এক নজরে হজ্ব ও ওমরাহ

হজ্ব ও ওমরাহ

Date

Author

Blog Duration

40 minutes

হজ্ব

হজ্ব বা হজ্জ (আরবি: حج‎‎) মুসলমানদের জন্য একটি আবশ্যকীয় ইবাদত। এটি ইসলামের চতুর্থ স্তম্ভ। শারীরিক ও আর্থিকভাবে সক্ষম প্রত্যেক মুসলমান নর-নারীর জন্য জীবনে একবার হজ্ব সম্পাদন করা ফরজ বা আবশ্যিক। আরবি জিলহজ মাসের ৮ থেকে ১২ তারিখ হজের জন্য নির্ধরিত সময়। হজ পালনের জন্য বর্তমান সৌদি আরবের মক্কা নগরী এবং সন্নিহিত মিনা, আরাফাহ, মুযদালিফা প্রভৃতি স্থানে গমন এবং অবস্থান আবশ্যক।

হজ্ব শব্দের অর্থ কি

হজ্ব আরবি শব্দ। এর অর্থ নিয়ত করা, দর্শন করা, সঙ্কল্প করা, গমন করা, ইচ্ছা করা, প্রতিজ্ঞা করা। পরিভাষায় নির্দিষ্ট দিনে নিয়তসহ ইহরামরত অবস্থায় আরাফার ময়দানে অবস্থান করা এবং বায়তুল্লাহ শরীফ তাওয়াফ করা।

হজ্ব কাকে বলে

অন্য দিকে , জিলহজ্বের ৯ তারিখ ইহরাম বেঁধে আরাফাতের মাঠে অবস্থানসহ কয়েকটি নির্দিষ্ট স্থানে নির্ধারিত কয়েকটি আমল যথাযথভাবে আদায় করে কাবা গৃহ তাওয়াফ করাকে হজ্ব বলে।।

হজ্ব কত প্রকার

হজ্ব তিন প্রকার- ইফরাদ, কিরান এবং তামাত্তু

১- হজ্জে ইফরাদ

হজ্জের সফর শুরু করার সময় মিকাত থেকে যদি শুধু হজের নিয়তে ইহরাম বাঁধে এবং হজের সঙ্গে ওমরাহ আদায় না করে তাহলে এ প্রকার হজকে ‘হজে ইফরাদ’ বলা হয়। এ প্রকার হজ কারীকে শরিয়তের ভাষায় ‘ মুফরিদ ’ বলে।

২- হজে কিরান

কেউ যদি একই সঙ্গে হজ এবং ওমরাহর নিয়ত করে উভয়টিই পালন করে এবং হজ ও ওমরাহর জন্য একই ইহরাম বাঁধে, তাহলে এ ধরনের হজকে শরিয়তের ভাষায় ‘হজে কিরান’ বলা হয়। এ প্রকার হজ কারীকে ‘ কারিন’ বলে।

৩- হজে তামাত্তু

হজের সঙ্গে ওমরাহকে এভাবে মেলানো যে ‘মিকাত’ থেকে শুধু ওমরাহর ইহরাম বাঁধা। এই ইহরামে মক্কায় পৌঁছে ওমরাহ পালনের পর ইহরাম ভেঙে ৭ জিলহজ সেখান থেকে হজের ইহরাম বেঁধে হজ পালন করাকে ‘হজে তামাত্তু’ বলে। এ প্রকারের হজ কারীকে ‘মুতামাত্তি ’ বলে।

হজের সওয়াব ও ফজিলত

হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য হজ করে এবং অশ্লীল ও গুনাহর কাজ থেকে বেঁচে থাকে, সে নবজাতক শিশুর মতো নিষ্পাপ হয়ে যায়। আর মকবুল হজের পুরস্কার জান্নাত ছাড়া অন্য কিছুই নয়। ’ (বুখারি, খণ্ড: ১, পৃষ্ঠা: ২০৬)

ওমরাহ ও হজ অভাব দূর করে: আল্লাহর রাসুল (স.) বলেন, ‘তোমরা হজ-ওমরা সঙ্গে সঙ্গে করো। কেননা, এ দুটি দারিদ্র্য ও গোনাহ এভাবে দূর করে, যেভাবে হাঁপর লোহা ও সোনা-রুপার ময়লা দূর করে। আর মকবুল হজের বিনিময় জান্নাত।’ (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস : ২৮৮৭)

হজের বিনিময় জান্নাত: আবু হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন- ‘এক উমরা আরেক উমরা পর্যন্ত মধ্যবর্তী সময়ের গুনাহর ক্ষতিপূরণ হয়ে যায়। আর হজে মাবরূরের প্রতিদান তো জান্নাত ছাড়া আর কিছুই নয়।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ১৭৭৩; সহিহ মুসলিম: ১৩৪৯; মুসনাদে আহমদ: ৭৩৫৪; সহিহ ইবনে হিববান: ৩৬৯৫)

হজ না আদায়ের অশুভ পরিণতি: রাসুলুল্লাহ (সা.) হাদিসে বলেছেন, ‘হজ ফরজ হওয়ার পর তা আদায় না করে মৃত্যুবরণ করা ইহুদি বা খ্রিস্টান হয়ে মৃত্যুবরণ করার নামান্তর। ’ (তিরমিজি, হাদিস নং: ১৬৭)

হজ্ব কখন ফরজ হয়

হজ্ব কোন সালে ফরজ হয়েছে এ ব্যাপারে আলেমগণ মতভেদ করেছেন। কারো কারো মতে, পঞ্চম হিজরীতে। কারো কারো মতে, ষষ্ঠ হিজরীতে, কারো কারো মতে দশম হিজরীতে। শেষের দুইটি অভিমত অপেক্ষাকৃত শুদ্ধ। অর্থাৎ হিজরী নবম সালে অথবা দশম সালে হজ্ব ফরজ হয়েছে। দলিল হচ্ছে- আল্লাহ তাআলার বাণী-

وَلِلَّهِ عَلَى النَّاسِ حِجُّ الْبَيْتِ مَنِ اسْتَطَاعَ إِلَيْهِ سَبِيلًا

(অর্থ- আর এ ঘরের হজ্ব করা হলো মানুষের উপর আল্লাহর প্রাপ্য; যে লোকের সামর্থ রয়েছে এ পর্যন্ত পৌছার।)

এ আয়াতের ভিত্তিতে হজ্ব ফরজ হয়। এই আয়াতে কারীমা আমুল ওফুদ (প্রতিনিধিদল আগমনের বছর) তথা নবম হিজরীর শেষ দিকে নাযিল হয়েছে। অতএব, নবম হিজরীর শেষ দিকে হজ্ব ফরজ হয়েছে। দেখুন (যাদুল মাআদ, ৩/৫৯৫)।

যাদের ওপর হজ ফরজ

প্রাপ্তবয়স্ক, সুস্থ ও মক্কায় গিয়ে হজকার্য সম্পন্ন করে ফিরে আসার সামর্থ্য রাখে, এমন প্রত্যেক মুসলমান নারী-পুরুষের ওপর জীবনে একবার হজ করা ফরজ। তবে নারীদের জন্য স্বামী বা মাহরাম পুরুষ সঙ্গে থাকা শর্ত। (ফাতাওয়া শামি, খণ্ড: ২, পৃষ্ঠা: ৪৫৫)

হজ ফরজ হওয়ার শর্ত

হজ ফরজ হওয়ার জন্য পাঁচটি শর্ত রয়েছে।

  1. মুসলিম হওয়া।
  2. বিবেকবান হওয়া, পাগল না হওয়া।
  3. বালেগ হওয়া, প্রাপ্ত বয়স্ক হওয়া।
  4. আজাদ বা স্বাধীন হওয়া—অর্থাৎ কারো গোলাম বা দাস না হওয়া।
  5. দৈহিক ও আর্থিকভাবে সামর্থ্যবান হওয়া।

হজ ফরজ হয়েছে কিনা যেভাবে জানবেন

হজ ও জাকাতের মধ্যে বিশেষ পার্থক্য রয়েছে। তাই কারো ওপর জাকাত ফরজ না হয়েও তার ওপর হজ ফরজ হতে পারে। হজ ও জাকাতের মধ্যে পার্থক্য হলো, জাকাতের সম্পর্ক নির্ধারিত নিসাবের সঙ্গে। হজের সম্পর্ক মক্কায় আসা-যাওয়ার খরচের সঙ্গে। সুতরাং স্থাবর সম্পত্তির কিছু অংশ বিক্রয় করে কেউ যদি হজ আদায় করতে সক্ষম হয় এবং হজ থেকে ফিরে এসে বাকি সম্পত্তি দিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতে পারে, তাহলে তার ওপর হজ ফরজ। (ইমদাদুল আহকাম, খণ্ড: ২, পৃষ্ঠা: ১৫২; আহসানুল ফাতাওয়া, খণ্ড: ৪, পৃষ্ঠা: ৫১৬)

একইভাবে ব্যবসায়ীর দোকানে যে পরিমাণ পণ্য আছে, তার কিছু অংশ বিক্রয় করলে যদি হজ করা সম্ভব হয় এবং ফিরে এসে যদি বাকি পণ্য দিয়ে জীবিকা নির্বাহ করা যায়, তাহলে তার ওপরও হজ ফরজ। (ইমদাদুল আহকাম, খণ্ড: ২, পৃষ্ঠা: ১৫৩)

অনেকে মনে করে সন্তানের বিয়ে আগে দিতে হয়। তারপর হজ আদায় করতে হয়। অথচ এ কথা ইসলামসমর্থিত নয়। ইসলামের দৃষ্টিতে সন্তানের বিয়েও খুবই জরুরি। তাই বলে সন্তানের বিয়ের জন্য হজে বিলম্ব করা যাবে না। (রহিমিয়া, খণ্ড: ৮, পৃষ্ঠা: ২৭৬)

হজ্বের খরচ

এ বছর (২০২২ সাল) সরকারি ব্যবস্থাপনার প্যাকেজ-১ এর খরচ ৫ লাখ ৮৬ হাজার ৩৪০ টাকা। প্যাকেজ-২ এ খরচ পড়বে জনপ্রতি ৫ লাখ ২১ হাজার ১৫০ টাকা।

প্রতি বছর হজে যেতে সর্বোচ্চ খরচ কত হবে তা নির্ধারণ করে দেয় বাংলাদেশ সরকারের ধর্ম মন্ত্রণালয়। বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় মৌলিক খরচের পাশাপাশি অতিরিক্ত আরো যে খরচগুলো যোগ হতে পারে তা হলো-

  • খাওয়া
  • বাড়ি ভাড়া
  • যাতায়াত

এগুলোসহ আরো কিছু আনুসঙ্গিক খরচ যোগ করে সংশ্লিষ্টরা বেসরকারি ব্যবস্থাপনার হজ প্যাকেজ ঘোষণা করে থাকেন।

গত ১১ মে, ২০২২ সচিবালয়ে হজ ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত নির্বাহী কমিটির সভা শেষে ধর্ম প্রতিমন্ত্রী মো. ফরিদুল হক খান সাংবাদিকের বলেছিলেন- সরকারিভাবে হজে যেতে প্রথম প্যাকেজে খরচ হবে ৫ লাখ ২৭ হাজার ৩৪০ টাকা। আর দ্বিতীয় প্যাকেজের খরচ ধরা হয়েছে ৪ লাখ ৬২ হাজার ১৫০ টাকা। পরে হজযাত্রা শুরুর ১০ দিন আগে সরকারি ও বেসরকারি দুই ব্যবস্থাপনাতেই খরচ আরো ৫৯ হাজার টাকা বাড়ানো হয়েছে এবার।

৫৯ হাজার টাকা খরচ বাড়ার ফলে সরকারি ব্যবস্থাপনার প্যাকেজ-১ এর খরচ বেড়ে হচ্ছে ৫ লাখ ৮৬ হাজার ৩৪০ টাকা। প্যাকেজ-২ এ খরচ পড়বে জনপ্রতি ৫ লাখ ২১ হাজার ১৫০ টাকা। ধর্ম প্রতিমন্ত্রী সচিবালয়ে নিজের কার্যালয়ে সাংবাদিকদের বলেন- “আগের ঘোষণায় সৌদি আরব অংশের মূল্য অনুমান করে ধরা হয়েছিল। এখন সৌদি সরকার তাদের অংশ ঘোষণা করেছে। এ কারণে হজের মূল্য সমন্বয় করতে হয়েছে।

কেনো বাড়লো হজের খরচ? খরচ বাড়ার মূল কারন কি?

  • সৌদি সরকারের নির্ধারিত ট্যাক্স।
  • বাড়ি ভাড়া।
  • সার্ভিস চার্জ।
  • কোরবানির পশুর দামসহ অন্যান্য খরচ বাড়িয়ে দেয়া।
  • সেইসঙ্গে হজযাত্রীদের অন্যান্য খরচও বেড়েছে কিছুটা।

হজ্ব নিবন্ধন

সৌদি ‘ই হজ সিস্টেমের’ সঙ্গে সমন্বয়ের জন্য হজযাত্রীদের জন্য প্রাক্-নিবন্ধন পদ্ধতি চালু হয়েছে। এ বছর যথাযথ সতর্কতা মেনে সৌদি হজ কর্তৃপক্ষের প্রণীত নীতিমালা অনুসরণের মাধ্যমে হজের জন্য প্রস্তুতি নেওয়া যাবে। চলুন জেনে নেওয়া যাক, এ বছর হজের নিবন্ধনের পদ্ধতি।

হজের প্রাক-নিবন্ধন পদ্ধতি:

প্রার্থীরা অনলাইনের মাধ্যমে ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রনালয়ের অন্তর্গত হজ যাত্রীদের “প্রাক-নিবন্ধন সিস্টেম” থেকে প্রাক-নিবন্ধন করতে পারবেন। এর জন্য প্রয়োজনীয় ধাপগুলো নিম্নে উল্লেখ করা হলো:

১. সরকারি তত্ত্বাবধানে হজ যাত্রায় প্রাক-নিবন্ধনের জন্য নিম্নলিখিত প্রতিষ্ঠানগুলোতে আবেদন করা যাবে।

  • ইউনিয়ন তথ্য সেবা কেন্দ্র (ইউডিসি),
  • জেলা প্রশাসকের কার্যালয়,
  • ইসলামিক ফাউন্ডেশনের কার্যালয়, পরিচালক, হজ অফিস, আশকোনা, ঢাকা

২. বেসরকারি ভাবে প্রাক-নিবন্ধনের জন্য যেতে হবে ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয় কর্তৃক অনুমোদিত বৈধ হজ এজেন্সিগুলোতে।

কিভাবে হজের প্রাক-নিবন্ধন এর জন্য আবেদন করতে হয়?

  • আবেদন করার জন্য প্রথমে জিমেইল আইডি দিয়ে লগ-ইন করতে হবে।
  • লগ-ইন করার পর প্রার্থীর তথ্য প্রদানের পালা। একাধিক আবেদনের ক্ষেত্রে ‘নতুন আবেদন’ বাটনে ক্লিক করতে হবে । তথ্যগুলো অবশ্যই জাতীয় পরিচয় পত্রের অনুরূপ হতে হবে। অনূর্ধ্ব ১৮ বছর বয়সের ক্ষেত্রে জন্ম নিবন্ধন সনদের তথ্যানুসারে ফরম পূরণ করতে হবে।
  • এবার ‘পেমেন্ট আবেদন’ বাটনে ক্লিক করে সরকার কর্তৃক অনুমোদিত ব্যাংক-এর তথ্য দিতে হবে।
  • অতঃপর ‘ভাউচারের জন্য আবেদন করুন’ অপশনে যেতে হবে।
  • ভাউচার তৈরি হয়ে গেলে প্রার্থীর জিমেইলে একটি মেইল যাবে এবং প্রদানকৃত মোবাইল নাম্বারে একটি এসএমএস যাবে। ভাউচার ডাউনলোড করার জন্য জিমেইল থেকে অথবা প্রাক-নিবন্ধন সিস্টেমে লগ-ইন করে পেমেন্ট আবেদন লিস্ট থেকে ‘পেমেন্ট ভাউচার ডাউনলোড করুন’ বাটনে ক্লিক করতে হবে।
  • অবশেষে ভাউচারটি প্রিন্ট করে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকে প্রাক-নিবন্ধন ফি জমা দিতে হবে। টাকা জমা হওয়ার পর ব্যাংক থেকে সিরিয়াল নাম্বার সহ প্রাক-নিবন্ধন সনদ প্রদান করা হবে। সেই সাথে মোবাইল নাম্বারে একটি পেমেন্ট নিশ্চিতকরণ মেসেজ যাবে। এমনকি জাতীয় হজ নীতিমালা অনুযায়ী প্রার্থীর প্রাক-নিবন্ধন নম্বর চলতি বছর হজ গমনের জন্য নির্বাচিত হলে তা জানিয়ে প্রার্থীর মোবাইল এবং জিমেইলে মেসেজ দেওয়া হবে।
  • হজ গমনের জন্য নির্বাচিত হলে সরকার কর্তৃক নির্ধারিত সময়ের মধ্যে হজ প্যাকেজের অবশিষ্ট টাকা পরিশোধ করতে হবে।
  • তারপর হজ অফিস বা সংশ্লিষ্ট হজ এজেন্সি পরিশোধ নিশ্চিত করলে হজ্জযাত্রীর জন্য একটি অপরিবর্তনযোগ্য পিলগ্রিম আইডি (পিআইডি) তৈরি হবে, যা হজযাত্রীর মোবাইল নম্বরে এসএমএসের মাধ্যমে জানানো হবে। এই পিআইডি প্রাপ্তির মাধ্যমেই হজ নিবন্ধন চূড়ান্তভাবে সম্পন্ন হয়। প্রাক-নিবন্ধনে প্রাপ্ত তথ্যাবলি পুলিশের বিশেষ শাখার মাধ্যমে যাচাই করা হয়ে থাকে।
  • এছাড়া প্রাক-নিবন্ধন সম্বন্ধে আরও তথ্য জানার জন্য যোগাযোগের ঠিকানা: হজ তথ্য সেবা কেন্দ্রে, ফোন নাম্বার- +৮৮০৯৬০২৬৬৬৭০৭, স্কাইপে- hajjcallcenter, ই-মেইল- prp@hajj.gov.bd।

৩. প্রয়োজনীয় কাগজপত্র

  • প্রার্থীর জাতীয় পরিচয়পত্র (অনূর্ধ্ব ১৮ বছর বয়সীদের ক্ষেত্রে জন্ম নিবন্ধন সনদ দিয়ে প্রাক নিবন্ধন করা যাবে)।
  • নারীদের ক্ষেত্রে মাহরেমের জাতীয় পরিচয় পত্র সংযোজন করতে হবে।
  • চূড়ান্তভাবে হজের জন্য সৌদি আরব গমনে অনুমতির ক্ষেত্রে করোনা টিকা সনদপত্র নিতে হবে।

হজ্ব প্যাকেজ ২০২২

হজ্ব প্যাকেজ ২০২২ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে অনুগ্রহ করে নিচের লিংকে গিয়ে পিডিএফ ফাইলটি ডাউনলোড করে নিন।

হজ্ব প্যাকেজ ২০২২

হজ্বের নিয়ম: এক নজরে হজ্ব ও ওমরাহ

marcy to non muslim

হজ্জের ফরজ ৩টি

১। ইহরাম বাধা ২। উ’কুফে আ’রাফা (আরাফাতের ময়দানে অবস্থান) ৩। তাওয়াফুয্ যিয়ারাত

হজ্জের ওয়াজিব ৬টি

(১) ‘সাফা ও মারওয়া’ পাহাড় দ্বয়ের মাঝে ৭ বার সায়ী করা।
(২) অকুফে মুযদালিফায় (৯ই জিলহজ্জ) অর্থাৎ সুবহে সাদিক থেকে সুর্যদয় পর্যন্ত একমুহুর্তের জন্য
হলেও অবস্থান করা।
(৩) মিনায় তিন শয়তান (জামারাত) সমূহকে পাথর নিপে করা।
(৪) ‘হজ্জে তামাত্তু’ ও ‘কি্বরান’ কারীগণ ‘হজ্জ’ সমাপনের জন্য দমে শোকর করা।
(৫) এহরাম খোলার পূর্বে মাথার চুল মুন্ডানো বা ছাটা।
(৬) মক্কার বাইরের লোকদের জন্য তাওয়াফে বিদা অর্থাৎ মক্কা থেকে বিদায়কালীন তাওয়াফ করা।

এছাড়া আর যে সমস্ত আমল রয়েছে সব সুন্নাত অথবা মুস্তাহাব।

ওমরাহর ফরজ, ওয়াজিব

দুইটি ফরজ: (১) ইহরাম পরিধান করা (২) তাওয়াফ

দুইটি ওয়াজিব: (১) সাফা ও মারওয়া মধ্যবর্তী (সবুজ বাতি) স্থানে সাতবার সায়ী করা (২) মাথার চুল
মুন্ডানো বা ছাটা।

তালবিয়া

”লাব্বাঈক আল্লাহুম্মা লাব্বাঈক, লাব্বাঈক, লা-শারীকা-লাকা লাব্বাঈক, ইন্নাল হামদা ওয়ান্ নি’মাতা লাকা ওয়াল-মুল্ক, লা শারীকালাক।”

অর্থ: আমি হাজির হে আল্লাহ! আমি উপস্থিত! আপনার ডাকে সাড়া দিতে আমি হাজির। আপনার কোন অংশীদার নেই। নিঃসন্দেহে সমস্ত প্রশংসা ও সম্পদরাজি আপনার এবং একচ্ছত্র আধিপত্য আপনার। আপনার কোন অংশীদার নেই।

হজ্জের প্রকার ও নিয়তসমূহ

প্রথম প্রকার হজ্জে ইফরাদ

বর্ণনা: ওমরাহ্ ব্যতিত শুধু হজ্জের জন্য ইহরাম বাঁধা এবং হজ্জের সাথে ওমরাহকে না মিলানো। (বদলী হজ্জের জন্যও এই হজ্জ)।

নিয়্যাত: আল্লাহুমা ইন্নী উরীদুল হাজ্জা ফায়াসছির হুলিওয়াতা কাব্বালহুমিনি্ন। (বাংলা নিয়ত- আল্লাহ আমি ইফরাদ হজ্জের উদ্দেশ্যে আপনার সন্তুষ্টির জন্য ইহরাম বাধলাম। তা সহজ করে দিন ও কবুল করে নিন)।

দ্বিতীয় প্রকার হজ্জে কি্রান

বর্ণনা: একত্রে একই স্থান থেকে হজ্জ ও ওমরার নিয়্যাত করে হজ্জের সাথে ওমরাহকে মিলানো এবং একই ইহ্রামে উভয়টি আদায় করা।

নিয়্যাত: আল্লাহুমা ইন্নী উরীদুল উ’মরাতা ফায়াচ্ছির লী-ওয়াতাক্াব্বাল মিন্নী। বাংলা নিয়ত- হে আল্লাহ আমি আপনার উদ্দেশ্যে হজ্জে কি্বরানের জন্য ইহরাম বাধলাম তা সহজ করে দিন ও কবুল করে নিন।

তৃতীয় প্রকার হজ্জে তামাত্তু

বর্ণনা: একই সফরে পৃথক পৃথক ভাবে ‘ইহরাম’ পরিধান করে ‘হজ্জ ও ওমরাহ’ আদায় করা। প্রথম ইহ্রামে ওমরাহর নিয়্যাত করে তা পালন শেষে চুল কেটে ‘ইহরাম’ খুলে হালাল হয়ে দ্বিতীয় বার নতুন করে হজ্জের নিয়্যাতে ৮ই জিলহজ্জ ‘মক্ক শরীফ’ থেকে হজ্জের জন্য ইহরাম বাধা। তামাত্তু করার ইচ্ছা থাকলে প্রথমে ওমরার নিয়্যাত করে এহরাম বাঁধুন।

শুধু ওমরাহর নিয়্যাত

আল্লাহুমা ইন্নী উরীদুল উম’রাতা ফায়াচ্ছির লী-ওয়াতাক্াব্বাল মিন্নী। বাংলা নিয়ত- হে আল্লাহ আমি ওমরাহ্ পালনের জন্য ইহরাম বাধলাম তা সহজ করে দিন এবং কবুল করে নিন।

শুধু হজ্জের নিয়্যাত
আল্লাহুম্মা ইন্নী উরীদুল হাজ্জা ফায়াচ্ছিরহু-লী অ-তাকাব্বালহু মিন্নী। বাংলা নিয়ত- হে আল্লাহ আমি পবিত্র হজ্জ পালনের জন্য ইহরাম বেধে নিয়ত করলাম তা সহজ করে দিন এবং কবুল করে নিন।

তাওয়াফের বিবরণ

হাজীদের সর্বপ্রথম কাজই হলো (তামাত্তু ও ক্বেরান কারীগণ) নিজের মালছামানগুছিয়ে রেখে পাকপবিত্র হয়ে মোটেই দেরী না করে ‘হারাম শরীফে’ হাজিরা দেওয়া এবং ‘তাওয়াফ’ করা। ওমরাহ এবং হজ্জের তাওয়াফ ব্যাতিত নফল তাওয়াফ ও করা যায়। যেমন: রাসূল (দঃ), সাহাবা-আওলিয়া, আহ্লে বাইত, মা-বাবা, পীর-উস্তাদ ও অন্যান্য মুরুব্বী বা সন্তানদের স্মরনে বা তাঁদের নামে তাওয়াফ করা।

তাওয়াফের নিয়্যাত

আল্লাহুম্মা ইন্নী উরীদু তাওয়াফা বাইতিকাল হারাম ফায়াচ্ছিরহু-লী, ওয়া তাক্বাব্বাল-হু-মিন্নী, সাবাআ’তা আশ্ওয়াতি্বন লিল্লাহি তায়া’লা। বাংলায় নিয়ত- হে আল্লাহ আমি তাওয়াফ পালনের জন্য নিয়ত করলাম।

তাওয়াফের ওয়াজিব সমূহ

(১) শরীর পাক-সাফ রাখা, ওজু করা। মহিলাদের হায়েজ নেফাছ অবস্থায় তাওয়াফ করা জায়েজ নাই।
(২) ছতর ঢাকা। অর্থাৎ যেটুকু ঢাকা প্রত্যেক পুরুষ-নারীর জন্য ফরজ।
(৩) ‘হাতীমে কা’বার’ বাইরে থেকে ‘তাওয়াফ’ করা।
(৪) পায়ে হেঁটে ‘তাওয়াফ’ করা। অম ব্যক্তি খাটিয়ার মাধ্যমে ‘তাওয়াফ’ করতে পারেন।
(৫) ‘হাজ্রে আস্ওয়াদ’ থেকে শুরু করে ডানদিক দিয়ে ‘তাওয়াফ’ শুরু করা।
(৬) এক নাগাড়ে বিরতিহীন ভাবে ‘সাতবার চক্কর’ দিয়ে ‘তাওয়াফ’ পূর্ণ করা।
(৭) ‘সাত চক্করে’ এক ‘তাওয়াফ’, এটা পূর্ণ হলেই ‘তাওয়াফের’ নামাজ পড়া।

তাওয়াফের সুন্নত কার্যাবলী

(১) ‘তাওয়াফে’র শুরুতে ‘হাজারে আসওয়াদ’ এর দিকে মুখ করা।
(২) সম্ভব হলে ‘হাজ্রে আস্ওয়াদ’ চুম্বন করা। নতুবা হাত দ্বারা দূর থেকে ইশারা করা, এবং মুখে ‘বিসমিল্লাহি আল্লাহু আক্বার ওয়ালিল্লাহিল হ্ামদ’ বলা।
(৩) ‘হা্জ্রে অস্ওয়াদ’ বরাবর দাঁড়িয়ে তাকবীরে তাহরিমা’র ন্যায় উভয় হাত সিনা পর্যন্ত উঠান।
(৪) যে ‘তাওয়াফে’র পরে ‘সাঈ’ আছে তাতে ‘এযতেবা’ করা। অর্থাৎ ইহরামের চাদরের (উপরের অংশের) দুই মাথা ডান বগলের নিচ দিয়ে বাম কাঁধের উপর ফেলে দেওয়া।
(৫) ‘সাঈ’ যুক্ত ‘তাওয়াফে’র প্রথম তিন চক্করে ‘রমল’ করা। অথর্াৎ বীরের মত হেলে দুলে জোর ক্বদমে (একের পর এক পা ফেলে) চলা।
(৬) বাকী চার চক্কর সাধারণ গতিতে (ধীরে ধীরে) সম্পন্ন করা।
(৭) প্রত্যেক চক্কর তাওয়াফ শেষ করে এবং শেষ চক্করেরও পরে ‘হাজ্রে অস্ওয়াদ’কে চুম্বন করা।
সম্ভব না হলে দূর থেকে ইশারা করে বিসমিল্লাহে আল্লাহ আকবর ওয়ালিল্লাহিল হামদ্”দোয়াটি পাঠ করা এবং ৩ নং নিয়মের ন্যায় দাড়িয়ে ইশারা করে ‘তাওয়াফ’ শেষ করা।

সায়ীর নিয়ম

‘হজ্জ ও ওমরাহ’ ছাড়া নফল ‘তাওয়াফে’র কোন সায়ী নাই। কারো নামে ওমরাহ করতে হলেও সায়ী করতে হবে। সায়ী অর্থ দৌড়ানো। এটা ‘ছাফা’ পাহাড় থেকে প্রথমে শুরু করতে হবে। ছাফা থেকে মারওয়া।মারওয়া থেকে ছাফায়। এভাবে সাতবার সায়ীর সময় প্রথম তিন চক্কর সবুজ বাতির মাঝের অংশটুকু দৌড়ে দৌড়ে হেলে দুলে যাওয়া সুন্নাত (পুরুষদের জন্য)। পরের চার চক্কর সাধারণ গতিতে সম্পন্ন করতে হবে।

সায়ীর সহজ দোয়া

সুবহানাল্লাহি ওয়াল হামদু লিল্লাহি ওয়া লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার ওয়া লা-হাওলা, ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লাবিল্লাহিল আ’লিয়্যিল আ’যীম, রাবি্বগফির ওয়ারহাম ওয়াআনতাল আ-আজ্জুল আকরাম।

সায়ীর কুরআনী দোয়া

‘ইন্নাছ্ ছাফা ওয়াল মারওয়াতা মিন্ শাআ’ইরিল্লাহ্ ফামান হাজ্জাল বাইতা আও-ই’ তামারা ফালা জুনাহা আ’লাইহি আইয়াত্ত্বাওয়াফা বিহিমা ওমান তাত্বাওয়াআ খাইরান ফা-ইন্নাল্লাহা শাকিরুণ আ’লীম।” উপরোক্ত দুই দোয়া সাতবার চক্করের সময় হাটতে চলতে পড়তে হবে। পরেরটি না পারলে উপরেরটিই যথেষ্ট হবে।

হজ্জ ও ওমরাহর করনীয়

একনজরে তিন প্রকার হজ্জের জরুরী কাজ, হুকুম ও তারিখ সমূহ।

১ম প্রকার হজ্জে ইফরাদের ১১টি জরুরী কাজ

৩টি ফরজ(১) ইহরাম (শুধু হজ্জের জন্য)।
(২) ৯ই জিলহজ্জ উ’কুফে আ’রাফা (সূর্য হেলার পর থেকে সুর্যাস্ত পর্যন্ত)।
(৩) ১০ থেকে ১২ই জিলহজ্জ তাওয়াফে যিয়ারাত তবে ১০ই জি্বলহজ্ব তারিখই উত্তম।
(৪) অকুফে মুযদালেফায় ১০ই জিলহজ্জ সুবহে সাদেক সূর্য উদয় পর্যন্ত।
(৫) ১০ই জিলহজ্জ বড় শয়তানকে (জামারাতে আক্কাবায়) ৭টি কঙ্কর মারা। সুর্য হেলার পূর্বে দুপুর ১২টার আগে সুন্নত।
(৬) মাথা মুন্ডানো তবে দম দিতে হবে।
(৭) সায়ী ৯ তারিখের পূর্বে বা পরে) করে দিবেন।
(৮) ১১ তারিখে তিন শয়তানকে (প্রথম ছোট/মেঝ ও পড়ে বড়) ৭ক্ম৩=২১টি পাথর মারা।
(৯) ১২ তারিখে অনুরূপ তিন শয়তানকে ৭*৩= ২১টি পাথর মারা। সর্বমোট তিন দিনে ৭+২১+২১=৪৯টি কঙ্কর মারা।
(১০) ‘বিদায়ী তাওয়াফে’ (মক্কার বাইরের লোকদের জন্য) বিদায়ের পূর্বে। এটি ওয়াজিব।
(১১) তাওয়াফে কুদুম করা। (মক্কায় গিয়ে সর্বপ্রথম)

২য় প্রকার হজ্জে কেরানের জরুরী কাজ

৩টি ফরজ
(১) ইহরাম (হজ্জ ও ওমরাহর জন্য)
(২) আরাফাতে অবস্থান।
(৩) তাওয়াফুয যিয়ারাত।১০টি ওয়াজিব
(৪) ওমরাহর তাওয়াফ
(৫) ওমরাহর সায়ী
(৬) হজ্জের সায়ী
(৭) অকুফে মুযদালিফায়
(৮) ১০ই জিলহজ্ব তারিখে বড় শয়তানকে ৭টি পাথর মারা (দুপুর ১২টার পূর্বে) সুন্নত।
(৯) দম দিতে হবে।
(১০) মাথা মুন্ডানো।
(১১) ১১ই জিলহজ্ব তারিখে তিন শয়তানকে পাথর মারা
(১২) ১২ তারিখে তিন শয়তানকে পূর্বের ছকের নিয়মে পৃথক পৃথক ভাবে সূর্য হেলার পরে নিয়ম অনুযায়ী পাথর মারা।
(১৩) বিদায়ী তাওয়াফ।

৩য় প্রকার হজ্জে তামাত্তুর ১৫টি জরুরী কাজ ফরজ

৪টি ফরজ
(১) ওমরাহর ইহরাম (বাংলাদেশ)।
(২) হজ্জের ইহরাম (৮ তারিখ মক্কায়)
(৩) উ,কুফে আরাফা (৯ই জিলহজ্জ সূর্য হেলার পর থেকে সুর্যস্তের পূর্ব মুহুর্ত পর্যন্ত)।
(৪) তাওয়াফে জিয়ারত (১০ তারিখ অথবা ১১, ১২ তারিখ)১১টি ওয়াজিব
(৫) তাওয়াফে ওমরাহ (মক্কায় গিয়েই)
(৬) ওমরাহর সায়ী (ওমরাহ তাওয়াফের পরই)
(৭) মাথা মুন্ডানো (ওমরাহর পর)।
(৮) হজ্জের সায়ী
(৯) বড় শয়তানকে ৭টি পাথর মারা ( ১০ই জিলহজ্ব তারিখ সুর্য হেলার বা ১২টা পূর্বে) সুন্নত।
(১০) কুরবানী করা (পাথর মেরে ১০ তারিখ)।
(১১) মাথা মুন্ডানো দম দিতে হবে।
(১২) ১১ তারিখ তিন শয়তানকে ৭+৭+৭=২১টি পাথর মারা।
(১৩) ১২ তারিখে তিন শয়তানকে ৭+৭+৭=২১টি পাথর মারা (সর্বমোট তিন দিনে ৭+২১+২১=৪৯টি পাথর মারতে হবে)।
(১৪) বিদায়ী তাওয়াফ।

উমরাহ ও হজ্বের ইহরামের প্রস্তুতি

ইহরামের প্রস্তুতি (বাড়ি থেকে এ প্রস্তুতি সম্পন্ন করুন)

  • ইহরামের প্রস্তুতি হিসেবে মোচ, নখ এবং শরীরের অতিরিক্ত পশম কেটে নিন। আলকিরা ১৬২; মানাসিক, মোল্লা আলী, পৃষ্ঠা : ৯১
  • এরপর উত্তমরূপে গোসল করে নিন। ইহরামের জন্য গোসল করা সুন্নত। গোসল সম্ভব না হলে শুধু অযু করলেও চলবে। জামে তিরমিযী, হাদীস : ৮৩০; রদ্দুল মুহতার ২/৪৮০
  • গোসলের পর পুরুষ মহিলা সকলে শরীরে আতর লাগাবেন। আতর শুধু শরীরে লাগানোই মুস্তাহাব। ইহরামের কাপড়ে আতর না লাগানোই ভালো। মানাসিক ৯৮; আলবাহরুল আমীক ২/৬৪৩; আলবাহরুর রায়েক ২/৩২১; আলমাজমূ ৭/২২৮

আর ইহরামের কাপড়ে এমন গাঢ় আতর লাগানো নিষেধ, যা ইহরামের পরও বাকি থাকে। সহীহ বুখারী, হাদীস : ১৫৩৯; আলমাবসুত ৪/১২৩; মানাসিক ৩২১

  • মহিলাগণও গোসলের পর শরীরে আতর লাগাতে পারবেন। তবে এত বেশি লাগাবেন না, যদ্দারা সুঘ্রাণ বাইরে ছড়িয়ে পড়ে। তবে তারা কাপড়ে আতর বা সুগন্ধি লাগাবেন না। সুনানে আবু দাউদ, হাদীস : ১৮৩০; আলমাসালিক ১/৩৩০
  • ইহরামের কাপড় পরে নিন। একটি কাপড় লুঙ্গির মতো করে পরবেন। এটি সেলাইহীন হওয়া উত্তম। নিচের এ কাপড়টি লুঙ্গির মতো সেলাই করে পরা মাকরূহ। নীচের অংশটি সেলাইবিহীন পরলে সতর যেন খুলে না যায় সেদিকে সতর্ক থাকতে হবে। অবশ্য যাদের সতর খুলে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে যেমন বৃদ্ধ বা লুঙ্গি পরার অভ্যাস নেই এমন লোকেরা সেলাইযুক্ত লুঙ্গি পরতে পারবেন। (আহকামে হজ্ব, মুফতী শফী রাহ. ৩৪; তরীকায়ে হজ্ব ও উমরা ১০৬)

অপরটি চাদর পরার মতো করে শরীরের উপরের অংশে পরবেন। উভয় কাঁধ ঢেকে চাদর পরুন। কেউ কেউ শুরু থেকেই ডান কাঁধ খোলা রেখে চাদর পরেন। এটি ঠিক নয়; বরং এটি শুধু তাওয়াফের ক্ষেত্রে করণীয়।

দুই ফিতা বিশিষ্ট চপ্পল বা পায়ের পাতার উঁচু অংশ খোলা থাকে এমন স্যান্ডেল পরে নিন। আদ্দুররুল মুখতার ২/৪৮১

আরও পড়ুন: হজ্ব ও উমরাহ: পদ্ধতি ও মাসায়েল

মহিলার ইহরামের প্রস্তুতি

মহিলারাও পুরুষের মতোই প্রস্তুতি নিবেন। তবে তারা স্বাভাবিক কাপড়, ঢিলেঢালা পোশাক পরবেন। তাদের জন্য ইহরামের ভিন্ন পোশাক নেই। এমনকি সাদা কাপড় পরাও জরুরি বা মুস্তাহাব নয়। তারা জুতা-মোজাও পরতে পারবেন। আর ইহরাম অবস্থায়ও চেহারার পর্দা করা জরুরি। তবে মুখমণ্ডলে কাপড় লাগানো যাবে না। মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা, হাদীস : ১৪৪১৯; ফাতহুল বারী ৩/৪৭৪; আলমাসালিক ১/৩৫৪; মানাসিক ১১৫

  • মহিলাগণ অপবিত্র অবস্থায় ইহরাম করতে পারবেন তবে ইহরামের পূর্বে গোসল করে নেওয়া মুস্তাহাব। সুনানে আবু দাউদ, হাদীস : ১৭৪০; মানাসিক ৯৭
  • পুরুষের মতো মহিলার জন্যও ইহরামের পূর্বে শরীরে আতর লাগানো মুস্তাহাব। আর কাপড়ে না লাগানোই ভালো। সুনানে আবু দাউদ : ১৮৩০; আলবাহরুল আমীক ২/৬৩৭-৬৩৮; আলবেনায়া ৫/৩৮; আলমাজমূ ৭/২২৮

উপরোক্ত নিয়মে ইহরামের প্রস্তুতি নিন। সামনে ইহরাম করার নিয়ম বলা হবে।

সফর শুরু

  • মাকরূহ ওয়াক্ত না হলে বের হওয়ার আগে দু’রাকাত সালাতুল হাজত পড়ে নিন। সফরে বের হওয়ার সময় দু’ রাকাত নামায পড়া সুন্নত। নামায শেষে সফরের কবুলিয়াত, কামিয়াবি, খায়ের-বরকত এবং নিজের ও পরিবার-পরিজনের জন্য আফিয়ত ও হেফাযতের দুআ করুন।
  • ঢাকা থেকে আগে মক্কা যাবেন না মদীনায় তা জেনে নিন। সফর যদি আগে মদীনার হয় তাহলে ঢাকা থেকে স্বাভাবিক পোশাকে সফর হবে। মদীনা থেকে মক্কায় যাওয়ার সময় ইহরাম বাঁধতে হবে। কিন্তু যদি ঢাকা থেকে জিদ্দা এবং সেখান থেকে মক্কার সফর হয় তাহলে বাড়ি থেকে বের হওয়ার সময় ইহরামের কাপড় পরে নিবেন।
  • বাড়ি থেকে বের হওয়ার আগে পাসপোর্ট, টিকেট, রিয়াল নিয়েছেন কি না তা আবার দেখে নিন। সাথের বড় ব্যাগে নাম লেখা হল কি না নিশ্চিত হোন। হাত ব্যাগে বা সাথে বহনযোগ্য ব্যাগে কাঁচি, ব্লে−ড, রেজর, ছুরি ইত্যাদি রাখবেন না। কেননা এগুলো বিমানে যাত্রীর সাথে রাখা নিষেধ। তাই এ জাতীয় প্রয়োজনীয় লোহার জিনিসপত্র লাগেজ বা বড় ব্যাগে নিন।
  • পরিবার-পরিজন ও আত্মীয়দের থেকে বিদায় নিন এবং বের হওয়ার সময় এ দুআ পড়ুন

بِسْمِ اللّهِ تَوَكَّلْتُ عَلي اللّهِ، لاَ حَوْلَ وَلاَ قُوَّةَ اِلاَّ بِاللّهِ

  • সম্ভব হলে পরিবার-পরিজনের হেফাযতের উদ্দেশ্যে নিম্নের দুআটি পড়ুন :

اَسْتَوْدِعُكُمُ اللّهَ الذِّىْ لاَ تَضِيْعُ وَدَائِعُهُ

অর্থ : আমি তোমাদেরকে আল্লাহর হেফাযতে রাখছি, যাঁর (কাছে রাখা) আমানত নষ্ট হয় না।

اَللّهُمَّ اِنِّيْ اَعُوْذُ بِكَ اَنْ اَضِلَّ اَوْ اُضَلَّ، اَوْ اَزِلَّ اَوْ اُزَلَّ، اَوْ اَظْلِمَ اَوْ اُظْلَمَ، اَوْ اَجْهَلَ اَوْ يُجْهَلَ عَلَيَّ.

অর্থ : ইয়া আল্লাহ! আমি আপনার নিকট আশ্রয় চাচ্ছি নিজে পথভ্রষ্ট হওয়া থেকে এবং অন্য কেউ আমাকে পথভ্রষ্ট করা থেকে। নিজের পদস্খলন থেকে এবং অন্যের দ্বারা পদস্খলিত হওয়া থেকে। নিজে জুলুম করা থেকে এবং মাজলুম হওয়া থেকে। আমি অন্যের সাথে যেন মূর্খতার আচরণ না করি এবং কেউ যেন আমার সাথে মূর্খতার আচরণ না করে।

  • বিসমিল্লাহ বলে ডান পা দিয়ে গাড়িতে উঠুন। এরপর আলহামদুলিল্ল−াহ বলুন। এরপর প্রথমে তিনবার আল্লাহু আকবার বলে এই দুআ পড়ুন

سُبْحَانَ الَّذِىْ سَخَّرَ لَنَا هَذَا وَمَا كُنَّا لَهُ مُقْرِنِيْنَ وَاِنَّا اِلَي رَبِّنَا لَمُنْقَلِبُوْنَ.

এরপর তিনবার আলহামদুলিল্লাহ ও তিনবার আল্লাহু আকবার বলুন। সুনানে আবু দাউদ, হাদীস : ২৬০৫

  • এরপর নিচের দুআটি পড়ুন, আরবী না পারলে অন্তত বাংলায় দুআ করুন।

اَللّهُمَّ اِنَّا نَسْئَلُكَ فِيْ سَفَرِنَا هَذَا الْبِرَّ وَالتَّقْوَىْ وَمِنَ الْعَمَلِ مَا تَرْضَي اَللّهُمَّ هَوِّنْ عَلَيْنَا سَفَرَنَا هَذَا وَاطْوِ عَنَّا بُعْدَهُ، اَللّهُمَّ اَنْتَ الصَّاحِبُ فِيْ السَّفَرِ وَالْخَلِيْفَةُ فِيْ الْاَهْلِ، اَللّهُمَّ اِنِّيْ اَعُوْذُ بِكَ مِنْ وَعْثَاءِ السَّفَرِ وَكَآبَةِ الْمَنْظَرِ وَسُوْءِ الْمُنْقَلَبِ فِيْ الْمَالِ وَالْاَهْلِ.

অর্থ : হে আল্লাহ! আমরা আমাদের এই সফরে আপনার কাছে নেকি ও তাকওয়া প্রার্থনা করছি। আর এমন সব আমল প্রার্থনা করছি, যাতে আপনি সন্তুষ্ট হন। হে আল্লাহ! আমাদের এ সফরকে সহজ করে দিন এবং এর দূরত্বকে সংকুচিত করে দিন। হে আল্লাহ! সফরে আপনিই আমাদের সাথী এবং পরিবার-পরিজনের মাঝে আপনি একমাত্র কর্মবিধায়ক। হে আল্লাহ! নিশ্চয়ই আমি আপনার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করছি সফরের কষ্ট ও মন্দ পরিস্থিতি থেকে এবং ফিরে আসার পর সম্পদ ও পরিবার-পরিজনের মধ্যে দুরবস্থার সম্মুখীন হওয়া থেকে।

উপরের দুআসমূহ শুধু হজ্বের সফরের জন্য নয়; বরং যে কোনো সফরের মাসনুন দুআ।

ঢাকার হাজ্বীক্যাম্প ও বিমানবন্দর

  • বাংলাদেশ বিমানের সব হজ্বযাত্রীকে হাজ্বীক্যাম্পে যেতে হয়। এখান থেকে তাদের ব্যবস্থাপনায় বিমানবন্দরে নিয়ে যাওয়া হয়। কখনো সরাসরি বিমানবন্দর যেতে হলে আগেই জানিয়ে দেওয়া হয়।
  • যারা হাজ্বীক্যাম্প হয়ে যাবেন, তাদের ইমিগ্রেশন, বোডিং পাস, মাল-সামানা ও লাগেজ গ্রহণ ইত্যাদি হাজ্বীক্যাম্পেই সম্পন্ন করা হয়। তাই সাথে বহনযোগ্য একান্ত জরুরি সামানাসহ ছোট ব্যাগ রেখে অন্য সব সামানা লাগেজে দিয়ে দিন।
  • সকল উমরাকারীর এবং বিমান বাংলাদেশের হজ্বযাত্রী ছাড়া অন্য হাজ্বীদের সরাসরি বিমানবন্দরে যেতে হয়। তাই তাদের ইমিগ্রেশন, বোডিং ওখানেই হবে। সরাসরি মক্কাগামী হাজ্বীদের জন্য বাসা থেকে ইহরামের কাপড় পরা এবং প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি সেরে আসা ভালো। যেন বাড়ি থেকে যারা ইহরাম করে আসেননি তারা ইমিগ্রেশনের পর কিংবা বিমানে উঠেই নিয়ত ও তালবিয়ার মাধ্যমে ইহরাম করে নিতে পারেন।

বিমান বন্দরে নামায

যারা ঢাকায় মুকীম তারা বিমান বন্দরেও মুকীম। বিমান ফ্লাই করার আগ পর্যন্ত তারা মুকীম থাকবেন। অবশ্য বিমান উপরে উঠে গেলে পথিমধ্যে সকলে মুসাফির থাকবেন। তাই বিমানের ভেতর চার রাকাত বিশিষ্ট ফরয নামায দুই রাকাত পড়বেন।

বিমানে অযু ও নামায

বিমানে বিশেষত হজ্ব ফ্লাইটে যাত্রীদের অযু করা নিষেধ থাকে। তাই নামাযের সময় অযু থাকলে ভালো। অন্যথায় এ পরিস্থিতিতে তায়াম্মুম করা জায়েয হবে। আর বিমানে দাঁড়িয়ে বা বসে সমতলে রুকু-সিজদা করে নামায পড়া সম্ভব। তাই সেভাবেই নামায পড়তে চেষ্টা করবেন। এভাবে নামায পড়লে এ নামায পরিপূর্ণ সহীহ হয়ে যাবে। পরে আর পড়তে হবে না। কিন্তু কেউ যদি সিটে বসে ইশারায় পড়ে নেন তবে পরবর্তীতে এ নামায অবশ্যই কাযা পড়তে হবে।

বিশেষ দ্রষ্টব্য:

বাংলাদেশ থেকে যাওয়ার সময় বিমান পশ্চিম দিকে যায়। এ জন্য নামাযের ওয়াক্ত দীর্ঘ সময় থাকে। পক্ষান্তরে ফেরার সময় নামাযের ওয়াক্ত দ্রুত শেষ হয়ে যায়। ফজর ও মাগরিবের ওয়াক্ত খুব দ্রুত শেষ হয়ে যায়। ফলে অনেকেরই নামায কাযা হয়ে যায়। তাই এ ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে।

শুধু উমরা ও তামাত্তু হজ্বকারীর উমরা আদায়ের পদ্ধতি

তামাত্তু হজ্বকারীকে প্রথমে উমরা আদায় করতে হয়। অতপর মাথা মুণ্ডানোর মাধ্যমে হালাল হয়ে হজ্বের সময় অর্থাৎ ৭/৮ যিলহজ্ব হজ্বের ইহরাম করতে হয়। তাই তামাত্তুকারীর ধারাবাহিক আমল হিসেবে নিম্নে আগে উমরার পদ্ধতি ও নিয়ম উল্লেখ করা হচ্ছে। প্রকাশ থাকে যে, যারা শুধু উমরা আদায় করতে চান তাদের জন্যও উমরার এই বিবরণ প্রযোজ্য হবে।

উমরার ফরয-ওয়াজিব

মীকাত বা তার আগে থেকে শুধু উমরার ইহরাম করে বাইতুল্লাহ শরীফ তাওয়াফ করা, সাফা-মারওয়ার সাঈ করা, এরপর মাথার চুল মুণ্ডিয়ে বা ছোট করে হালাল হওয়া। অর্থাৎ উমরার ফরয আমল দুটি এবং ওয়াজিব আমল দুটি।

উমরার দুই ফরয : ১. উমরার নিয়তে ইহরাম করা। অর্থাৎ উমরার নিয়ত করে তালবিয়া পাঠ করা। ২. বায়তুল্লাহ শরীফের তাওয়াফ করা। বাদায়েউস সানায়ে ২/৪৭৯

উমরার দুই ওয়াজিব : ১. সাফা-মারওয়ার মাঝে সাঈ করা। ২. মাথার চুল কামিয়ে ফেলা বা ছোট করা। বাদায়েউস সানায়ে ২/৪৮০

কখন ইহরাম বাঁধবেন?

ঢাকা থেকে উড়োজাহাজে করে সরাসরি মক্কাগামী হাজ্বীদের জন্য মীকাত হল কারনুল মানাযিল ও যাতু র্ইক-এর মধ্যবর্তী স্থান। (আহকামে হজ্ব ৪১) যে স্থান সাধারণত বিমান জিদ্দা অবতরণের আধা ঘণ্টা আগে অতিক্রম করে থাকে। ঢাকা থেকে আগে মক্কাগামীদের জন্য ইহরাম না করে এই স্থান অতিক্রম করা জায়েয নয়। এই স্থানের আগেও ইহরাম করা জায়েয। বরং মুস্তাহাব হল নিজ বাড়ি থেকে ইহরাম করা। (মুসতাদরাকে হাকেম, হাদীস : ৩১৪৪; ইলাউস সুনান ১০/২১; তাফসীরে ইবনে কাসীর ১/৩৪৫; মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা ৮/৩৪; আততামহীদ ১৫/১৪৪-১৪৬)

তবে ফ্লাইট শিডিউল পরিবর্তন কিংবা বিলম্ব হতে পারে বিধায় ফ্লাইটের সময়ের ব্যাপারে নিশ্চিত হয়ে ইহরাম বাঁধবেন। সঠিক সময়ের ব্যাপারে নিশ্চিত হতে না পারলে বিমানে উঠার আগে ইহরামের কাপড় পরে ইহরামের দুই রাকাত নামায পড়ে নিন। এরপর বিমানে উঠার আগ মুহূর্তে কিংবা বিমানে উঠেই ইহরামের নিয়ত করে তালবিয়া পড়ে ইহরাম সম্পন্ন করে নিবেন।

আর যদি ঢাকা থেকে আগে মদীনা মুনাওয়ারা যাওয়া হয় তাহলে এখন ইহরাম বাঁধবেন না; বরং সাধারণ পোষাকে মদীনা মুনাওয়ারা যাবেন। অতপর মদীনা মুনাওয়ারা থেকে মক্কায় যাওয়ার সময় মদীনা মুনাওয়ারা থেকে কিংবা সেখানের মীকাত যুলহুলাইফা থেকে ইহরাম বাঁধবেন। গুনইয়াতুন নাসিক ৫০

যেভাবে ইহরাম বাঁধবেন

মাকরূহ ওয়াক্ত না হলে ইহরামের নিয়ত করার আগে টুপি মাথায় দিয়ে বা মাথা ঢেকে দু’রাকাত নামায পড়ে নিন। এই দু’রাকাত নামায পড়া সুন্নত। (সহীহ বুখারী, হাদীস : ১৫৩৪; সহীহ মুসলিম, হাদীস : ১১৮৪; মুসতাদরাকে হাকেম, হাদীস : ১৬৯৯)

এই নামাযের জন্য আলাদা কোনো নিয়ত বা নির্দিষ্ট কোনো সূরা নেই। মাকরূহ ওয়াক্ত হলে কিংবা অন্য কোনো ওজরে এই দু’রাকাত নামায পড়তে না পারলেও কোনো সমস্যা নেই। কেননা, ইহরাম বাঁধার জন্য এই নামায জরুরি নয়। এই নামায ছাড়াও ইহরাম বাঁধা যায়। শরহু মুখতাসারিত তহাবী ২/৫২১; রদ্দুল মুহতার ২/৪৮২

নামায শেষে টুপি খুলে নিন। এরপর কিবলামুখী হয়ে পুরুষ-মহিলা সকলে এভাবে নিয়ত করুন :

উমরার ইহরামের নিয়ত : হে আল্লাহ! আমি আপনার সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য উমরার নিয়ত করছি। তা সহজ করুন এবং কবুল করুন।’

নিয়তের পর তালবিয়া পড়ুন। নিয়তের পর তালবিয়া পড়ার দ্বারাই ইহরাম সম্পন্ন হয়ে যায়। পুরুষ উচ্চস্বরে আর মহিলা অনুচ্চস্বরে তালবিয়া পড়বেন। সহীহ ইবনে হিব্বান : ৩৮০৫; সুনানে দারা কুতনী ২/২৯৫; মাবসূত ৪/৬, ১৮৮

তালবিয়া হল :

لَبَّيْكَ اَللّهُمَّ لَبَّيْكَ، لَبَّيْكَ لاَ شَرِيْكَ لَكَ لَبَّيْكَ، اِنَّ الْحَمْدَ وَالنِّعْمَةَ لَكَ وَالْمُلْكَ، لاَ شَرِيْكَ لَكَ.

উচ্চারণ : লাব্বাইকা আল−াহুম্মা লাব্বাইক। লাব্বাইকা লা-শারীকা লাকা লাব্বাইক। ইন্নাল হামদা ওয়ান নি’মাতা লাকা ওয়ালমুলক। লা-শারীকা লাক।

অর্থ : ‘‘আমি হাজির : হে আল্লাহ! আমি হাজির, আমি হাজির। আপনার কোনো শরিক নেই, আমি হাজির। নিশ্চয়ই সকল প্রশংসা ও নেয়ামত আপনারই এবং সকল রাজত্ব আপনার। আপনার কোনো শরিক নেই।’’ সহীহ বুখারী, হাদীস : ১৫৪৯

  • উমরার নিয়ত করে তালবিয়া পড়ার দ্বারাই আপনার ইহরাম সম্পন্ন হয়ে গেছে। এখন থেকেই আপনার উপর ইহরামের বিধি-নিষেধ আরোপিত হবে। তাই এ ব্যাপারে সতর্ক থাকুন।
  • এরপর দরূদ শরীফ পড়ুন এবং এই দুআ পড়ুন

اَللّهُمَّ إِنِّيْ أَسْئَلُكَ رِضَاكَ وَالْجَنَّةَ، وَاَعُوْذُ بِكَ مِنْ غَضَبِكَ وَالنَّارِ.

অর্থ : : হে আল্লাহ! আমি আপনার সন্তুষ্টি ও জান্নাত প্রার্থনা করছি। আপনার অসন্তুষ্টি ও জাহান্নাম থেকে পরিত্রাণ চাচ্ছি। সুনানে দারা কুতনী ২/২৩৮; আলকিরা লিকাসিদি উম্মিল কুরা ১৭৮

  • এরপর প্রাণ খুলে দুআ করুন। এ সময় দুআ কবুল হয়।

ইহরাম অবস্থায় যেসব কাজ নিষিদ্ধ

  • ঝগড়া-বিবাদ করা নিষেধ।
  • সাজ-সজ্জা গ্রহণ করা নিষেধ।

হাদীস শরীফে আছে, ‘উত্তম হজ্ব¡ পালনকারী সেই ব্যক্তি, যার চুল উষ্কখুষ্ক এবং দেহ কটুগন্ধি।’ জামে তিরমিযী, হাদীস : ২৯৯৮

তাই ইহরাম অবস্থায় সবধরনের সাজ-সজ্জা ত্যাগ করুন। সাজ-সজ্জার জন্য চুলে বা শরীরে তেলও ব্যবহার করা যাবে না।

  • পুরুষের জন্য শরীরের কোনো অঙ্গের আকৃতি বা গঠন অনুযায়ী তৈরিকৃত বা সেলাইকৃত পোশাক পরাও নিষেধ। যেমন : পাঞ্জাবি, জুব্বা, শার্ট, গেঞ্জি, কোর্ট, সোয়েটার, সেলোয়ার, প্যান্ট, জাঙ্গিয়া। (সহীহ বুখারী, হাদীস : ১৫৪৩; আদ্দুররুল মুখতার ২/৪৮৯) লুঙ্গিও সেলাইহীন পরাই উত্তম। সেলাইযুক্ত লুঙ্গি পরা মাকরূহ। তবে এ কারণে কোনো প্রকার দম বা জরিমানা ওয়াজিব হবে না। কারণ এটা শরীরের আদলে সেলাইযুক্ত পোশাক পরিধানের মতো নয়। তাই একেবারে বৃদ্ধ বা রুগী, যারা সেলাইহীন পরলে সতর খুলে যাওয়ার আশঙ্কা আছে তাদের জন্য সেলাইযুক্ত লুঙ্গি পরাই বাঞ্ছনীয়।

মুফতী মুহাম্মাদ শফী রাহ. বলেন, ইহরামের লুঙ্গির মাঝে সেলাই করা থাকলেও কোনো অসুবিধা নেই। তবে উত্তম হল, ইহরামের কাপড় একেবারে সেলাইমুক্ত হওয়া। আহকামে হজ্ব ৩৪; তরীকায়ে হজ্ব ও উমরা ১০৬

  • পুরুষের জন্য মাথা ও চেহারা ঢাকা নিষেধ। টুপি, চাদর, কম্বল ইত্যাদি দ্বারা চেহারা, মাথা ঢাকা যাবে না। আর মহিলাদের জন্য শুধু চেহারায় কাপড় লাগানো নিষেধ। মুআত্তা মুহাম্মাদ, হাদীস : ৪১৮; আসসুনানুল কুবরা, বাইহাকী, হাদীস : ৯০৪৮; আদ্দুররুল মুখতার ৪/৪৮৭-৮
  • পুরুষের জন্য পায়ের পাতার উঁচু অংশ ঢেকে যায় এমন জুতা পরিধান করা নিষেধ। এমন জুতা বা স্যান্ডেল ব্যবহার করবেন যা পরলে ওই উঁচু অংশ খোলা থাকে। যেমন দুই ফিতাবিশিষ্ট স্যান্ডেল। সহীহ বুখারী, হাদীস : ১৫৪২; রদ্দুল মুহতার ২/৪৯০
  • ইহরাম অবস্থায় কাপড় বা শরীরে আতর বা সুগন্ধি লাগানো নিষেধ। তদ্রুপ ইচ্ছাকৃত আতরের ঘ্রাণ নেওয়াও নিষেধ। সুগন্ধিযুক্ত তেল, নারিকেল ও সরিষার তেল এবং যয়তূন ও তিলের তেলও লাগানো যাবে না। সুগন্ধি সাবান দ্বারা হাত-পা ইত্যাদি ধোয়া যাবে না। পাউডার, স্নো, ক্রীম-পারফিউম ইত্যাদি ব্যবহার করা যাবে না। এমনকি পান ছাড়া শুধু সুগন্ধি জর্দাও খাওয়া যাবে না। পানের সাথে খাওয়াও মাকরূহ। ইচ্ছাকৃতভাবে ফল-ফুলের ঘ্রাণ নেওয়া মাকরূহ। সহীহ মুসলিম, হাদীস : ১১৭৭; মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা, হাদীস : ১৪৮২৭, ১৪৮৩৩; মানাসিক ১২১, ৩১৭; আহকামে হজ্ব ৩৪, ৯৩
  • চুল, দাড়ি আঁচড়ানো ও চুলে সিঁথি করা নিষেধ। কিতাবুল হুজ্জাহ ১/৪৯৮
  • নখ কাটা বা শরীরের কোনো স্থানের চুল বা পশম উপড়ানো নিষেধ। আলমুগনী ৫/১৪৫; মানাসিক ১১৭
  • ইহরাম অবস্থায় স্বামী-স্ত্রীর বিশেষ সম্পর্ক স্থাপন করা বা স্ত্রীর সামনে কামোত্তেজক কথা বলা বা কাজ করা নিষেধ। তবে স্বামী-স্ত্রী পাশাপাশি বসা, চলাচলে স্ত্রীর হাত ধরে রাখা নিষেধ নয়। কিন্তু একই বিছানায় শোয়া যাবে না। সূরা বাকারা ২ : ১৯৭; মানাসিক ১১৭
  • বন্য পশু-পাখি শিকার করা বা কোনো শিকারীকে সহযোগিতা করা নিষেধ। তবে হাঁস-মুরগীসহ যে কোনো গৃহপালিত পশু-পাখি জবাই করা জায়েয। সূরা মায়েদা ৯৫-৯৬; সহীহ মুসলিম, হাদীস : ১১৯৬; মানাসিক ১১৯
  • কাপড় বা শরীরের উকুন মারা নিষেধ। মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা, হাদীস :১৫৮৭৬; মানাসিক ১১৯; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/২২৪

ইহরাম অবস্থায় যা নিষিদ্ধ নয়

ইহরাম অবস্থায় মাথা ও মুখ ছাড়া গোটা শরীর চাদর ইত্যাদি দিয়ে আবৃত করা যাবে। কান, ঘাড়, গলা ও পা ঢাকা যাবে। মাথা ও গাল বালিশে রেখে শোয়া যাবে। তবে পুরো মুখমণ্ডল বালিশের উপর রেখে শোয়া যাবে না। তদ্রƒপ চাদর, লেপ ইত্যাদি দিয়ে মাথা, মুখ ঢাকা যাবে না। মানাসিক ১২৩-৪

  • ইহরাম অবস্থায় ইহরামের পোশাক পরিবর্তন করা যাবে। ময়লা বা নাপাক না হলেও পরিবর্তন করা যাবে। মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা, হাদীস : ১৫০১০; মানাসিক ৯৮
  • ইহরামের কাপড় ছিঁড়ে গেলে সেলাই করে বা তালি লাগিয়ে পরিধান করা যাবে। মানাসিক ৯৮; রদ্দুল মুহতার ২/৪৮১
  • টুথপেস্ট ও মাজন দিয়ে দাঁত পরিষ্কার করা যাবে। এতে কোনো অসুবিধা নেই।
  • সাবান ব্যবহার না করে গোসল করা যাবে। তবে ইচ্ছাকৃত শরীরের ময়লা পরিষ্কার করা বা উঠানো যাবে না। মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা, হাদীস : ১৩০৫৯-৬৩; মানাসিক ১২০, ১২২; গুনইয়াতুন নাসিক ৯০
  • সুঘ্রাণযুক্ত ফল খাওয়া নিষিদ্ধ নয়। তবে ইচ্ছাকৃত ফলের ঘ্রাণ শোঁকা মাকরূহ। যুবদাতুল মানাসিক ১০০
  • মশা-মাছি, পিঁপড়া, বিচ্ছু ও কষ্টদায়ক পোকা-মাকড় মারা যাবে। কিতাবুল হুজ্জাহ ১/৪৯৬; মানাসিক ৩৭৯
  • মাথা, দাড়ি চুলকানো জায়েয। চুল পড়ার আশঙ্কা থাকলে কম চুলকাবেন। মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা, হাদীস : ১৫১৭৮; মানাসিক ১২৫
  • আয়না দেখা যাবে। কিতাবুল হুজ্জাহ ১/৪৯৮
  • ঘ্রাণমুক্ত লিপজেল, ভ্যাসলিন সাজ-সজ্জার নিয়ত ছাড়া জরুরতবশত ব্যবহার করা যাবে। মানাসিক ১২২
  • ছাতা ব্যবহার করা যাবে। মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা ৮/৪১৭
  • সেলাইযুক্ত বেল্ট, ব্যাগ ব্যবহার করা যাবে। মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা, হাদীস : ১৫৬৮৬; মানাসিক, মোল্লা আলী কারী ১২২
  • আংটি, ঘড়ি, চশমা পরা যাবে। মানাসিক ১২২

মহিলাদের ইহরাম সংক্রান্ত বিশেষ মাসায়েল

  • মহিলাদের ইহরামের নিয়ত ও ইহরাম করার নিয়মাবলি পুরুষের মতোই। আর ইহরামের অধিকাংশ বিধি-নিষেধও পুরুষের মতোই। তবে কিছু কিছু বিষয়ে ভিন্নতা রয়েছে। যেমন, মহিলাদের জন্য সেলাইযুক্ত কাপড় পরা জায়েয। মহিলাগণ ইহরাম অবস্থায় ঢিলেঢালা স্বাভাবিক পোশাক পরবেন। নতুন পোশাক জরুরি নয়। রঙিন পোশাক এবং বাড়িতে ব্যবহৃত সাধারণ পোশাকও পরতে পারবেন। কালো বোরকা ব্যবহার করতে পারবেন। অনেকে ইহরাম অবস্থায় সাদা বোরকা পরা এবং সাদা পোশাক পরা জরুরি মনে করেন। এটা ঠিক নয়। মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা, হাদীস : ১৪৪১৯; মাসালিক ১/৩৫১; মানাসিক ১১৫; গুনইয়াতুন নাসিক ৯৪
  • মক্কায় অবস্থানকালে মহিলাগণ হজ্বের ইহরাম বাসাতেই করবেন। এটিই উত্তম।
  • বাইরে বের হলে অবশ্যই মাথা, চুল ঢাকবেন এবং মুখমণ্ডলের পর্দাও করবেন। ইহরাম অবস্থায় পরপুরুষের সামনে চেহারা খোলা রাখা যাবে না। অন্য সময়ের মতো এখনও চেহারার পর্দা করা জরুরি। কিন্তু মুখমণ্ডলে কাপড় লাগানো যাবে না। এজন্য বিশেষ ধরনের ক্যাপ পাওয়া যায়, যা পরে উপর দিয়ে নেকাব ঝুলিয়ে দিলে চেহারার পর্দাও হয়, নেকাবও চেহারার সাথে লেগে থাকে না। হ্যাঁ, বাতাসে বা হাঁটা-চলার সময় মাঝে মধ্যে চেহারার সাথে নেকাব লেগে গেলে কোনো অসুবিধা নেই। সুনানে আবু দাউদ, হাদীস : ১৮৩৩; মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা ৮/৪৩৩; মানাসিক ১১৫
  • ইহরাম অবস্থায় চুলে তেল দেওয়া, সিঁথি করা যাবে না। চুল বেঁধে রাখতে পারবেন। আর চুল না আঁচড়ানোর কারণে যদি খুব বেশি অস্বস্তি লাগে কিংবা চুলে জট লেগে যায় তাহলে সাজসজ্জার নিয়ত না করে প্রয়োজনমতো আঁচড়ানো যাবে।
  • মেহেদি লাগানো যাবে না এবং স্নো, পাউডার, লিপস্টিক ইত্যাদি সাজসজ্জার প্রসাধনী ঘ্রাণমুক্ত হলেও ব্যবহার করা যাবে না। গুনইয়াতুন নাসিক, পৃষ্ঠা : ৮৯-৯০
  • জুতা, মোজা পরতে পারবেন। সুনানে আবু দাউদ, হাদীস : ১৮৩১; ফাতাওয়া খানিয়া ১/২৮৬; গুনইয়াতুন নাসিক ৯৪
  • মহিলারা ইহরাম অবস্থায় হাত মোজাও পরতে পারবেন। আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. বলেন, মুহরিম মহিলা হাতমোজা ও পায়জামা পরিধান করতে পারবে। মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা, হাদীস : ১৪৪৪০

সাদ ইবনে আবী ওয়াক্কাস রা. থেকে বর্ণিত আছে, তিনি ইহরাম অবস্থায় তার কন্যাদেরকে হাতমোজা পরার নির্দেশ দিতেন। কিতাবুল উম্ম ২/২২৩

কাসিম, হাকাম, হাম্মাদ রাহ. প্রমুখ তাবেয়ীগণের মতেও ইহরাম অবস্থায় মহিলাদের হাতমোজা পরা জায়েয। মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা : ১৫৯৬৭, ১৪৪৪১

  • ওজর অবস্থায় থাকলে অর্থাৎ মাসিক ঋতুস্রাব বা সন্তান প্রসবোত্তর স্রাব অবস্থায় ইহরামের নিয়তে তালবিয়া পড়তে পারবেন। হজ্বের অন্যান্য কাজও করতে পারবেন। শুধু তাওয়াফ, নামায, কুরআন তিলাওয়াত ও মসজিদে প্রবেশ করা নিষেধ। সহীহ বুখারী, হাদীস : ১৫৫৬; গুনইয়াতুন নাসিক ৯৪
  • স্বর্ণ-রূপা ও অন্যান্য অলংকার পরতে পারবেন। তবে ইহরাম অবস্থায় অলংকার না পরাই ভালো। মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা ৮/৪০৭; যুবদাতুল মানাসিক ১০৩; ফাতাওয়া খানিয়া ১/২৮৬
  • তালবিয়া নিচু আওয়াজে পড়বেন। কেননা মহিলাদের জন্য জোরে পড়া নিষেধ। মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা, হাদীস : ১৪৮৮২; মানাসিক ১১৫; গুনইয়াতুন নাসিক ৯৪

নাবালেগ, অবুঝ শিশু ও পাগলের ইহরামের নিয়ম ও এ সংক্রান্ত মাসায়েল

নাবালেগ ছেলে-মেয়ে যারা বুঝমান তারা নিজের ইহরাম নিজেই করবে। অর্থাৎ নফল উমরার নিয়ত করে তালবিয়া পড়বে। তদ্রুপ হজ্বের সময় নফল হজ্বের নিয়ত করে তালবিয়া পড়বে। আর অবুঝ শিশু ও পাগলের পক্ষ থেকে তার ইহরাম সফরে থাকবেন এমন অভিভাবক করবেন। অর্থাৎ এভাবে বলবেন যে, আমার ছেলে বা ভাই অমুকের পক্ষ থেকে ইহরাম করছি। হে আল্লাহ! আপনি কবুল করুন, সহজ করুন। এরপর তালবিয়া পড়বেন। মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা, হাদীস : ১৪৩০১

  • তাওয়াফ, সাঈসহ সকল আমলে বাচ্চাকেও সাথে রাখবেন এবং তার পক্ষ থেকেও নিয়ত করবেন। মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা, হাদীস : ১৫১১০
  • নাবালেগ, অবুঝ শিশু ও পাগলকেও ইহরামের নিষিদ্ধ কাজ থেকে বিরত রাখতে চেষ্টা করবেন। তবে তাদের দ্বারা কোনো ত্র“টি হয়ে গেলে কোনো জরিমানা দম বা সদকা ওয়াজিব হবে না। মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা, হাদীস : ১৫১১৪; আলমাবসূত, সারাখসী ৪/৬৯
  • হালাল হওয়ার সময় বড়দের মতো তাদের চুল কেটে দিতে হবে।
  • বুঝমান বাচ্চা হজ্বের সকল কাজ নিজে করতে সক্ষম হলে তাকেই করতে হবে। নিজে করার সামর্থ্য থাকলে তার পক্ষ থেকে অন্যের করে দেওয়া জায়েয হবে না। মানাসিক ১১২; আলমাসালিক ১/৩৬১
  • নাবালেগের উপর দমে শোকর বা জরিমানা দম ওয়াজিব হয় না। তাই না দিলেও চলবে। তবে দেওয়া উত্তম। মানাসিক ২৬৩

তালবিয়ার ক্ষেত্র ও নিয়ম

  • তামাত্তু হজ্বকারীগণ বা শুধু উমরাহকারীগণ উমরার ইহরাম বাঁধার পর থেকে উমরার তাওয়াফ করার আগ পর্যন্ত তালবিয়া পড়তে থাকবেন। উমরার তাওয়াফের শুরুতে বন্ধ করে দিবেন। এরপর হজ্বের ইহরামের পর থেকে ১০ যিলহজ্ব কংকর নিক্ষেপের আগ পর্যন্ত তালবিয়া পড়বেন। আর ইফরাদ ও কিরানকারীগণ ইহরাম বাঁধার পর থেকে একেবারে ১০ যিলহজ্ব কংকর নিক্ষেপের আগ পর্যন্ত পুরো সময়, এমনকি কিরানকারী উমরার তাওয়াফরত অবস্থায়ও তালবিয়া পড়বেন। সহীহ বুখারী, হাদীস : ১৫৪৪; সুনানে আবু দাউদ, হাদীস : ১৮১৭; মানাসিক ১৮২
  • যেকোনো স্থান ও অবস্থার পরিবর্তনে তালবিয়া পড়া মুস্তাহাব। যেমন যেকোনো নামাযের পরে। বসলে, দাঁড়ালে, শুয়ে পড়লে। কোথাও যাত্রাকালে, উপরে বা গাড়িতে উঠার সময়, নামার সময়, সিটে বসলে, সিট থেকে দাঁড়ালে। কারো সাথে সাক্ষাতের সময়। সাহরীর সময় এবং ঘুম থেকে উঠে ইত্যাদি। মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা, হাদীস : ১২৮৯৫; মানাসিক ১০৩
  • এছাড়া স্বাভাবিক অবস্থায় থাকলে ইহরামকারীর জন্য বেশি বেশি তালবিয়া পড়া মুস্তাহাব। বিশেষত হজ্বের সময় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও ফযিলতপূর্ণ যিকর এটিই। মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা, হাদীস : ১৫২৭৭; আলকিরা ১৭০; গুনইয়াতুন নাসিক ৪৮
  • তালবিয়া বেশি বেশি পড়া এবং পুরুষের জন্য শব্দ করে পড়া মুস্তাহাব।Ñসুনানে আবু দাউদ, হাদীস : ১৮১৪; মানাসিক ১০২-৩; রদ্দুল মুহতার ২/৪৮৪

মসজিদে হারামে প্রবেশ ও সংশ্লিষ্ট কিছু মাসায়েল

  • মসজিদে হারামে প্রবেশের সময় অন্যান্য মসজিদের মতো নফল ইতিকাফের নিয়ত করুন এবং বিসমিল্লাহ ও দরুদ শরীফ পড়ুন। এরপর এই দুআ পড়ুন

اَللَّهُمَّ اغْفِرْ لِيْ ذُنُوْبِيْ وَافْتَحْ لِيْ أَبْوَابَ رَحْمَتِكَ.

অর্থ : : হে আল্লাহ! আমার গুনাহসমূহ ক্ষমা করুন এবং আপনার রহমতের দরজাসমূহ আমার জন্য খুলে দিন।

  • কাবা শরীফ দেখে নিম্নোক্ত দুআ পড়ুন

اللّهُمَّ زِدْ هَذَا البَيْتَ تَشْرِيْفًا وَتَعْظِيْماً وَتَكْرِيْمًا وَمَهَابَةً وَزِدْ مَنْ شَرَّفَهُ وَكَرَّمَهُ مِمَّنْ حَجَّهُ أَوْ اعْتَمَرَهُ تَشْرِيْفًا وَتَكْرِيْمًا وَتَعْظِيْمًا وَبِرًّا، اللّهُمَّ أَنْتَ السَّلاَمُ وَمِنْكَ السَّلاَمُ فَحَيّنَا رَبَّنَا بِالسَّلاَمِ

অর্থ : হে আল্লাহ! আপনার এই ঘরের বড়ত্ব, সম্মান ও মর্যাদা এবং শান-শওকত বাড়িয়ে দিন এবং হজ্ব ও উমরাকারীদের মধ্যে যে এ ঘরের সম্মান ও ইহতিরাম করবে তার সম্মান, মর্যাদা, মহত্ব ও নেকি বাড়িয়ে দিন। : হে আল্লাহ! আপনি শান্তির মালিক, সকল শান্তি আপনার পক্ষ থেকেই। হে আমাদের রব! শান্তির সঙ্গে আমাদের বাঁচিয়ে রাখুন। আলকিরা ২৫৫, আল মাসালিক ১/৩৮২

এরপর প্রাণ খুলে দুআ করুন। এখন দুআ কবুলের সময়।

  • মক্কায় অবস্থানকালে মসজিদে হারামে নামায পড়তে চেষ্টা করুন। কেননা হাদীস শরীফে আছে, মসজিদে হারামে এক রাকাতে এক লক্ষ গুণ নেকি হয়। মুসনাদে আহমাদ, হাদীস : ১৪৬৯৪; সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস : ১৪০৬
  • মসজিদে হারামেও মহিলার পাশে বা সরাসরি পেছনে নামায আদায় করা থেকে বিরত থাকুন। তবে নামায অবস্থায় কোনো মহিলা যদি পাশে এসে নামাযে শরিক হয়ে যায় কিংবা সামনে দাঁড়িয়ে যায় তাহলে আপনার নামায নষ্ট হবে না।
  • মসজিদে হারামের যেখানেই নামায পড়বেন নামায অবস্থায় সিনা একেবারে কাবা শরীফ বরাবর থাকা জরুরি। এজন্য কাতারের দাগগুলোর প্রতি খেয়াল রেখে দাঁড়াবেন। বাদায়েউস সানায়ে ১/৩১২; শরহুল মুনয়াহ ২১৭
  • বাইতুল্লাহ শরীফের দিকে শুধু তাকিয়ে থাকাও সওয়াবের কাজ। তাই ইশক-মুহাব্বতের সাথে গুনাহ মাফের আশায় আবেগভরা চোখে বেশি বেশি তাকিয়ে থাকুন। আতা ও তাউস রাহ. বলেন, বাইতুল্লাহর দিকে তাকিয়ে থাকা ইবাদত। মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা, হাদীস : ১৪৯৮৪
  • বাইরে কোনো প্রয়োজনে এলে কিংবা তাওয়াফ করতে গেলে জায়নামায বিছিয়ে কিংবা কারো সাহায্যে জায়গা ধরে রাখবেন না। এটা গুনাহের কাজ। তাই প্রয়োজন সেরে যেখানে জায়গা পাবেন সেখানে বসে যাবেন। অন্যের ঘাড় ডিঙিয়েও যাবেন না। এখানের নেক আমলের সওয়াব যেমন বেশি তেমনি গুনাহের ক্ষতি ও ভয়াবহতাও অনেক বেশি।
  • মসজিদে হারামে উচ্চস্বরে কথা বলা, গল্পগুজব করা থেকে বিরত থাকুন।

তাওয়াফের প্রস্তুতি

  • হায়েয, নেফাস ও গোসল ফরয অবস্থায় তাওয়াফ করা জায়েয নয়। তদ্রুপ বিনা অযুতেও তাওয়াফ করা জায়েয নয়। তাওয়াফের জন্য অযু থাকা ওয়াজিব। তাই মসজিদে হারামে প্রবেশের আগেই পবিত্রতা অর্জন করে নিন। আর কাপড় ও শরীরে নাপাকি থাকলে পাক করে নিন অথবা কাপড় পরিবর্তন করে নিন। অবশ্য কাপড় ও শরীরে বাহ্যিক নাপাকি থাকলেও তাওয়াফ হয়ে যাবে। তবে মাকরূহ হবে। সহীহ বুখারী, হাদীস : ১৬৫০; মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা, হাদীস : ১৪৫৫৯; গুনইয়াতুন নাসিক ১১২

ইযতিবা

  • উমরার এ তাওয়াফের পর যেহেতু সাঈ আছে তাই এ তাওয়াফে ইযতিবা করা সুন্নত। ইযতিবা হল, গায়ে জড়ানো কাপড়টি ডান বগলের নিচ দিয়ে বের করে বাম কাঁধের উপর রাখা। এ তাওয়াফের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পুরো সময় ‘ইযতিবা’ অবস্থায় থাকা সুন্নত। সুনানে আবু দাউদ, হাদীস : ১৮৮৩-৪; মানাসিক ১২৯

রমল

এ তাওয়াফের পর যেহেতু সাঈ আছে তাই এ তাওয়াফে পুরুষকে রমলও করতে হবে। রমল হল, কাঁধ হেলিয়ে দুলিয়ে ছোট ছোট পদে একটু দ্রুত ও বীরদর্পে হাঁটা। এ তাওয়াফের শুধু প্রথম তিন চক্করে রমল করা সুন্নতে মুআক্কাদা। অবশিষ্ট চার চক্করে স্বাভাবিকভাবেই হাঁটবেন। কেননা, শেষ চার চক্করে রমল না করা সুন্নত। (সহীহ মুসলিম, হাদীস : ১২৬২; শরহু মুখতাসারিত তহাবী ২/৫২৩)

  • মহিলাদের রমল ও ইযতিবা নেই। মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা, হাদীস : ১৩১০৯
  • অধিক ভিড়ের মধ্যে রমল করলে অন্যের কষ্ট হতে পারে। তাই সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। অন্যের কষ্টের আশঙ্কা হলে ঐ মুহূর্তে রমল বন্ধ রাখবেন এবং স্বাভাবিকভাবে চলবেন। এরপর প্রথম তিন চক্করের মধ্যে ফাঁকা পেলেই রমল করবেন। মানাসিক ১৩৪

তালবিয়া বন্ধ

শুধু উমরাহকারীগণ এবং তামাত্তুকারী হাজ্বীগণ উমরার তাওয়াফ শুরু করার আগে তালবিয়া পড়া বন্ধ করে দিন। সুনানে আবু দাউদ, হাদীস : ১৮১৭; কিতাবুল হুজ্জাহ ১/৩৯৬-৩৯৮; মানাসিক, মোল্লা আলী কারী ১৮২

উমরার তাওয়াফ শুরু (উমরার দ্বিতীয় ফরয)

  • তাওয়াফের সময় তাওয়াফের স্বাভাবিক নিয়ত থাকা ফরয। কাবার চার পাশে তাওয়াফের নিয়ত ছাড়া এমনি ঘুরলে তাওয়াফ আদায় হবে না। আর এক্ষেত্রে নির্দিষ্টভাবে উমরার নিয়ত করা জরুরি নয়; বরং মুস্তাহাব। আলবাহরুল আমীক ২/১১১০-১১১১; যুবদাতুল মানাসিক ১১৪
  • হাজরে আসওয়াদের কোণায় এসে এভাবে নিয়ত করুন : হে আল্লাহ! আমি আপনার সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্দেশ্যে উমরার তাওয়াফ করছি। আমার জন্য তা সহজ করুন ও কবুল করুন।

হাজরে আসওয়াদকে ইছতিলাম বা চুমু খাওয়ার নিয়ম

  • নিয়তের পর হাজরে আসওয়াদের দিকে ফিরে দাঁড়ান। অতপর নামাযের তাকবীরে তাহরীমার মতো কান পর্যন্ত হাত ওঠান। যেন হাতের তালু হাজরে আসওয়াদের দিকে থাকে। শরহু মাআনিল আছার ১/৪১৭; মুখতাসারুত তহাবী ৬৩

এরপর হাত দ্বারা হাজরে আসওয়াদের দিকে ইশারা করুন এবং বলুন

بِسْمِ اللهِ اللهُ اَكْبَرُ، لاَ إِلَهَ إِلا اللهُ، وَالصَّلاَةُ وَالسَّلاَمُ عَلَىْ رَسُوْلِ اللهِ.

শুধু বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার বললেও চলবে। এরপর উভয় হাতের তালুতে চুমু খান।

এরপর সম্ভব হলে এই দুআ পড়ুন।

اَللّهُمَّ إِيْمَانًا بِكَ وَتَصْدِيْقًا بِكِتَابِكَ وَاِتِّبَاعًا لِسُنَّةِ نَبِيِّكَ مُحَمَّدٍ صَلَّي اللّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ

আলমুজামুল আওসাত, তবারানী ৪৯৬; মাজমাউয যাওয়াইদ, হাদীস : ৫৪৭০; আলকিরা ৩০৭; আলবাহরুল আমীক ২/১১৭৩-৭৪

হাজরে আসওয়াদে সরাসরি চুমু দেওয়ার তরিকা

উপরে হাজরে আসওয়াদকে ইশারার তরিকা বলা হয়েছে। এ তরিকা যারা হাজরে আসওয়াদকে সরাসরি চুমু দিতে পারবেন না বা স্পর্শ করতে পারবেন না তাদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। যারা সরাসরি চুমু দিতে বা স্পর্শ করতে পারবেন তাদের ক্ষেত্রে নিয়ম হল, হাজরে আসওয়াদের উপর দুই হাত রেখে বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার বলে দুই হাতের মাঝে পাথরের উপর নিঃশব্দে চুমু খাবেন এবং সিজদার মতো করে তাতে কপাল রাখবেন।

আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. বলেন, আমি উমর ইবনুল খাত্তাব রা.কে দেখেছি, তিনি হাজরে আসওয়াদে চুমু দিয়েছেন এবং তার উপর সিজদা করেছেন এবং বলেছেন, রাসূল সাল্লাহু আলাইহি ওসাল্লামকে এরূপ করতে দেখেছি। তাই আমিও করেছি। সহীহ ইবনে খুযাইমা, হাদীস : ২৭১৪; মুসতাদরাকে হাকেম, হাদীস : ১৭১৫; আসসুনানুল কুবরা, বায়হাকী ৫/৭৪

যদি সরাসরি চুমু খাওয়া সম্ভব না হয় এবং এতটা কাছে থাকেন যে, হাত দ্বারা স্পর্শ করা যায় তাহলে বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার বলে হাত দ্বারা স্পর্শ করে হাতের ঐ অংশে চুমু খাবেন। মুসান্নাফ আবদুর রাযযাক : ৮৯২৩; মানাসিক ১৩১; গুনইয়াতুন নাসিক ১০২; যুবদাতুল মানাসিক ১১৪

চক্কর শুরু করুন

হাজরে আসওয়াদকে চুমু বা ইছতিলামের পর ওই জায়গায় দাঁড়িয়েই কাবা শরীফকে বাম দিকে রেখে তাওয়াফ শুরু করুন। প্রথম তিন চক্করে রমল করা সুন্নত। তাই পুরুষগণ বীরদর্পে একটু দ্রুত পদে হাঁটা শুরু করুন। এভাবে কাবা শরীফকে হাতের বামে রেখেই হাতীমের বাইরে দিয়ে হাজরে আসওয়াদ পর্যন্ত চক্কর পূর্ণ করুন। সহীহ মুসলিম, হাদীস : ১২১৮; মানাসিক ১৩৩

হজ্বের বিস্তারিত কার্যবিবরণী

১ম দিন ৮ই জিলহজ্জ

ইহরাম অবস্থায় (ফরয) মক্কা থেকে হজ্জের নিয়্যাতে মিনায় রওয়ানা হোন।

এ দিনের কাজ দু’টি-

  1. ইহরাম (ফরজ)
  2. ৫ ওয়াক্ত নামাজ মিনায় আদায় করা (সুন্নাত)।

যোহর, আছর, মাগরিব, এশা ও ৯ তারিখ ফজর সর্বমোট ৫ ওয়াক্ত

২য় দিন ৯ই জিলহজ্জ

১। আরাফাতে অবস্থান (ফরজ)। ২। অকুফে মুযদালিফায় (ওয়াজিব)

আরাফাতে অবস্থান

– ফজরের নামাজ মিনায় পড়ে আরাফাতের ময়দানের দিকে রওয়ানা হোন।
– আরাফাতে সূর্য হেলার পর অর্থাৎ ১২টার পর থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত অবস্থান করা হজ্জের গুরুত্বপূর্ণ ফরজ।
– ওয়াক্ত মত তাবুতে (মসজিদে নামেরায় না গেলে) বা আরাফার ময়দানে যে কোন স্থানে জোহরের সময় জোহর নামাজ আদায় করুন।
– আসরের নামাজ আসরের সময় আদায় করুন, নির্দিষ্ট সময় বা আগে পরে, পৃথক পৃথক ভাবে।
– উল্লেখ্য: ‘মসজিদে নামেরায়’ জোহর ও আসরের জামাত এক আযান দুই ইকামাতে একত্রে আদায় করলে একত্রে দুই ওয়াক্ত আদায় করতে হয়, ওটার নাম ‘জমে তাক্বদীম’। কিন্তু তাবুতে বা অন্য কোন স্থানে একত্রে নয়। ভিন্ন সময় ভিন্ন ভাবে ওয়াক্ত মত আদায় করতে হবে।)

অকুফে মুযদালিফায় (ওয়াজিব)

  • সূর্যাস্তের পর সাথে সাথে মাগরিব না পড়ে মুযদালিফায় রওয়ানা হোন।
  • মুযদালিফায় মাগরিব ও এশার নামাজ এক আযান দুই এক্বামাতে একত্রে আদায় করুন। এটা ওয়াজিব এটার নাম ‘জামে তাখীর জামাতে পড়া উত্তম। মুযদালিফায় অবস্থান (ওয়াজিব) মুযদালিফায় থাকাকালীন পাহাড়ে অথবা তার পাদদেশে যে কোন ঘাস দুবলা থেকে খুঁজে খুঁজে পাথর মারার জন্য ৭২টি (চানাবুটের ন্যায় কঙ্কর) ছোট ছোট পাথর সংগ্রহ করে ইহরামের কাপড়ে বেঁধে নিন।

১০, ১১, ১২ তিন দিনে (৪৯টি পাথর) তিন শয়তানকে মারতে হবে।

  • ১ম দিন ৭টি
  • ২য় দিন ২১টি
  • ৩য় দিন ২১টি

তিন দিনে সর্বমোট ৭+২১+২১=৪৯টি। তবে মিসিং হতে পারে বলে বেশী (৭২) নেওয়া সুন্নাত।

৩য় দিন ১০ই জিলহজ্জ

এ দিনের মোট কাজ ৪টি (১) বড় শয়তানকে পাথর মারা (২) কুরবানী (৩) মাথা মুন্ডানো (৪) তাওয়াফে যিয়ারাত করা

  • মুযদালিফায় ফজরের নামাজ পড়ে সূর্য উদয়ের আগ পর্যন্ত অবস্থান করুন (ওয়াজিব)।
  • মিনায় পৌছে বড় শয়তানকে ৭টি পাথর সূর্য হেলার আগে (১২টার পূর্বেই) মারুন। (সুন্নাত)।
  • তারপর তামাত্তু ও কি্বরান হজ্জকারীগণ কুরবানী করুন (ওয়াজিব)।
  • এরপর ইহরাম খুলে হালাল হয়ে স্বাভাবিক পোষাক পরিধান করুন। কিন্তু কোরবানী পূর্বে নয়। (তবে ইফরাদ হজ্জকারী কুরবানী না করলেও চলবে)।
  • চুল ছাড়া বা মুন্ডানোর পর মক্কায় গিয়ে (সম্ভব হলে উত্তম) আজই তাওয়াফে যিয়ারত করুন। আজ করা সর্বোত্তম। (এটা ফরজ)।
  • তাওয়াফ শেষে মিনায় এসে রাত্রি যাপন করুন সুন্নাত।

৪র্থ দিন ১১ই জিলহজ্জ

  • ১০ তারিখে কুরবানী, চুল ছাটা ও তাওয়াফে যিয়ারত না করে থাকলে আজ করুন।
  • সূর্য হেলার পর থেকে (১২টার পর) মিনায় তিন শয়তানকে সূর্যাস্তের পূর্বে (প্রথম ছোট, তারপর মেজ অতঃপর বড়) ৭+৭+৭=২১টি পাথর মারুন (ওয়াজিব)। মিনায় রাত্রি যাপন করুন (সুন্নাত)।

৫ম দিন ১২ই জিলহজ্জ

– তাওয়াফে যিয়ারত ১০/১১ তারিখে না করে থাকলে আজ সূর্যাস্তের পূর্বে অবশ্যই করুন।
– মিনায় সূর্য হেলার পর থেকে (সুন্নাত সময় হল) সূর্যাস্তের পূর্বে ৭+৭+৭=২১টি পাথর (ছোট, মেজ ও বড় ) শয়তানকে মেরে সূর্যাস্তের পূর্বে) মক্কায় রওয়ানার চেষ্টা করুন।

হজ্জ ও ওমরাহ সম্পর্কিত কিছু জরুরী কথা

(১) তবে ১১/১২ তারিখ সূর্য হেলার পূর্বে পাথর মারলে আদায় হবে না। পূণরায় মারতে হবে। নতুবা দম দিতে হবে।
(২) যদি ১২ তারিখ সূর্যাস্তের পূর্বে মীনা ত্যাগ করে মক্কায় রওয়ানা না হন তবে ১৩ তারিখ পূনরায় তিন শয়তানকে ৭+৭+৭=২১টি
পাথর (ছোট, মেজ ও বড় ) মেরে (পূর্বের নিয়মে) তারপর মক্কায় আসতে হবে।
(৩) তাওয়াফে যিয়ারতের উত্তম সময় ১০ই জিলহজ্জ (তবে ৩ দিন, এর সব মোট সময়) শেষ সময় ১২ই জিলহজ্জ সূর্যাস্ত পর্যন্ত।
(৪) মক্কা থেকে মিনায় রওয়ানার পূর্বে যদি নফল তাওয়াফ করে হজ্জের নিয়্যাত সায়ী না করে থাকেন (বা মিনায় আসেন) তাহলে হজ্জের পরে তাওয়াফে যিয়ারতের পর অবশ্যই হজ্জের সায়ী করুন। (ওয়াজিব)।

যিয়ারাতে মদীনাহ

হজ্জের পূর্বে অথবা পরে (সুবিধামত) সময়ে হাজীদল তথা প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ মুস্তাফা (দঃ) এর পাগলপাড়া উম্মতগণ এক মূহুর্তে একদিন/তথা ৮ দিনের জন্য (সম্ভব হলে) নতুবা এক রাত হলেও মদীনা শরীফে যান এবং রাসূলে পাক (দঃ) এর রওজা মোবারক যিয়ারত, রিয়াদুল জান্নাতে বসা (নামাজ আদায় করা) জান্নাতুল বাকী যিয়ারত করা এবং বিশেষতঃ ৮ দিনে ৪০ ওয়াক্ত নামাজ জামাতে আদায় করাসহ বহু ঐতিহাসিক স্থান তথা উহুদ পাহাড় ও বদর প্রান্তর দেখার সৌভাগ্য অর্জন করে থাকেন।

নবীজীবন- সীরাত

এছাড়া মদীনা শরীফে আর কোন কাজ নেই। মূলতঃ মদীনা শরীফে মাসজি দে নববীতে নামাজ ও রাসূলের পাক (দঃ) এর রওজা শরীফ যিয়ারতই হল প্রধান কাজ। যদি সম্ভব হয় বা সময় সূযোগ থাকে তাহলে ৪০ ওয়াক্ত নামাজ (সুন্নাত) রয়েছে। কিন্তু তার অর্থ এই নয় যে, ৮দিন=৪০ ওয়াক্ত থাকতেই হবে। এটা ফরজ বা ওয়াজিব নয়। আসলে এটা সুন্নাত এবং হজ্জের অংশ নয়। মূলতঃ আশেকে রাসূল (দঃ) দের জন্য রাসূলে পাক (দঃ) এর রওজা মোবারক যিয়ারতের নিয়্যাতে যাওয়াই হল মূল।

বদলী হজ্জ

যে সকল মুসলিম নর-নারীর উপর হজ্জ ফরজ ছিল, তাঁদের মধ্যে যদি কেউ মৃত্যুবরণ করে অথবা জীবিত কিন্তু শারিরীক দুর্বলতা ও অসুস্থতা ও অমতার কারণে হজ্জ করতে অপারগ হয়, তাহলে অন্য কাউকে দিয়ে বিশেষ করে বিজ্ঞ আলেম বা হজ্জে পারদর্শী ব্যক্তি দ্বারা তাঁর বদলী হজ্জ করাতে পারবে। অর্থাৎ যাঁর জন্য বদলী হজ্জ করা হবে তাঁরই নামে ইহরাম পরিধান ও নিয়্যাত করে অন্য একজন হজ্জ আদায় করতে পারবে।

নিজের হজ আগে, পরে অন্যের হজ

মনে রাখতে হবে যে আগে নিজের হজ আদায় করবে। পরে মাতা-পিতার চিন্তা করবে। সামর্থ্য থাকলে তাঁদের নিয়ে একসঙ্গে হজ করবে। অন্যথায় আগে নিজের ফরজ আদায় করবে। (রহিমিয়া, খণ্ড: ৮, পৃষ্ঠা: ২৮২)

মাহরাম

যাদের সঙ্গে কখনো বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া যায় না, তারাই মাহরাম। যেমন—পিতা, পুত্র, আপন ও সত্ভাই, দাদা-নানা, আপন চাচা ও মামা, ছেলে বা নাতি, জামাতা, শ্বশুর, দুধভাই, দুধ ছেলে প্রমুখ। তবে একা একা দুধভাইয়ের সঙ্গে এবং যুবতি শাশুড়ির জামাতার সঙ্গে যাওয়া নিষেধ। (রদ্দুল মুহতার, খণ্ড: ২, পৃষ্ঠা: ৪৬৪)

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *