষ্যদ্বাণীও পূর্ণরূপে সামনে আসছে।

নবীজি ইরশাদ করেন-

কিছুদিনের মধ্যেই তোমাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন জাতিকে ডাকাডাকি করা হবে যেমন আহারকারীদের থালার দিকে ডাকাডাকি করা হয়।’ সাহাবীদের মধ্যে একজন জিজ্ঞেস করলেন, আমরা সেদিন সংখ্যায় কম থাকায় কি এমনটি হবে? নবীজি বললেন, ‘সেদিন তোমরা বরং সংখ্যায় প্রচুর থাকবে; তবে তোমরা হবে ¯্রােতে ভাসতে থাকা খড়কুটোর মতো। আর নিশ্চয় আল্লাহ তায়ালা তোমাদের শত্রুদের হৃদয় থেকে তোমাদের ভয় কেড়ে নেবেন এবং তোমাদের অন্তরে ‘ওহান’ ঢেলে দেবেন।’ আর একজন তখন জিজ্ঞেস করলেন, আল্লাহর রাসূল, ‘ওহান’ কী? তিনি বললেন, ‘দুনিয়ার ভালোবাসা এবং মৃত্যুর ভয়’। -আবূ দাউদ : ৪২৯৯

মুসলিম জাতির দুর্গতি

বিগত দুই শতকে মুসলমানদের এমনতর হালতের আর উন্নতি হয় নি; বরং আরো খারাপের দিকে গেছে। এমনকি উনিশ শতাব্দীতে তাদের ওপর দৃশ্যত ভদ্র তবে আচরণে বর্বর ও লেবাসধারী খৃস্টান ইউরোপ হামলা করে বসলো। প্রতিরোধের বদলে তারা তখন নিজ দেশের চাবিগুলো তুলে দেয় খৃস্টানদের হাতে। ছেড়ে দেয় বিশ্ব-নেতৃত্বের আসন।

এ সময় মুসলমানরা নৈতিক অবক্ষয়ের সে স্তরে পতিত হয় যাতে এমন ব্যক্তির অভাব ছিলো না, স্বজাতির সঙ্গে যারা বিশ্বাসঘাতকতা করতে পারে। ব্যাপার তেমনই ঘটেছিলো। এরা নামমাত্র মূল্যে বিদেশিদের কাছে নিজ দেশ বিকিয়ে দিয়েছিলো। শত্রুবাহিনীতে ঢুকে গিয়েছিলো রাজাকার হিসেবে। নিজ দেশের কোষাগার উন্মুক্ত করে দিয়েছিলো বিদেশি প্রভুদের খুশি করতে।

প্রাচ্যের হামলার চেয়েও পাশ্চাত্যের এ হামলা ছিলো তীব্র, প্রভাব বিস্তারকারী ও ব্যাপকতর। ফলে তাদের হৃদয়ে মিটিমিটি জ্বলতে থাকা প্রতিটি অঙ্গার নিভে যাওয়ার উপক্রম হলো, কয়েক শতাব্দীর লাগাতার ঝড়-ঝাপটাও যেগুলোকে নেভাতে পারেনি। যা ছিলো ছাইয়ের ভেতরে লুকোনো- একবার আড়াল হয় তো আরেকবার জিহ্বা বের করে।

তাদের বুদ্ধিজীবীরা মুসলিম-হৃদয়ে সুপ্ত শক্তি নিয়ে গবেষণা করে। তারা জানতে পারে এদের শক্তি ও প্রেরণার প্রধান উৎস ঈমান। ইতিহাসের পাতা ঘেঁটে তারা আরো দেখেছে অতীতে এ ঈমান কী কী করেছে! পৃথিবীকে কী বিস্ময় আর চমক উপহার দিয়েছে! আর ভবিষ্যতই-বা তা কী উপহার দিতে পারে। সবকিছু বিবেচনা করে তারা সিদ্ধান্তে আসে এবং মুসলমানদের বিরুদ্ধে লেলিয়ে দেয় দু’রকমের শত্রু, যা এদের জন্য তাতারি ও মঙ্গোলীয়দের চেয়ে, এমনকি মহামারীর চেয়েও ধ্বংসাত্মক ও ভয়াবহ হিসেবে প্রমাণিত হয়।

মুুসলিম জাতির অন্তরে ওরা সৃষ্টি করে সন্দেহ। নড়বড়ে করে দেয় বিশ্বাসের ভীত। মানুষকে দুর্বল ও ভীরু বানানোর জন্য এরচেয়ে কার্যকর কোনো অস্ত্র হয় না, যাকে আমরা মানসিক বশ্যতা বা দাসত্ব বলে থাকি। আজকাল লেখকরা একে বলেন থাকেন ওহভবৎরড়ৎরঃু ঈড়সঢ়ষবী। মুসলমানরা ভেতরে ভেতরে হীনতা ও দুর্বলতা অনুভব করতে শুরু করে। তারা হেয় মনে করতে থাকে নিজেদের ধর্ম, সংস্কৃতি ও সভ্যতাকে। নিজস্ব ঐতিহ্য ও কালচার চর্চায় বোধ করে লজ্জা ও সংকোচ। মুসলমানরা বিশ্বাস করতে থাকে ইউরোপীয়রা তাদের চেয়ে উন্নত। সর্বক্ষেত্রে। ভালো যা আছে সব তাদের মধ্যেই। রুচিশীল ও উন্নত সবকিছু আছে একমাত্র পাশ্চাত্যেরই। ইতিহাসের কোনো বাঁকে তাদেরকেও যে নিদারুণ পরাজয় ও অসহায় আত্মসমর্পণে বাধ্য হওয়ার পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছিলো এবং হতে পারেও- তা মুসলমানরা অবিশ্বাস করা শুরু করলো।

শূন্য হৃদয়

মুসলিম-মানসে যখন এই দাসসুলভ মনোবৃত্তি গেড়ে বসেছে, বস্তুত তখনই তার অপমৃত্যু ঘটেছে। যদিও আমরা তাকে চলাফেরা করতে দেখি। স্বাভাবিক পানাহার ও জীবনযাপন করতে দেখি। এ পর্যায়ে মুসলমানদের বস্তুপূজা এবং দুনিয়াকে ভালোবাসার পশ্চিমা কৃষ্টি ও পাশ্চাত্য দর্শনের রোগ পেয়ে বসলো। ক’দিনের লাভের পেছনে ছোটাছুটি এবং ব্যক্তিস্বার্থ ও জাগতিক লাভকে নৈতিকতা ও চারিত্রিক মূল্যবোধের উপর অগ্রাধিকার দেওয়া মূলত ইউরোপীয়দের বৈশিষ্ট্য। এই মানসিকতা ও চরিত্রই মুসলমানদের আল্লাহর পথে জিহাদ ও বিশ্বজুড়ে তাঁর কালেমা উড্ডীন করার জন্য জীবন উৎসর্গ করা, কষ্ট সহ্য করা, ভয়-ভীতি ও ক্ষয়-ক্ষতি উপেক্ষা করা এবং বিশুদ্ধ আদর্শ ও মহান আকিদার জন্য কোরবান হওয়ার পথে প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়ায়।

এসবের কারণে মুসলিম জাতির মধ্যে এমন

 

এক প্রজন্মের উদ্ভব ঘটে, যাদের মস্তিষ্ক আলোকিত হলেও হৃদয় অন্ধকারাচ্ছন্ন, যাদের অন্তর পুরোপুরি শূন্য, ঈমান বড়ই দুর্বল, যাদের মধ্যে দীনদারি, ধৈর্য, উচ্চ বাসনা ও খোদাভীতির বড় অভাব। এরা দুনিয়ার বিনিময়ে নিজেদের দীন এবং বর্তমানের বিনিময়ে ভবিষ্যত বিকিয়ে দেয়ায় পিছপা হয় না। ক্ষুদ্র স্বার্থ চরিতার্থ করতে গিয়ে, সামান্য ক্ষমতা-সম্মান ও পদ-পদবির লোভে স্বজাতি ও স্বদেশকে জলাঞ্জলি দিতে দ্বিতীয়বার ভাবে না। নিজেদের ওপর, নিজেদের জাতির ওপর এদের মধ্যে আস্থার ঘাটতি প্রচ-রকম। সম্পূর্ণরূপে এরা পরজীবী ও পরনির্ভর।

আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন-

‘এবং যখন তুমি তাদের প্রতি তাকাবে, তাদের শরীর তোমাকে মুগ্ধ করবে। আর যদি তারা কথা বলে তুমি তাদের কথা শুনবে। তারা দেয়ালে ঠেস দেয়া কাঠের মতোই। তারা মনে করে প্রতিটি আওয়াজই তাদের বিরুদ্ধে।’ -সূরা মুনাফিকুন, আয়াত ০৪।

এই বিভ্রান্ত প্রজন্মটিই মুসলমানদের মাঝে ভয় ও ভীরুতা ছড়িয়ে দিয়েছে। এরা মুসলমানদের আল্লাহ-ভরসা থেকে সরিয়ে এনেছে। তারপর নিজেদের উপর থেকে আস্থা হারিয়ে পরনির্ভর হতে, পরের

কাছে হাত পাততে এবং বিপদে তাদের সাহায্যপ্রার্থী হতে শিখিয়েছে।

এরা নিভিয়ে দিয়েছে মুসলিম-মানসে সুপ্ত আল্লাহর পথে লড়ার আবেগ-শিখা ও দীনের তেজ। আর এ আবেগের উন্মত্ততাকে বদলে দিয়েছে নিষ্প্রাণ দেশাত্ববোধ ও ঝিমিয়ে পড়া জাতীয়তাবাদে। যে উন্মত্ততা সমাধি থেকে তুলে এনে জ্ঞানকে দান করেছে পুনর্জীবন এবং বুদ্ধিকে দিয়েছে বন্দিদশা থেকে মুক্তি। যে উন্মত্ততা হাজার বছর ধরে বুদ্ধি ও জ্ঞান যা করতে পারে নি তা করে দেখিয়েছিলো। এই প্রজ্ঞাসম্পন্ন পাগলামিকে ওরা দুর্বল ও অসম্পূর্ণ বুদ্ধিতে রূপান্তর করে দিলো, যে বুদ্ধি উপলব্ধি করতে জানে শুধু বাধা আর প্রতিবন্ধকতা।

আরববিশ্বের জন্য লাঞ্ছনা

পথশিশু

চিন্তা-চেতনা ও মন-মানসিকতার এ বিশাল পরিবর্তন নগ্ন হয়ে ধরা পড়ে ফিলিস্তিন-যুদ্ধের দৃশ্যগুলোতে, রুহ ও ঈমানের নিঃস্বতায়। বিংশ শতাব্দীতে এ ছিলো আরববিশ্বের জন্য এক লাঞ্ছনা ও অপমান। যেমন তারা সপ্তম হিজরি তথা ইসলামের আবির্ভাবের মধ্য পর্যায়ে সম্পূর্ণ ব্যর্থ ও পরাজিত হয়েছিলো তাতারি বাহিনীর বিরুদ্ধে।

ফিলিস্তিনের এ যুদ্ধে সাত সাতটি আরবরাষ্ট্র জায়নবাদী ইহুদিদের মোকাবেলায় জোট বেঁধেছিলো। একাট্টা হয়েছিলো তারা আরবের পবিত্রতম ইসলামি ভূখ-, মুসলমানদের প্রথম কিবলা বাইতুল মুকাদ্দাস রক্ষায় এবং আরব রাষ্ট্রসমূহ ও আরব উপদ্বীপের উপর ইহুদিবাদের হুমকি মোকাবেলায়। হ্যাঁ, ফিলিস্তিনযুদ্ধ ছিলো জীবন রক্ষার যুদ্ধ। ছিলো দীন, আকিদা ও সম্মান রক্ষার লড়াই।

সমগ্র আরববিশ্ব ছিলো একটি ক্ষুদ্র রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে, যা বেশিদিন টিকবার নয়। সবার দৃষ্টি ছিলো ফিলিস্তিন রণাঙ্গনের দিকে। মানুষ অপেক্ষায় ছিলো আরেকটি ইয়ারমুক যুদ্ধ দেখার জন্য। আরেক হিত্তিনের লড়াই প্রত্যক্ষ করার জন্য। আর তারা কেনইবা অপেক্ষা করবে না। এ তো সে জাতিই। একই রক্তের ধারক-বাহক তারা। আকিদা আর চেতনাও তো একই। বরং তাতে যোগ হয়েছে অধিক সংখ্যা ও পর্যাপ্ত প্রস্তুতি। কিন্তু এরপরও কেন আরবরা বিজয় ছিনিয়ে আনতে পারলো না? কেন পারলো না তারা শত্রুকে নাকানি-চুবানি দিতে? অথচ তারা ছিলো কেবলই একটি বাস্তুচ্যুত শরণার্থী জাতি!

তারা ভুলে গেছে যুগের শিক্ষা আরবজাতিকে কতোটা বদলে দিয়েছে। সময় তাদের কতো বদলে দিয়েছে। রাষ্ট্রসমূহ ও রাজনৈতিক নেতারা তাদের কতোটা বদলে দিয়েছে। আর বস্তুই-বা তাদের কতো বদলে দিয়েছে।

ইয়ারমুক যুদ্ধে আরবরাই বিজয়ী হয়েছিলো সত্য; কিন্তু তা প্রথম যুগে তাদের পূর্বসূরিদের বিরল ও অনন্য ঈমানের বদৌলতে। তারা এমন লড়াইয়েও বিজয় মাল্য ছিনিয়ে এনেছেন, যা ছিলো চূড়ান্ত পরাজয়ের আশংকায় বিদ্ধ। যেমন হিত্তিনের যুদ্ধ। এ যুদ্ধে বিজয় মাল্যে আরবরাই ভূষিত হয়েছিলো বটে; কিন্তু তা সালাহুদ্দীন আইয়ুবী ও তাঁর মুজাহিদবাহিনীর সমৃদ্ধ রুহ ও আত্মার কল্যাণে।

তাঁদের আত্মা অন্তঃসারশূন্য ছিলো না যে, তা মৃত্যুকে ভয় পাবে আর জীবনকে ভালোবাসবে। তারা বিচ্ছিন্ন চিন্তাধারী কিংবা বিভিন্ন কালেমার ধারক ছিলেন না। যারা শুধু জিততে চায়; কিছু হারাতে চায় না। যারা যুদ্ধ জয় করতে চায় কোনো ঝুঁকি না নিয়ে এবং নিজেদের মর্যাদা ও বিলাস ধরে রেখেই।

সবাই বিশ্বাস করে যুদ্ধে, তবে যুদ্ধে জয়-পরাজয়ের দায়-দায়িত্ব তার নয় অন্যের। তারপর তারা লড়াই করতে যায় আর তাদের লাগাম থাকে অন্যের হাতে। যখন একটু ঢিল করে, তারা এগিয়ে যায়। যখন টেনে ধরে, তারা পিছিয়ে আসে। যখন বলে- যুদ্ধ করো, তারা যুদ্ধ করে। যখন বলা হয়- তোমরা সন্ধি করো, তারা সন্ধিচুক্তিতে আবদ্ধ হয়। এভাবে না যুদ্ধ জেতা যায় আর না পরাজিত করা যায় কোনো শত্রুকে।

মুসলমানদের অবস্থার জোয়ার-ভাটার সম্পর্ক ঈমানের জোয়ার-ভাটার সঙ্গে

marcy to non muslim

ইসলামি যুদ্ধের ইতিহাসে বিশ্ব যে বিস্ময়কর ঈমান, শ্বাসরুদ্ধকর বীরত্ব ও সাহসিকতা, ধৈর্য, অকৃত্রিমতা, জীবনের প্রতি অবজ্ঞা, মৃত্যুকে স্বাগত জানানো, শাহাদাতের তামান্না, শৃঙ্খলা, আনুগত্য ও ত্যাগের উপাখ্যান পড়ে এসেছে, তার পুনরাবৃত্তির অপেক্ষায় থাকলো। তারা অবশ্য ঈমানের কয়েক ঝলক আর বিদ্যুতের ন্যায় কয়েক চমক ছাড়া কিছুই দেখতে পেলো না। এটি দেখিয়েছিলেন যুদ্ধের গুটিকয় আনুগত্যপরায়ন মুজাহিদ, যারা কেবল ঈমানের দাবি পূরণে, ইসলামের শত্রু প্রতিরোধেই যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হয়েছিলেন। যারা আনুগত্য প্রদর্শন করেছিলেন। ধর্মীয় আবেগ আর ঈমানি জযবাই তাদের এ অভিযানে প্রেরণা যুগিয়েছিলো। টেনে এনেছিলো রক্তপিচ্ছিল রণক্ষেত্রে। তারা দীনকে সম্মানিত করেছেন। শত্রু অন্তরে ভীতির সঞ্চার করেছেন। পুনরাবৃত্তি ঘটিয়েছেন অতীত ইতিহাসের। তাঁরা প্রমাণ করেছেন ঈমানাদারদের কাছে যে শক্তি, কর্তৃত্ব, সংগঠন এবং যুদ্ধ ও প্রতিরোধের প্রাণশক্তি রয়েছে, আজকের তথাকথিত সভ্য রাষ্ট্রগুলোর কাছে তা নেই।

আমি এ আলোচনায় ইতিহাসের যেসব ঘটনা ও দৃষ্টান্ত বিবৃত করেছি এবং সমকালীন সাক্ষ্য তুলে ধরেছি আর ফিলিস্তিনও তো আমাদের চেয়ে বেশি দূরের নয়- তা থেকে প্রমাণিত হয়, ইসলামি ইতিহাস এবং মুসলমানদের অবস্থা-উন্নতির জোয়ার-ভাটার সম্পর্ক ঈমানের জোয়ার-ভাটার সঙ্গে। ঈমান-বিধৌত আত্মিক শক্তির সঙ্গে। এই জাতির শক্তির উৎস তাদের ভেতরে। আর তা হলো, আত্মা ও অন্তর।

অতএব কলব ও হৃদয় যখন নির্মিত হবে আল্লাহ তায়ালা, তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং শেষ দীনের ওপর ঈমান ও বিশ্বাসের ভিত্তিতে, রুহ ও আত্মা হবে ইসলামের শিক্ষা ও আদর্শের অনলে পরিশোধিত, বক্ষ হবে দীনী জযবা ও ধর্মীয় আবেগে জ্বলন্ত উনুনের পাতিলের মতো ফুটন্ত ও টগবগে, মুসলমানরা তাদের বৈষয়িক শক্তি অর্জন সম্পন্ন করবে, শত্রু মোকাবেলায় সাধ্যমতো প্রস্তুতিও চূড়ান্ত করবে, বিশ্বের বিদ্যমান অন্যায়-অত্যাচার, জুলুম-রক্তপাত, দুনিয়া ও আখেরাত বিষয়ে অজ্ঞতা ও বিভ্রান্তি সম্পর্কে অবগত হবে এবং উপলব্ধি করবে, বর্তমান সময়টি ঠিক সে যুগেই ফিরে গেছে, যাতে ইসলামের আগমন ঘটেছিলো আর বিশ্বও সে জাহিলিয়াতে প্রত্যাবর্তন করেছে, যেখানে এর সূচনা হয়েছিলো। আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন-
‘মানুষের কৃতকর্মের দরুন স্থলে ও সমুদ্রে ফাসাদ প্রকাশ পায়। যার ফলে আল্লাহ তাদের কতিপয় কৃতকর্মের স্বাদ তাদের আস্বাদন করান, যাতে তারা ফিরে আসে।’ সূরা রুম, আয়াত ৪১।

বিশ্বের এই অবস্থা অবলোকনে তাদের দয়া হয় এবং তা

রা দেখতে পায়, বিশ্ব পুড়ে যাচ্ছে; কিন্তু তার কাছে পানি নেই। ফলে তারা এ সর্বগ্রাসী আগুন নেভাতে সচেষ্ট হয়। আর এ জন্য তারা নিজেদের ভোগ-বিলাস ত্যাগ করে, তাদের চোখের ঘুম উড়ে যায় এবং তারা এ থেকে পরিত্রাণের জন্য পাগলপারা হয়ে যায়, তখনই তারা এমন এক বিস্ময়কর শক্তিতে পরিণত হবে, বিশ্ব যাদের পদানত করতে পারবে না। যদিও তারা সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়। সব জাতি, সব বাহিনী ও রাষ্ট্র একাট্টা হয়। তখন আল্লাহর ফয়সালা ও তাঁর অলঙ্ঘনীয় ভাগ্যলিপি এবং সুউচ্চ কালেমাই বিজয়ী হবে।

আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন-
‘আর নিশ্চয় আমার প্রেরিত বান্দাদের জন্য আমার কথা পূর্বনির্ধারিত হয়েছে যে, অবশ্যই তারা সাহায্যপ্রাপ্ত হবে। আর নিশ্চয় আমার বাহিনীই বিজয়ী হবে।’ -সূরা সাফফাত, আয়াত ১৭১-১৭৩।

আরও ইরশাদ করেছেন-
‘তোমরা দুর্বল হয়ো না এবং দুঃখিত হয়ো না, আর তোমরাই বিজয়ী হবে যদি মুমিন হয়ে থাক।’ -সূরা আলে ইমরান, আয়াত ১৩৯।

মুফতি মুহাম্মদ তাকি উসমানি

 

লাখ নবীর শ্বাস-নিঃশ্বাসের সৌরভ

শেষ নাগাদ ইসরাইলের কাছে আরবরা পরাজিত হয়েছে। সম্মিলিত আরব বাহিনী ফিলিস্তিনের হারানো ভূমি উদ্ধার করতে গিয়ে উল্টো চল্লিশ হাজার বর্গমাইল অঞ্চল খুইয়ে এসেছে। উম্মাহর প্রথম কেবলা বায়তুল মুকাদ্দাস আমাদের হাতছাড়া হয়ে গেছে। মসজিদে আকসা- যেখানে দিনে পাঁচবার আজানের ধ্বনি উচ্চারিত হতো, এখন বন্ধ হয়ে গেছে। ফিলিস্তিনের পবিত্র যমিন- যেখানে কম-বেশি এক লাখ নবীর শ্বাস-নিঃশ্বাসের সৌরভ ছড়িয়ে আছে, আজ এমন এক সন্ত্রাসী সম্প্রদায়ের চারণভূমিতে পরিণত হয়েছে যাদের অভিধানে নীতি ও ভব্যতা বলে কোনো শব্দ নেই।

সিনাই উপত্যকা, যা একসময় ইহুদিদের জন্য ময়দানে তীহে পরিণত হয়েছিলো আজ সেখানে ইসরাইলের উদ্ধত ট্যাংকবহর দাবড়ে বেড়াচ্ছে। তূর পর্বত, যা আল্লাহর তাজাল্লি লাভে ¯œাত হয়েছিলো, আজ সেই তূর পর্বতে বর্বর ইহুদিদের পতাকা উড়ছে।

সিরিয়া, জর্ডান ও বায়তুল মুকাদ্দাসের সেই ভূমি, যাকে কুরআন সব সময় ‘বরকতময় ও পবিত্র’ শব্দে স্মরণ করেছে, আজ সেই ভূমি কুরআনে বিশ্বাসীদের রক্তে রঞ্জিত। সেখানে নিষ্ঠুর ইসরাইলিরা অস্ত্রের খোঁচায় বর্বরতা আর পশুত্বের নয়া অধ্যায় রচিত হচ্ছে। ওরা মুসলমানদের রক্তে হোলি খেলছে, তাদের ঘরবাড়ি ছিনিয়ে নিচ্ছে। লুণ্ঠন করছে তাদের ইজ্জত-আবরু। মানবতা সেখানে চরমভাবে পদদলিত হচ্ছে।

জুলুম ও নির্যাতনের এই আগুনের ইন্ধন বানানো হচ্ছে জেনেভা চুক্তিকে, যে অগ্নি প্রজ্বলিত করা হয়েছে তাওহিদবাদী মুসলমানদের জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে ছারখার করতে।

আট শতাব্দী পর ফের বায়তুল মুকাদ্দাসের পতন

আট শতাব্দী পর এসে ফের বায়তুল মুকাদ্দাসের পতন নিঃসন্দেহে বর্তমান মুসলিমবিশ্বের জন্য চরম বেদনাদায়ক। প্রতিজন মুসলমানের মন আজ ভারাক্রান্ত। শব্দের মারপ্যাঁচে বাস্তবতা বদলায় না। একথা আমাদের নির্দ্বিধায় স্বীকার করতে হবে, এটা আমাদের মারাত্মক পরাজয়। এমন নজির ইসলামের ইতিহাসে নেই। মাত্র আশি ঘণ্টায় আরবরাষ্ট্রগুলোর সব শক্তি নিঃশেষ হয়ে গেল। আট হাজার বর্গমাইলের দেশ চব্বিশ হাজার বর্গমাইল এলাকা ছিনিয়ে নিল।

al-aqsa

আটশ বছর পর বায়তুল মুকাদ্দাস হাতছাড়া হওয়া সাধারণ কোনো আঘাত নয়, যা সহজে ভোলা যায়। পুনরায় বায়তুল মুকাদ্দাস বিজয়ের আগ পর্যন্ত এ জখম ও আঘাত প্রতিটি মুসলিমকে যন্ত্রণাদগ্ধ করতেই থাকবে।

পৃথিবীর কোনো ঘটনাই অকারণে আলোয় আসে না। সব ঘটনার পেছনেই কোনো না কোনো কারণ থাকে। দুনিয়ার প্রতিটা ঘটনাই আবার সঙ্গে করে নিয়ে আসে বড় ধরনের শিক্ষা। পদস্খলন থেকে মুক্তির জন্য এ শিক্ষাগুলোর অনেক প্রয়োজন। জীবনের পিচ্ছিল পথ অতিক্রম করে উন্নতির শিখরে সে জাতিই উন্নীত হতে পেরেছে, যারা হোঁচট খেয়ে সামলে নেওয়ার জ্ঞান রাখে, পরাজয়কে যারা সাময়িক দুর্ঘটনা হিসেবে না নিয়ে নিজেদের ভুলত্রুটির পরিণতি হিসেবে গ্রহণ করার চেষ্টা করে। তাই এ বেদনাদায়ক ঘটনায় আফসোস আর অশ্রু বিসর্জন দিয়েই দায়িত্ব শেষ নয়। এ ঘটনা কিছু বিষয় ভেবে দেখার দাবি রাখে।

পৃথিবীতে বসবাস করতে হলে এসব দাবি পূরণ করতে হবে। বর্তমান সংক্ষিপ্ত যুদ্ধে আরবরা নিঃসন্দেহে পরাজিত হয়েছে। কিন্তু পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাসের সাথে হলফ করে এ কথা বলা যায়, বেদনাদায়ক এ পরাজয় আল্লাহর পক্ষ থেকে একটি সতর্কবার্তা। আমরা যদি এ বার্তা থেকে সঠিক শিক্ষা গ্রহণ করতে পারি তা হলে এ পরাজয় মহাবিজয়ে রূপান্তরিত হতে পারে। এটা সংকল্পকে সতেজ এবং চেতনাকে শাণিত করে পথ অনুসন্ধানের সময়। আসুন, আজ থেকেই এ পরাজয়ের কারণ এবং এ থেকে অর্জিত শিক্ষার প্রতি মনোনিবেশের চেষ্টা করি।

কোনো জাতির জাগতিক উন্নতি জন্মগত অধিকার নয়

কুরআন-সুন্নাহ ও বিভিন্ন জাতির উত্থান-পতনে গভীর দৃষ্টি দিলে স্পষ্ট হয়ে ওঠে, কোনো জাতি বা ধর্মের জাগতিক উন্নতি জন্মগত অধিকার নয়। আল্লাহর নিয়ম শুরু থেকেই এমন- কর্মমুখর এ পৃথিবীতে প্রত্যেককেই তার প্রচেষ্টা অনুপাতে অংশ দেওয়া হয়। মুসলমানরাও আল্লাহর এই অমোঘ নিয়মের বাইরে নয়। নিঃসন্দেহে মুসলমানরা গৌরবময় উপাধি সর্বোত্তম জাতিতে ভূষিত। এতেও কোনো সন্দেহ নেই, মুসলমানরা আল্লাহর সবচেয়ে প্রিয় জাতি। এটাও আপন জায়গায় সত্য যে, এই পৃথিবীতে কোনো ধর্মই ইসলামের সমমর্যাদার নয়। এ কথার অর্থ এই নয় যে, কোনো সম্প্রদায় নিজেদের মুসলমান দাবি করে হাত-পা না চালিয়েই নক্ষত্র স্পর্শ করবে। তারা পায়ের উপর পা তুলে বসে থাকলেও উন্নতি আর সফলতা তাদের পায়ে এসে চুম্বন করবে!

কুরআন শরিফ ও ইসলামের ইতিহাস খুব মনোযোগ দিয়ে না পড়েও এ কথা প্রমাণ করা কষ্টকর নয় যে, মুসলমানদের মাথা উঁচু করে দাঁড়ানোর সমস্ত প্রতিশ্রুতি দুটি শর্তের উপর নির্ভরশীল।
-জীবনের সর্বস্তরে ইসলামের অনুসরণ করা।
-উন্নতির সমস্ত উপায়-উপকরণ অবলম্বনের চেষ্টা করা।

এ দুয়ের মাঝেই নিহিত রয়েছে আমাদের উন্নতি-অগ্রগতি। এ বিষয়টি কুরআনে কারিমে স্পষ্ট ভাষায় বর্ণিত হয়েছে। একদিকে ইরশাদ হয়েছে-
‘মুমিন হয়ে থাকলে তোমরাই বিজয়ী হবে।’
-সূরা আলে ইমরান, আয়াত ১৩৯।

অপর দিকে ইরশাদ হয়েছে-
‘আর প্রস্তুত করো তোমরা তাদের মোকাবেলায় যতটা পারো শক্তি ও অশ্বদল, তোমরা সন্ত্রস্ত করবে তা দ্বারা আল্লাহর শত্রুকে এবং তোমাদের শত্রুকে।’ -সূরা তাওবা, আয়াত ৬০।

ইসলামের ইতিহাসে দৃষ্টি দিলে কুরআনের এ বর্ণনার সত্যতা পাওয়া যায়। যেখানেই মুসলমানরা খাঁটি মুসলমান হয়ে সবধরনের উপায় উপকরণ লাভের সাধ্যমতো চেষ্টা করেছে সেখানেই বিজয় এসে তাদের পদচুম্বন করেছে। সাধ্যমতো চেষ্টার পর দুশমনের মোকাবেলায় তারা যত নগণ্যই হোক, বিজয়ী হয়েছে। পরাজয়ের গ্লানি মুসলমানদের তখনই বইতে হয়, তারা যখন এই দুই বিধানের কোনো একটি থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়।

ফিলিস্তিনের দুর্গতির কারণ অনুসন্ধান

finding-the-cause-of-palestine-plight-how-to-recover

 

প্রথম কারণ- দীর্ঘ সময় ধরে ইসলামি শিক্ষাকে অবহেলা

প্রথম এবং মৌলিক কারণ হলো, আরবরা দীর্ঘ সময় ধরে ইসলামি শিক্ষাকে অবহেলা করে আসছে। তারা স্বীকার করুক বা না করুক, তাদের চিন্তা-চেতনা, শিক্ষা-সংস্কৃতি, জীবনযাপন, পোশাক-পরিচ্ছদ- এক কথায় মাথা থেকে পা পর্যন্ত চিৎকার করে বলছে, আমরা মুখে পশ্চিমাদের মন্দ বলি কিন্তু আমাদের মন-মগজ তাদের ভালোবাসায় আচ্ছন্ন, পশ্চিমা সংস্কৃতিই আমাদের হৃদয়ে আসন গেড়ে বসেছে, তাদের চিন্তা-চেতনা আর জীবনধারাই আমাদের প্রিয়।
পরিণামে এমন হয়েছে, আরবদেশগুলোতে গেলে আজকাল ঠাহর করাই মুশকিল হয়ে যায়- এগুলো কি মুসলিমদেশ? একটা মুসলিমদেশে পশ্চিমের নগ্নতা, বেহায়াপনা, বিলাসিতা এবং আল্লাহ ও রাসূলের হুকুম থেকে এমন দূরত্ব কল্পনা করা যায়! রাতের আঁধারে যখন ইসরাইলের যুদ্ধবিমানগুলো মিসরে প্রবেশ করেছিলো তখন কায়রোর হোটেলে হোটেলে উদ্যাম নৃত্যের আসর চলছিলো।

কিছুদিন আগেই মিসরে ইসলামপন্থীদের ফাঁসিতে ঝুলানো হয়, একথা তো সবার জানা। মিসর এবং সিরিয়ায় আলেমদের উপর কী অমানবিক নির্যাতন হয়েছিলো তা চিন্তা করলেও গা শিউরে ওঠে। একদিকে ইহুদি আলেমরা জনগণকে আরবদেশের বিরুদ্ধে ধর্মের নামে উজ্জীবিত করছিলো অন্যদিকে মিসর ও সিরিয়ায় আলেমদের জেলে বন্দী করে ইসলাম-প্রীতির শাস্তি দেয়া হচ্ছিল।

ইসলামি শিক্ষা থেকে দূরে সরে যাওয়ার পরিণতি হলো, আরবদেশগুলো ইসরাইলের বিরুদ্ধে ইসলামের পরিবর্তে আরব জাতীয়তাবাদের শ্লোগান তুলছিলো। অনেক বছর ধরে তারা জাতীয়তাবাদের এই প্রতিমা আস্তিনে আগলে রেখেছিলো, যা বর্জনের জন্য রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিদায় হজের ভাষণে স্পষ্ট ঘোষণা করেন, ‘কোনো আরবের অনারবরের উপর শ্রেষ্ঠত্ব নেই।’

ইসরাইলে বর্ণ-বংশ নির্বিশেষ বিভিন্ন দেশের ইহুদিরা এক মন এক প্রাণ হয়ে সামরিক প্রস্তুতিতে মগ্ন ছিলো। ধর্ম ব্যতীত তাদের কোনো সামগ্রিক বা একক পরিচয় ছিলো না- তাদের বংশ ভিন্ন, দেশ ভিন্ন, ভাষা ভিন্ন কিন্তু ধর্মের নামে তার ঐক্যবদ্ধ হচ্ছিল। এজন্য জাতীয়তাবাদের উপর ভিত্তি করে তাদের পরাজিত করা সম্ভব হয়নি। তাদের কার্যকর মোকাবেলার জন্য প্রয়োজন ছিলো ফিলিস্তিন সমস্যা শুধু আরবের সমস্যা হিসেবে উপস্থাপন না করে সমগ্র মুসলিমবিশ্বের সমস্যা হিসেবে উপস্থাপন করা।

ইন্দোনেশিয়া থেকে নিয়ে মরক্কো পর্যন্ত সমস্ত মুসলমানকে এর সাথে শরিক করা। পাকিস্তান তুরস্ক ও ইরান অতীতের তিক্ততা ভুলে আরবদের সহায়তার যে অনন্য নজির স্থাপন করেছে, তা একথা প্রমাণ করার জন্য যথেষ্ট যে, আরবরা ফিলিস্তিন সমস্যা নিয়ে সমস্ত মুসলমানকে আন্তরিকভাবে ঐক্যবদ্ধ করার চেষ্টা করলে তা কঠিন কিছু হত না। যদি এ ঐক্য প্রতিষ্ঠিত হত তা হলে পৃথিবীর মানচিত্র থেকে শুধু ইসরাইলই মুছে যেত না বরং কাশ্মীর থেকে নিয়ে কবরিছ পর্যন্ত সকল মুসলমানের সমস্যা এমনি এমনি সমাধান হয়ে যেত। মুসলিমদেশগুলোকে নিজেদের সমস্যা সমাধানের জন্য কখনো আমেরিকা, কখনো রাশিয়া, কখনো চীনের কাছে ধরনা দিতে হতো না।

দ্বিতীয় কারণ- জাতীয়তাবাদে উজ্জীবিত নানান অবক্ষয়

পৃথিবীর মানচিত্র দেখুন, আল্লাহ তায়ালা মুসলিমবিশ্বকে ধন-সম্পদে কত সমৃদ্ধ করে রেখেছেন। স্থল-জল-আকাশসহ দুনিয়ার সব গুরুত্বপূর্ণ যোগাযোগপথ তাদের নিয়ন্ত্রণে, এলাহি কত উপায়-উপকরণ তাদের আয়ত্তে, মানবসম্পদে তারা কত সমৃদ্ধ। পৃথিবীর একেবারে মাঝখানে তাদের অবস্থান হওয়ার কারণে গোটা বিশ্বের হৃদপি- তাদের হাতের মুঠোয়- আল্লাহর এ দান ঐক্য ও সমঝোতার মাধ্যমে ব্যবহার করতে পারলে কেন তারা প্রত্যাশিত মর্যাদা অর্জনে ব্যর্থ হবে? এ ধরনের সুস্পষ্ট বাস্তবতা বিদ্যমান থাকা সত্ত্বেও যুদ্ধের সময় ‘শ্রেষ্ঠত্ব আল্লাহর’ শ্লোগানের পরিবর্তে ‘আরবের শ্রেষ্ঠত্বের’ শ্লোগান উচ্চারিত হয় কীভাবে? এটা নিজ হাতে আল্লাহর গজব ডেকে আনার ব্যবস্থা নয় কি? এই জাতীয়তাবাদকে উজ্জীবিত করার দরুন ধীরে ধীরে নানান অবক্ষয় বাসা বাঁধতে শুরু করল। একদিকে ইসরাইলের কোনো প্রভাবশালী প্রতিদ্বন্দ্বী তৈরি হলো না। অন্যদিকে খোদ আরবদের মধ্যেই ভাঙন দেখা দিলো। যারা জাতীয়তাবাদের পতাকাতলে সমবেত হওয়া ভুল মনে করতো তারা আলাদা প্লাটফর্ম তৈরি করলো। এই দুই প্লাটফর্মের মধ্যে গৃহযুদ্ধও শুরু হয়ে গেলো। উভয় শক্তি যৌথভাবে দুশমনের মোকাবেলার পরিবর্তে নিজেদের মধ্যে যুদ্ধ করে নিঃশেষ হতে লাগলো।

দু’পক্ষের প্রচারমাধ্যম পারস্পরিক সমালোচনায় লিপ্ত থাকলো। ফল দাঁড়ালো এই- ইসরাইলের নামের আড়ালে আমেরিকা ও বৃটেন একযোগে যখন আরবদেশগুলোর উপর হামলার জন্য এগিয়ে এলো ঠিক তখন মিসরের সর্বোচ্চ ট্রেনিংপ্রাপ্ত পঁচিশ হাজার সেনা ইয়ামেনে মুসলিমহত্যায় লিপ্ত ছিলো। জাতীয়তাবাদের তৃতীয় আরেকটি ক্ষতি হলো, জাতীয়তাবাদের মাধ্যমে জিহাদের সেই প্রাণ ও প্রেরণা সেনাসদস্যদের মাঝে সঞ্চার করা সম্ভব হয়নি, যা মানুষকে মৃত্যু আলিঙ্গনে সাহসী করে তোলে। টানা ছয়দিনের এই যুদ্ধে কায়রো ও যৌথবাহিনীর রেডিও থেকে লাগাতার এই শ্লোগানই প্রচারিত হচ্ছিলো- জাহিদু ফি সাবিলিল আরুবা অর্থাৎ আরব জাতীয়তাবাদের জন্য যুদ্ধ কর। কিন্তু এ গুনাহগারের কান ব্যাকুল ছিলো- জাহিদু ফি সাবিলিল্লাহ তথা ‘আল্লাহর জন্য যুদ্ধ কর’ এই ঐশী বাক্যটি শোনার জন্য।

ঘণ্টায় ঘণ্টায় ‘শ্রেষ্ঠত্ব আরবের’ শ্লোগানটি শোনা যাচ্ছিলো কিন্তু ‘শ্রেষ্ঠত্ব আল্লাহর’ একবারও শোনা যায়নি। চূড়ান্ত বিচারে যোদ্ধারা তো মুসলিমই। আর মুসলিম কখনো দেশ জাতির মতো ফাঁকা বুলির ভিত্তিতে জীবন বিলানো পছন্দ করে না। শুধু ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ই তাকে উজ্জীবিত করতে পারে রক্ত দিয়ে গোসল করতে, আগুনের লেলিহান শিখায় ঝাঁপিয়ে পড়তে।

প্রেসিডেন্ট নাসের এক ভাষণে পরাজয়ের একটি কারণ এও উল্লেখ করেছেন, ইসরাইলি বাহিনীর শক্তি আমাদের থেকে তিন গুণ বেশি ছিলো। তার এই বক্তব্য নিজ জায়গায় হয়তো ঠিক আছে। কিন্তু ইসলামের সুদীর্ঘকালের ইতিহাসে এর কোনো বাস্তব ভিত্তি নেই। সৈন্যসংখ্যা বা সমরশক্তির বিচারে মুসলিমজাতি কখনো লড়াই করে না। করতে পারে না। এই পরিপ্রেক্ষিতে যতোই তিক্ত হোক- এ কথা অস্বীকারের কোনো উপায় নেই- এ পরাজয় ইসলাম ও মুসলমানের নয়, এ পরাজয় আরব জাতীয়তাবাদের।

তৃতীয় কারণ- আল্লাহর নেয়ামত প্রাকৃতিক সম্পদকে অমুসলিমদের দয়ার উপর ছেড়ে দেয়া

আমরা ইসলামি শিক্ষা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছি। পশ্চিমা ফ্রি স্টাইল জীবনযাপন, কেবল বৈষয়িক চিন্তাচেতনা ও বল্গাহীন ভোগ-বিলাসিতাকেই অবলম্বন করেছি। শত্রুকে প্রতিহত করার জন্য নতুন অস্ত্রশস্ত্র, যুদ্ধের নতুন নতুন কৌশল অবলম্বনের প্রতি কোনো ভ্রুক্ষেপই করিনি। এ শিক্ষা ইসলাম থেকে অর্জন করার বিষয় ছিলো, যার ফলে জাগতিকভাবেও আমরা কার্যকর কোনো প্রস্তুতি নিতে পারি নি। ইসরাইলের হুমকি আরবদের উপর দশকের পর দশক যাবত ঘুরছে। তাদের হিং¯্র পরিকল্পনাও কখনো পর্দার আড়ালে ছিলো না। তাদের যুদ্ধপ্রস্তুতিও আরবদের সামনে ছিলো। ইসরাইলের মোকাবেলায় নিজ পায়ে দাঁড়াবার চেষ্টাও আরবরা করে নি।

আল্লাহ তায়ালা তাদের প্রচুর পরিমাণে প্রাকৃতিক সম্পদ দান করেছেন। বর্তমান পৃথিবীর গতি তেলের উপর নির্ভরশীল। এই তরল সোনার মালিক তারাই। আল্লাহর এ মহামূল্যবান নেয়ামতকে তারা সম্পূর্ণরূপে অমুসলিমদের দয়ার উপর ছেড়ে দিয়েছে, ইসলামের বিরুদ্ধে যাদের শত্রুতা কখনোই গোপন ছিলো না। তারা এমন একটি বিশেষজ্ঞ দল এখনো তৈরি করতে পারে নি, যারা নিজেরাই পুরোপুরি তেল উত্তোলন ও প্রক্রিয়াজাত করতে পারে এবং এ মহাসম্পদ বিদেশীদের কব্জা থেকে উদ্ধার করতে পারে। এ তিক্ত বাস্তবতাকে বিলাসিতা আর অলসতা ছাড়া কী বলা যেতে পারে!

শুধু তেলের রয়ালিটি থেকে প্রাপ্ত অর্থ পৃথিবীর ধনী দেশগুলোর মোট আয়ের চেয়ে বেশি। এক পরিসংখ্যান মতে- ব্যাংক অব ইংল্যান্ডের মতো ধনী ব্যাংকগুলোর দুই তৃতীয়াংশ আয় কুয়েতের জমা করা অর্থ থেকে অর্জিত হয়। অন্য আরবদেশগুলো ইউরোপ-আমেরিকার ব্যাংকগুলোতে যে অর্থ জমা রাখে তা এ হিসেবের বাইরে। এখানে একটি প্রশ্ন জাগে- এত বিপুল অঙ্কের অর্থ, যার জোরে ইউরোপ-আমেরিকা সারা দুনিয়ার উপর ছড়ি ঘুরাচ্ছে, পশ্চিমাবিশ্বে রাখা এ অর্থের বড় একটা অংশ ব্যয় হয় মুসলিমবিশ্বে নিধনযজ্ঞ চালাবার কাজে। এই বিপুল অর্থ নিজ দেশে রেখে মুসলিমবিশ্বের উন্নয়নে ব্যয় করা যায় না? এই সময়ে পশ্চিমাদের ব্যাংকে অর্থ জমা করার মানে দাঁড়ায়, তেলের বিনিময়ে প্রাপ্ত অর্থ পশ্চিমাদের পকেটে রেখে দেয়া- নাও এ অর্থ দিয়ে তোমরা উপকৃত হও। ব্যবসা-বাণিজ্য, কল-কারখানা চাঙা কর। ইসরাইলকে শক্তিশালী করতে তাকে নতুন নতুন অস্ত্র জোগান দাও। ইসরাইলের মাধ্যমে আমাদের উপর বোমা ফেলতে যুদ্ধবিমান বানাও।

আমাদের কোনো উন্নয়নের প্রয়োজন হলে এরই কিছু অংশ সাহায্যের নামে আমাদের কাছে ফেরত পাঠাও। যেন দুনিয়ার অলি-গলিতে আমাদেরই কল্যাণে তোমাদের দানশীলতার স্তুতিগাঁথা পাঠ হয়। আমাদের মাথা সবসময় তোমাদের দয়ার সামনে নত থাকে।

আরেকটু অগ্রসর হলে আমরা দেখতে পাই, অল্প-স্বল্প যে পরিমাণ অর্থ আরব দেশগুলো নিজেদের কাছে রাখে তা-ও কম নয়, অনেক। কিন্তু এ অর্থ খরচ হচ্ছে কোথায়? এসি গাড়ি, আরাম-আয়েশের নিত্য-নতুন সামগ্রী, চলচ্চিত্র, মদ, বাচ্চাদের দামি খেলনা, ওয়ান টাইম বক্সের খাবার এবং কবিতা আবৃত্তির জন্য দরবারি কবিদের জন্য বিশল সব পার্টি! আরবদেশগুলোর অধিকাংশের অবস্থা হলো এই, সেখানে আপনি দেখবেন ঘরে ঘরে টিভি-কম্পিউটার-মোবাইল সেট, সড়কে অসংখ্য নিউ ব্র্যান্ডের গাড়ি কিন্তু তাদের সামরিক ছাউনিগুলোতে সেনাসংখ্যা রাস্তার গাড়িগুলোর চেয়ে অনেক কম। সমর শক্তিও খুব সামান্য। অস্ত্রশস্ত্র যা আছে তাও অনেক পুরনো। তাদের সেনাসংখ্যা এবং আধুনিক যুদ্ধাস্ত্রও যথেষ্ট অপ্রতুল। অথচ ইসরাইলের অবস্থা হলো, ছোট্ট ছোট্ট শিশুরা সেখানে সামরিক প্রশিক্ষণ নিচ্ছে। ইসরাইলের প্রতিটি নাগরিকই প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত যোদ্ধা। এমনকি নারীরাও। আর আরবদের নিয়মিত সৈন্যদের আধুনিক সমরাস্ত্রের প্রশিক্ষণ মোটেই সন্তোষজনক নয়।

ইসরাইলে সম্পদের বেশিরভাগ অংশ প্রতিরক্ষাখাতে ব্যয় হচ্ছে আর আরবের প্রত্যেকটি মানুষ তুচ্ছ আরাম-আয়েশের ব্যস্ততায় দেদার টাকা উড়াচ্ছে। ইসরাইল আধুনিক অস্ত্রশস্ত্রে সমৃদ্ধ হচ্ছে আর এখানে ঘরে ঘরে ঢুকছে প্রযুক্তির নিত্য-নতুন সব ডিভাইস। ইসরাইলের ট্যাংকবহর উন্নত থেকে উন্নততর হচ্ছে আর এখানে গাড়িকে আরো কত বিলাসবহুল করা যায় তাই নিয়ে চলছে সীমাহীন ভাবাভাবি। ওদিকে ইসলামকে পৃথিবীর বুক থেকে মুছে ফেলার জন্য বিবদমান গোষ্ঠীগুলো একত্র হচ্ছে আর এদিকে এখনও এটাই ঠিক করা যায় নি যে, ঐক্যটা হবে কিসের ভিত্তিতে।

চতুর্থ কারণ- ঐক্যের পরিবর্তে অন্যের উপর ভরসা

এ পরাজয়ের চতুর্থ কারণ, আমরা মুসলিমবিশ্বেও অভ্যন্তরীণ ঐক্যের পরিবর্তে অন্যের উপর ভরসা করে বসে আছি। ইন্দোনেশিয়া থেকে মরক্কো পর্যন্ত ঐক্যবদ্ধ হয়ে নিজ নিজ সমস্যা সমাধান করার পরিবর্তে আমরা কখনো রাশিয়ার দিকে তাকাচ্ছি তো কখনো আমেরিকার দিকে। অথচ সব পক্ষেরই বিশ্বাসঘাতকতা আমরা কদমে কদমে দেখেছি। দেখছি। এই যুদ্ধে আরবদের ভরসা ছিলো রাশিয়ার উপর কিন্তু এ সময়ে রাশিয়া কী ভূমিকা নিয়েছে তা দুনিয়বাসী প্রত্যক্ষ করেছে। মানা’র যুদ্ধের পর রাশিয়া ইসরাইলের বিরুদ্ধে বেশ কড়া বক্তব্য দিয়েছে। জাতিসংঘের অধিবেশনে ইসরাইলের নিন্দা ও আরবদের পক্ষে জোড়ালো বক্তব্য দিয়েছে। ব্যাস, তাতেই হয়ে গেলো? এই ধরনের বায়বীয় বক্তব্য দিয়ে দুনিয়ার চোখে আর কতদিন ধুলো দেয়া যাবে?

পরাশক্তিগুলো দুনিয়াতে যে নিষ্ঠুর নিয়ম ও ধারার প্রচলন করতে চায় তার অব্যর্থ প্রতিষেধক তরবারি ছাড়া কিছু নয়। আঘাতের নিন্দা মুখের ভাষা দিয়ে হয় না, করতে হয় অস্ত্রের ভাষায়। মজলুমের ভোগান্তির প্রতিকার গোলটেবিলে বসে করা যায় না, সরাসরি যুদ্ধের ময়দানেই এর প্রতিকার সম্ভব। ইসরাইল যদি সভ্যতা, ভদ্রতা এবং আন্তর্জাতিক নিয়মকানুনের প্রতি সামান্য শ্রদ্ধাশীল হতো তা হলে মধ্যপ্রাচ্যে ফিলিস্তিনের কোনো সমস্যাই থাকতো না। ইসরাইল হলো বিষধর সাপ, যাকে হত্যা করার জন্য কোনো যুক্তির দরকার পড়ে না। প্রচ-রকম আঘাতই এর প্রতিষেধক, যার ফলে সেটা আর মাথা তুলতেই সাহস না পায়।

ময়দানে প্রচ- লড়াইয়ের সময় চুপটি মেরে থাকা, মজলুমের আহাজারি থেমে যাওয়ার পর হৈচৈ করা বন্ধুর কাজ নয়। যে মজলুম এমন মানুষকে বন্ধু মনে করে তার নির্বুদ্ধিতার প্রতি আশ্চর্য হওয়া ছাড়া কী করার থাকে? রাশিয়ার চলমান শোরগোল চেচামেচির উদ্দেশ্য মনে হচ্ছে এটাই- আরব ও ইসরাইলের মাঝে ঝামেলা বাধিয়ে বায়তুল মুকাদ্দাসকে বহুজাতিক শহর এবং উপসাগরীয় অঞ্চলকে আন্তর্জাতিক মহাসড়ক ঘোষণা করা। এটাই হবে ইসরাইলের সবচেয়ে বড় সফলতা।

নিজেদের কঠোর পরিশ্রমী ও সংগ্রামী করে তোলা সময়ের দাবি

আরবদের পরাজয়ের যেসব কারণ আমি বর্ণনা করেছি তাতে কোনো দুর্বোধ্যতা কিংবা অস্পষ্টতা নেই। এটা এমন কোনো দর্শন নয়, যা বুঝার জন্য দলিল-প্রমাণের প্রয়োজন। এগুলো সবই চোখে দেখার মতো সুস্পষ্ট ব্যাপার, যা সব মুসলমানই অনুভব করছে। এ পরাজয় অনেক বড় হোঁচট। সমগ্র মুসলিম জাতি এতে ব্যথিত। এটা আল্লাহর পক্ষ থেকে সতর্কবার্তা, যা আমাদের সবাইকে সজাগ হতে বলছে। আমরা যদি আত্মহত্যার দৃঢ় সংকল্প না করে থাকি তা হলে সমস্ত ভুল শোধরানোর জন্য এখনই কোমর বেঁধে নামতে হবে। মনে রাখতে হবে, ইসরাইলের এ ভয়ানক আগ্রাসন এমনি এমনি বন্ধ হওয়ার নয়। যতক্ষণ না মুসলিমবিশ্ব ইসরাইলের সামনে এ কথা প্রমাণ করতে পারে- আমরা এমন এক শিশাঢালা সুদৃঢ় প্রাচীর, যে-ই এর সাথে টক্কর লাগাতে আসবে টুকরো টুকরো হয়ে যাবে। কথা বলা আর নয়, এখন সময় কাজের।

আজ ইসরাইল বায়তুল মুকাদ্দাস আর সিনাই উপত্যকা দখল করেছে কাল কায়রো দামেশক বাগদাদমুখী হবে। এরপর মুসলিমবিশ্বের কোনো অংশই আল্লাহর এই আযাব থেকে রক্ষা পাবে না। হে আল্লাহ, তুমি আমাদের হেফাজত কর।

যদি এ পরাজয় আমাদের কঠোর পরিশ্রমী ও সংগ্রামী করে তোলে তা হলে এ পরাজয় কিছুই না। যদি আমরা সঠিক অর্থে মুসলমান হয়ে ঐক্যবদ্ধ হই তা হলে ইসরাইল কেন দুনিয়ার কোনো শক্তিই আমাদের দিকে চোখ তুলে তাকাবার সাহস পাবে না।

মহান রবের দরবারে প্রার্থনা- তুমি আমাদের এ ধাক্কা সামলে ওঠার যোগ্যতা দাও। যে গুনাহর কারণে আমরা আজ এ লাঞ্ছনার শিকার তা ক্ষমা করে দাও। ভবিষ্যতে খাঁটি মুসলমান হয়ে বাতিল শক্তির মোকাবেলা করার সামর্থ্য দাও। আমাদের বিবাদ ও অনৈক্য বন্ধুত্ব ও ঐক্যে রূপান্তরিত করে দাও। দুইশত বছর ধরে ভাগ্য-বিড়ম্বনার শিকার এ জাতির মাথা আবার উঁচু করে দাও।

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *