নারী সমাজ: সময়ের কথা ও আগামীর প্রত্যাশা

নারী সমাজ

Date

Author

Blog Duration

4 minutes

নারী। রূপে ও গুণে এবং প্রজ্ঞা ও জ্ঞানে সর্বেসর্বা এক সৃষ্টি। বৈষয়িক পূর্ণতার আশ্চর্য সম্মিলন নারীর ক্ষেত্রেই পাওয়া যায়। সবদিকেই তারা সমান পারদর্শী। সবক্ষেত্রেই সাফল্য তাদের অনন্য। আর তাই বিশ্ব ইতিহাসের স্বর্ণালী অধ্যায়গুলোতে চোখ ফেরালেই আমরা দেখতে পাই- ভালো ও মন্দ এবং আলো ও আঁধারের মধ্যে বিস্তর ফারাক থাকা সত্বেও উভয় ক্ষেত্রেই অগ্রগামী যারা; তারা নারী। জ্ঞানে-গুণে পূর্ণতাময় রমণী। নারী খুব সহজেই সত্যকে যে কারো হৃদয়ে গেঁথে দিতে পারে। আবার মহা সচেতন ব্যক্তিকেও মিথ্যের কাঁদামাটিতে আছড়ে ফেলতে পারে মুহূর্তেই। এই ক্ষমতা নারীর আছে। নারীই একমাত্র বলয়, ক্ষেত্র; সম্পূর্ণ বিপরীত দুটো দিক যেখানে এক হয়ে যেতে পারে অবিশ্বাস্যভাবে।

একজন নারী চাইলে গোটা পরিবারটাকে সত্যিকার অর্থে সুখী করে তুলতে পারেনা। এজন্য বিদ্রোহ করে লিখিত ক্ষমতার বা কাগুজে স্বীকৃতির প্রয়োজন পড়ে না। তাতে ওটা সম্ভবও না। আজ পর্যন্ত তথাকথিত নারী অধিকারের বুলি আওড়িয়ে কিছুই করা সম্ভব হয়নি। ভবিষ্যতেও যে হবে না তা তো বলেই দেয়া যায়। বরং দেখা যায়- অধিকার আদায়ের নামে নারীরা যত বেশি বাইরে বেরুচ্ছে, পর্দাহীনতা যত বাড়ছে; আমাদের সমাজে অপরাধপ্রবণতা, অনিরাপত্তা, বিবাহ বিচ্ছেদ, এমনকি এসব কারণে খুনোখুনির মতো ব্যাপারও অহরহ ঘটছে। ধ্বংসাত্মক এই ব্যাধিগুলো ভয়ানকভাবে বেড়ে চলেছে পুরো সমাজজুড়ে। এগুলোকে রোধ করতে পারে কেবল ধর্মীয় নির্দেশনা। ইসলামী কালচার।

আমরা বলছি না দায় কেবল নারীদের। ছাড় প্রদান ও ত্যাগ স্বীকার শুধু নারীরাই করবেন। ইসলাম যে ইনসাফভিত্তিক সমাজের কথা বলে নারী-পুরুষ কারো ভূমিকা সেখানে কম নয়। পুরুষদের আরো দায়িত্বশীল হবার পাশাপাশি সবক্ষেত্রে প্রাধান্য দিতে হবে ইসলামী অনুশাসনকে। একই ব্যাপার নারীদের ক্ষেত্রেও; পশ্চিমের চাপিয়ে দেয়া সমতা নয়- মানতে হবে আল্লাহর নির্দেশ।

স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক যদি ভালোবাসারই হবে, তো স্ত্রীর পরামর্শ ও মতামত ব্যতিরেকে স্বামী কিছু করতে যাবে কেন? কোনো বিবেক সম্পন্ন মানুষ এটা করতে পারে না। কোন পিতা তার আদুরে কন্যার প্রতি অবহেলা করতে পারে না। কোনো সৎ সন্তান তার আদর্শ মায়ের অবাধ্য হতে পারে না। কখনও না। তবে এজন্য একজন নারীর নিজেকে সেভাবে প্রস্তুত করা দরকার। প্রতিষ্ঠিত করা দরকার। দরকার কিছুটা কুরবানীর। নিজের সংসারের স্বার্থে; স্বামী-বাবা-সন্তান বা ভাইয়ের কল্যাণে একজন স্ত্রীকে, একজন মেয়েকে, একজন মাকে বা একজন বোনকে এইটুকু ত্যাগ তো অবশ্যই স্বীকার করতে হবে। এটাই আমাদের চিরায়ত ধারা। ঐতিহ্য। আমি যদি চাই আমার সংসারটা ভালোবাসার হোক, হাসি-আনন্দের হোক; তাহলে বাধা দিয়ে কেউ তা আটকে রাখতে পারবে না। এই ভালোবাসা বরং ছড়িয়ে যাবে গোটা সমাজে। সমাজটাই হয়ে যাবে ভালোবাসাময়। অশান্তি বা বিভেদের গন্ধও যেখানে স্থান পাবে না। কোনদিন না। এই শিক্ষা, এই উপমা চৌদ্দশ বছর আগেই দাঁড় করিয়ে গেছে প্রথম ইসলামী রাষ্ট্র মদীনাতুন্নবী। মদিনা।

আমাদের সমাজ শৈশবে বা বেড়ে ওঠার সমযয়ে ভুল একটা ধারণা আমাদের মনে গেঁথে দেয়ার চেষ্টা করে। যার যত টাকা, তার সুখ ততো। যেই পরিবার যত প্রাচুর্যের অধিকারী, তাদের প্রশান্তি ততোবেশি। কিন্তু বড় হতে হতে আমাদের এই ধারণা বদলে যায়। একটা সময় এসে আমরা বাস্তব চিত্র সামনে পেয়ে যাই- বাইরের চাকচিক্য আর ভেতরের শৃঙ্খলা এবং বিত্ত-বৈভবের পাহাড় আর শান্তি ও সুখের মধ্যে যে বিস্তর ব্যবধান তাতে কোনো সন্দেহ থাকে না। তাই অর্থশালী যে কারো সাথে যেমন শান্তির বিশেষণটা আমরা যুক্ত করতে পারি না, তেমনি অধিকারের বড়াই দেখিয়ে বাইরে বেরিয়ে আসা কোনো নারীকে আমরা সুখী ভাবতে পারি না। সচরাচর কাউকে আমরা এমন পাই না।

বরং আমাদের অভিজ্ঞতা হল- সন্দেহ ও অবিশ্বাস এবং লোভ ও স্বার্থপরতা তাদের আত্মিক সম্পর্কের মাঝে মজবুত এক দেয়াল তৈরি করে রাখে। এবং একসাথে থেকেও তাদের পারস্পরিক দূরত্ব হয় যোজন যোজন। প্রকৃত সুখ-শান্তির ছোঁয়া তারা পায় না। সেখানে চাহিদা আছে সীমাহীন, কিন্তু প্রাপ্তির দিকটা পর্যাপ্ত নয়। অপূর্ণতা আছে সব দিক থেকেই, কিন্তু পূর্ণতার লক্ষন মোটেও আশানুরূপ নয়। তাই অপ্রাপ্তি, অপূর্ণতা আর অতৃপ্তির অদৃশ্য আগুনে তারা দগ্ধ হয় সারাক্ষণ। অধিকারের প্রশ্ন যদি পুরুষের সাথে তুলনা করেই হতে হবে, তাহলে তো সৃষ্টি বৈচিত্রের কোন অর্থ হয় না। স্বাধীনতার অর্থ যদি বিজ্ঞাপনের অর্ধনগ্ন-নগ্ন মডেল আর শয়তানের লোভাতুর দৃষ্টির খোরাক হওয়াই হবে তাহলে তো বিবেক-বিবেচনা ও বোধের কোন মূল্য থাকে না। নারী অধিকার বা স্বাধীনতার কথা উঠছে দুই পক্ষ থেকেই, এটা ঠিক; তবে সবার মতলব একই। খাহেশও অভিন্ন। শ্রেণীবিভেদ এখানে আলাদা কোনো মহিমা বহন করে না।

নারী সমাজের চিন্তাধারাটা পাল্টে দেয়া হয়েছে। হচ্ছে। সংসারকে, স্বামী-সন্তানকে বোঝা ভাবার প্রবণতা বাড়ছে। ফলে, বাইরের নোংরা পরিবেশে মিলে কদর্য হয়ে পড়ছে তাদের প্রাত্যহিক জীবন। সেই সাথে নষ্ট হচ্ছে গোটা সমাজ। সমস্যার প্রোফাইলটা প্রতিদিন ফুলে-ফেঁপে উঠছে রিপোর্ট আর রিপোর্টে। দেশে প্রতিদিন যে পরিমান ডিভোর্স-নির্যাতন-হত্যার ঘটনা সামনে আসে তা যে কারো পিলে চমকে দিতে যথেষ্ট। এই কি তবে একটি মুসলিম প্রধান সমাজের চিত্র?

লাগামহীন হায়েনার মতো জীবন যাপনে অতিষ্ঠ হয়ে ইসলামী আদর্শ ও আলোকিত জীবন ধারার প্রতি প্রবলভাবে ঝুঁকছে পাশ্চাত্যের নারী সমাজ। আর এমন মুহূর্তে সেই নষ্ট কালচারকে, বিকৃত সভ্যতাকে আমাদের সমাজে ছড়িয়ে দিতে মরিয়া হয়ে উঠেছে একশ্রেণীর লোভী, নষ্ট চিন্তা ও বিকৃত মানসিকতার লোক। যার সহজ শিকার হচ্ছে আমাদের নারী সমাজ। ফলে, অশান্তির কালো ছায়া ধেয়ে আসছে চারদিক থেকে। এবং খুব দ্রুত গতিতে।

এই মুহূর্তে দরকার এমন কিছু নারী, আদর্শ গৃহিণীর; যারা ধৈর্যে হবে বিবি আসিয়ার মতো। কৌশলে রানী বিলকিসের মতো। সততায় মা ফাতেমার মতো। ইলমে হজরত আয়েশার মতো। আর প্রেমে আম্মাজান খাদিজার মতো। রাযিআল্লাহু আনহুন্না। ধারা বদলের প্রত্যয়ে যারা হবে বলিয়ান। উন্নত একটা সমাজ আর আদর্শ একটা জাতি গঠনে যারা নিজেদেরকে উৎসর্গ করে দেবে।

তবেই সম্ভব বিরাজমান-বর্ধনশীল সমস্যাগুলোর নিষ্পত্তি। নয়তো শ্রম আর উদ্যোগই কেবল বাড়বে। লাভ কিছু হবে না

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *