প্রশ্নোত্তরে নামাজের মাসায়েল

প্রশ্নোত্তরে নামাজের মাসায়েল

Date

Author

Blog Duration

155 minutes

পবিত্রতা

ত্বহারাত আরবি শব্দ। এর আভিধানিক অর্থ পবিত্রতা বা পরিচ্ছন্নতা। আর শরয়ী অর্থ হলো বিশেষ পদ্ধতিতে ময়লা-আবর্জনা ও অন্যান্য নাপাকি থেকে পবিত্রতা অর্জন করা। মানব জীবনে জাগতিক-পারলৌকিক সবক্ষেত্রে পবিত্রতার অত্যন্ত গুরুত্ব রয়েছে। শাহ ওয়ালিউল্লাহ দেহলভী (রহ:) চারটি স্বভাবকে সৌভাগ্যের লক্ষণ বলেছেন। সেগুলোর অন্যতম হলো পবিত্রতা অর্জনের স্বভাব।

পবিত্রতা মানুষকে ফেরেস্তা সদৃশ বানিয়ে দেয়। পক্ষান্তরে অপবিত্রতা মানুষকে শয়তানের কুমন্ত্রণা গ্রহণ বা প্ররোচনায় পড়ার দিকে ধাবিত করে। কেউ যদি পবিত্রতার ব্যাপারে যত্নশীল হয়, সর্বদা পবিত্র থাকার চেষ্ঠা করে তাহলে তার মধ্যে ফেরেস্তাদের প্রেরণা গ্রহণের যোগ্যতা অর্জিত হয়ে যায় সে ফেরেস্তাদেরকেও দেখতে পায়। এমনিভাবে ভাল স্বপ্নও দেখে। তর মধ্যে অভূতপূর্ব এক যোগ্যতা তৈরী হয়।

(সূত্র: হুজ্জাতুল্লাহিল বালিগাহ)

শরীয়তে পবিত্রতার গুরুত্ব

(১) ইসলামে নামাজের গুরুত্ব অপরিসীম, মুসলিম-অমুসলিমের মাঝে প্রধান ব্যবধান নির্ণায়ক বিষয় হল নামাজ। সেই নামাজের শুদ্ধতা ও গ্রহণযোগ্যতার জন্য চাবি আখ্যা দেওয়া হয়েছে পবিত্রতাকে। হাদীস শরীফে এসেছে- নামাজের চাবি পবিত্রতা। (আবু দাউদ শরীফ / তিরমিযী: ৬১৮/২৩৮)

(২) পবিত্রতাকে ঈমানের অর্ধেক হিসেবে গণ্য করা হয়েছে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-
‘পবিত্রতা ঈমানের অর্ধেক।’ (মুসলিম শরীফ: ২২৩)

(৩) মানবিক সুস্থ স্বভাবের অন্যতম পরিচায়ক হল পবিত্রতা। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বর্ণিত মানুষের দশটি স্বভাবগত বিষয় হলো: গোফ কাটা, দাড়ি রাখা, মেসওয়াক করা, নাকে পানি দিয়ে পরিস্কার করা, নখ কাটা, আঙুলের গিঁট ধোয়া, বগলের লোম উপড়ানো, নাভির নিচের পশম কাঁটা এবং কম পানি ব্যবহার করা। ( মুসলিম শরীফ: ২৬১)

(৪) পবিত্রতা আল্লাহ তায়ালার ভালোবাসা এবং সন্তুষ্টি লাভের উপায়। আল্লাহ তায়ালা বলেন- আল্লাহ তায়ালা তাওবাকারীকে ভালোবাসেন এবং পবিত্রতা অর্জনকারীকে ভালোবাসেন। (সুরা বাক্বারা: ২২২)

(৫) পবিত্রতা এমন একটি বিষয় যা অবহেলা করা বা বর্জন করা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দুটি কবরের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন তখন তিনি বললেন এই দুই কবরবাসী শাস্তি ভোগ করছে। আর তারা বড় কোন বিষয়ে শাস্তি প্রাপ্ত হয় নি, একজন পেশাবের ফোটা থেকে সতর্ক থাকতো না, অপরজন দোষ চর্চা করে বেড়াত।

(৬) কিয়ামতের দিন চেহারায় ঔজ্জ্বল্য এবং শুভ্রতার মাধ্যম হবে পবিত্রতা। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়সাল্লাম বলেন- কিয়ামতের দিন আমার উম্মতকে ওযুর অঙ্গের শুভ্রচিহৃ দেখে ডাকা হবে। তোমরা যদি শুভ্রতা বৃদ্ধি করতে চাও তাহলে বৃদ্ধি করে নাও। ( বুখারী শরীফ )

পবিত্রতা অর্জনের কয়েকটি মাধ্যম

(১) পবিত্র পানি বা মাটি ব্যবহার করা।
(২) পোষাক ইত্যাদি থেকে ঘষে নাপাক উঠানো।
(৩) খুটিয়ে নাপাক উঠানো।
(৪) মুছে ফেলার মাধ্যমে নাপাক দূর করা।
(৫) নাপাক মাটি শুকিয়ে যাওয়া।
(৬) বস্তুর রূপ পরিবর্তনের মাধ্যমে নাপাকির গুণ শেষ হয়ে যাওয়া
(৭) প্রক্রিয়াজাতকরণের মাধ্যমে চামড়া থেকে নাপাকি ও পঁচনশীলতা দূর করা।
(৮) পোড়ানোর মাধ্যমে নাপাকির প্রভাব দূর করা।
(৯) জবাই করার মাধ্যমে পশু পবিত্র করা।
(১০) সেচের মাধ্যমে নাপাক পানি পবিত্র করা।

পবিত্রতার প্রকারভেদ

(১) মল-পেশাব-রক্ত ইত্যাদি অপবিত্রতা থেকে পবিত্রতা অর্জন করা।
(২) ওযু-গোসলের মাধ্যমে অপবিত্রতা থেকে পবিত্র হওয়া।

নামাজ সহীহ হওয়ার জন্য উভয় প্রকার পবিত্রতা অর্জন করা আবশ্যক।

এখানে আমরা পবিত্রতা সংক্রান্ত মৌলিক ছয়টি বিষয়ের আলোচনা করব।

১) ওযুর আলোচনা
(২) গোসলের আলোচনা।
(৩) পানির আলোচনা।
(৪) তায়াম্মুমের আলোচনা।
(৫) মোজা মাসেহ সংক্রান্ত আলোচনা।
(৬) নারীদের মাসিক স্রাবের আলোচনা।

ওযুর মাসায়েল

ওযুর ফরজসমূহ:

(১) মুখমণ্ডল ধোয়া।
(২) উভয় হাত ধোয়া।
‎)৩) উভয় পা ধোয়া।
(৪) মাথার এক চতুর্থাংশ মাসেহ করা।

ওযুর সুন্নতসমূহ:

(১) বিসমিল্লাহ বলা।
(২) দ্ইু হাতের কনুই পর্যন্ত তিন বার ধোয়া।
(৩) তিন বার কুলি করা।
(৪) তিন বার নাকে পানি দেওয়া।
(৫) মেসওয়াক করা।
(৬) দাড়ি খেলাল করা।
(৭) আঙ্গুলসমূহ খিলাল করা।
(৮) প্রতিটি অঙ্গ তিন বার করে ধোয়া।
(৯) সমস্ত মাথা একবার মাসেহ করা।
(১০) উভয় কান মাসেহ করা।
(১১) নিয়ত করা।
(১২) ধারাবাহিকভাবে অঙ্গসমূহ ধোয়া।

ওযুর মুস্তাহাবসমূহ:

(১) প্রতিটি অঙ্গের ক্ষেত্রে ডান দিককে প্রাধান্য দেওয়া।
(২) ওযুর সময় অন্যের সহযোগিতা না নেওয়া।
(৩) পানি অপচয় না করা।

ওযু তিন প্রকার

(১) ফরজ- পবিত্র হওয়ার উদ্দেশ্যে নামাজের জন্য ওযু করা।
(২) ওয়াজিব- তাওয়াফ করার জন্য ওযু করা।
(৩) মোস্তাহাব- ঘুমানোর জন্য ওযু করা। সর্বদা ওযু অবস্থায় থাকার জন্য ওযু করা, গীবত হয়ে গেলে ওযু করা, মৃত ব্যক্তিকে গোসল দেওয়ার পর ওযু করা।

ওযুর মাকরুহসমূহ:

(১) চেহারায় জোরে পানি মারা
(২) অক্ষমতা ছাড়া বাম হাতে কুলি করা ও নাকে পানি দেওয়া
(৩) ডান হাতে নাক পরিষ্কার করা
(৪) তিন বার নতুন পানি দ্বারা মাসেহ করা

যেসব কারণে ওযু ভেঙে যায়

১. পেশাব-পায়খানার রাস্তা দিয়ে কোন কিছু বের হওয়া
২. বমি করা
৩. ঘুমানো
৪. পাগল, মাতাল, বেহুশ হওয়া
৫. নামাজে উচ্চস্বরে হেসে ফেলা
৬. পুরুষ-মহিলা কাপড় ছাড়া পরস্পর মিলিত হওয়া

গোসলের মাসায়েল

গোসলের ফরজসমূহ:

১. ভালভাবে কুলি করা
২. নাকে পানি দেওয়া
৩. পুরো শরীর একবার ধোয়া

যেসব কারণে গোসল ওয়াজিব হয়:

১. উত্তেজনার সঙ্গে বীর্য বের হওয়া
২. সহবাস করা বা যিনায় লিপ্ত হওয়া
৩. হায়েয বা নেফাস বন্ধ হওয়া

গোসলের প্রকারভেদ:

১. ফরজ গোসল- সহবাসকারী, হায়েয ও নেফাসগ্রস্ত মহিলা পবিত্র হওয়ার জন্য গোসল করা।
২. ওয়াজিব গোসল- মৃত ব্যক্তিকে গোসল দেওয়া।
৩. সুন্নত গোসল- জুমার দিন, ঈদের দিন, আরাফার দিন এবং ইহরাম বাধার সময় গোসল করা।
৪. মুস্তাহাব গোসল- কাফের মুসলমান হলে গোসল করা, শবে বরাতের রাতে গোসল করা, মক্কা, মদিনা, মুযদালিফায় প্রবেশের সময় গোসল করা।

পানির মাসায়েল

যেসব পানি দ্বারা ওযু করা যাবে

১. প্রবাহিত পানি
২. আবদ্ধ পানি যখন বেশি হবে
৩. কূঁপের পানি

যেসব পানি দ্বারা ওযু করা যাবে না

(১) তরমুজের পানি
(২) শশার পানি
(৩) গোলাপের পানি
(৪) কোনো ধরনের শরবত
(৫) সিরকা
(৬) লবণের পানি
(৭) সাবান মিশ্রিত পানি
(৮) আঙ্গুর জাতীয় ফলের রস

তায়াম্মুমের মাসায়েল

যেসব বিষয় তায়াম্মুমের ক্ষেত্রে আবশ্যক

১. নিয়ত করা
২. দুই হাত মাটিতে রাখা
৩. পূর্ণাঙ্গ হাত-মুখ মোছা
৪. মাটি পবিত্র হওয়া
৫. অন্তত তিন আঙুল দ্বারা মাসেহ করা
৬. পানি ব্যবহারে সক্ষম না হওয়া
৭. মুসাফির ব্যক্তির যখন পানি পাওয়ার ধারণা হবে তখন পানি তালাশ করা।

উল্লেখ্য: যে সমস্ত কারণে ওযু নষ্ট হয়ে যায় সেগুলোর কারণে তায়াম্মুমও নষ্ট হয়ে যায়।

তায়াম্মুমের সুন্নত ছয়টি

১. মাটিতে হাত রেখে সামনে এবং পেছনের দিকে নেওয়া
২. মাটি থেকে তুলে উভয় হাত ঝাঁড়া
৩. মাটিতে হাত রাখার সময় আঙ্গুল ফাঁকা রাখা
৪. প্রথমে বিসমিল্লাহ বলা
৫. ধারাবাহিকভাবে মাসেহ করা
৬. বিরতি না দিয়ে অব্যাহতভাবে তায়াম্মুম করা

মোজার ওপর মাসেহ

মোজা মাসেহের জন্য যেসব বিষয় আবশ্যক:

১. মোজা এমন মজবুত হওয়া যা পায়ে দিয়ে দীর্ঘক্ষণ হাঁটা যায়
২. টাখনু ঢাকা পরিমাণ লম্বা থাকা
৩. মোজার ওপর তিন আঙ্গুল পরিমাণ মাসেহ করা
৪. অন্তত তিন আঙ্গুল দ্বারা মাসেহ করা
৫. পূর্ণ পবিত্রতা অবস্থায় মোজা পড়ার পর ওযু ভঙ্গ হওয়া
৬. সময়ের ভিতরে তথা (মুকিমের জন্য এক দিন এক রাত আর মুসাফিরের জন্য তিন দিন তিন রাত) মাসেহ করা
৭. মোজায় বড় কোন ফাটল বা ছেঁড়া না থাকা
যেসব কারণে মোজার ওপর মাসেহ নষ্ট হয়
১. মোজা খুলে ফেললে।
২. সময় শেষ হয়ে গেলে।

ঋতুস্রাব সংক্রান্ত আলোচনা

নারীর শরীর থেকে নির্গত রক্ত হায়েয বা নিফাস্ (ঋতুস্রাব) হিসেবে গণ্য হওয়ার জন্য কিছু বিষয় আবশ্যক-

১. বয়স নয় বছর থেকে পঞ্চান্ন (বয়সের এই সীমা চূড়ান্ত নয়, ক্ষেত্রবিশেষ পার্থক্য দেখা যেতে পারে) বছর বয়সের ভিতর থেকে হবে।
২. রক্ত বের হয়ে যোনির বাইরে আসতে হবে।
৩. এই ছয়টি রংয়ের কোন একটা থেকে হবে- কালো, লাল, হলুদ, মেটে, সবুজ ও ঘোলাটে।
৪. নির্ধারিত সময়ে থেকে হবে। তথা সর্বনি¤œ তিন দিন তিন রাত আর সর্বোচ্চ দশ দিন।

নেফাস

সন্তান ভূমিষ্ট হওয়ার পর যে রক্ত নারীর শরীর থেকে নির্গত হয় তাকে নেফাস বলে। নেফাসের সর্বনি¤œ কোন সময় নেই। সর্বোচ্চ সময় চল্লিশ দিন।

ইসতেহাযা

হায়েযের সর্বোচ্চ সময় ও নেফাসের সর্বোচ্চ সময়ের পর যে রক্ত বেরুতে দেখা যায় তাই ইসতেহাযা। গর্ভবতী মহিলা সন্তান প্রসব হওয়ার পূর্বে রক্ত বেরুতে দেখলে তাও ইসতেহাযা।

হায়েয নেফাসের সঙ্গে যুক্ত আহকাম মোট আটটি:

১. হায়েয ও নেফাসগ্রস্ত নারীর নামাজ রহিত হয়ে যায়।
২. রোজা রাখা তাদের জন্য হারাম কিন্তু পরে তা কাযা করতে হবে।
৩. মসজিদে যাওয়া নিষেধ।
৪. কাবা শরীফ তাওয়াফ করা নিষেধ।
৫. কোরআন শরীফ তেলাওয়াত করা নিষেধ।
৬. কোরআন শরীফ স্পর্শ করা নিষেধ।
৭. সঙ্গম করা নিষেধ।
৮. হায়েয, নেফাস শেষ হলে গোসল করা ওয়াজিব।

প্রশ্নোত্তরে ওযু এবং গোসলের বিধি-বিধান

আধুনিক সভ্যতা

ওযু এবং গোসলের ক্ষেত্রে পানি টপকে পড়া

প্রশ্ন: ওজু এবং গোসলের ক্ষেত্রে পুরো শরীরের ওপর দিয়ে পানি টপকে পড়া কি শর্ত?
উত্তর: হ্যাঁ, পানি টপকে পড়া শর্ত। সুতরাং কোন অঙ্গ যদি শুকনো থেকে যায় তাহলে ঐ অঙ্গ শুধু ভিজিয়ে নিলেই যথেষ্ট হবে না। বরং তার ওপর পানি প্রবাহিত করতে হবে। (ফতোয়ায়ে হিন্দিয়া)

গোসলের পর মহিলার লজ্জাস্থান থেকে বীর্য বের হওয়া
প্রশ্ন: কোন মহিলার গোসলের পর পুরুষের বীর্য বের হলে তার ওপর দ্বিতীয়বার গোসল জরুরি কি?
উত্তর: না, তার ওপর দ্বিতীয়বার গোসল জরুরি নয়। কারণ, এটা তার নিজের বীর্য নয়। তবে তার জন্য ওজু করা আবশ্যক। (ফেকহি যওয়াবেত)

ওযুতে মেসওয়াক করা
প্রশ্ন:- মেসওয়াক করার ফজিলত কি?
উত্তর:- রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন যে ব্যক্তি মেসওয়াক করে দু-রাকাত নামাজ পড়ল সে যেন, সত্তর রাকাত নামাজ পড়ল (মেশকাত শরীফ)

মেসওয়াক করার হুকুম
প্রশ্ন:- ওযু করার সময় মেসওয়াক করার হুকুম কি?
উত্তর:- ওযু করার সময় মেসওয়াক করা সুন্নতে মুয়াক্কাদা। মেসওয়াক না থাকলে আঙ্গুল দ্বারা দাঁত পরিষ্কার করলেও মেসওয়াকের সুন্নত আদায় হয়ে যাবে।
(ফাতাওায়ায়ে শামী/হেদায়া/কিফায়াতুল মুফতি)

মেসওয়াক এক বিঘত থেকে ছোট হওয়া
প্রশ্ন:- মেসওয়াক এক বিঘত থেকে ছোট হলে কোন অসুবিধা আছে কি?
অনেক দিন ব্যবহারের কারণে মেসওয়াক ছোট হয়ে গেলে তার দ্বারা সুন্নত আদায় হবে কি?
উত্তর:- মেসওয়াক এক বিঘত পরিমাণ হওয়া উত্তম, কম হলেও কোন অসুবিধা নেই। ব্যবহারের কারণে ছোট হয়ে গেলেও এর দ্বারা মেসওয়াক করলে সুন্নত আদায় হয়ে যাবে। (ফাতাওয়ায়ে শামী)

মেসওয়াক কতটুকু লম্বা হবে
প্রশ্ন:- ওযুর মাঝে মেসওয়াক করা সুন্নত। প্রশ্ন হলো মেসওয়াকটা কতটুকু লম্বা হতে হবে?
উত্তর:- প্রসিদ্ধ ফিকহি কিতাব দুররে মুখতারে আছে মেসওয়াক এক বিঘত হওয়াটা জরুরি নয়। যতটুকু লম্বা করলে আমলকারীর মেসওয়াক করা সুবিধা হয় ততটুকু করবে। তবে ওলামায়ে কেরাম এক বিঘত হওয়াকে পছন্দ করেছেন।(ফাতাওয়ায়ে দারুল উলূম)

ব্রাশ দ্বারা মেসওয়াকের ফজিলত হাসিল হওয়া
প্রশ্ন:- প্লাস্টিকের তৈরি ব্রাশ দ্বারা দাঁত পরিস্কার করলে মেসওয়াকের ফজিলত পাওয়া যাবে কি?
উত্তর:- মেসওয়াকের মাঝে দুইটি সুন্নত রয়েছে।
১. দাত পরিস্কার করা
২. ডাল দিয়ে মেসওয়াক করা। সুতরাং ব্রাশ দিয়ে মেসওয়াক করলে শুধু দাত পরিস্কারের সুন্নত আদায় হবে। মেসওয়াকের নয়।
(ফাতাওায়ায়ে শামী/কিতাবুল ফাতাওয়া)

গোসলের পর ওযুর প্রয়োজন নেই
প্রশ্ন:- কিছু লোক থেকে শোনা যায় যে গোসলের পর ওযুর প্রয়োজন ইেন,আসলেই কি প্রয়োজন নেই? কোরআন হাদীসের আলোকে জানতে চাই।
উত্তর:- হ্যাঁ, গোসলের পর ওযুর প্রয়োজন নেই। গোসলের দ্বারাই ওযু হয়ে যায়।
(আল ফিকহুল ইসলামি)

গোসল করার পর নামাজ পড়া
প্রশ্ন:- গোসলের পর নামাজ আদায়ের জন্য ওযু না করলে কি নামাজ আদায় হয়ে যাবে?
উত্তর:- হ্যাঁ, নামাজ আদায় হয়ে যাবে। তবে যদি ওযু ভেঙ্গে যায় তাহলে পুনরায় ওযু করে নেবে।
(ফাতাওয়ায়ে শামী)

ওযুর ভিতর নিয়ত করা শর্ত নয়
প্রশ্ন:- ওযুর ভিতর কি নিয়ত করা জরুরি?
উত্তর:- না, ওযুর ভিতর নিয়ত করা ফরজ নয়। যদি হাত মুখ পা ধুয়ে নেয় ও মাথা মাসেহ করে তাহলে ওযু আদায় হয়ে যাবে। তবে ওযুর সাওয়াব তখনই পাবে যখন ওযুর নিয়ত করবে।
(বাদায়েউস সানায়ে)

জুমার নামাজের জন্য গোসলের পর ওযু করা
প্রশ্ন:- জুমার নামাজের জন্য গোসলের পর ওযু করা জরুরি কি?
উত্তর:- না, গোসলের পর যতক্ষণ পর্যন্ত ওযুু নষ্ট না হবে ততক্ষণ পর্যন্ত ওযু করা জরুরি নয়।
(আপকে মাসায়েল আওর উনকা হল)

ওযুর সময় প্রত্যেক অঙ্গ তিন বারের চেয়ে অতিরিক্ত ধোয়া
প্রশ্ন:- ওযু করার সময় প্রত্যেক অঙ্গ তিন বার ধোয়া সুন্নত। যদি ধোয়ার সময় কোন অঙ্গ তিনের অধিক ধোয়া হয় তাহলে কি ওযুর ভিতর কোন ত্রুটি হবে?
উত্তর:- এক অঙ্গকে তিনের অধিক ধোয়া মাকরুহ ও পানির অপচয়।
(ফাতাওয়ায়ে শামী)

ওযুর অঙ্গ ধোয়ার সময় তরতীব ঠিক রাখা জরুরি
প্রশ্ন:- ওযুর ভিতর যদি কোন অঙ্গ, যেমন নাকের ভিতর পানি দেওয়া ভুলে যায়- পরে আবার নাকের ভিতর তিন বার পানি দেওয়া হয় তাহলে কি ওযু হয়ে যাবে?
উত্তর:- হ্যাঁ, ওযু আদায় হয়ে যাবে। কারণ ওযুর ভিতর ধারাবাহিকতা রক্ষা করা জরুরি নয়।
(ফাতাওয়ায়ে শামী)

এক ওযু দ্বারা একাধিক ইবাদত
প্রশ্ন:- কোরআন শরীফ তেলাওয়াতের উদ্দেশ্যে ওযু করলে ঐ ওযু দ্বারা নামাজ আদায় করা যাবে কি?
উত্তর:- ওযু যে কোন উদ্দেশ্যেই করা হোক না কেন ঐ ওযু দ্বারা নামাজ আদায় করা যাবে। আর শুধু নামাজ নয় বরং যে সমস্ত ইবাদতের জন্য পবিত্রতা শর্ত ঐ সমস্ত ইবাদতও করা যাবে।
(ফাতাওয়ায়ে শামী)

গরম পানি দ্বারা ওযুু করা
প্রশ্ন:- গরম পানি দ্বারা ওযু করা যাবে কি?
উত্তর:- হ্যাঁ, গরম পানি দ্বারা ওযু করা যাবে, এতে কোন সমস্যা নেই
(আলবিনায়া ফি শরহিল হিদায়া)

ওযুতে কোন অঙ্গ শুকনো থেকে যাওয়া
প্রশ্ন:- ওযুর ভিতর কোন অঙ্গ শুকনো থেকে গেলে তাহলে কি দ্বিতীয় বার ওযু করবে নাকি শুধু ঐ অঙ্গটিই ধুয়ে নিবে?
উত্তর:- শুধু ঐ অঙ্গটিই ধুয়ে নিলে ওযু হয়ে যাবে। তবে ঐ অঙ্গটির ওপর পানি প্রবাহিত করা জরুরি। শুধু ভিজা হাত বুলিয়ে দিলেই যথেষ্ঠ হবে না।
(ফাতাওয়ায়ে আলমগিরী)

কুলি করার সময় দাত থেকে রক্ত বের হওয়া
প্রশ্ন:- কিছু কিছু মানুষের কুলি করার সময় দাত থেকে রক্ত বের হয়। এই ওযরের কারণে কেউ যদি কুলি না করে তাহলে ওযুর কোন ক্ষতি হবে কি?
উত্তর:- কুলি করা এবং নাকে পানি দেওয়া ওযুর সুন্নত। সুতরাং কোন ব্যক্তি যদি ওযর ব্যতীত সুন্নত ছেড়ে দেয় তাহলে সে গুনাহ্গার হবে। আর ওযরের কারণে কুলি করা ছেড়ে দিলে ওযুর কোন ক্ষতি হবে না। এবং সে গুনাহগারও হবে না।
(ফাতাওয়ায়ে শামী/ ফাতাওয়ায়ে হক্কানিয়া)

ওযুর শেষে আঙুল দিয়ে এশারা করে কালিমায়ে শাহাদাত পড়া
প্রশ্ন:- ওযুর শেষে আকাশের দিকে তাকিয়ে আঙ্গুল দ্বারা এশারা করে কালিমায়ে শাহাদাত পড়া জায়েয আছে কি?
উত্তর:- ওযুর শেষে আকাশের দিকে তাকিয়ে কালিমায়ে শাহাদাত পড়া কিংবা আঙ্গুল দ্বারা উপরে এশারা করে কালিমায়ে শাহাদাত পড়ার অবকাশ আছে। জরুরি কোন বিষয় নয়, যারা এমনটা করবে না তাদেরকে বাধ্য বা দোষারোপ করা উচিত নয়।
(ফাতাওয়ায়ে শামী/মারাকিল ফালাহ)

যার অনবরত পেশাব ঝরে তার ওযু
প্রশ্ন:- সবসময় যার পেশাবের ফোঁটা পড়ে তার ওযুর হুকুম কি?
উত্তর:- এমন ব্যক্তি নামাজের ওয়াক্ত শুরু হওয়ার পর ওযু করে নিবে। এবং এ অবস্থায়ই নামাজ আদায় করবে। তার জন্য উত্তম হল আন্ডার প্যান্ট পরে নেওয়া। যাতে নামাজের স্থান অপবিত্র না হয়ে যায়।
(ফাতাওয়ায়ে শামী/ ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়া)

নষ্ট দাঁতে ক্যাপ লাগালে ওযু-গোসলের হুকুম
প্রশ্ন:- কোন ব্যক্তি তার নষ্ট দাঁতের ওপর স্থায়ীভাবে ক্যাপ লাগিয়ে ঐ ক্যাপ লাগানো অবস্থায় ওযু-গোসল করলে তার ওযু-গোসল সহীহ্ হবে কি?
উত্তর:- দাঁত বাধাই করা ও স্থায়ীভাবে ক্যাপ লাগানো এগুলো জরুরতের অন্তর্ভুক্ত। তাই এগুলো লাগানো অবস্থায় ওযু-গোসল করলে ওযু-গোসল সহীহ্ হয়ে যাবে।
(ফাতাওয়ায়ে শামী/আহসানুল ফাতাওয়া)

মহিলাদের নাক, কানের ছিদ্রে পানি পৌছানো

প্রশ্ন:- (ক) অলংকার পরিধানের জন্য মহিলাদের কান, নাক ছিদ্র করা জায়েয কিনা। (খ) ফরজ ওযুু-গোসলের সময় ঐ ছিদ্রে পানি পৌছানোর হুকুম কি?
উত্তর:- (ক) অলংকার পরিধানের জন্য মহিলাদের নাক, কান ছিদ্র করা জায়েয। (খ) অলংকার পরিহিত অবস্থায় হলে এবং ছিঁদ্র সংকীর্ণ হলে অলংকার ভালভাবে নাড়াচাড়া করবে। যাতে ছিদ্রে পানি পৌঁছে যায়। আর অলংকার পরিহিত অবস্থায় না হলে ছিঁদ্রে স্বাভাবিকভাবে পানি পৌঁছানোর দ্বারাই ফরজ আদায় হয়ে যাবে।
(ফাতাওয়ায়ে শামী/বাহরুর রায়েক/ইমদাদুল ফাতাওয়া)

গাড়ীতে বসে ঘুমালে ওযুর হুকুম
প্রশ্ন:- বাসের সিটে বসে ঘুমালে ওযু নষ্ট হবে কি?
উত্তর:- বাসের সিটে বসা অবস্থায় যদি নিতম্ব সিটের সঙ্গে এমনভাবে লেগে থাকে যাতে বায়ু নির্গত হওয়ার সম্ভাবনা নেই, তাহলে হেলান দিয়ে ঘুমালেও ওযু ভঙ্গ হবে না। আর যদি ঘুমন্ত অবস্থায় নিতম্ব সিট থেকে ওঠে যায়, তাহলে ওযু নষ্ট হয়ে যাবে। সতর্কতা হিসেবে ওযু করে নেওয়াই উত্তম।
(ফাতাওয়ায়ে শামী/ ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়া/হেদায়া)

নামাজ ও নামাজের মাসায়েল

প্রশ্নোত্তরে নামাজের মাসায়েল

আল্লাহর নিকট নামাজ অতি মর্তবার ইবাদত। আল্লাহর নিকট নামাজ অপেক্ষা অধিক প্রিয় ইবাদত আর নেই। আল্লাহ পাক স্বীয় বান্দাগণের ওপর পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ করেছেন। যারা দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ রীতিমত আদায় করবে তারা (বেহেস্তের মধ্যে অতি বড় পুরস্কার এবং) অনেক বেশি সাওয়াব পাবে। (আল্লাহর নিকট অতি প্রিয় হবে) যারা নামাজ পড়ে না তারা মহাপাপী। হাদীস শরীফে আছে- যে ব্যক্তি উত্তমরূপে ওযু করে ভয় ও ভক্তি সহকারে মনোযোগের সাথে রীতিমত নামাজ আদায় করবে কিয়ামতের দিন আল্লাহ তার সগিরা গুনাহসমূহ মাফ করে দিবেন এবং বেহেস্তে স্থান দিবেন।

অন্য হাদীসে আছে- হযরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন- নামাজ দ্বীনের (ইসলাম) খুটিস্বরুপ। যে উত্তমরূপে নামাজ কায়েম রাখল সে দ্বীনকে (দ্বীনের ইমারতটি) কায়েম রাখল। যে বরবাদ করে ফেলল এবং যে খুটি ভেঙে ফেলল ( অর্থাৎ নামাজ পড়ল না ) সে দ্বীনকে ( দ্বীনের ইমারতটি ভেঙে ফেলল অন্য হাদীসে আছে: ক্বিয়ামতে সর্বাগ্রে নামাজেরই হিসাব নেওয়া হবে। নামাজীর হাত, পা এবং মুখ ক্বিয়ামতে সূর্যের মত উজ্জ্বল হবে। বে-নামাজীর ভাগ্যে তা জুটবে না।

অন্য হাদীসে আছে- ক্বিয়ামতের ময়দানে নামাজীরা নবী, শহীদ এবং অলীগণের সঙ্গে থাকবে। এবং বে-নামাজীরা ফেরাউন, হামান এবং কারুন প্রভৃতি বড় বড় কাফেরদের সাথে থাকবে (নামাজ আল্লাহর ফরজ ইবাদত) অতএব প্রত্যেকেরই নামাজ পড়া একান্ত আবশ্যক। নামাজ না পড়িলে আখেরাতের অর্থাৎ পরজীবনের ক্ষতি তো আছেই, ইহজীবনেরও ক্ষতি আছে। অধিকন্তু যারা নামাজ না পড়বে ক্বিয়ামতের দিন তাদেরকে কাফেরদের সমতুল্য গণ্য করা হবে। আল্লাহ আমাদের হেফাজত করুন। নামাজ না পড়া কত বড় অন্যায়। (অতএব হে ভাই-ভগ্নিগণ, আসুন আমরা সকলই অত্যন্ত যত্নসহকারে নামাজ পড়ি এবং আসমান-জমিনের সৃষ্টিকর্তা সর্বশক্তিমান আল্লাহর গজব ও দোযখের আযাব থেকে মুক্তি নিশ্চিত করে বেহেস্তের অফুরন্ত নেয়ামতভোগি হয়ে তার প্রিয়পাত্র হই)।

পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ সকলের ওপর ফরজ। ছেলে-মেয়ের সাত বছর বয়স হলে তাদের দ্বারা নামাজ পড়ানো পিতা মাতার ওপর ওয়াজিব। দশ বছর বয়সে যদি ছেলে-মেয়ে নামাজ না পড়ে তবে তাদেরকে মেরে-পিটিয়ে নামাজ পড়াতে হবে। এটা হাদীসের হুকুম। নামাজ কারো জন্য মাফ নাই। কোন অবস্থায়ই নামাজ তরক করা জায়েয নয়। রুগ্ন, অন্ধ, খোড়া, আতুর, বোবা, বধির যে যে অবস্থায় আছে তার সেই অবস্থাতেই নামাজ পড়তে হবে। অবশ্য যদি কেহ ভুলে যায় বা ঘুমিয়ে পড়ে ওয়াক্তের মধ্যে স্বরণ না আসে বা ঘুম না ভাঙ্গে তবে তার গুনাহ হবে না বটে, কিন্তু স্বরণ হওয়া এবং ঘুম ভাঙ্গা মাত্রই কাযা পড়ে নেওয়া ফরজ। (এবং ভবিষ্যতের জন্য সতর্ক হতে হবে) অবশ্য তখন মাকরুহ ওয়াক্ত হলে যেমন সূর্যের উদয় বা অস্তের সময় যদি স্বরণ আসে বা ঘুম ভাঙ্গে তবে একটু দেরি করে পড়বে, যেন মাকরুহ ওয়াক্ত চলে যায়।

এভাবে বেহুশি অবস্থায় যদি নামাজ ছুটে যায় তবে এ কারণে গুনাহ হবে না। অবশ্য হুশ আসা মাত্রই তার কাযা পড়তে হবে।
(বেহেস্তি জেওর)

পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের ফজিলত

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ أَنَّهُ سَمِعَ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ أَرَأَيْتُمْ لَوْ أَنَّ نَهَرًا بِبَابِ أَحَدِكُمْ يَغْتَسِلُ فِيهِ كُلَّ يَوْمٍ خَمْسًا مَا تَقُولُ ذَلِكَ يُبْقِي مِنْ دَرَنِهِ قَالُوا لَا يُبْقِ مِنْ دَرَنِهِ شَيْئًا قَالَ فَذَلِكَ مِثْلُ الصَّلَوَاتِ الْخَمْسِ يَمْحُو اللَّهُ بِهِ الْخَطَايَا

অর্থ: হযরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন- বল তো, যদি তোমাদের কারো দরজায় একটি নদী থাকে আর সে দৈনিক পাঁচবার তাতে গোসল করে তাহলে তাঁর দেহে কি কোন ময়লা-আবর্জনা অবশিষ্ট থাকবে? তারা উত্তরে বললেন- জ্বী না, কোন ময়লা থাকবে না। এরপর হুযুর সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন- এরুপই হল পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের উদাহরণ। এর দ্বারা আল্লাহ তায়ালা গুনাহসমূহ ক্ষমা করে দেন।
(বুখারী/মুসলিম শরীফ)


عَنْ أَبِى هُرَيْرَةَ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- كَانَ يَقُولُ ্র الصَّلَوَاتُ الْخَمْسُ وَالْجُمُعَةُ إِلَى الْجُمُعَةِ وَرَمَضَانُ إِلَى رَمَضَانَ مُكَفِّرَاتٌ مَا بَيْنَهُنَّ إِذَا اجْتَنَبَ الْكَبَائِرَ.

অর্থ: হযরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন- পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ এক জুমা থেকে অপর জুমা এবং এক রমজান থেকে অপর রমজানের মধ্যবর্তি সময়ের গুনাহসমূহের কাফ্ফারা হিসেবে পরিগণিত হয়, যদি কবিরা গুনাহসমূহ থেকে বিরত থাকা হয়। (বুখারী/মুসলিম শরীফ)


عَنْ عُثْمَانَ بْنِ عَفَّانَ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- ্র مَنْ تَوَضَّأَ فَأَحْسَنَ الْوُضُوءَ خَرَجَتْ خَطَايَاهُ مِنْ جَسَدِهِ حَتَّى تَخْرُجَ مِنْ تَحْتِ أَظْفَارِهِ গ্ধ.

অর্থ: হযরত উসমান ইবনে আফ্ফান (রা.) বলেছেন- আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি: যে ব্যক্তি নামাজের জন্য ওযু করল এবং খুবই উত্তমরূপে ওযু করল, গুনাহসমূহ তার শরীর থেকে এমনকি নখের নিচ থেকেও দূর হয়ে যায়।
(মুসলিম শরীফ)

আযান ও ইক্বামত

ওযু ছাড়া আযান দেওয়া

প্রশ্ন:- ওযু ছাড়া আযান দেওয়া যাবে কি?
উত্তর:- উত্তম হলো ওযু অবস্থায় আযান দেওয়া। কারণ আযানের অর্থ হলো লোকদেরকে নামাজের দিকে ডাকা। আর লোকদেরকে যেদিকে ডাকা হচ্ছে মূলত নিজেই আগে তার জন্য প্রস্তুত হওয়া। ওযু ছাড়া আযান দেওয়ার অর্থ হলো নিজে নামাজের জন্য প্রস্তুত না হয়ে অন্যকে নামাজের দিকে ডাকা, যা অনুচিত। তার পরও ওযু ছাড়া আযান দেওয়া যাবে।
(ফাতাওয়ায়ে শামী/ফাতাওায়ায়ে হিন্দিয়া/বাহরুর রায়েক)

প্রশ্ন:- সময়ের আগে আযান দেওয়া যাবে কি?
উত্তর:- আযানের উদ্দেশ্য হলো নামাজের সময় আরম্ভ হওয়ার ঘোষণা দেওয়া। যদি ওয়াক্তের পূর্বে আযান দেওয়া হয় তাহলে তার উদ্দেশ্য হাসিল হবে না বরং এতে মানুষ বিভ্রান্তিতে পড়বে। তাই ওয়াক্ত শুরু হওয়ার পর আযান দিতে হবে। যদি ওয়াক্তের পূর্বে আযান দেওয়া হয়ে যায় তাহলে পুনরায় আযান দেওয়া ওয়াজিব।
(আবু দাউদ শরীফ/ ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়া)
ফজরের আযানে আস্সালাতু খায়রুম মিনান নাউম বলতে ভুলে যাওয়া

প্রশ্ন:- ফজরের আাযানে আস্সালাতু খায়রুম মিনান নাউম বলতে ভুলে গেলে পুনরায় আযান দিতে হবে কি?
উত্তর:- ফজরের আযানে আস্সালাতু খায়রুম মিনান নাউম বলা মুস্তাহাব। আর মুস্তাহাব বিষয় আযানে ভুলে গেলে দ্বিতীয় বার আযান দিতে হয় না। তেমনি ইচ্ছাকৃত ছেড়ে দিলেও দোহরাতে হবে না। যদিও ইচ্ছাকৃতভাবে ছেড়ে দেওয়া ঠিক না।
(ফাতাওয়ায়ে শামী/ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়া)

ফজরের আযানে অস্সালাতু খায়রুম মিনান নাউম এর জবাব দেওয়া
প্রশ্ন:- ফজরের আযানে অস্সালাতু খায়রুম মিনান নাউম এর জবাবে কি বলবে?
উত্তর:- অস্সালাতু খায়রুম মিনান নাউমের জবাবে অস্সালাতু খায়রুম মিনান নাউম বলাই উত্তম। তবে ‘সদাকতা ওবাররতা’ও বলা যেতে পারে।
(আহসানুূল ফাতাওয়া)

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর যুগে আযান কোথায় দেওয়া হত
প্রশ্ন:- রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যুগে আযান মসজিদের ভিতর দেওয়া হত কি? যেমন বর্তমানে মসজিদের ভিতরে আযান দেওয়া হয়? মসজিদের ভিতরে আযান দেওয়াটা কেমন?
উত্তর:- (ক) রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইওয়াসাল্লামের যুগ থেকে নিয়ে মাইকে আযানের প্রচলন পাওয়ার পূর্ব পর্যন্ত মসজিদের বাইরে নির্দিষ্ট স্থানে আযান দেওয়া হতো। যখন থেকে মাইকে আযান দেওয়ার প্রচলন হয় তখন থেকে আস্তে আস্তে তা বন্ধ হয়ে যায়। (খ) মসজিদের বাইরে আযান দেওয়ার দ্বারা উদ্দেশ্য ছিল আযানের আওয়াজ দূরবর্তী স্থান পর্যন্ত পৌঁছানো। যেহেতু সে উদ্দেশ্য মসজিদের মাইকের মাধ্যমে আযান দিলেও হাসিল হয় তাই মসজিদের ভিতরে আযান দেওয়ার অবকাশ আছে তবে উত্তম হলো মসজিদ সংলগ্ন ভিন্ন কোন রুমে মাইক রেখে সেখানেই আযান দেওয়া।
(ফাতওয়ায়ে তাতার খানিয়া)

জেলখানায় আযান দেওয়া
প্রশ্ন:- জেলখানায় জামাতে নামাজ হয় সেখানে আযান দিতে হবে কি, না শুধু ইক্বামত বলাই যথেষ্ট হবে?
উত্তর:- যদি সেখানে আযান দিতে কোন প্রকার বাধাবিঘœ না থাকে তাহলে আযান দেওয়া ভাল। যদি শুধু ইক্বামত বলে তাতেও কোন সমস্যা নেই। তবে জেলখানায় মসজিদ থাকলে সেখানেও নিয়মিত আযান দিতে হবে।
(ফাতাওয়ায়ে শামী)

একাধিক মসজিদে একত্রে আযান হলে উত্তর দেওয়া
প্রশ্ন:- শহর এবং গ্রামের মসজিদগুলোতে একের পর এক আযান হয় এগুলোর মধ্য থেকে কোন মসজিদের আযানের উত্তর দেওয়া জরুরি?
উত্তর:- প্রথম আযানের উত্তর দেওয়া উত্তম। চাই তা নিজ মহল্লার মসজিদের আযান হোক বা অন্য মহল্লার। একসঙ্গে একাধিক মসজিদের আযান হলে প্রথম আযান বা নিজ মহল্লার মসজিদের আযানের উত্তর দিলেই হবে।
(ফাতাওয়ায়ে শামী)

নাবালেগ ছেলের আাযান দেওয়া
প্রশ্ন:- নাবালেগ ছেলের আযান এর হুকুম কি?
উত্তর:- নাবালেগ ছেলে যদি বুদ্ধি সম্পন্ন হয় তাহলে তার আযান সহীহ হবে। তবে বালেগ ব্যক্তির আযান দেওয়া উত্তম। আর যদি নাবালেগ ছেলে অবুুঝ হয় তাহলে তার আযান সহীহ হবে না। দ্বিতীয় বার আযান দিতে হবে।
(ফাতাওয়ায়ে শামী)

দাড়ি ছাঁটা ব্যক্তির আযান ও ইক্বামত দেওয়া
প্রশ্ন:- যে ব্যক্তি দাড়ি রাখে না তার আযান ও ইক্বামতের হুকুম কি?
উত্তর:- যে ব্যক্তি দাড়ি রাখে না তার আযান ও ইক্বামত মাকরুহে তাহরিমী। তবে আযান পুনরায় দেওয়া মুস্তাহাব ইক্বামত নয়। অবশ্য বর্তমান সমাজে উক্ত আযান দ্বিতীয় বার দেওয়ার প্রয়োজন নেই।
(ফাতাওয়ায়ে শামী/আহসানুল ফাতাওয়া)

জন্মের এক বা দু’দিন পর বাচ্চার কানে আযান দেওয়া
প্রশ্ন:- ক্লিনিক বা হাসপাতালে বাচ্চা জন্ম হলে অনেক সময় বিশেষ প্রয়োজনে জন্মের পরপর তাকে কাচের একটি বক্সে রাখা হয় সেখানে বাচ্চাকে দেখা যায় কিন্তু স্পর্শ করা যায় না এ অবস্থায় তিন দিন বা এক সপ্তাহ পর বাচ্চার কানে আযান বললে কোন সমস্যা আছে কি?
উত্তর:- না। অপারগতার সময় যখন সুযোগ হবে তখনই তার ডান কানে আযান এবং বাম কানে ইক্বামত বলবে।
(ফাতাওয়ায়ে শামী)

নামাজের ওয়াক্তে আযানের রেকর্ড ছাড়া
প্রশ্ন:- প্রত্যেক নামাজের ওয়াক্তে আযানের রেকর্ড ছাড়লে সেই আযান সহীহ হবে কি? এবং আযানের পর নামাজ পড়লে নামাজ সহীহ হবে কি?
উত্তর:- রেকর্ড করা আযান প্রচার করলে তা গ্রহণযোগ্য হবে না। দ্বিতীয় বার আযান আবশ্যক হবে যদি প্রচারিত আযানের পর নামাজ পড়া হয় তাহলে তা আযান ছাড়াই পড়া হয়েছে বলে গণ্য হবে। তবে নামাজ সহীহ হয়ে যাবে।
(ফাতাওয়ায়ে শামী

আযানের উত্তর দেওয়া
প্রশ্ন:- আযানের উত্তর দেওয়ার হুকুম কি? মহিলাদেরও কি উত্তর দেওয়া ওয়াজিব?
উত্তর:- নারী-পুরুষ সকলের জন্যই মুখে আযানের উত্তর দেওয়া সুন্নত। আর কাজের মাধ্যমে আযানের উত্তর দেওয়া তথা পুরুষদের মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়া এবং মহিলাদের ঘরে নামাজের স্থানে গিয়ে নামাজ পড়া ওয়াজিব।
(ফাতাওয়ায়ে শামী)

সহবাসকারী কিংবা হায়েয বা মিনস্ আবস্থায় আযানের উত্তর দেওয়া
প্রশ্ন:- জুনুবী অর্থাৎ যার উপর গোসল ফরজ কিংবা হায়েযা মহিলারা কি আযানের জবাব দিতে পারবে?
উত্তর:- হ্যাঁ, পারবে তবে ওযু করে জবাব দেওয়া উত্তম।
(ফাতাওয়ায়ে শামী)

ওযু বা তিলাওয়াতের সময় আযান হলে করণীয়
প্রশ্ন:- ওযু করার সময় অথবা ঘরে বা মসজিদে তেলাওয়াতরত অবস্থায় আযান হলে করণীয় কি? তেলাওয়াত বন্ধ করে তার উত্তর দিতে হবে কি?
উত্তর:- ওযু করার সময় আযান হলে ওযু অবস্থায় উত্তর দেওয়া উত্তম। তেলাওয়াতরত অবস্থায় আযান হলে বিশুদ্ধ মত অনুযায়ী সেখানেও তেলাওয়াত বন্ধ করে আযানের উত্তর দেওয়া উচিত।
(ফাতাওয়ায়ে শামী/ফাতাওয়ায়ে মাহমুদিয়া)

নবজাতক সন্তানের কানে মোবাইলের মাধ্যমে আযান দেওয়া
প্রশ্ন:- নবজাতক সন্তানের কানে মোবাইলের মাধ্যমে আযান দিলে আযান আদায় হবে কি?
উত্তর:- হ্যাঁ, মূলত উদ্দেশ্য হলো বাচ্চার কানে আযানের আওয়াজ পৌঁছানো। এজন্য মোবাইলের মাধ্যমে আযান দিলেও যথেষ্ট হবে। তবে উত্তম হলো সরাসরি কানে আযান দেওয়া।
(ফতোয়ায়ে শামী)

আযানের পূর্বে আউযুবিল্লাহ/বিসমিল্লাহ বলা
প্রশ্ন:- আযানের পূর্বে আউযুবিল্লাহ/বিসমিল্লাহ বলার হুকুম কি? এর কোন প্রমাণ আছে কি?
উত্তর:- আযানের পূর্বে উচ্চস্বরে আউযুবিল্লাহ/বিসমিল্লাহ বলার প্রমাণ শরীয়তে নেই। তাই তা বর্জন করা আবশ্যক।
(ফাতাওয়ায়ে শামী/(ফাতাওয়ায়ে কাজীখান)

আযান চলাকালে টয়লেটে যাওয়া
প্রশ্ন:- আযান চলা কালে টয়লেটে যাওয়া কেমন?
উত্তর:- তীব্র বেগ হলে তৎক্ষণাৎ সেরে নিবে, আযান শেষ হওয়ার অপেক্ষা করা জরুরি নয়। আর যদি অতি প্রয়োজন না হয় তা হলে উত্তম হলো আযান শেষ হওয়ার অপেক্ষা করা।
(ফাতাওয়ায়ে শামী)

জুমার দ্বিতীয় আযানের উত্তর দেওয়া
প্রশ্ন:- জুমার দ্বিতীয় আযানের উত্তর দেওয়া এবং আযানের পর দোয়া পড়ার হুকুর কি?
উত্তর:- জুমার দিন দ্বিতীয় আযানের জবাব মুখে দিতে হবে না তবে মনে মনে পড়া জায়েয আছে। খতিব সাহেব জবাব দিতে পারেন।
(ফাতাওয়ায়ে শামী)

জুমার প্রথম আযানের হুকুম
প্রশ্ন:- জুমার প্রথম আযান সুন্নত না দ্বিতীয় আযান?
উত্তর:- উভয় আযানই সুন্নত।
(ফাতাওয়ায়ে শামী)

খালি মাথায় আযান দেওয়া
প্রশ্ন:- খালি মাথায় আযান দেওয়া জায়েয আছে কি?
উত্তর:- খালি মাথায় আযান দেওয়া জায়েয আছে। তবে উত্তম হলো খালি মাথায় আযান না দেওয়া। যে এলাকায় খালি মাথায় আযান দেওয়া রাফিজিদের নিদর্শন ঐ এলাকায় কিছুতেই খালি মাথায় আযান দিবে না।
(ফাতাওয়ায়ে শামী)

দু’বার জামাত হলে দু’বারই একামত বলা
প্রশ্ন:- চার রাকাত বিশিষ্ট নামাজে ইমাম সাহেব সালাম ফিরানোর পর জানা গেল যে নামাজ তিন রাকাত হয়েছে, তাহলে এখন পুনরায় একামত বলে জামাত শুরু করতে হবে, না একামত ছাড়াই পড়ে নিবে?
উত্তর:- যদি কোন রকম বিলম্ব ছাড়াই নামাজ আরম্ভ হয় তাহলে একামত বলার প্রয়োজন নেই। প্রথম একামতই যথেষ্ঠ হবে। আর যদি বিলম্ব হয় তাহলে দ্বিতীয় বার একামত বলতে হবে।
(ফাতাওয়ায়ে শামী)

একামতের অপেক্ষা করা
প্রশ্ন:- মুসল্লীরা মসজিদে প্রবেশ করার পর না বসে দাঁড়িয়ে একামতের অপেক্ষা করে এবং কথা বলতে থাকে এর হুকুম কি?
উত্তর:- মসজিদে প্রবেশ করে দাড়ানো অবস্থায় একামতের জন্য অপেক্ষা করা এবং কথা বলা মাকরুহ।
(ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়া)

শিশু বধির হয়ে জন্ম নিলে আযান দেওয়া
প্রশ্ন:- শিশু বধির হয়ে জন্ম নিলে আযান দিতে হবে কি?
উত্তর:- কোন শিশু জন্ম নিলেই ডান কানে আযান আর বাম কানে একামত দিতে হবে। শিশু চাই ভাল হোক বা বধির হোক।
(তিরমিযি শরীফ)

মসজিদের মাইকে আযান চলাকালীন বিদ্যুৎ চলে গেলে করণীয়
প্রশ্ন:- মসজিদের মাইকে আযান চলাকালীন বিদ্যুৎ চলে গেলে দূরবর্তী শ্রোতা শুনতে না পারলে, বাকি আযানের উত্তর কীভাবে দিবে?
উত্তর:- প্রশ্নোক্ত অবস্থায় দূরবর্তী শ্রোতাদের আযানের উত্তর দিতে হবে না। কেননা আযানের উত্তর দেওয়ার জন্য শর্ত হলো আযান শোনা। (ফাতাওয়ায়ে শামী)
সহবাসকারী ও হায়েযা নারীর আযানের জবাব দেওয়া

প্রশ্ন:- সহবাসকারী ও হায়েযা কি আযানের জবাব দিতে পারবে?
উত্তর:- হ্যাঁ, সহবাসকারী ও হায়েযা নারী আযানের জবাব দিতে পারবে।
(ফাতাওয়ায়ে শামী)

ইস্তেঞ্জাখানায় আযানের জবাব দেওয়া
প্রশ্ন:- ইস্তেঞ্জাখানায় আযানের জবাব দেওয়া যাবে কি?
উত্তর:- যদি কোন ব্যক্তি ইস্তেঞ্জাখানায় প্রবেশের পর আযান শুরু হয় তাহলে উক্ত ব্যক্তির করণীয় হলো, আযানের জবাব দেওয়া। আর যদি ইস্তেঞ্জাখানায় প্রবেশের পূর্বেই আযান শুরু হয় তাহলে সম্ভব হলে ইস্তেঞ্জাখানার বাহিরে আযানের জবাব দিবে অত:পর ইস্তেঞ্জাখানায় প্রবেশ করবে।
(ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়া)

আযানের সময় কানে আঙ্গুল দেওয়া
প্রশ্ন:- জনৈক ব্যক্তি বলেন আযানের সময় কানে আঙ্গুল দেওয়ার উদ্দেশ্য হলো আওয়ায উঁচু হওয়া। আর এ কারণেই কানে আঙ্গুল দেওয়া সুন্নত। সুতরাং এখন যেহেতু মাইক আছে যার দ্বারা উদ্দেশ্য (উঁচু আওয়ায) হাসিল হয়ে যায়। জানার বিষয় হলো এখনো কি আযানের সময় কানে আঙ্গুল দেওয়ার সুন্নত বাকি আছে?
উত্তর:- আযান দেওয়ার সময় কানে আঙ্গুল দেওয়া মুস্তাহাব, সুন্নত নয়। তদুপরি কানে আঙ্গুল দিয়ে আযান দেওয়া অতি উত্তম। কারণ নবীয়ে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হযরত বেলাল রা.কে কানে আঙ্গুল দিয়ে আযান দিতে বলেছেন। যাতে আওয়াজ উঁচু হয়, তা ছাড়া হযরত বেলাল রা. এর আযানের সাথে সাদৃশ্য রাখার জন্য কানে আঙ্গুল দেওয়া উচিত, যদিও আজকাল মাইকে আযান দেওয়া হয়।
(দুররুল মুখতার/(ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়া)

নবজাতকের কানে আযান দেওয়া সুন্নত
প্রশ্ন:- নবজাতকের কানে আযান দিলে সুন্নত আদায় হবে কি?
উত্তর:- হ্যাঁ, সুন্নত আদায় হয়ে যাবে।
(ফাতাওয়ায়ে মাহমূদিয়া)

একই ব্যক্তি দুই মসজিদে আযান দেওয়া
প্রশ্ন:- একজন ব্যক্তি একই ওয়াক্তে দুই মসজিদে আযান দিতে পারবে কি?
উত্তর:- একজন ব্যক্তির একই ওয়াক্তে দুই মসজিদে আযান দেওয়া মাকরুহ। তবে প্রয়োজনের ক্ষেত্রে এর অবকাশ আছে।
(ফাতাওয়ায়ে শামী)

একাকী নামাজ আদায়কারীর একামত দেওয়া
প্রশ্ন:- একাকী নামাজ আদায়কারী ফরজের জন্যে একামত দিতে হবে কি?
উত্তর:- একাকী নামাজ আদায়কারীর জন্য একামত দেওয়া মুস্তাহাব না দেওয়ারও অবকাশ রয়েছে।
(বাহরুর রায়েক)

মুয়াজ্জিন যখন আযান বা একামত এ আশহাদু আন্না মুহাম্মদান বলবে তখন তার জবাব দেওয়া
প্রশ্ন:- মুয়াজ্জিন যখন আযান বা একামতে আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান বলবে তখন তার জবাবে কি বলতে হবে?
উত্তর:- মুয়াজ্জিন যখন আযান বা একামতে আশহাদুু আন্না মুহাম্মাদান বলবে তার জবাবে আশহাদু আন্না মুহাম্মাদানই বলতে হবে। দরুদ শরীফ পড়ার কোন প্রমাণ নেই। দরুদ শরীফ পড়তে হবে আযানের শেষে দোয়া পড়ার পূর্বে।
(ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়া/ফাতাওয়ায়ে শামী)

জুমার দিন একই সাথে একাধিক মসজিদে আযান হলে
প্রশ্ন:- যেখানে বিভিন্ন মসজিদ থেকে জুমার আযানের ধ্বনি আসে, সে স্থানের লোকেরা কোন আযান শুনে ক্রয়-বিক্রয় বন্ধ করবে?
উত্তর:- যে মসজিদে নামাজ পড়ার নিয়ত করবে সে মসজিদের আযান শুনে ক্রয়-বিক্রয় বন্ধ করবে। বর্তমানে সকল মসজিদে বয়ানের প্রথা চালু আছে তাই ব্যবস্থাপনা কমিটির লক্ষ্য রাখতে হবে যাতে প্রথম আযান ও খুতবার মাঝে দীর্ঘ সময়ের ব্যবধান না হয়।
(আদ-দুররুল মুখতার)

আযানের বাক্যসমূহের মাঝে শ্বাস ছেড়ে দেওয়া
প্রশ্ন:- আযানের বাক্যসমূহের মাঝে শ্বাস ছেড়ে দিলে তার হুকুম কি?
উত্তর:- আযানের বাক্যের মাঝে শ্বাস ছাড়ার ক্ষেত্রে বিরতি যদি বেশি না হয়, তাহলে আযান শুদ্ধ হয়ে যাবে, তবে আযানের বাক্যের মাঝে এত বেশি পরিমাণ টানা ঠিক না, যাতে মাঝে শ্বাস নেয়ার প্রয়োজন হয়।
(ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়া)

মসজিদে একামতের বাক্যগুলো একবার বলা
প্রশ্ন:- কোন মসজিদে যদি একামতের বাক্যগুলো একবার করে বলা হয় তাহলে একামত ও নামাজ সহীহ হবে কি?
উত্তর:- মজবুত দলিল এর ভিত্তিতে একামতের বাক্যগুলো হানাফিদের নিকট দুবার করে বলা সুন্নত। যদি একবার করে বলা হয় তাহলে একামত ও নামাজ আদায় হয়ে যাবে বটে তবে খেলাফে সুন্নত হবে।
(বাহরুর রায়েক)

নামাজের ফরজ

প্রশ্ন:- নামাজের ফরজ কয়টি?
উত্তর:- নামাজের পূর্বে ও পরে মোট ১৪টি ফরজ।
নামাজের পূর্বে ৭টি ফরজ-
১. শরীর পাক হওয়া
২. কাপড় পাক হওয়া
৩. নামাজের জায়গা পাক হওয়া
৪. সতর ঢাকা
[পুুরুষ নাভী থেকে হাঁটুর নীচ পর্যন্ত এবং মহিলাগণ চেহারা, কব্জী পর্যন্ত দুই হাত এবাং পায়ের পাতা ব্যতিরেকে পূর্ণ শরীর ঢাকবে অন্যথায় নামাজ শুদ্ধ হবে না।]
৫. কেবলামুখি হওয়া
৬. ওয়াক্তমত নামাজ পড়া
৭. নামাজের নিয়ত করা
(আননুতাফ ফিল ফাতাওয়া)
নামাজের ভিতরে ৭টি ফরজ
১. তাক্ববীরে তাহরিমা বলা
২. দাঁড়িয়ে নামাজ পড়া
৩. ক্বেরাত অর্থাৎ কুরআন শরীফ থেকে কমপক্ষে কোন লম্বা এক বা ছোট তিন আয়াত পরিমাণ পড়া
৪. রুকু করা
৫. দুই সেজদা করা
৬. শেষ বৈঠকে পূর্ণ আত্তাহিয়্যাতু পড়ার সময় পরিমাণ বসা
৭. নামাজ থেকে বের হওয়া
(আননুতাফ ফিল ফাতাওয়া)

নামাজের ওয়াজিব

প্রশ্ন:- নামাজের ওয়াজিব কয়টি?

উত্তর:- নামাজের মধ্যে ১৮টি কাজ ওয়াজিব।
১. সুরা ফাতিহা পড়া
২. সুরা ফাতিহার শেষে অন্য একটি সুরা মেলানো
৩. ফরজের প্রথম দুই রাকাতকে ক্বেরাতের জন্য নির্ধারিত করা
৪. সুরা ফাতেহাকে অন্য সুরার আগে পড়া
৫. সেজদার মধ্যে কপাল এবং নাক উভয়টিকেই মাটিতে লাগানো
৬. রুকুতে মাথা উঠিয়ে সোজা হয়ে দাঁড়ানো। এবং প্রথম সেজদা থেকে উঠে সোজা হয়ে বসার পরক্ষণই দ্বিতীয় সেজদা করা
৭. নামাজের সমস্ত রুকন ধীরস্থিরভাবে আদায় করা
৮. প্রথম বৈঠক অর্থাৎ তিন বা চার রাকাত বিশিষ্ট নামাজের প্রথম দুই রাকাতে বসা
৯. প্রথম বৈঠকে আত্তাহিয়্যাতু পড়া
১০. শেষ বৈঠকে বসা
১১. (প্রথম বৈঠকে) আত্তা¡হিয়্যাতু পড়ে তৎক্ষণাৎ তৃতীয় রাকাতের জন্য দাঁড়ানো
১২. আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ বলে নামাজ শেষ করা
১৩. বিতরের নামাজে দোয়ায়ে কুনূত পড়া
১৪. দুই ঈদের নামাজে অতিরিক্ত তাকবিরসমূহ বলা
১৫. দুই ঈদের নামাজে দ্বিতীয় রাকাতে রুকুর জন্য তাকবির বলা
১৬. আল্লাহু আকবার বলে নামাজ শুরু করা
১৭. ওজর, মাগরিব, এশা, জুমা, দুই ঈদের নামাজ ও রমযান মাসের বিতরের নামাজে ইমামের আওয়াজ করে ক্বেরাত পড়া
১৮. জোহর, আসর ও দিনের বেলায় সুন্নত ও নফল নামাজে নিজ কানে শুনতে পারে এই পরিমাণ নিচু স্বরে ক্বেরাত পরা।
উল্লেখ্য:- এইগুলোর মধ্য থেকে কোন একটা ছুটে গেলে বা আগ-পর হলে সেজদায় সাহু করতে হবে, অন্যথায় নামাজ শুদ্ধ হবে না।
(আননুতাফ ফিল ফাতাওয়া)


নামাজের সুন্নতসমূহ

প্রশ্ন:- নামাজের সুন্নত কয়টি?
উত্তর:- নামাজের মধ্যে ৫১টি সুন্নত।

 দাঁড়ানো অবস্থায় মোট ১১টি। সেগুলো হলো-
১. তাকবিরে তাহরিমার সময় সোজা হয়ে দাঁড়ানো অর্থাৎ মাথা না ঝুকানো।২. পায়ের আঙ্গুলগুলি কেবলার দিকে রাখা এবং দুই পায়ের মাঝখানে চার আঙ্গুল পরিমাণ ফাঁকা রাখা। (মারাকিল ফালাহ)
৩. মুক্তাদীর তাকবিরে তাহরিমা ইমামের তাকবিরে তাহরিমার পরক্ষণই হওয়া
৪. তাকবিরে তাহরিমা বলার সময় উভয় হাত কান পর্যন্ত উঠানো
৫. তাকবিরে তাহরিমার সময় হাতের তালু কেবলার দিকে রাখা
৬. হাতের আঙ্গুলগুলো স্বাভাবিক অবস্থায় খোলা রাখা
৭. ডান হাতের তালু বাম হাতের তালুর পিঠের উপর রাখা
৮. ডান হাতের বৃদ্ধাঙ্গুলি ও কনিষ্ঠা দ্বারা বাম হাতের কব্জি চেপে ধরা
৯. মাঝের তিন আঙ্গুল বাম হাতের কব্জির উপর বিছিয়ে রাখা
১০. নাভির নিচে হাত বাধা
১১. সানা পড়া

 কেরাতের সুন্নত ৭টি
১. আউযুবিল্লাহি মিনাশ শায়তানির রাজীম পড়া
২. বিছমিল্লাহির রহমানির রাহিম পড়া
৩. সুরা ফাতিহা পড়ার পর আস্তে আমিন বলা
৪. ওজর ও জোহরে তেওয়ালে মুফাস্সল অর্থাৎ সুরা হুযুরাত থেকে সুরা বুরুজ পর্যন্ত, আছর ও এশায় আওসাতে মুফাস্সল অর্থাৎ সুরা তারেক থেকে সুরা লাম ইয়াকুন পর্যন্ত এবং মাগরিবে কেসারে মুফাস্সল অর্থাৎ সুরা যিলযাল থেকে সুরা নাস পর্যন্ত কোন সুরা পড়া।
৫. ফজরের প্রথম রাকাতকে দ্বিতীয় রাকাত অপেক্ষা লম্বা করা
৬. অতি ধীর গতিতে অথবা দ্রুত গতিতে না পড়া বরং মধ্যম গতিতে পড়া
৭. ফরজ নামাজের তৃতীয় ও চতুর্থ রাকাতে সুরা ফাতেহা পড়া

 রুকুর সুন্নত ৮টি
১. রুকুতে যাওয়ার সময় আল্লাহু আকবার বলা
২. রুকুতে উভয় হাতের দ্বারা হাঁটু ধরা
৩. হাঁটু ধরতে আঙ্গুলগুলো ফাঁকা রাখা
৪. পায়ের গোছা সোজা রাখা
৫. রুকু অবস্থায় পিঠ বিছিয়ে বরাবর করে রাখা
৬. মাথা ও নিতম্ব এক বরাবর করে রাখা
৭. রুকুর মধ্যে কমপক্ষে তিনবার সুবহানা রব্বিয়াল আ’যীম পড়া
৮. রুকু থেকে মাথা উঠানোর সময় ইমাম সামিয়াল্লাহু লিমান হামিদা এবং মুক্তাদি রব্বানা লাকাল হামদ বলা আর একা নামাজ আদায়কারী উভয়টিই বলা।

 সেজদার সুন্নত ১২টি
১. সেজদায় যাওয়ার সময় আল্লাহু আকবার বলা
২. সেজদায় যাওয়ার সময় প্রথমে দুই হাঁটু রাখা
৩. অত:পর উভয় হাত রাখা
৪. তারপর নাক রাখা
৫. তারপর কপাল রাখা
৬. দুই হাতের মাঝখানে সেজদা করা
৭. সেজদা অবস্থায় পেট রান থেকে উঠিয়ে রাখা
৮. বগল বাজু থেকে পৃথক রাখা
৯. উভয় হাত কব্জি থেকে কনুই পর্যন্ত জমিন থেকে উঠিয়ে রাখা
১০. সেজদার মধ্যে কমপক্ষে তিনবার সুবহানা রব্বিয়াল আ’লা পড়া
১১. সেজদা থেকে মাথা উঠানোর সময় আল্লাহু আকবার বলা
১২. সেজদা থেকে উঠার সময় প্রথমে কপাল তারপর নাক তারপর উভয় হাত তারপর উভয় হাঁটু উঠানো এবং দুই সেজদার মাঝখানে স্থির হয়ে বসা

 বসার সুন্নত ১৩টি
১. বাম পা বিছিয়ে তার উপর বসা, ডান পা খাড়া রাখা এবং বাম পায়ের আঙ্গুলি কেবলার দিকে রাখা
২. উভয় হাত রানের উপর রাখা এবং আঙ্গুলের মাথা হাঁটু বরাবর করে রাখা
৩. আত্ত্বাহিয়্যাতুর মধ্যে ‘আশহাদু আল্লাইলাহা’ সময় বৃদ্ধাঙ্গুলি ও মধ্যাঙ্গুুলি দ্বারা গোল আকৃতি বানিয়ে শাহাদাত আঙ্গুলি উঠানো এবং ‘ইল্লাল্লাহ’ বলার সাথে সাথে নামিয়ে ফেলা আর গোলাকৃতিকে শেষ পর্যন্ত বাকি রাখা।
৪. আখেরী বৈঠকে দরুদ শরীফ পড়া
৫. দরুদ শরীফের পর দোয়ায়ে মাছুরা পড়া
৬. দুই দিকে সালাম ফিরানো
৭. প্রথমে ডান দিকে সালাম ফিরানো
৮. সালামের সময় ইমাম মুক্তাদী, ফেরেস্তা এবং নেক জিন্নাতের নিয়ত করা
৯. সালামের সময় মুক্তাদীগণ ইমাম, ফেরেস্তা ও নেক জিন্নাতের এবং ডান ও বামের মুক্তাদীদেরও নিয়ত করা
১০. একা নামাজি কেবল ফেরেস্তাগণের নিয়ত করা
১১. মুক্তাদীগণ ইমামের সাথে সাথে সালাম ফিরানো
১২. প্রথম সালামের আওয়ায দ্বিতীয় সালাম অপেক্ষা বুলন্দ করা
১৩. মাসবুক ব্যক্তি ইমামের সালাম ফিরানো শেষ করা পর্যন্ত অপেক্ষা করা
(আননুতাফ ফিল ফাতাওয়া)

নামাজের মাকরুহসমূহ

প্রশ্ন:- নামাজের মধ্যে কয়টি কাজ করা মাকরুহ এবং তা কি কি?
উত্তর:- নামাজের মধ্যে ২০টি কাজ করা মাকরুহ। বিবরণ নি¤েœ দেওয়া হল।
১. তাকবিরে তাহরিমা বলার সময় আসমানের দিকে তাকানো
২. তাকবিরে তাহরিমার সময় উভয় হাত কান থেকে অতিক্রম করা
৩. এক তাকবির একাধিক বার বলা
৪. চোখ বন্ধ করে নামাজ পড়া
৫. কাউকে সালাম দেওয়া
৬. হাই তোলা
৭. আড়মোড়া ভাঙা
৮. এক পায়ে ভর দিয়ে অন্য পায়ে আরাম করা
৯. আঙ্গুল ফুটানো
১০. কোন কিছু দ্বারা নামাজে খেলা করা
১১. কোরআন শরীফ দেখে পড়া
১২. রুকু ব্যতীত অন্য জায়গায় আঙ্গুল ফাকা রাখা
১৩. দ্রুত কেরাত পড়া
১৪. সুরা ফাতেহার আগে অন্য সুরা পড়া
১৫. রুকু অবস্থায় মাথা ঝুকিয়ে বা উঠিয়ে রাখা
১৬. রুকু,সেজদা থেকে মাথা উঠানোর সময় সোজা না হওয়া
১৭. সেজদা অবস্থায় পেটকে রানের সাথে মিলিয়ে রাখা। (পুরুষের জন্য)
১৮. সেজদা অবস্থায় পা বিছিয়ে দেওয়া। (পুরুষের জন্য)
১৯. নামাজের মধ্যে কাতারের পেছনে একা দাঁড়ানো
২০. সালামের উত্তর দেওয়া
(আননুতাফ ফিল ফাতাওয়া)


নামাজের মধ্যে কি কি কাজ করা নিষেধ

প্রশ্ন:- নামাজের মধ্যে কয়টি কাজ করা নিষেধ?
উত্তর:- নমাযের মধ্যে ২০টি কাজ করা নিষেধ
১. ইমামের তাকবিরে তাহরিমা বলার আগে আল্লাহু আকবার বলা
২. কিবলার দিক থেকে চেহারা ঘুরানো
৩. উচ্চস্বরে বিসমিল্লাহ পড়া
৪. ইমামের পিছনে কেরাত পড়া
৫. জোরে আমিন বলা
৬. ইমামকে সতর্ক করা
৭. ডানে বামে তাকানো
৮. আকাশের দিকে তাকানো
৯. খাট কিংবা দেওয়ালের সাথে টেক লাগানো
১০. প্রত্যেক তাকবিরের সময় হাত উঠানো
১১. রুকু সেজদায় ইমামের পূর্বে মাথা ঝুকানো
১২. ইমামের পূর্বে মাথা উঠানো
১৩. রুকু সেজদা অবস্থায় পায়ের আঙ্গুুলসমূহ উঠানো
১৪. পায়ের গোড়ালীর উপর বসা
১৫. তাশাহহুদ পড়া অবস্থায় আঙ্গুূল নড়াচড়া করা
১৬. একদিকে সালাম ফিরানো
১৭. সালাম ফিরানোর পূর্বে সেজদায়ে সাহু করা
১৮. উফ করা, ফু দেওয়া
১৯. বিতরের নামাজ ব্যতীত অন্য নামাজে দোয়ায় কুনুত পড়া
২০. সানা, তাসবীহ, তাকবির এগুলোর মধ্যে অতিরিক্ত করা
(আননুতাফ ফিল ফাতাওয়া)

নামাজ ভঙ্গের কারণসমূহ

নামাজে যা করলে নামাজ ও ওযু উভয়টি ভেঙ্গে যায়

প্রশ্ন:- নামাজে কয়টি কাজ করলে নামাজ ও ওযু উভয়টিই ভেঙ্গে যায়?
উত্তর:- নামাজে ৫টি কাজ করলে নামাজ ও ওযু উভয়টিই ভেঙ্গে যায়
১. নামাজের মধ্যে অট্ট হাসি দিলে
২. হেলান দিয়ে ঘুমালে
৩. ইচ্ছাকৃতভাবে হদস করা (ওযু ভেঙ্গে ফেলা)
৪. জ্ঞান লোপ পাওয়া
৫. নামাজে স্বপ্ন দোষ হওয়া (বীর্য বের হওয়া)
বিশেষ দ্রষ্টব্য: এগুলোর ওপর বেনাও করা যাবে না।
(আননুতাফ ফিল ফাতাওয়া)

নামাজে যা কারলে শুধু নামাজ ভেঙ্গে যায়

প্রশ্ন:- নামাজে কয়টি কাজ কারলে শুূধু নামাজ ভেঙ্গে যায়?
উত্তর:- নামাজে ১০টি কাজ করলে শুধু নামাজ ভেঙ্গে যায়
১) নামাজে কথা বলা চাই কম হোক বা বেশি। ইচ্ছায় বা অনিচ্ছায়
২) খাওয়া, চাই কম হোক বা বেশি- ইচ্ছায় বা অনিচ্ছায়
৩) আমলে কাসির করা
৪) ইচ্ছাকৃতভাবে কেবলার দিক থেকে সিনা ঘুরিয়ে ফেলা
৫) পুরুষ মহিলাকে স্পর্শ করা কিংবা মহিলা পুরুষকে স্পর্শ করা
৬) ইচ্ছাকৃতভাবে অন্যের লজ্জাস্থানের দিকে তাকানো
৭) ইচ্ছাকৃতভাবে আপন লজ্জাস্থান প্রকাশ করা
৮) এক দিরহামের বেশি পরিমাণ মল শরীরে লেগে থাকা অবস্থায় রুকু কিংবা সেজদা করা
৯) ইচ্ছাকৃতভাবে অতিরিক্ত রুকু বা সেজদা করা
১০) মুসল্লি যদি ইমামের হদস হওয়া সম্পর্কে জানে আর ইমাম ওযু না করে রুকু সেজদা করে ফেলে তাহলে মুসল্লির নামাজ ভেঙ্গে যাবে।
(আননুতাফ ফিল ফাতাওয়া)

টাখনুর নিচে পায়জামা বা লুঙ্গি পড়ে নামাজ পড়া
প্রশ্ন:- যদি নামাজরত অবস্থায় পায়জামা বা লুঙ্গি টাখনুর নিচে থাকে তাহলে হুকুম কি?
উত্তর:- অহংকারবসত টাখনুর নিচে পায়জামা বা লুঙ্গি পরিধান করা মাকরুহে তাহরিমী। তাই এভাবে নামাজ পড়া মাকরুহ হবে কিন্তু নামাজ হয়ে যাবে।
(বুখারী শরীফ/ফাতাওয়ায়ে কাজিখান)
নামাজের মধ্যে মুখে থুথু বা কফ আসা
প্রশ্ন:- যদি কারো নামাজের মধ্যে থুথু বা কফ আসে তাহলে তার করণীয় কি?
উত্তর:- যদি নামাজরত অবস্থায় থুূথু বা কফ আসে তাহলে সম্ভব হলে তা গিলে নিবে অন্যথায় কাপড়ের কোন এক কোণ দ্বারা মুছে নিবে।
(বুখারী শরীফ/ ফাতাওয়ায়ে হক্বানিয়া)
মেহরাবে ঢুকে নামাজ পড়ানো
প্রশ্ন:- যদি ইমাম সাহেব মেহরাবে ঢুকে নামাজ পড়ায় তাহলে এতে নামাজের কোন ত্রুটি হবে কি?
উত্তর:- ইমাম সাহেব একেবারে মেহরাবের ভিতর ঢুকে নামাজ পড়ানো মাকরুহ। তবে যদি ইমাম সাহেব মেহরাবের বাহিরে দাঁড়ায় এবং রুকু সেজদাহ মেহরাবের ভিতরে করে তাহলে এতে কোন সমস্যা নেই।
(ফাতাওয়ায়ে শামী)

নামাজ আদায় করার পদ্ধতি

নামাজের মধ্যে দৃষ্টি কোনদিকে রাখবে
প্রশ্ন:- আমরা যখন নামাজে দাঁড়াই তখন আমাদের দৃষ্টি কোনদিকে রাখা উচিত?
উত্তর:- নামাজে দাঁড়ানো অবস্থায় সিজদার দিকে দৃষ্টি রাখা চাই।
(ফাতাওয়ায়ে আলমগীরী)

রুকু অবস্থায দৃষ্টি রাখা
প্রশ্ন:- রুকু অবস্থায় দৃষ্টি কোনদিকে রাখবে?
উত্তর:- রুকু অবস্থায় দ্ইু পায়ের উপর এবং সিজদাহ অবস্থায় নাকের ডগার উপর এবং বসা অবস্থায় রানের উপর আর সালাম ফিরানো অবস্থায় ডান ও বাম কাধের উপর দৃষ্টি রাখবে।
(ফাতাওয়ায়ে আলমগীরী)

দুই পায়ের মাঝখানে ফাকা রাখা
প্রশ্ন:- দাঁড়ানো অবস্থায় দুই পায়ের মাঝখানে কতটুকু পরিমাণ ফাকা রাখবে?
উত্তর:- দাঁড়ানো অবস্থায় দুই পায়ের মাঝে চার আঙ্গুল পরিমাণ ফাকা রাখা মুস্তাহাব। প্রয়োজনে বেশিও রাখতে পারে।
(ফাতাওয়ায়ে শামী)

নামাজে নিয়ত করার পদ্ধতি

প্রশ্ন:- নামাজের মধ্যে নিয়ত মুখে বলা জরুরি কি?
উত্তর:- নিয়ত হলো অন্তরের একটি কাজ। অর্থাৎ মানুষ অন্তরে এই ফিকির করবে যে, আমি অমুক নামাজ পড়ছি। মুখে বলা জরুরি নয়। তবে উলামায়ে মুতাআখ্যিরিন মুখে বলাকে মনে মনে বলার চেয়ে উত্তম বলেছেন।
(ফাতাওয়ায়ে আলমগীরী)

নফল এর জায়গায় ভুলে সুন্নতের কথা বলা
প্রশ্ন:- ফরজ এর নিয়ত করার সময় ভুলে মুখে নফল বা সুন্নতের কথা বের হয়ে গেলে কোন নামাজ হবে?
উত্তর:- নিয়ত হলো অন্তরের একটি কাজ, সুতরাং অন্তরে যে নামাজের ইচ্ছা ছিল ঐ নামাজই হবে।
(ফাতাওয়ায়ে আলমগীরী)

নামাজে ডানে বামে তাকানো
প্রশ্ন:- নামাজে ডানে বামে তাকালে বা চেহারাকে এদিক সেদিক ঘুরালে নামাজে কোন সমস্যা হবে কি?
উত্তর:- নামাজে ডানে বামে দেখা মাকরুহে তানযিহি। আর চেহারা ঘুরানো মাকরুহে তাহরিমী।
(ফাতাওয়ায়ে আলমগীরী)

তাকবিরে তাহরিমা ব্যতীত বাকি তাকবির সুন্নত
প্রশ্ন:- যদি কেউ তাকবিরে তাহরিমা ব্যতীত অন্য তাকবিরের কোন একটা ছেড়ে দেয় তাহলে তার নামাজে কোন সমস্যা হবে কি?
উত্তর:- তাকবিরে তাহরিমা হলো ফরজ আর বাকি তাকবির সুন্নত। সুতরাং তাকবিরে তাহরিমা ছাড়া কোন একটা ছেড়ে দিলে নামাজ নষ্ট হবে না।
(ফাতাওয়ায়ে শামী)

তাকবিরে তাহরিমার সময় হাত উঠানো
প্রশ্ন:- তাকবিরে তাহরিমার সময় হাত কোন পর্যন্ত উঠাবে?
উত্তর:- তাকবিরে তাহরিমার সময় উভয় হাতের বৃদ্ধাঙ্গুলি উভয় কানের লতি পর্যন্ত উঠাবে।
(ফাতাওয়ায়ে শামী)

ইমাম তাকবির কখন বলবে
প্রশ্ন:- আমাদের মসজিদের ইমাম সাহেব একামত শেষ হওয়ার পূর্বেই আল্লাহু আকবার বলে হাত বেধে ফেলে। প্রশ্ন হলো আমরা কি ইমাম সাহেবের সাথেই তাকবির বলবো, না একামত শেষ হলে তাকবির বলবো?
উত্তর:- উত্তম হলো একামত শেষ হলেই ইমাম সাহেবের তাকবির বলা যেন একামত বলা লোকও সাথে শরীক হতে পারে।
(বাহরুর রায়েক)

মুক্তাদীর জন্য তাকবিরে উলায় শরীক হওয়ার ফজিলত
প্রশ্ন:- ইমামের সাথে কখন শরীক হলে তাকবিরে উলার ফজিলত পাওয়া যাবে?
উত্তর:- তাকবিরে উলা পাওয়ার ক্ষেত্রে ৩টি সুরত রয়েছে।
১. ইমামের তাকবিরে তাহরিমা বলার সময় উপস্থিত থাকা
২. সুরা শুরু করার পূর্বে শরীক হওয়া
৩. সুরা শেষ হওয়ার পূর্বে শরীক হওয়া। তবে এক্ষেত্রে প্রথমটি হলো উত্তম।
(ফাতাওয়ায়ে শামী)

তাকবিরে তাহরিমা দুই বার বলা
প্রশ্ন:- যদি কোন নামাজি ইচ্ছাকৃতভাবে বা ভুলে তাকবিরে তাহরিমা দুইবার বলে ফেলে তাহলে তার নামাজ হবে কি?
উত্তর:- হ্যাঁ, তার নামাজ হয়ে যাবে।
(হালাবিয়ে কাবির)

নামাজে হাত বাধা
প্রশ্ন:- কিছু লোক নিয়ত বাধার পর হাত বাধে না, তাদের নামাজ হবে কি?
উত্তন:- নামাজে হাত বাধা সুন্নত সুতরাং কেউ যদি নিয়ত বেধে হাত ছেড়ে দিলে ও তার নামাজ হয়ে যাবে।
(বাদায়েউস সানায়ে)

রফে ইয়াদাইন
প্রশ্ন:- রফে ইয়াদাইন করলে নামাজ সহীহ হবে কি?
উত্তর:- শুধু তাকবিরে তাহরিমার সময় হাত উঠানো সুন্নত এছাড়া বাকি জায়গায় হাত উঠানো অনুত্তম।
(বাদায়েউস সানায়ে)

বসে নামাজ আদায়কারী রুকুতে ঝুকা
প্রশ্ন:- বসে নামাজ আদায়কারী রুকুতে কি পরিমাণ ঝুকবে?
উত্তর:- এই পরিমাণ ঝুকবে যে মাথা হাঁটু বরাবর হয়ে যায়।
(ফাতাওয়ায়ে শামী)

রুকু থেকে সামান্য উঠে সেজদায় চলে যাওয়া
প্রশ্ন:- রুকু থেকে সামান্য উঠেই সাথে সাথে সেজদায় চলে যাওয়াতে কোন সমস্যা আছে কি?
উত্তর:- রুকু থেকে একেবারে সোজা হয়ে উঠে এক তাসবীহ পরিমাণ দাঁড়িয়ে থাকবে। এবং সামিয়াল্লাহু লিমান হামিদা বলার পর রব্বানা লাকাল হামদ বলবে। আর এগুলো বলা সুন্নত।
(হালাবিয়ে কাবির)

রুকুর পর সোজা হয়ে দাঁড়ানো এবং সেজদার পর বসা
প্রশ্ন:- অনেক নামাজিকে দেখা যায় রুকুর পর না দাড়িয়ে সোজা সেজদায় চলে যায় এবং এক সেজদার পর না বসে দ্বিতীয় সেজদায় চলে যায়, এতে কি তাদের নামাজ সহীহ হবে?
উত্তর:- রুকুর পর সোজা হয়ে দাঁড়ানো এবং দ্ইু সেজদার মাঝে বসা ওয়াজিব। যদি কোন ব্যক্তি এই ওয়াজিব ছেড়ে দেয় তাহলে তার নামাজ দ্বিতীয় বার পড়া ওয়াজিব। আফসোস অনেক নামাজিই এই মাসয়ালায় ভুল করে।
(হালাবিয়ে কাবির)

সেজদায় জমিনে নাক রাখার হুকুম
প্রশ্ন;- সেজদায় জমিনে নাক রাখা ওয়াজিব না সুন্নত?
উত্তর:- সেজদায় জমিনে নাক রাখা ওয়াজিব। যদি কেউ ভুলে একবার রেখে আবার উঠিয়ে ফেলে তাহলে তার নামাজ আদায় হয়ে যাবে। কারণ একবার রাখার দ্বারাই ওয়াজিব আদায় হয়ে গেছে। কিন্তু এটা খেলাফে সুন্নত।
(ফাতাওয়ায়ে আলমগীরী)

সেজদা করার সময় উভয় পা জমিন থেকে উঠে যাওয়া
প্রশ্ন:- সেজদা করার সময় যদি উভয় পা জমিন থেকে উঠে যায় তাহলে তার নামাজ হবে কি?
উত্তর:- যদি তিনবার সুবহানাল্লাহ বলা পরিমাণ পা উঠে থাকে তাহলে তার নামাজ ভঙ্গ হয়ে যাবে।
(ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়া)

জামাতের সাথে নামাজ পড়া
প্রশ্ন: জামাতের সাথে নামাজ পড়ার হুকুম কি?
উত্তর: পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের জন্য জামাত ওয়জিব, চাই ঘরে হোক বা মসজিদে। তবে যদি কোন ওজর থাকে তাহলে ওয়াজিব নয়।
(ফেকহি জাওয়াবেত)

তারাবির নামাজ জামাতে পড়া
প্রশ্ন: তারাবির নামাজ জামাতে পড়ার হুকুম কি?
উত্তর: পুরো রমজান মাসে তারাবীহ নামাজ জামাতে পড়া সুন্নতে মুয়াক্কাদা।
(ফেকহি জাওয়াবেত)

জামাতের গুরুত্ব ও ফজিলত

ঈদের নামাজ

প্রশ্ন: জামাতে নামাজ পড়ার গুরুত্ব কতটুকু? কেউ যদি জামাতে নামাজ পড়ে সে কতগুণ বেশি সওয়াব পাবে?
উত্তর: জামাতে নামাজ পড়া ওয়াজিব। হাদীসে আছে, জামাতে নামাজ পড়লে সাতাশ গুণ বেশি সওয়াব পাওয়া যায়। আর জামাতে অংশ গ্রহণ না করার ব্যাপারে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পক্ষ থেকে ধমকি এসেছে। তিনি বলেন, যদি ঘরে মহিলা এবং ছোট বাচ্চারা না থাকতো তাহলে এশার নামাজের পর যুবকদের আদেশ দিতাম যারা জামাতে শরীক না হয়ে ঘরে আছে তাদের ঘর জ¦ালিয়ে দাও।
(মুসলিম)

১৪৪ ধারা জারী অবস্থায় জামাতে হাজির হওয়া
প্রশ্ন: ১৪৪ ধারা বা কারফিউ জারী অবস্থায় মসজিদে গিয়ে জামাতে শরীক হতে হবে কি?
উত্তর: ১৪৪ ধারা বা কারফিউ জারী অবস্থায় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী যদি মসজিদে যেতে বাধা না দেয় তাহলে মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়া জরুরি। নচেৎ ঘরেই জামাতের সাথে নামাজ পড়ে নিবে।
(ফতোয়ায়ে হিন্দিয়া)

মসজিদে দ্বিতীয় জামাত পড়া
প্রশ্ন: মসজিদের মধ্যে দ্বিতীয় জামাত পড়া জায়েয আছে কি?
উত্তর: যে মসজিতে ইমাম মুয়াজ্জিন নির্দিষ্ট আছে এবং নিয়মিত পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ জমাতের সাথে আদায় হয় এমন মসজিদে দ্বিতীয় জামাত করা মাকরুহ।
(ফাতাওয়ায়ে শামী)

নাবালেগ ছেলেদের নিয়ে জামাত
প্রশ্ন: নাবালেগ ছেলেদেরকে নিয়ে নামাজ পড়লে জামাত সহিহ হবে কি?
উত্তর: জুমার নামাজ ব্যতীত অন্য নামাজে শুধু নাবালেগদের নিয়ে জামাত করলে সহীহ হবে। এবং জামাতে ফজিলতও পাওয়া যাবে।
(ফতোয়ায়ে শামী)

কারো অপেক্ষায় বিলম্বে জামাত আরম্ভ করা
প্রশ্ন: কারো অপেক্ষায় জামাত বিলম্বে আরম্ভ করা জায়েয হবে কি?
উত্তর: মুসল্লিগণ উপস্থিত হওয়ার পর একক কারো অপেক্ষায় জামাত বিলম্বে আরম্ভ করা বৈধ নয়। তবে যদি ব্যক্তি খারাপ হয় এবং তার পক্ষ থেকে কোন ফাসাদ সৃষ্টি করার আশংকা হয় তাহলে তা থেকে বাঁচার জন্য দেরিতে জামাত আরম্ভ করা যেতে পারে।
(ফতোয়ায়ে শামী)

দ্বিতীয় বার জামাতে নতুন মুসল্লি শরীক হওয়া
প্রশ্ন: একবার নামাজ পড়ার পর কোন সমস্যার কারণে দ্বিতীয় বার জামাত করতে হলে প্রথম জামাতে শরীক ছিল না এমন ব্যক্তি তাতে শরীক থাকতে পারবে কি?
উত্তর: ফরজ ছুটে যাওয়ার কারণে যদি দ্বিতীয় জামাত পড়তে হয় তাহলে নতুন মুসল্লিরা তাতে শরীক হতে পারবে। কারণ, প্রথম যে নামাজ আদায় করা হয়েছে ফরয ছুটে যাওয়ার কারণে তা বাতিল হয়ে গিয়েছিল। আর যদি ওয়াজিব ছুটে যাওয়ার কারণে দ্বিতীয় বার জামাত পড়তে হয় তাহলে নতুন মুসল্লিদের তাতে শরীক হওয়া ঠিক হবে না। কারণ, প্রথম বার জামাতের দ্বারা ফরজিয়্যত আদায় হয়ে গেছে। দ্বিতীয় জামায়াত শুধু পূর্ণতার জন্য।
(তিরমিজি শরীফ)

জামাতের পূর্বে নামাজ পড়ে নিলে
প্রশ্ন: কোন ব্যক্তি ঘরে ফরয নামাজ পড়ার পর দেখল ঐ নামাজই জামাতের সাথে পড়া হচ্ছে তাহলে করণীয় কি?
উত্তর: তার জন্য করণীয় হলো- যদি যোহর বা এশার নামাজ হয় তাহলে জামাতে শরীক হবে আন্যথায় নয়।
(ফতোয়ায়ে শামী)

জামাতের ফজিলত একাকি আদায়ের চেয়ে বেশি
প্রশ্ন: যদি কোন ব্যক্তি ওজর এবং মাগরিবের এক রাকাত পড়ার পর জামাত শুরু হয় তাহলে তার করণীয় কি?
উত্তর: তার জন্য করণীয় হলো এই যে, সে তার নামাজ ছেড়ে দিয়ে জামাতের সাথে শরীক হবে এবং এতে সে জামাতের সাওয়াব পাবে।
(আদ্দুররুল মুখতার)


জামাতের ফজিলত

عن عبد الله ابن عمر ان رسول الله صلي الله عليه وسلم قال صلوه الجماعة تفضل صلوة القن بسبع و عشرين درجة . (صحيح البخارى)

হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত- হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, জামাতে নামাজ একাকী নামাজের তুলনায় সাতাশ (২৭) গুণ বেশি ফজিলত পূর্ণ।
(বুখারি)
অর্থাৎ জামাতের সাথে নামাজ আদায়কারীগণ একাকি নামাজ আদায়কারী থেকে বেশি সওয়াব পাবে।


عن ابى بن كعب قال صلي بنا رسول الله صلي الله عليه وسلم يوم الصبح فقال ………. وان صلوة الرجل مع رجل ازكى من صلوة واحده و صلوته مع الرجلين ازكى من صلوته مع الرجل و ماكثر فهو احب الى الله عزوجل.

হযরত উবাই ইবনে কায়াব রা. বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন- একাকী নামাজ পড়ার চেয়ে এক ব্যক্তির সাথে মিলে নামাজ পড়া অনেক উত্তম এবং দুই জনের সাথে পড়া আরো অধিক উত্তম এবং জামাতে যতবেশী লোক হবে আল্লাহ তায়ালার কাছে ততবেশী পছন্দনীয় হবে।
(আবু দাউদ ১/৯২)

হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত- হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন যতটুকু সময় নামাজের জন্য অপেক্ষা করবে ততটুকু সময় নামাজের ভিতর ছিল বলে গণ্য হবে।
( বুখারী শরীফ )

হযরত হাকাম ইবনে মিনা রা. থেকে বর্ণিত, হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন- জামাত তরক করা ছেড়ে দাও অন্যথায় আল্লাহ তোমার অন্তরে মহর মেরে দিবেন এবং তোমাদেরকে উদাসীন ব্যক্তিদের মধ্যে গণনা করবেন।
(ইবনে মাজাহ)

জামাত ছেড়ে দেওয়া
প্রশ্ন: কোনো ওজর ব্যতীত জামাত ছেড়ে দিলে গুনাহ হবে কি না?
উত্তর: কোন ওজর ব্যতীত ইচ্ছাকৃতভাবে লাগাতার জামাত ছেড়ে দিলে কবিরা গুনাহ হবে এবং এমন ব্যক্তি ফাসেক বলে গণ্য হবে।
(বাহরুর রায়েক)

জামাত ছাড়ার ওজর

প্রশ্ন: কী কী কারণে জামাত ছাড়ার সুযোগ আছে?
উত্তর: যে সমস্ত কারণে জামাত ছেড়ে দেওয়া জায়েয আছে তা হলো এই-
১- নামাজ সহীহ হওয়ার শর্তসমূহ থেকে কোন একটা না পাওয়া গেলে। যেমন: পবিত্রতা, সতর ঢাকার মত কিছু না থাকলে।
২- মুষলধারে বৃষ্টি হলে।
৩- মসজিদে যাওয়ার রাস্তায় ব্যাপক পরিমাণ কাদা হলে।
৪- মাল ও আসবাব পত্র চুরি হওয়ার ভয় হলে।
৫- কোন দুষমনের পক্ষ থেকে আক্রমণের ভয় হলে।
৬- কোন ঋণদাতার পক্ষ থেকে কষ্ট পাওয়ার ভয় হলে। শর্ত হলো ঋণ আদায় করার সক্ষমতা না থাকতে হবে।
৭- অন্ধকার হলে, আর আলোর কোনো ব্যবস্থা না করা গেলে।
৮- অসুস্থ ব্যক্তিকে সেবা করার মত অন্য কোন লোক না থাকলে এবং সেবার প্রয়োজন দেখা দিলে।
৯- বেশি ক্ষুদার্থ অবস্থায় খাবার উপস্থিত হয়ে গেলে।
১০- পেশাব-পায়খানার চাপ থাকলে।
১১- সফরের ইচ্ছা থাকলে এবং জামাতের সাথে নামাজ পড়লে বেশি দেরি হওয়ার আশংকা থাকলে।
১২- এমন অসুস্থ হলে যার কারণে হাঁটাচলা কষ্টকর হয়। এসমস্ত কারণে জামাত ছাড়ার সুযোগ আছে তবে সম্ভব হলে জামাতে শরীক হবে।
(শামী, হালবী কাবির)

জামাত বাদ দিয়ে আলাদা নামাজ পড়া
প্রশ্ন: ইমামের সাথে ক্রোধ থাকার দরুন জামাত চলাকালীন অবস্থায় একাকী নামাজ পড়লে নামাজ হবে কি?
উত্তর: এমন ব্যক্তির নামাজ হয়ে যাবে, তবে সে ফাসেক ও গুনাহগার হবে। (ফতোয়ায়ে শামী)

কাজা নামাজ

প্রশ্ন: কাজা নামাজ বলতে কি বোঝায়?
উত্তর: ওয়াক্তমত নামাজ আদায় করতে না পারা। (যেমন: যোহরের নামাজ যোহরের সময় আদায় না করে আসরের সময় আদায় করা।) এমন নামাজকে কাজা নামাজ বলা হয়।
(ফতোয়ায়ে শামী)

প্রশ্ন: কোন কোন নামাজের কাজা করতে হয়?
উত্তর: যে সমস্ত নামাজের কাজা আদায় করতে হয় তা হলো, ফরয, ওয়াজিব, বেতের, মান্নতের নামাজ এবং যে সকল নামাজ শুরু করে ভেঙ্গে দিয়েছে। এই সমস্ত নামাজ যদি সময় মত আদায় করতে না পারে তাহলে পরে পড়ে নেওয়া আবশ্যক। (ফতোয়ায়ে শামী)

সুন্নত নামাজের কাজা
প্রশ্ন: সুন্নতে মুয়াক্কাদা সময়মত আদায় করতে না পারলে পরে পড়তে হবে কি?
উত্তর: না, সুন্নতে মুয়াক্কাদা যথা’ যোহরের বা এশার সুন্নতে মুয়াক্কাদা সময় মত পড়তে না পারলে পরে কাজা করা আবশ্যক নয়। কারণ, সুন্নত নফলের কাজা নেই।
(বাহরুর রায়েক)

কাজা নামাজ আদায় করা।
প্রশ্ন: কাজা নামাজ আদায় করার সহজ পদ্ধতি কি?
উত্তর: কাজা নামাজ আদায় করার সহজ পদ্ধতি এই যে, প্রত্যেক ওয়াক্তের নামাজের সময় ঐ ওয়াক্তের নামাজও কাজা পড়ে নিবে। জীবনে যত নামাজ কাজা হয়েছে তা এইভাবেই পড়ে নিবে।
(ফাতাওয়ায়ে দারুল উলূম)

কাজা নামাজ আদায় করার সময় নিয়ত করা
প্রশ্ন: কাজা নামাজ করার সময় কি নিয়ত করা আবশ্যক?
উত্তর: হ্যাঁ, যে সমস্ত নামাজ কাজা হয়ে গিয়েছে ঐ সমস্ত নামাজ কাজা পড়া ও নিয়ত উভয়টিই আবশ্যক। যেমন ওজর নামাজ পড়ার সময় এভাবে নিয়ত করবে যে, আমার জীবনের যে সমস্ত ফজরের নামাজ কাজা হয়েছে তার প্রথম ফজরের নামাজ আদায় করছি।
(ফতোয়ায়ে শামী)

নামাজ কাজা করা গুনাহ
প্রশ্ন: নামাজ কাজা হয়ে গেলে কোন ধরনের গোনাহ হবে?
উত্তর: শরয়ী কোনো ওযর ছাড়া নামাজ কাজা করা কবিরা গুনাহ। তবে ঐ নামাজ কাজা করা ও খাঁটি দিলে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাওয়া আবশ্যক। যেন আর কাজা না হয়ে যায়।
( ফতোয়ায়ে শামী, কাশফুল আসরার)

কাজা নামাজ পড়ার পদ্ধতি
প্রশ্ন: কাজা নামাজ আদায় করার পদ্ধতি কি?
উত্তর: কাজা নামাজ আদায় করার পদ্ধতিও আদা নামাজের মত। উভয় নামাজের মধ্যে কোন পার্থক্য নেই।
(ফতোয়ায়ে হিন্দিয়া)

কাজা নামাজ জামাতের সাথে পড়া
প্রশ্ন: কাজা নামাজ জামাতের সাথে আদায় করা জায়েয আছে কি?
উত্তর: হ্যাঁ, জাহরী নামাজ যদি কাজা হয়ে যায় এবং জামাতের সাথে আদায় করতে হয় তাহলে তা জাযেয় আছে। কেরাত আওয়াজ দিয়ে পড়বে।
(নামাজের মাসায়েল)

কাজা নামাজের ফিদিয়া

প্রশ্ন: কারো নামাজ কাজা থাকা অবস্থায় মারা গেলে তার ফিদিয়া দিতে হবে কি?
উত্তর: বালেগ হওয়ার পর নামাজ কাজা হয়ে গেলে তা পড়ে দেওয়া আবশ্যক। সে যদি তা না পড়ে মৃত্যু বরণ করে তাহলে তার ফিদিয়া দেওয়ার জন্য অসিয়ত করে যাওয়া জরুরি। উল্লেখ্য জীবদ্দশায় কাজা নামাজের ফিদিয়া দিলে তা আদায় হবে না।
(ফতোয়ায়ে শামী)

কাজা নামাজ কোন সময় পড়বে
প্রশ্ন: কাজা নামাজ কোন কোন সময় পড়া নিষেধ?
উত্তর: রাত দিন চব্বিশ ঘন্টার মধ্যে তিনটা সময় নামাজ পড়া নিষেধ। কাজা, নফল সব নামাজই পড়া নিষেধ।
১- সূর্য উদয়ের সময়।
২- সূর্য অস্তের সময়।
৩- ঠিক দুপুরে সূর্য হেলে যাওয়ার সময়।
(ফতোয়ায়ে হিন্দিয়া)

কাজা নামাজে আজান ও ইকামত দেওয়া
প্রশ্ন: কাজা নামাজ আদায় করতে হলে আজান ও একামত দিতে হবে কি?
উত্তর: যদি কোনো ব্যক্তি মসজিদে বসে একাকী কাজা নামাজ পড়তে চায় তাহলে আজান ও একামত দিতে হবে না।
(ফতোয়ায়ে শামী)

প্রশ্ন: যদি কাজা নামাজ জামাতের সাথে আদায় করে তাহলে আজান ও একামত দিতে হবে কি?
উত্তর: যদি কাজা নামাজ জামাতের সাথে আদায় করে তাহলে প্রথম নামাজের জন্য আজান ও একামত বলবে বাকি নামাজের জন্য আজান বলা বা না বলা দুটোই জায়েয। তবে প্রত্যেকবার নামাজের জন্য একামত বলতে হবে।
(হেদায়া)

কাজা নামাজের ফিদিয়া
প্রশ্ন: কাজা নামাজের ফিদিয়া কখন আদায় করবে?
উত্তর: জীবিত থাকা অবস্থায় কাজা নামাজের ফিদিয়া দেওয়া যাবে না। বরং নামাজ পড়ে নিবে। তবে কাজা রেখে মারা গেলে ফিদিয়া দিয়ে দিবে।
(ফতোয়ায়ে শামী)

কাজা নামাজ থাকা অবস্থায় নফল নামাজ পড়া
প্রশ্ন: কাজা নামাজ থাকা অবস্থায় নফল নামাজ পড়া যাবে কি?
উত্তর: যদি কারো জিম্মায় কাজা নামাজ থাকে তাহলে তা যথাসম্ভব তাড়াতাড়ি পড়ে নিবে। কাজা নামাজ থাকা অবস্থায় নফল নামাজ পড়বে না। কারণ, আখেরাতে নফল নামাজ সম্পর্কে প্রশ্ন করা হবে না। আর ফরজ নামাজ সম্পর্কে শুধু প্রশ্নই করা হবে না, বরং শাস্তিও হবে।
(ফতোয়ায়ে শামী)

কাজা নামাজ গোপনে পড়া
প্রশ্ন: কাজা নামাজ কি গোপনে পড়তে হবে?
উত্তর: হ্যাঁ, কাজা নামাজ গোপনে পড়তে হয়। কারণ, নামাজ কাজা করা একটি গুনাহের কাজ। আর কোন গুনাহ সম্পর্কে মানুষকে প্রকাশ করে দেওয়াও গুনাহ (মাকরুহে তাহরিমি)।
(ফতোয়ায়ে শামী)

ইমাম সম্পর্কিত মাসায়েল

ইমামের জন্য কেরাত আস্তে পড়া।
প্রশ্ন: যোহর ও আসরের সমস্ত রাকাত এবং মাগরিব ও এশার শেষ রাকাতগুলোতে কেরাত পড়ার বিধান কি?
উত্তর: ইমামের জন্য যোহর ও আসরের সব রাকাত এবং মাগরিব ও এশার শেষ রাকাতগুলোতে কেরাত আস্তে পড়া ওয়াজিব।
(ফতোয়ায়ে শামী)

ইমামের জন্য উঁচু স্থানে দাঁড়ান
প্রশ্ন: ইমাম সাহেব যদি উঁচু স্থানে দাঁড়ায় আর মুসরিল্লরা নিচু স্থানে দাঁড়ায় তাহলে ইকতেদা সহিহ আছে কি?
উত্তর: হ্যাঁ, ইকতেদা সহিহ হযে যাবে। তবে ইমাম সাহেব যদি এক হাত পরিমাণ উঁচু জায়গায় দাঁড়ায় আর মুক্তাদি এক হাত পরিমাণ নিচু জায়গায় দাড়ায় তাহলে নামাজ মাকরুহ হবে। কিন্তু এক হাতের চেয়ে কম হলে নামাজ মাকরুহ হবে না।
(ফতোয়ায়ে শামী)

প্রথম রাকাতে ইমাম সাহেব বসে গেলে
প্রশ্ন: ইমাম সাহেব যদি ভুলে নামাজের প্রথম রাকাতে বসে পরেন তাহলে তার বিধান কি?
উত্তর: ইমাম সাহেব যদি নামাজের প্রথম রাকাতে ভুলে বসে যান এমতাবস্থায় মুক্তাদীগণ লুকমা দেন কিংবা নিজের স্মরণ হয়, তাহলে আল্লাহু আকবার বলে দাঁড়িয়ে যাবে এবং শেষে সেজদায়ে সাহু আদায় করে নিবে।
(হালবীয়ে কাবির)

ইমাম সাহেব যদি প্রথম রাকাতে সুরা না মিলান
প্রশ্ন: যদি কোন ইমাম সাহেব নামাজের প্রথম রাকাতে সুরা ফাতেহার সাথে অন্য সুরা না মিলান তাহলে তার নামাজের হুকুম কি?
উত্তর: ইমাম সাহেব যদি প্রথম রাকাতে সুরা ফাতেহার সাথে অন্য সুরা না মিলান তাহলে শেষ রাকাতে সুরা পড়ার পর সুরাটি পড়ে নিবে এবং শেষে সেজদায়ে সাহু আদায় করবে।
(ফতোয়ায়ে শামী)

প্রশ্ন: ইমাম হওয়ার সবচেয়ে উপযুক্ত কোন ব্যক্তি?
উত্তর: ইমামতি করার সবচেয়ে উপযুক্ত হলো-
১- যিনি নামাজ সংক্রান্ত মাসলা-মাসায়েল ভালো জানেন এবং নামাজে যেই পরিমাণ কেরাত পড়া সুন্নত ঐ পরিমাণ কেরাত মুখস্ত থাকে। এবং মুত্তাকি পরহেজগার হয়। ফাসেক না হয়। তাহলে ঐ ব্যক্তি হলেন ইমামতি করার সবচেয়ে হকদার।
২- এরপর হলো ঐ ব্যক্তি যিনি কুরআন শরীফ সুন্দর করে পড়তে পারেন অর্থাৎ সুন্দর সুরে পড়তে পারেন।
৩- যিনি সবচেয়ে বেশি পরহেজগার।
৪- যার বয়স সবার চেয়ে বেশি।
৫- যার চরিত্র বেশি সুন্দর।
৬- যার পোষাক বেশি সুন্দর।
৭- যিনি বেশি জ্ঞানী।
৮- এরপর যিনি মুকিম হবেন, মুসাফির না।
৯- যিনি জন্মগতভাবেই স্বাধীন।
৯- ওজু কারী- তায়াম্মুম কারী।
১০- যদি কোন বাড়িতে জামাত হয় তাহলে ঐ বাড়ির মালিক। যদি বাড়ির মালীক মূর্খ না হন।
১১- যে মসজিদের ইমাম নির্দিষ্ট আছে তার উপস্থিতিতে অন্য কেউ নামাজ পড়াবে না। তবে অনুমতি দিলে নামাজ পড়াবে।
১২- যদি ইসলামী রাষ্ট্রের বাদশাহ ন্যায়পরায়ন হন তাহলে তিনিই পড়াবেন।
*এই সমস্ত ব্যক্তিবর্গ পর্যায় ক্রমে ইমামতি করতে পারেন।
(নামাজের মাসায়েল)

ইমাম তাকবিরে তাহরিমা কখন বলবে
প্রশ্ন: ইমাম সাহেব তাকবিরে তাহরিমা কখন বলবে?
উত্তর: ইমাম সাহেবের জন্য قد قامت الصلواةবলার পর তাকবিরে তাহরিমা বলার অনুমতি আছে। তবে উত্তম হলো, ঈকামত শেষ হওয়ার পর তাকবিরে তাহরিমা বলা।
(ফতোয়ায়ে শামী)

ইমাম সাহেব নিয়ত করা
প্রশ্ন: ইমাম সাহেবের কি মুকতাদিদের নিয়ত করতে হবে?
উত্তর: হ্যাঁ, ইমাম সাহেব মুক্তাদীদের নামাজের নিয়ত করবে। আর তা এভাবে করবে, আমি ঐ সমস্ত ব্যক্তিদের নামাজের নিয়ত করছি যারা আমার ইকতেদা করবে।
(ফতোয়ায়ে হিন্দিয়া)

ইমামতি করা মাকরুহ

প্রশ্ন: অধিকাংশ মুক্তাদিগণ যদি ইমাম সাহেবের প্রতি অসন্তুষ্ট থাকে তাহলে তার জন্য ইমামতি করার বিধার কি?
উত্তর: যদি অধিকাংশ মুসল্লিগণ ইমাম সাহেবের প্রতি অসন্তুষ্ট থাকে তাহলে এমন ইমামের জন্য ইমামতি করা মকরুহে তানজিহী। তবে যদি ইমাম ছাড়া তাদের মধ্যে অন্য কেউ ইমামতি করতে না পারে তাহলে মাকরুহ হবে না।
(ফতোয়ায়ে শামী)

ইমাম হওয়ার হকদার

ইমাম সাহেব তৃতীয় সেজদায় চলে গেলে
প্রশ্ন: ইমাম সাহেব যদি ভুলে তৃতীয় সেজদায় চলে যায় তাহলে মুকতাদিদের করণীয় কি? তারাও কি এক্ষেত্রে তার অনুসরন করবে?
উত্তর: ইমাম সাহেব যদি ভুলে তৃতীয় সেজদায় চলে যান তাহলে এক্ষেত্রে মুকতাদীগণ তার অনুসরন করবে না। তবে ইমাম সাহেবের জন্য সেজদায়েসাহু আদায় করা ওয়াজিব। সেক্ষেত্রে মুকতাদিগণও তার অনুসরন করবে।
(ফতোয়ায়ে হিন্দিয়া)

ইমাম সাহেব কখন দোয়া করবেন
প্রশ্ন: নামাজের পর ইমাম সাহেব কখন দোয়া করবেন?
উত্তর: ইমাম সাহেব যখন সালাম ফিরিয়ে নামাজ থেকে অবসর হবেন তখন সকলকে নিয়েই দোয়া করবেন। এরপর সুন্নত নামাজ পড়বেন।
(ইলাউস সুনান)

ইমাম সাহেব সালাম ফিরানোর পর কোন দিকে ফিরে বসবেন
প্রশ্ন: ইমাম সাহেব সালামের পর কোন দিক হয়ে বসবেন?
উত্তর: যে সমস্ত নামাজের পর সুন্নত নেই যেমন ওজর ও আছর এসময় ইমাম যে দিকে ইচ্ছা ডানে-বামে ফিরে বসবে। হাদীস শরীফে উভয় দিকের কথাই আছে। তাই ইমাম সাহেব কখনো ডান দিকে ফিরবে কখনো বাম দিকে ফিরবে। যাতে সাধারণ মানুষ এক দিকে ফিরাকেই জরুরি মনে না করে।
(মুসলিম শরীফ)

ইমামের পূর্বে রুকন আদায় করা
প্রশ্ন: যদি কোন মুক্তাদি ইমামের পূর্বে রুকন আদায় করে ফেলে তাহলে তার নামাজ আদায় হবে কি?
উত্তর: যদি কোন মুক্তাদী ইমাম সাহেবের পূর্বে কোন রুকন আদায় করে ফেলে আর ইমাম সাহেব তাকে ঐ রুকনে গিয়ে না পায় তাহলে তার নামাজ আদায় হবে না। যেমন: ইমাম সাহেব রুকুতে যাওয়ার পূর্বেই কেউ রুকুতে চলে গেল এবং ইমাম সাহেবের রুকুতে যাওয়ার পূর্বেই রুকু থেকে উঠে গেল কিন্তু পুনরায় ইমাম সাহেবের সাথেও আদায় করেনি এমন ব্যক্তির নামাজ আদায় হবে না। বরং তার ঐ নামাজ পুনরায় পড়তে হবে।
(ফতোয়ায়ে শামী)

ইমামের পূর্বে সালাম ফিরানো
প্রশ্ন: যদি কোন মুক্তাদী ইমাম সাহেবের পূর্বেই সালাম ফিরিয়ে ফেলে তাহলে তার নামাজের হুকুম কি?
উত্তর: যদি কোন মুক্তাদী ইমাম সাহেবের পূর্বেই সালাম ফিরিয়ে ফেলে আর ইমাম সাহেব পরে ফিরায় তাহলেও মুক্তাদীর নামাজ হয়ে যাবে। কিন্তু মুক্তাদীর জন্য এমন করা মাকরুহে তাহরিমী। নামাজ দ্বিতীয় বার পড়া জরুরি নয়। তবে যদি ভুলে কিংবা কোন ওজর অথবা ওজু ভেঙ্গে যাওয়ার ভয়ে এমনটি করে থাকে তাহলে নামাজ মাকরুহ হবে না।
(ফতোয়ায়ে শামী)

ইমামের পূর্বে কোন কাজ করা
প্রশ্ন: মুক্তাদীর জন্য ইমাম সাহেবের পূর্বে কোন কাজ করা জায়েয আছে কি?
উত্তর: মুক্তাদীর জন্য ইমাম সাহেবের পূর্বে কোন কাজ করা মাকরুহে তাহরিমী। ইমাম সাহেবের পূর্বে রুকু কিংবা সিজদায় চলে যাওয়া এবং উঠে যাওয়া মাকরুহে তাহরিমী। এর থেকে বিরত থাকা খুবই জরুরি।
(ফতোয়ায়ে শামী)

ইমামের প্রতি অসন্তুষ্টি থাকা
প্রশ্ন: যদি ইমাম সাহেবের পক্ষ থেকে কোন ত্রুটি না থাকে তাহলে মুক্তাদীদের অসস্তুষ্টির দ্বারা নামাজে কোন সমস্যা হবে কি?
উত্তর: যদি ইমাম সাহেবের পক্ষ থেকে কোন ত্রুটি না থাকে তাহলে মুক্তাদীদের অসন্তুষ্টির কারণে নামাজে কোন সমস্যা হবে না। তবে ইমাম সাহেবের প্রতি অসন্তুষ্টির কারণে ঐ মুক্তাদীগণ গুনাহগার হবে। আর যদি ইমাম সাহেবের নিজের ত্রুটির কারণে তারা অসন্তুষ্টি হয় তাহলে তার জন্য ইমামতি করা মাকরুহ।
(ফতোয়ায়ে শামী)

ইমাম শেষ বৈঠকের পর দাঁড়িয়ে গেলে
প্রশ্ন: ইমাম সাহেব যদি শেষ বৈঠকের পর ভুলে দাড়িয়ে যায় তাহলে মুক্তাদীদের করণীয় কি?
উত্তর: ইমাম সাহেব যদি শেষ বৈঠকের পর ভুলে দাঁড়িয়ে যায় তাহলে এক্ষেত্রে মুক্তাদীগণ তার ইমামের অনুসরণ করবে না। বরং বসেই ইমামকে লোকমা দিয়ে অপেক্ষা করবে। যদি তিনি পঞ্চম রাকাতের সেজদার পূর্বেই ফিরে আসে তাহলে তার সাথে সেজদায়ে সাহু করে সালাম ফিরাবে। অন্যথায় তারা নিজেরাই সালাম ফিরিয়ে নামাজ শেষ করবে।
(হালবী কাবির)

ইমাম শেষ বৈঠকের পর দাঁড়িয়ে গেলে মাসবুকের জন্য করণীয়
প্রশ্ন: ইমাম সাহেব যদি শেষ বৈঠকের পর দাঁড়িয়ে যায় এবং তার সাথে মাসবুকরাও দাঁড়িয়ে যায়, তাহলে মাসবুকের নামাজ সহিহ হবে কি?
উত্তর: ইমাম সাহেব যদি ভুলে শেষ বৈঠকের পর দাঁড়িয়ে যায় এবং তার সাথে মাসবুকরাও দাঁড়িয়ে যায় তাহলে মাসবুকের নামাজ ভেঙ্গে যাবে। কারণ, তার জন্য জরুরি ছিল বসে ইমামের ফিরে আসার অপেক্ষা করা এবং ইমামের সালামের পর দাঁড়িয়ে নিজের নামাজ পড়া।
(ফতোয়ায়ে শামী)

ইমামের একামত দেওয়া
প্রশ্ন: ইমাম সাহেবের জন্য একামত দেওয়া কেমন?
উত্তর: উত্তম হলো এক ব্যক্তিই আজান ও একামত দেওয়া। আর নামাজ অন্য ব্যক্তির পড়ানো। কিন্তু প্রয়োজনের সময় ইমাম সাহেবও একামত দিতে পারে। তাতে কোন সমস্যা নেই।
(খুলাসাতুল ফাতাওয়া)

ইমামকে যে অবস্থায় নামাজে পাবে সে অবস্থায়ই শরীক হবে
প্রশ্ন: কোন ব্যক্তি মসজিদে এসে দেখল ইমাম সাহেব সেজদা অবস্থায় আছে। এখন তার করণীয় কি?
উত্তর: মসজিদে এসে ইমাম সাহেবকে যে অবস্থায় পাবে সে অবস্থায়ই শরীক হবে। যেমন রুকুতে পেলে রুকুতে, সেজদায় পেলে সেজদায় শরীক হবে। কোন ওযর ছাড়া বিলম্ব করলে গুনাহ হবে।
(মারাকিল ফালাহ)

ইমামের সাথে রুকু ছুটে গেলে
প্রশ্ন: যদি কারো ইমাম সাহেবের সাথে নামাজ পড়া অবস্থায় রুকু ছুটে যায় তাহলে তার করনীয় কি?
উত্তর: ইমাম সাহেবের সাথে নামাজ পড়া অবস্থায় কারো রুকু কিংবা সেজদা ছুটে গেলে যখনই স্বরণ হবে তখনই তা আদায় করে ইমামের সাথে শরীক হয়ে যাবে। এ সুরতে সেজদায়ে সাহু ওয়াজিব হবে না।
(বাহরুর রায়েক)

আর যদি স্বরণ হওয়া সত্ত্বেও আদায় না করে তাহলে ইমামের সালাম ফিরানোর পর ছুটে যাওয়া রুকু বা সেজদা আদায় করে সেজদায়ে সাহু আদায় করবে। বাকী নামাজ, আত্ত্বাহিয়্যাতু দরুদ শরীফ ও দুয়ায়ে মাছুরা আদায় করে নিজেই সালাম ফিরিয়ে নামাজ সম্পন্ন করবে। আর যদি এই দুই সুরতের কোনটিই না করে তাহলে তার নামাজ হবে না। বরং পুনরায় নামাজ পড়া আবশ্যক।
(বাহরুর রায়েক)

ইমামের সুতরা মুক্তাদীদের জন্য যথেষ্ট হওয়া
প্রশ্ন: জামাতের সাথে নামাজ পড়া অবস্থায় ইমামের সুতরা মুক্তাদীর জন্য যথেষ্ট হবে কি?
উত্তর: হ্যাঁ, জামাতের সাথে নামাজ পড়া অবস্থায় ইমামের সুতরাই মুক্তাদীদের জন্য যথেষ্ট হবে। প্রত্যেকের জন্য পৃথক সুতরা রাখার প্রয়োজন নেই। তবে ইমাম-মুক্তাদিদের মধ্য দিয়ে অতিক্রম করা জায়েয নেই।
(ফতোয়ায়ে শামী)

ইমাম কারো জন্য কেরাত লম্বা করা
প্রশ্ন: ইমাম সাহেবের জন্য করো প্রতি লক্ষ রেখে (অর্থাৎ যেন জামাত পেয়ে যায়) কেরাতকে লম্বা করা জায়েয হবে কি?
উত্তর: না, ইমামের জন্য কারো প্রতি লক্ষ রেখে কেরাতকে দীর্ঘায়িত করা মাকরুহে তাহরিমী। তবে নামাজ হয়ে যাবে।
(ফতোয়ায়ে শামী)

ইমামের ওজু ভেঙ্গে গেলে
প্রশ্ন: যদি কোন কারণবশত নামাজে ইমামের ওজু ভেঙ্গে যায় তাহলে নামাজ কিভাবে শেষ করবে?
উত্তর: যদি কোন কারণবশত নামাজে ইমামের ওজু নষ্ট হয়ে যায় তাহলে বাকী নামাজ পূর্ণ করার জন্য তিনি খলিফা বানিয়ে ওজু করতে যাবেন। ঐ খলিফাই নামাজ পূর্ণ করে সালাম ফিরিয়ে দিবেন। (ফাতহুল কাদীর)

সেজদায়ে সাহু ওয়াজিব হওয়ার পর ইমামের ওজু ভেঙ্গে গেলে।
প্রশ্ন: ইমামের ওপর সেজদায়ে সাহু ওয়াজিব হওয়ার পর ওজু ভেঙ্গে গেলে করণীয় কি?
উত্তর: এ প্রকার সূরতে ইমাম সাহেব এমন এক মুদরিককে খলিফা বানিয়ে দিবেন যিনি সেজদায়ে সাহু আদায়সহ নামাজ পূর্ণ করে নিবেন।
(বাহরুর রাযেক)

ইমাম কোথায় দাঁড়াবে
প্রশ্ন: নামাজে ইমাম সাহেব কোথায় দাঁড়াবে?
উত্তর: ইমামের জন্য নামাজে দাঁড়ানোর সুন্নত পদ্ধতি হলো, মেহরাবে দাঁড়াবে অথবা নামাজিদের মাঝ বরাবর দাঁড়াবে।
(ফতোয়ায়ে শামী)

ইমামের আওয়াজ শ্রবণ করে ইকতেদা করা
প্রশ্ন: ইমামের আওয়াজ শ্রবণ করে ইকতেদা করলে ইকতেদায় সাহিহ হবে কি?
উত্তর: ইকতেদা সহীহ হওয়ার জন্য শুধু ইমামের আওয়াজ শ্রবণ করলেই হবে না। বরং কাতারের সাথে সংযোগ থাকতে হবে। মাঝে কোন নদী, বাড়ি, কামরা, ফ্লাট ইত্যাদি বাধা না থাকতে হবে। যদি এগুলে থাকে তাহলে ইকতেদা সহীহ হবে না।
(ফতোয়ায়ে শামী)

যেক্ষেত্রে ইমামের অনুসরণ করা যাবে না

প্রশ্ন: কোন কোন ক্ষেত্রে মুক্তাদী ইমামের অনুসরণ করবে না?
উত্তর: পাঁচ সুরতে মুক্তাদী ইমামের অনুসরণ করবে না।
১) ইমাম যদি সেজদা বেশি করে।
২) ইমাম যদি ঈদের নামাজে তাকবির বেশি বলে।
৩) ইমাম জানাযার নামাজে চার এর অধিক তাকবির বললে।
৪) ইমাম যদি শেষ বৈঠক করে ভুলে দাঁড়িয়ে যায়।
৫) ইমাম যখন কেরাত পড়বে।

এই পাঁচ সুরতে মুক্তাদী ইমামের অনুসরণ করবে না।
(ফতোয়ায়ে শামী)

আরো কিছু ক্ষেত্রে মুক্তাদী ইমামের অনুসরণ করবে না
প্রশ্ন: ইমাম সাহেবের অনুসরণ না করার জন্য আরো কি কোন সুরত আছে? জানালে উপকৃত হবো।
উত্তর: হ্যাঁ, কিছু সুরত আছে যেগুলো ইমাম ছেড়ে দিলেও মুক্তাদী ছাড়বে না। যথা:
১) ইমাম যদি তাকবিরে তাহরিমা বলার সময় হাত উঠান ছেড়ে দেয়।
২) ইমাম যদি সানা “সুবহানাকা আল্লাহুম্মা” পড়া ছেড়ে দেয় তাহলে মুক্তাদীগণ তা ছাড়বে না।
৩) ইমাম যদি রুকুতে যাওয়ার সময় তাকবির বলা ছেড়ে দেয় তাহলে মুক্তাদীগণ ছাড়বে না।
৪) ইমাম সেজদায় যাওয়ার সময় তাকবির বলা ছেড়ে দিলে মুক্তাদীগণ ছাড়বে না।
৫) ইমাম রুকু সেজদায় তাসবিহ পড়া ছেড়ে দিলে মুক্তাদীগণ ছাড়বে না।
৬) ইমাম আত্তাহিয়াতু পড়া ছেড়ে দিলে মুক্তাদীগণ ছাড়বে না।
৭) ইমাম সালাম থেকে বের হওয়ার সময় “আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ” বলা ছেড়ে দিলে মুক্তাদীগণ ছাড়বে না।
৮) ইমাম সাহেব যদি জিলহজ মাসের ৯ তারিখ ওজর থেকে ১৩ তারিখ আসর পর্যন্ত ফরজ নামাজের পর তাকবিরে তাশরীক বলা ছেড়ে দেয় বা ভুলে যায় তাহলে মুক্তাদীগণ তার অপেক্ষা করবে না। বরং নিজেই শুরু করে দিবে। এই আট জিনিস ইমাম সাহেব ছেড়ে দিলেও মুক্তাদীগণ তা ছাড়বে না।
(হালবী কবীর)

ইমামের অবস্থা সম্পর্কে জানা।
প্রশ্ন: ইমাম সাহেবের অবস্থা সম্পর্কে (মুসাফির না মুকিম) জানা কি আবশ্যক?
উত্তর: হ্যাঁ, ইমাম মুসাফির না মুকিম এ সম্পর্কে জানা আবশ্যক। চাই নামাজের পূর্বে হোক বা নামাজের মধ্যে।
(ফতোয়ায়ে শামী)

ইমাম সাহেবের পিছনে কেরাত পড়া
প্রশ্ন: কেউ যদি ইমাম সাহেবের পেছনে কেরাত পড়ে তাহলে তার নামাজের হুকুম কি?
উত্তর: ইমাম সাহেবের পেছনে কেরাত পড়া মাকরুহে তাহরিমী। আল্লাহ তায়ালার হুকুম হলো যখন কুরআন শরীফ পড়া হয় তখন তোমরা চুপ করে তা শ্রবণ করো।

সুতরাং ইমামের সাথে তেলাওয়াত করলে আল্লাহর আয়াতের বিরোধিতা হয়, যা কোনভাবেই কাম্য নয়। আতএব এর থেকে বেঁচে থাকা একান্তই জরুরি।
(মুসলীম শরীফ)

ইমাম না করলে মুক্তাদীও করবে না
প্রশ্ন: কোন কোন সুরতে ইমাম সাহেব আদায় না করায় মুক্তাদীগণ আদায় করবে না?
উত্তর: পাঁচটি (৫) সুরত এমন আছে যে এগুলো ইমাম সাহেব আদায় না করলে মুক্তাদীগণ তা আদায় করবে না। যথা:
১) ইমাম সাহেব যদি ঈদের নামাজে অতিরিক্ত তাকবির বলা ছেড়ে দেয় তাহলে মুক্তাদীরাও ছেড়ে দিবে।
২) ইমাম যদি প্রথম বৈঠক ছেড়ে দেয় তাহলে মুক্তাদিগণও ছেড়ে দিবে।
৩) ইমাম সেজদায়ে তেলাওয়াত ছেড়ে দিলে মুক্তাদীগণও ছেড়ে দিবে।
৪) ইমাম সাহেব সেজদায়ে সাহু ছেড়ে দিলে মুক্তাদীগণও ছেড়ে দিবে।
৫) ইমাম সাহেব যদি বিতির নামাজে তৃতীয় রাকাতে দোয়ায়ে কুনুত পড়া ভুলে যায় এবং রুকুতে চলে যায় তাহলে মুক্তাদীগণও না পড়ে রুকুতে চলে যাবে। এই ৫টি সুরত ইমাম সাহেব আদায় না করলে মুক্তাদীগণও আদায় করবে না।
(ফতোয়ায়ে হিন্দিয়া)

দাড়িবিহীন ছেলেকে ইমাম বানানো
প্রশ্ন: দাড়িবিহীন কোন ছেলেকে ইমাম বানানো যাবে কি?
উত্তর: দাড়িবিহীন অল্পবয়স্ক ছেলেকে ইমাম বানানো মাকরুহে তানযিহী। তবে যে দাড়ি উঠার পর কেটে ফেলেছে তার পিছনে নামাজ পড়া মাকরুহে তাহরিমী।
(ফতোয়ায়ে শামী)

এক ইমামের দুই মসজিদে নামাজ পড়ানো
প্রশ্ন: একজন ইমাম দুই মসজিদে ইমামতি করতে পারবে কি?
উত্তর: না, এক ব্যক্তি দ্বিতীয় বার ইমামতি করতে পারে না। কারণ তার প্রথম নামাজ ফরয হিসাবে আদায় হয়ে গেছে। দ্বিতীয়টি হবে তার নফল। আর নফল আদায়কারীর পিছনে ফরজ আদায়কারীর ইকতেদা করা জায়েয নেই।
(ফতোয়ায়ে শামী)

দাড়ি ও মাথায় খেজাব ব্যবহারকারীর ইমামতি করা
প্রশ্ন: মাথায় ও দাড়িতে কালো খেজাব ব্যবহারকারীর ইমামতি করা জায়েয আছে কি?
উত্তর: যে ইমাম কালো খেজাব ব্যবহার করে তার পেছনে নামাজ মাকরুহে তাহরিমী।
(ফতোয়ায়ে আলমগিরী)
ফাসেকের পিছনে ইকতেদা করা।
প্রশ্ন: ফাসেক ব্যক্তির পিছনে নামাজ আদায় করার বিধান কি?
উত্তর: ফাসেক ব্যক্তির পিছনে নামাজ আদায় করা মাকরুহে তাহরিমী।
(ফাতহুল কাদীর)

ব্যাংকে চাকরি করে এমন ব্যক্তির ইমামতি করা।

প্রশ্ন: ব্যাংকে চাকরি করে এমন লোকের ইমামতি করা জায়েয হবে কি?
উত্তর: ব্যাংকে চাকারি করা জায়েয নাই। আর এমন ব্যক্তির ইমামতি করা মাকরুহে তাহরিমী। ব্যাংকের বেতন যেহেতু সুদ থেকেই হয়ে থাকে তাই তার বেতন নেওয়াও হালাল হবে না। (মেশকাত শরীফ)

টিভি দেখতে অভ্যস্ত ব্যক্তির ইমামতি করা
প্রশ্ন: টিভি দেখে এমন ব্যক্তির ইমামতি করার বিধান কি?
উত্তর: যে ব্যক্তি টিভি দেখে গান শুনে সে ফাসেক। আর ফাসেকের পিছনে নামাজ পড়া মাকরুহে তাহরিমী। সুতরাং এই ইমাম বাদ দিয়ে অন্য ইমাম নিয়োগ দিবে।
(ফতোয়ায়ে শামী)

ঘুষখোর ব্যক্তির ইমামতি করা
প্রশ্ন: যদি কোন মসজিদের ইমাম সাহেব ঘুষ নেন তাহলে তার পিছনে নামাজ পড়া জায়েয হবে কি?
উত্তর: ঘুষ নেয়া কবীরা গুনাহ। কবীর গুনাহকারী হলো ফাসেক। আর ফাসেকের পিছনে নামাজ পড়া মাকরুহে তাহরিমী।
(ফতোয়ায়ে শামী)

ইমাম এবং মুক্তাদীর নামাজের পার্থক্য
প্রশ্ন: ইমাম এবং মুক্তাদীর মধ্যে নামাজের পার্থক্য আছে কি?
উত্তর: হ্যাঁ, আছে। একা নামাজ আদায়কারী আর ইমামের নামাজের মাঝে কোন পার্থক্য নেই। তবে মুক্তাদী ইমামের পেছনে শুধু কেরাত পড়বে না। বাকী সমস্ত আরকান দোয়া ইত্যাদি পড়বে।
(আবু দাউদ, বাদায়ে সানায়ে)


বিতির নামাজের ফজিলত

নবীজীবন- সীরাত


عن خارجة بن حذافة العدوي قال : خرج علينا رسول الله صلى الله عليه و سلم فقال : إن الله قد أمدكم بصلاة هي خير لكم من حمر النعم و هي الوتر فجعلها لكم فيما بين صلاة العشاء إلى صلاة الفجر

হযরত খারেজা ইবনে হুযাফা আদাবী রা. বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের কাছে এসে বললেন- আল্লাহ তায়ালা একটি নামাজ দ্বারা তোমাদের সাহায্য করেছেন যা লাল উঠ অপেক্ষা উত্তম তা হলো বিতির। হাদিসটি সনদ সূত্রে সহীহ। অতপর বিতির নামাজ পড়ার ফজিলত অনেক বেশি এবং তা নি:সন্দেহে বরকতময় নামাজ (আল মুস্তাদারক১/৪৪৮হা:১১৪৮ বিতির অধ্যায়)


বিতির নামাজের সময়

عن خارجة بن حذافة العدوي قال : خرج علينا رسول الله صلى الله عليه و سلم فقال : إن الله قد أمدكم بصلاة هي خير لكم من حمر النعم و هي الوتر فجعلها لكم فيما بين صلاة العشاء إلى صلاة الفجر

অর্থ: হযরত খারেজা ইবনে হুযাফা আদাবী রা. বলেন- রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের কাছে এসে বললেন: আল্লাহ তায়ালা একটি নামাজ দ্বারা তোমাদের সাহায্য করেছেন যা লাল উট অপেক্ষা উত্তম, তা হলো বিতির নামাজ। আল্লাহ তায়ালা এটা তোমাদের জন্য এশা এবং ফজরের মধ্যবর্তি সময়ে নির্ধারণ করেছেন। হাদিসটি সনদ সূত্রে সহীহ।
(আল মুস্তাদারক ৪৪৮হা:১১৪৮ বিতির অধ্যায়)


عنْ عَائِشَةَ قَالَتْ مِنْ كُلِّ اللَّيْلِ قَدْ أَوْتَرَ رَسُولُ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- مِنْ أَوَّلِ اللَّيْلِ وَأَوْسَطِهِ وَآخِرِهِ فَانْتَهَى وِتْرُهُ إِلَى السَّحَرِ.


অর্থ: হযরত আয়েশা রা. বলেন- রাতের প্রত্যেকভাগেই রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিতির আদায় করেছেন। রাতের প্রথম ভাগে মধ্যভাগে এবং শেষ ভাগে এমনকি তার বিতির সুবহে সাদেক পর্যন্ত পৌঁছেছে।
(মুসলিম শরীফ:২/১৬৮হা:১৭৭১মুসাফির অধ্যায়)

عن عائشة قالت كل الليل أوتر رسول الله صلى اللهعليه وسلم وانتهى وتره إلى السَّحَرِ


অর্থ: হযরত আয়েশা রা. বলেন- রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পূর্ণ রাতে (রাতের যে কোন অংশে) বিতির আদায় করেছেন। আর বিতির সুবহে সাদেক পর্যন্ত পৌঁছেছে।
(বুখারী শরীফ১/৩৩৮হা:৯৫১ বিতির অধ্যায়)

উপরোক্ত সহীহ হাদিসের আলোকে সু¯পষ্টভাবে প্রমাণিত হয়েছে বিতির নামাজের সময় এশার নামাজ আদায় করা থেকে নিয়ে সুবহে সাদেক পর্যন্ত। অতএব উক্ত সময়ের মধ্যে যে কোন সময়ে বিতির নামাজ আদায় করা যায়।

বিতির নামাজের মুস্তাহাব সময়
যে ব্যক্তি শেষ রাতে উঠতে পারে তার জন্য শেষ রাতে বিতির নামাজ আদায় করা মুস্তাহাব ও উত্তম। তবে সে যেন কমপক্ষে দুই রাকাত বা তার চেয়েও বেশি বিতির নামাজের আগে আদায় করে। কেননা এটা উত্তম ও উচিত, আর যে উঠতে পারে না সে বিতির আদায় করে ঘুমাবে।

عن عبد الله عن النبي صلى الله عليه وسلم قال اجعلوا آخر صلاتكم بالليل وترا

অর্থ: হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রা. থেকে বর্ণিত- রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসল্লাম বলেন, রাত্রে তোমাদের শেষ নামাজ যেনো হয় বিতির।
(বুখারী শরীফ১/৩৩৯হা:৯৫৩ বিতির অধ্যায়)


عَنْ جَابِرٍ قَالَ سَمِعْتُ النَّبِىَّ -صلى الله عليه وسلم- يَقُولُ ্র أَيُّكُمْ خَافَ أَنْ لاَ يَقُومَ مِنْ آخِرِ اللَّيْلِ فَلْيُوتِرْ ثُمَّ لْيَرْقُدْ وَمَنْ وَثِقَ بِقِيَامٍ مِنَ اللَّيْلِ فَلْيُوتِرْ مِن آخِرِهِ فَإِنَّ قِرَاءَةَ آخِرِ اللَّيْلِ مَحْضُورَةٌ وَذَلِكَ أَفْضَلُ .

অর্থ: হযরত জাবের রা. বলেন- আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসল্লামকে বলতে শুনেছি, তোমাদের মধ্যে যে শেষ রাতে উঠতে পারবে না সে বিতির আদায় করে শুয়ে পড়বে। আর যে উঠতে পারে সে শেষ রাতে বিতির আদায় করবে। কেননা শেষ রাতে পড়া অনেক উত্তম।
(মুসলিম শরীফ২/১৭৪হা:১৮০৩ মুসাফিরের নামাজ অধ্যায়)

শায়েখ খলীল আহমদ সাহারাণপুরী রহ. (মৃত্যু ১৩৪৬হিজরী) লেখেন-
বিতির নামাজ শেষ রাতে আদায় করা মুস্তাহাব
(বাজলুুুল মাজহুদ ৬/৯০ নামাজ অধ্যায়)


বিতির নামাজের হুকুম কি?

عبد الله بن بريدة عن أبيه قال : قال رسول الله صلى الله عليه و سلم : الوتر حق فمن لم يوتر فليس منا

অর্থ: হযরত বুরায়দা রা. বলেন: আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসল্লামকে বলতে শুনেছি- বিতির সত্য সঠিক, যে ব্যক্তি বিতির আদায় করবে না সে আমার দলের অন্তর্ভুক্ত না।
(আবু দাউদ শরীফ ১/৫৩৪হা:১৪২১ বিতির অধ্যায়)

উক্ত হাদিসটিকে হাকেম নিসাপুরী রহ. (মৃত্যু ৪০৫ হিজরী) হাদিসটি সহীহ বলেছেন। আল্লামা বদরুদ্দিন আইনী রহ. (মৃত্যু ৮৫৫ হিজরী) হাদিসটিকে সহীহ বলেছেন। আল্লামা নিমাবী রহ. (মৃত্যু ১৩২২ হিজরী) বলেন সঠিক কথা হলো হাদিসটি হাসান। উক্ত হাদিস দ্বারা প্রমাণিত হয় যে বিতির ওয়াজিব কেননা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন- বিতির হক্ব। অর্থাৎ এটা ওয়াজিব প্রমাণিত আর এর প্রমাণ হলো (الوتر حق فمن لم يوتر فليس منا) যে বিতির আদায় করে না সে আমাদের দলের অন্তর্ভুক্ত নয়। এটি অনেক বড় ধমকি। এই ধরনের ধমকি ফরজ বা ওয়াজিব তরককারী ছাড়া অন্য কারো জন্য হতে পারে না।।


عَنِ ابْنِ عُمَرَ عَنِ النَّبِىِّ -صلى الله عليه وسلم- قَالَ اجْعَلُوا آخِرَ صَلاَتِكُمْ بِاللَّيْلِ وِتْرًا .


অর্থ: হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রা. থেকে বর্ণিত- রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসল্লাম বলেন- তোমরা তোমাদের রাতের শেষ নামাজকে করবে বিতির।
(বুখারী শরীফ ১/৩৩৯হা:৯৫৩ বিতির অধ্যায়)


عَنْ جَابِرٍ قَالَ سَمِعْتُ النَّبِىَّ -صلى الله عليه وسلم- يَقُولُ ্র أَيُّكُمْ خَافَ أَنْ لاَ يَقُومَ مِنْ آخِرِ اللَّيْلِ فَلْيُوتِرْ ثُمَّ لْيَرْقُدْ وَمَنْ وَثِقَ بِقِيَامٍ مِنَ اللَّيْلِ فَلْيُوتِرْ مِنْ آخِرِهِ فَإِنَّ قِرَاءَةَ آخِرِ اللَّيْلِ مَحْضُورَةٌ وَذَلِكَ أَفْضَلُ.


অর্থ: হযরত জাবের রা. বলেন আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসল্লামকে বলতে শুনেছি তোমাদের মধ্যে যে শেষ রাতে উঠতে পারবে না সে বিতির আদায় করে শুয়ে পড়বে। আর যে উঠতে পারবে সে শেষ রাতে বিতির আদায় করবে কেননা শেষ রাতে পড়া অনেক উত্তম।
(মুললিম শরীফ ২/১৭৪হা:১৮০৩ মুসাফিরের নামাজ অধ্যায়)

عن أبى سعيد، قال : قال رسول الله صلى الله عليهوسلم ” من نام عن الوتر أو نسيه ، فليصل إذا أصبح ، أو ذكره ” .

অর্থ: হযরত আবু সাঈদ রা. বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন- যে বিতির আদায় না করে ঘুমিয়ে গেল বা ভুলে গেল যখন ঘুম থেকে উঠবে বা স্বরণ পড়বে তখন তা আদায় করবে, হাদিসটি সহীহ।
(ইবনে মাজাহ ১/৩৭৫হা:১১৮৮ নামাজ ও তার সুন্নতসমূহ অধ্যায়)

অতএব উপরোক্ত আলোচনা থেকে সুষ্পষ্ট প্রমাণ পাওয়া গেলো নি:সন্দেহে বিতির নামাজ ওয়াজিব।

বিতির নামাজের পদ্ধতি
বিতির নামাজ এক সালামে তিন রাকাত অন্যান্য নামাজের মত আদায় করবে। তবে প্রথম রাকাতে সুরা ফাতেহার পর সুরা আলা দ্বিতীয় রাকাতে সুরা কাফিরুন এবং তৃতীয় রাকাতে সুরা ইখলাস পড়া মুস্তাহাব। তৃতীয় রাকাত কেরাতের পর শেষে তাকবির দিয়ে পুনরায় পুরুষগণ হাত-কান বরাবর উঠিয়ে বুকের উপর হাত বাঁধবে। এরপর কুনুত পাঠ করবে অন্যান্য নামাজের ন্যায় বাকি অংশ আদায় করবে।


বিতির কত রাকাত


عَنْ أَبِى سَلَمَةَ بْنِ عَبْدِ الرَّحْمَنِ أَنَّهُ أَخْبَرَهُ : أَنَّهُ سَأَلَ عَائِشَةَ زَوْجَ النَّبِىِّ -صلى الله عليه وسلم- كَيْفَ كَانَتْ صَلاَةُ رَسُولِ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- فِى رَمَضَانَ فَقَالَتْ : مَا كَانَ رَسُولُ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- يَزِيدُ فِى رَمَضَانَ وَلاَ فِى غَيْرِهِ عَلَى إِحْدَى عَشْرَةَ رَكْعَةً : يُصَلِّى أَرْبَعًا فَلاَ تَسْأَلْ عَنْ حُسْنِهِنَّ وَطُولِهِنَّ ثُمَّ يُصَلِّى أَرْبَعًا فَلاَ تَسْأَلْ عَنْ حُسْنِهِنَّ وَطُولِهِنَّ ثُمَّ يُصَلِّى ثَلاَثًا قَالَتْ عَائِشَةُ – رضى الله عنها – فَقُلْتُ : يَا رَسُولَ اللَّهِ أَتَنَامُ قَبْلَ أَنْ تُوتِرَ قَالَ : ্র يَا عَائِشَةُ إِنَّ عَيْنَىَّ تَنَامَانِ وَلاَ يَنَامُ قَلْبِى .

অর্থ: হযরত আবু সালামা ইবনে আব্দুর রহমান রা. থেকে বর্ণিত তিনি হযরত আয়েশা রা. কে জিজ্ঞাসা করেন, রমজান মাসে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নামাজ কেমন ছিল? তিনি বললেন- রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমজান মাসে এবং অন্যান্য সময় (রাতের বেলা) এগার রাকাতের বেশি নামাজ আদায় করতেন না। তিনি চার রাকাত নামাজ আদায় করতেন। তুমি সেই নামাজের সৌন্দর্য ও দীর্ঘত্ব সম্পর্কে আমাকে প্রশ্ন করো না। তার পর চার রাকাত নামাজ আদায় করতেন, এর সৌন্দর্র্য এবং দীর্ঘত্ব সম্পর্কে আমাকে প্রশ্ন করো না তারপর তিনি তিন রাকাত (বিতির) নামাজ আদায় করতেন। হযরত আয়েশা রা. বললেন (একদিন) আমি জিজ্ঞাসা করলাম হে রাসুলুল্লাহ আপনি কি বিতির নামাজের আগে ঘুমিয়ে থাকেন? তিনি এরশাদ করলেন- আমার চোখ দুটি ঘুমায় কিন্তু আমার হৃদয় ঘুমায় না।
(বুখারী শরীফ ১/৩৮৫হা:১০৯৬ তাহজ্জুদ অধ্যায়


عن بن عباس قال كان رسول الله صلى الله عليه و سلم يوتر بثلاث يقرأ في الأولى ب سبح اسم ربك الأعلى وفي الثانية ب قل يا أيها الكافرون وفي الثالثة بقل هو الله أحد وقفه زهير


অর্থ: হযরত ইবনে আব্বাস রা. বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তিন রাকাত বিতির আদায় করতেন। প্রথম রাকাতে সুরায়ে আলা, দ্বিতীয় রাকাতে সুরা কাফিরুন এবং তৃতীয় রাকাতে সুরা ইখলাস পাঠ করতেন। সনদ সূত্রে হাদিসটি সহীহ।
(নাসায়ী শরীফ ৩/২৬২হা:১৭০১ দিনের)
আল্লামা বদর উদ্দিন আইনী রহ. মৃত্যু ৮৫৪ হিজরী উক্ত হাদিসটিকে সহীহ বলেছেন।


عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ أَبِى قَيْسٍ قَالَ قُلْتُ لِعَائِشَةَ رضى الله عنها : بِكَمْ كَانَ رَسُولُ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- يُوتِرُ قَالَتْ : كَانَ يُوتِرُ بِأَرْبَعٍ وَثَلاَثٍ وَسِتٍّ وَثَلاَثٍ وَثَمَانٍ وَثَلاَثٍ وَعَشْرٍ وَثَلاَثٍ وَلَمْ يَكُنْ يُوتِرُ بِأَنْقَصَ مِنْ سَبْعٍ وَلاَ بِأَكْثَرَ مِنْ ثَلاَثَ عَشْرَةَ.


অর্থ: হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আবী কায়েস রহ. থেকে বর্ণিত তিনি বলেন আমি হযরত আয়েশা রা. কে জিজ্ঞাসা করলাম রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কত রাকাত বিতির আদায় করতেন? তিনি উত্তরে বলেন- রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিতির আদায় করতেন চার এবং তিন রাকাত, ছয় এবং তিন রাকাত, আট এবং তিন রাকাত, দশ এবং তিন রাকাত, তবে সাত রাকাতের কম আদায় করতেন না এবং তের রাকাতের বেশি আদায় করতেন না।
(আবু দউদ ১/৪৩৩হা:১৩৬২ নামাজ অধ্যায়)
অতএব বুঝা গেল বিতির নামাজ তিন রাকাত আদায় করতেন। আর নফল কখনো চার, ছয়, আট, দশ, রাকাত আদায় করতেন।


أن عائشة حدثته – أن رسول الله صلى الله عليه و سلم كان لا يسلم في ركعتي الوتر


অর্থ: হযরত আয়েশা রা. বর্ণনা করেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিতির দুই রাকাতে সালাম ফেরাতেন না।
(নাসায়ী শরীফ ৩/২৬১হা:১৬৯৭)

আল্লামা হাকিম নিশাপুরী (রহ.) মৃত্যু ৪০৫ হিজরী তিনি বলেন- হাদিসটি সহীহ।
হাদিসটি ইমাম বুখারী রহ. মৃত্যু ২৫৬ হিজরী ও ইমাম মুসলিম ২৬১ হিজরী এই শর্ত অনুযায়ী সহীহ। আল্লামা নিমাবি রহ. (মৃত্যু ১৩২২ হিজরী) বলেন হাদিসটি সহীহ। হযরত উমর রা. তিন রাকাত বিতির আদায় করতেন এবং শেষ রাকাতে সালাম ফেরাতেন। মদিনাবাসী এটাকেই গ্রহণ করেছেন। আল্লামা যাফর আহমাদ উসমনি রহ. (মৃত্যু ১৩৯৪ হিজরী) উক্ত হাদিসটিকে হাসান বলেছেন।


عن عبد الرحمن بن يزيد قال قال عبد الله الوتر ثلاث كصلاة المغرب وترالنهار


অর্থ: হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. বলেন- বিতির নামাজ তিন রাকাত, দিনের ভিতর মাগরিব নামাজের ন্যায়। হাদিসটি সহীহ।
(আল মুসান্নাফ ইবনে আবি শায়বা ৪/৪৬৮হা:৬৭৭৯ নামাজ অধ্যায়)

হযরত হাসান বসরী রহ. (মৃত্যু ১১০ হিজরী) কে বলা হল হযরত ইবনে উমর রা. বিতির দুই রাকাতে সালাম ফিরাতেন তখন হাসান বসরী রহ. (মৃত্যু ১১০ হি.) বলেন উমর রা. তার ছেলে ইবনে উমর থেকে অনেক বড় ফকিহ তিনি দ্বিতীয় রাকাতে তাকবির দিয়ে তৃতীয় রাকাতের জন্য উঠে যেতেন।
হযরত মুহাম্মদ ইবনে শিরীন রহ. (মৃত্যু ১১০হিজরী) বলেন মাগরিবের নামাজ দিনে বিতির সুতরাং তোমরা রাতের বিতির আদায় কর। হাদিসটি মুরসাল সহীহ।
(আল মুসান্নফ ইবনে আবি শায়বা ৪/৪৬৮হা:৬৭৭৮ নামাজ অধ্যায়)

অর্থাৎ মাগরিবের নামাজ যেমন তিন রাকাত তেমনি বিতির নামাজও তিন রাকাত। যেভাবে মাগরিব এক সালামে আদায় করতে হয় অতএব ঠিক তেমনি বিতিরও এক সালামে আদায় করতে হয়। অতএব এ কথা সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয় যে বিতির নামাজ এক সালামে তিন রাকাত।
বিতির তিন রাকাত হওয়ার ওপর ইজমা

হযরত হাসান বসরী রহ. (মৃত্যু ১১০হিজরী) বলেন বিতির তিন রাকাত হওয়ার ওপর মুসলমানদের ইজমা হয়েছে। আর শুধুমাত্র শেষ রাকাতে সালাম ফিরাবে।
(আল মুসান্নাফ ইবনে শায়বা ৪/৪৯২-৪৯৩হা:৬৯০৪ নামাজ অধ্যায়)
বিতির নামাজের মুস্তাহাব সুরা

বিতির নামাজে প্রথম রাকাতে সুরা আলা, দ্বিতীয় রাকাতে সুরা কাফিরুন, তৃতীয় রাকাতে সুরা ইখলাস পাঠ করা মুস্তাহাব।


عن بن عباس قال كان رسول الله صلى الله عليه و سلم يوتر بثلاث يقرأ في الأولى ب سبح اسم ربك الأعلى وفي الثانية ب قل يا أيها الكافرون وفي الثالثة ب قل هو الله أحد وقفه زهير


অর্থ: হযরত ইবনে আব্বাস রা. বলেন- রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তিন রাকাত আদায় করতেন। প্রথম রাকাতে সুরা আলা, দ্বিতীয় রাকাতে সুরা কাফিরুন এবং তৃতীয় রাকাতে সুরা ইখলাস পাঠ করতেন। সনদ সূত্রে হাদিসটি সহীহ।
(নাসায়ী শরীফ ৩/২৬২হা:১৭০১ দিনের নফল ও রাতের কিয়াম অধ্যায়)
আল্লামা বদরুদ্দিন আইনি রহ. (মৃত্যু ৮৫৫ হিজরী) উক্ত হাদিসটিকে সহীহ বলেছেন সহীহ সনদে তৃতীয় রাকাতে সুরা ইখলাস, সুরা ফালাক, সুরা নাস, পড়ার বর্ণনাও এসেছে। ইমাম তিরমিযী রহ. (মৃত্যু ২৭৯ হি:) বলেন-


والذى اختاره اكثر اهل العلم من اصحاب النبى صلى الله عليه وسلم ومن بعدهم أن ىقرأ ب “سبح اسم ربك الاعلى” و “قل ياايها الكافرون” و “قل هو الله احد” فى كل ركعة من ذلك بسورة.


অর্থ: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর অধিকাংশ জ্ঞানী ও পরবর্তী ব্যক্তিগণ এটা গ্রহণ করেছেন যে সুরা আলা ও সুরা কাফিরূন ও সুরা ইখলাস প্রতি রাকাতে একটি করে সুরা পাঠ করবে।
(সুনানে তিরমিযী ১/২৮৭হা:৪৬১ নং হাদিসে আলোচনা অধ্যায়)

বিতরে উক্ত সুরা আলা, সুরা কাফিরুন ও সুরা ইখলাস পড়া ভাল এছাড়াও যেকোন সুরা দ্বারা নামাজ আদায় করতে পারবে। তবে যদি এমন মনে করে- উক্ত সুরা ছাড়া নামাজ হবে না বা উক্ত সুরা পাঠ করা ওয়াজিব তবে এটা জায়েজ নেই। আল্লামা ইবনে আবিদীন শামী রহ. (মৃত্যু ১২৫২ হিজরী) উল্লেখ করেন-


لكن فى النهاية أن التعيين على الدوام يفضى إلى اعتقاد بعض الناس أنه واجب وهو واجب وهو لايجوز فلو قرأ بما أرد به الأثار احيانا بلا مواضبة يكون حسنا.

অর্থ: সর্বদা উক্ত সুরা নির্ধারিত করার কারণে কিছু মানুষের বিশ্বাস জন্মাবে যে তা পড়া ওয়াজিব আর এটা জায়েয নেই। তবে কেউ যদি উক্ত সুরা মাঝে মধ্যে আদায় করে তবে তা ভাল।
(দুররুল মুহতার ২/৬ নামাজ অধ্যায়)

বিতির নামাজ কত রাকাত?
বিতরের নামাজ কত রাকাত এ বিষয়ে বিভিন্ন বর্ণনা এসেছে। এক, তিন, পাচ, সাত, নয়, এগার, তের রাকাত পর্যন্ত বর্ণনা এসেছে। মুহাম্মাদ ইবনে আব্দুল হাকিম নিস পুরী রহ. (মৃত্যু ৪০৫ হিজরী) বলেন:-


وقد صح وتر النبى صلى الله عليه وسلم بثلاث عشرة وإحدى عشرة وتسع و سبع وخمس وثلاث.

অর্থ: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বিতির তের, এগার, নয়, সাত, পাঁচ, তিন রাকাত প্রমাণিত আছে
(আল মুসতাদরাক ১/৪৪৩হা:১১৪৯ নং আলোচনা বিতির অধ্যায়)
উক্ত হাদিসগুলো বর্ণনা ও তার সমাধান উল্লেখ করব। আসলে বিতির তের, এগার ইত্যাদি। হাদিসগুলো কিয়ামুল লাইল তাহাজ্জুদ নামাজসহ রেওয়ায়েত হয়েছে যেহেতু বিতির অর্থ বেজোর তাই সে নামেই রেওয়াত হয়েছে।


عَنْ أَبِى سَلَمَةَ بْنِ عَبْدِ الرَّحْمَنِ أَنَّهُ أَخْبَرَهُ : أَنَّهُ سَأَلَ عَائِشَةَ زَوْجَ النَّبِىِّ -صلى الله عليه وسلم- كَيْفَ كَانَتْ صَلاَةُ رَسُولِ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- فِى رَمَضَانَ فَقَالَتْ : مَا كَانَ رَسُولُ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- يَزِيدُ فِى رَمَضَانَ وَلاَ فِى غَيْرِهِ عَلَى إِحْدَى عَشْرَةَ رَكْعَةً : يُصَلِّى أَرْبَعًا فَلاَ تَسْأَلْ عَنْ حُسْنِهِنَّ وَطُولِهِنَّ ثُمَّ يُصَلِّى أَرْبَعًا فَلاَ تَسْأَلْ عَنْ حُسْنِهِنَّ وَطُولِهِنَّ ثُمَّ يُصَلِّى ثَلاَثًا قَالَتْ عَائِشَةُ – رضى الله عنها – فَقُلْتُ : يَا رَسُولَ اللَّهِ أَتَنَامُ قَبْلَ أَنْ تُوتِرَ قَالَ : ্র يَا عَائِشَةُ إِنَّ عَيْنَىَّ تَنَامَانِ وَلاَ يَنَامُ قَلْبِى.


অর্থ: আবু সালামা ইবনে আব্দুর রহমান রা. থেকে বর্ণিত তিনি হযরত আয়েশা রা. কে জিজ্ঞাসা করেন রমজান মাসে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নামাজ কেমন ছিলো? তিনি বলেন- রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমজান মাসে এবং অন্যান্য সময় (রাতের বেলায়) এগার রাকাতের অধিক নামাজ আদায় করতেন। তিনি চার রাকাত নামাজ আদায় করতেন। সেই নামাজের সৌন্দর্য ও দীর্ঘত্ব সম্পর্কে আমাকে জানতে চেও না। তারপর চার রাকাত নামাজ আদায় করতেন। এর সৌন্দর্য ও দীর্ঘত্ব সম্পর্কেও জানতে চেও না। তারপর তিনি তিন রাকাত (বিতির) নামাজ আদায় করতেন। আয়েশা রা. (একদিন) জিজ্ঞাসা করলেন- ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, আপনি কি বিতির নামাজের আগে ঘুমিয়ে থাকেন? তিনি এরশাদ করলেন আমার চোখ দুটি ঘুমায় কিন্তু আমার হৃদয় ঘুমায় না।
(বুখারী শরীফ ১/৩৮৫হা:১০৯৬ তাহাজ্জুদ অধ্যায়)


বিতির নামাজের মাসায়েল

বিতিরের শেষ বৈঠক ভুলে গেলে
প্রশ্ন: যদি কোন ব্যক্তি বিতির নামাজের শেষ বৈঠক করতে ভুলে যায় এবং চতুর্থ রাকাত আদায় করে ফেলে তাহলে তার বিতির নামাজ আদায় হবে কি?
উত্তর: প্রশ্নোক্ত সুরতে উক্ত ব্যক্তির বিতির নামাজ আদায় হবে না। বরং দ্বিতীয়বার পড়া ওয়াজিব। তবে ঐ চার রাকাত নফল বলে গণ্য হবে।
(ফতোয়ায়ে শামী)

বিতিরের শেষ বৈঠকের পর চতুর্থ রাকাত পড়লে
প্রশ্ন: যদি কোন ব্যক্তি বিতির নামাজের শেষ বৈঠকের পর চতুর্থ রাকাত পড়ে ফেলে তাহলে তার নামাজের হুকুম কী?
উত্তর: উক্ত ব্যক্তির নামাজ সহিহ হয়ে যাবে। তবে উত্তম হল তার সাথে আরো এক রাকাত নামাজ মিলিয়ে নেয়া। ফলে শেষ দুই রাকাত নফল বলে গণ্য হবে এবং সর্বাবস্থায় সেজদায় সাহু আদায় করা ওয়াজিব।
(হালাবিয়ে কাবীর)

বিতিরের ফিদিয়া
প্রশ্ন: যদি কোন মৃত ব্যক্তি পাঁচ ওয়াক্ত ফরজ নামাজের ফিদিয়া দেওয়ার ওসিয়ত করে যায় তাহলে তার সাথে বিতির নামাজেরও ওসিয়াত করতে হবে কি?
উত্তর: হ্যাঁ, পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের সাথে বিতির নামাজেরও ফিদিয়া দেওয়া ওয়াজিব। তাই বিতির নামাজের ফিদিয়া দেওয়ার ওসিয়াত করতে হবে। অর্থাৎ মোট ছয় ওয়াক্ত নামাজের হিসেব করতে হবে।
(হালাবিয়ে কাবির, ফতোয়ায়ে শামী)

বিতির নামাজের সময়
প্রশ্ন: বিতির নামাজ পড়ার ওয়াক্ত কখন থেকে শুরু হয়?
উত্তর: এশার নামাজের ওয়াক্তই হল বিতির নামাজের ওয়াক্ত তবে বিতির নামাজ এশার নামাজ আদায় করার পর পড়বে।
(ফতোয়ায়ে শামী)

বিতির নামাজের কাজা
প্রশ্ন: যদি কোন ব্যক্তি কোন কারণবশত বিতির নামাজ সময় মত আদায় করতে না পারে তাহলে সেই নামাজ কাজা করতে হবে কি?
উত্তর: হ্যাঁ, উক্ত ব্যক্তির বিতির নামাজ কাজা করা ওয়াজিব। যদি কোন ওজর ছাড়া কাজা করে থাকে তাহলে সে গুনাহগার হবে।
(ফতোয়ায়ে শামী, আলমগীরি)

বিতির নামাজ কখন আদায় করবে
প্রশ্ন: বিতির নামাজ কখন আদায় করবে?
উত্তর: বিতির নামাজ এশারের ফরজ নামাজের পর পড়বে। কারণ, উভয় নামাজের তরতিব রক্ষা করা ওয়াজিব।
(ফতোয়ায়ে শামী)

এশার নামাজের আগে বিতির পড়া
প্রশ্ন: যদি কোন ব্যক্তি ভুলে এশার নামাজের আগেই বিতির পড়ে ফেলে তাহলে এই বিতির পুনরায় পড়তে হবে কি?
উত্তর: না, কেউ ভুলে এশার নামাজের পূর্বে বিতির পড়ে ফেললে তা পুনরায় পড়তে হবে না। কারণ, তার এই ভুলের কারণে তরতিব রহিত হয়ে গিয়েছে।
(ফতোয়ায়ে আলমগীরী)

বিতিরের জামাত
প্রশ্ন: বিতিরের নামাজ জাামাতের সাথে পড়া কী?
উত্তর: রমজান মাসে বিতিরের নামাজ জামাতের সাথে পড়া মুস্তাহাব। আর রমজান মাস ছাড়া অন্য মাসে বিতির নামাজ জামাতের সাথে পড়া মাকরুহ।
(ফতোয়ায়ে আলমগীরী)

বিতির নামাজের দ্বিতীয় রাকাতে সালাম ফিরিয়ে নফলের নিয়ত করা
প্রশ্ন: যদি কোন ব্যক্তি ভুলে বিতির নামাজের দ্বিতীয় রাকাতে সালাম ফিরিয়ে নফলের নিয়ত বাধে তাহলে তার এই নামাজের হুকুম কি?
উত্তর; প্রশ্নোক্ত সুরতে উক্ত ব্যক্তির জন্য বিতির নামাজ দ্বিতীয় বার পড়া ওয়াজিব। তবে যদি নফলের নিয়ত না করে এবং নামাজ ভঙ্গ হওয়ার মত কিছু না করে থাকে তাহলে তৃতীয় রাকাত পড়ে শেষে সেজদায়ে সাহু আদায় করে নিলে নামাজ হয়ে যাবে।
(ফতোয়ায়ে শামী)

বিতির নামাজ পড়া
প্রশ্ন: বিতির নামাজ পড়া কী? সুন্নত না ফরজ?
উত্তর: বিতির নামাজ পড়া ওয়াজিব। হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যে ব্যক্তি বিতির নামাজ পড়বে না সে আমাদের অন্তর্ভুক্ত নয়।
(ফতোয়ায়ে আলমগীরী, ফতোয়ায়ে শামী)

বিতির নামাজ পড়ার পদ্ধতি
প্রশ্ন: বিতির নামাজ পড়ার পদ্ধতি কী?
উত্তর: বিতির নামাজ পড়ার তরিকা, মাগরিবের নামাজের মতই। পার্থক্য শুধু এটুকু যে, মাগরিবের নামাজের তৃতীয় রাকাতে শুধু সুরা ফাতেহা পড়তে হয়। আর বিতির নামাজে তৃতীয় রাকাতে সুরা ফাতেহা পড়বে এবং তার সাথে অন্য একটি সুরা মিলিয়ে আল্লাহু আকবার বলে কান পযর্ন্ত হাত উঠিয়ে আবার হাত বাধবে এবং দোয়ায়ে কুনুত পড়বে।
(ফতোয়ায়ে শামী, আলমগীরি)

দোয়ায়ে কুনুত আস্তে পড়া
প্রশ্ন: দোয়ায়ে কুনুত আস্তে পড়বে না জোড়ে পড়বে?
উত্তর: দোয়ায়ে কুনুত আস্তে পড়বে। আর জামাতের সাথে পড়লে ইমাম ও মুক্তাদি সবাই আস্তে আস্তেই পড়বে।
(বাহরুর রায়েক, ফতোয়ায়ে শামী)

বিতির নামাজের জন্য আজান দিবে না
প্রশ্ন: বিতির নামাজের জন্য আজান দিতে হবে কি?
উত্তর: বিতির নামাজের জন্য আজান দেওয়া শরীয়তে প্রমাণিত নেই। তাই বিতির নামাজের পূর্বে আজান দিবে না।
(ফতোয়ায়ে শামী, আলমগীরী)

বিতিরে দোয়ায়ে কুনুত পড়া
প্রশ্ন: বিতির নামাজে দোয়ায়ে কুনুত পড়া কী?
উত্তর: বিতির নামাজে দোয়ায়ে কুনুত পড়া ওয়াজিব। আর দোয়ায়ে কুনুত ইমাম মুক্তাদি ও মুনফারিদ সবার জন্যই আস্তে পড়া সুন্নাত।
আর শেষ রাকাতে রুকুর পূর্বে এই দোয়া পড়তেন। এটাই দোয়ায়ে কুনুত-


أَللَّهُمَّ إِنَّا نَسْتَعِينُك وَنَسْتَغْفِرُكَ وَنُؤْمِنُبِكَ وَنَتَوَكَّلُ عَلَيْهِ وَنُثْنِى عَلَيْكَ اَلْخَيْرَوَنَشْكُرُكَ وَلاَنَكْفُرُكَ،وَنَخْلَعُ وَنَتْرُكُ مَنْ يَفْجُرُكَ اللَّهُمَّ إِيَّاكَنَعْبُدُ،وَلَكَنُصَلِّى وَاِلَيْكَ نَسْعِى وَنَحْفِد وَنَرْجُورَحْمَتَكَ وَنَخْشَى عَذَابَكَ،إِنَّ عَذَابَك بِالْكَافِرمُلْحَقٌ

উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ইন্না নাসতায়িনুকা ওয়া নাসতাগফিরুকা ওয়া নু’ মিনুবিকা ওয়া নাতাওয়াক্কালু আলাইকা ওয়া নুসনি আলাইকাল খাইরা ওয়া নাশকুরুকা ওয়া লা নাকফুরুকা ওয়া নাখলাউ ওয়া নাতরুকু মাইইয়াফ জুরুকা আল্লাহুম্মা ইয়য়াকা না’বুদু ওয়া লাকা নুসাললী ওয়া ইলাইকা নাসআ ওয়া নাহফিদু ওয়া নারজু রহমাতাকা ওয়া নাখশা আজাবাকা ইন্না আজাবাকা বিলকুফফারি মুলহিক।”


এই দোয়া মুখস্থ না থাকলে أَللَّهُمَّ اِغْفِرْلِىْ অথবা يَاْرَبِّ পড়বে। চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকবে না।
(আহকামে জিন্দেগী)


মুক্তাদির দোয়ায়ে কুনুত ছুটে যাওয়া

প্রশ্ন: যদি রমজান মাসে বিতির নামাজে ইমাম সাহেব দোয়ায়ে কুনুত পড়ে রুকুতে চলে যান আর মুক্তাদি পুরোটা পড়তে না পারেন তাহলে মুক্তাদির জন্য করণীয় কী?
উত্তর: প্রশ্নোক্ত সুরতে মুক্তাদির জন্য করণীয় হলো সে ইমামের সাথে রুকুতে চলে যাবে কারণ, ইমামের অনুসরণ করা ওয়াজিব। আর দোয়ায়ে কুনুত পুরোটা পড়া সুন্নাত। ওয়াজিব নয়।
(ফতোয়ায়ে শামী)

ফরজ একা পড়লেও বিতির জামাতের সাথে পড়বে

প্রশ্ন: যদি কোন ব্যক্তি রমজান মাসে এশার নামাজ একাকী পড়ে তাহলে তার জন্য বিতির নামাজ জামাতের সাথে পড়ার সুযোগ আছে কি?
উত্তর: হ্যাঁ, প্রশ্নোক্ত সুরতে উক্ত ব্যক্তির জন্য বিতির নামাজ জামাতে পড়া জায়েজ আছে।
(ফতোয়ায়ে হিন্দিয়া, ফতোয়ায়ে দারুল উলূম)


বিতিরের পর তাহাজ্জুদ পড়া

প্রশ্ন: যদি কোন ব্যক্তি আগে বিতির পড়ে ফেলে তাহলে তার জন্য পরে তাহাজ্জুদ পড়ার অবকাশ আছে কি?
উত্তর: তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ার আসল পদ্ধতি হল বিতিরের পরে পড়া। তবে কোন ব্যক্তি যদি শেষ রাত্রে জাগ্রত না হওয়ার ভয়ে বিতির পড়ে ঘুমিয়ে যায় এবং পরে জাগ্রত হয় তাহলেও সে তাহাজ্জুদ পড়তে পারবে।
(হালাবিয়ে কাবির, ফতোয়ায়ে দারুল উলুম)


মহিলাদের নামাজ পুরুষের নামাজের মত নয়

মহিলাদের নামাজ পুরুষের নামাজের মত নয়। নারী পুরুষের শারীরিক গঠন, সক্ষমতা, নিরাপত্তা ইত্যাদি নানা বিষয়ে যেমন পার্থক্য রয়েছে তেমনি পার্থক্য রয়েছে ইবাদতসহ শরীয়তের অনেক বিষয়ে। যেমন সতর। পুরুষের সতর হচ্ছে নাভী থেকে হাঁটু পর্যন্ত। পক্ষান্তরে পরপুরুষের সামনে মহিলার প্রায় পুরো শরীর ঢেকে রাখা ফরজ। নারী পুরুষের মাঝে এরকম পার্থক্য সম্বলিত ইবাদতগুলোর অন্যতম হচ্ছে নামাজ। তাকবিরে তাহরিমার জন্য হাত উঠান, হাত বাধা, রুকু, সেজদা, প্রথম ও শেষ বৈঠক ইত্যাদি ক্ষেত্রগুলোতে পুরুষের সাথে নারীর পার্থক্য রয়েছে। তাদের সতরের পরিমাণ যেহেতু বেশি তাই যেভাবে তাদের সতর বেশি রক্ষা হয় সেদিকটিরও বিবেচনা করা হয়েছে। এক্ষেত্রগুলোতে মুসলিম উম্মাহর প্রায় দেড় হাজার বছরের অবিচ্ছিন্ন আমলের ধারা তাই প্রমাণ করে। বিষয়টি প্রমাণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাদীস, সাহাবায়ে কেরাম ও তাবেয়িগণের ফতোয়া ও আসারের মাধ্যমেও।


প্রথমে আমরা এ সংক্রান্ত মারফু হাদীস এবং পরে পর্যায়ক্রমে সাহাবায়ে কেরাম ও তাবেয়ীগণের ফতোয়া ও আসার উল্লেখ করবো।

মারফু হাদীস
১- তাবেয়ী ইয়াযিদ ইবনে আবি হাবীব র. বলেন-

ان رسول الله عليه و سلم مر على امرأتين تصليان فقال: اذا سجدتما فضما بعض اللحم الى ارض فان المرأة ليست فى ذالك كالرجل.

একবার রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নামাজরত দুই মহিলার পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন তখন তাদেরকে সংশোধোনের উদ্দেশ্যে বললেন, যখন তোমরা সেজদা করবে তখন শরীর জমিনের সাথে মিলিয়ে দিবে। কেননা মহিলারা এক্ষেত্রে পুরুষদের মত নয়।
(কিতাবুল মারাকিল, আবু দাউদ শরীফ।


২- হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত-


قال رسول الله صلى الله عليه وسلم اذاجلس المرأة فى الصلوة وضعت فخذها على فخذها الاخرى واذا سجدت الصقط بطنها فى فخذها كاستر ما يكون ولها وان الله تعالى ينظر اليها ويقول يا ملاءكة اشهدكم انى قد غفرت لها (رواه البيهقى فى سنن الكبرى)


রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, মহিলারা যখন নামাজের মধ্যে বসবে তখন যেন (ডান) উরু অপর উরুর উপর রাখে। আর যখন সেজদা করবে তখন যেন পেট উরুর সাথে মিলিয়ে রাখে। যা তার সতরের জন্য অধিক উপযোগী। আল্লাহ তায়ালা তাকে দেখে (ফেরেস্তাদেরকে সম্বোধন করে) বলেন- ওহে আমার ফেরেস্তারা, তোমরা সাক্ষী থাক আমি তাকে ক্ষমা করে দিলাম।
(সুনানে কুবরা, বায়হাকী ২/২২০)

৩- হযরত ওয়াইল ইবনে হুজর রা. বলেন-


جئت النبى صلى عليه و سلم فقال فساق الحديث وفيه وائل ابن حجر اذا صليت فاجعل يديك حذاء اذنيك والمرأة تجعل يديها حذاء تدييها

আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দরবারে হাজির হলাম। তখন তিনি আমাকে অনেক কথার ফাকে একথাও বলেছিলেন, হে ওয়াইল ইবনে হাজর! যখন তুমি নামাজ শুরু করবে তখন কান বরাবর হাত উঠাবে। আর মহিলা হাত উঠাবে বুক বরাবর।
(আলমু’জামুল কাবীর)

উল্লেখিত হাদীসগুলো থেকে একথাই স্পষ্ট হয়ে যায়, কিছু কিছু হুকুমের ক্ষেত্রে মহিলার নামাজ আদায়ের পদ্ধতি পুরুষের নামাজ আদায়ের পদ্ধতি থেকে ভিন্ন। বিশেষত দুই নং হদীসটি দ্বারা একথাও বুঝা গেল যে, মহিলার নামাজ আদায়ের শরীয়ত নির্ধারিত ভিন্ন এই পদ্ধতির মধ্যে ওই দিকটিই বিবেচনায় রাখা হয়েছে যা তার সতর ও পর্দার পক্ষে সর্বাধিক উপযোগী।

উল্লেখ্য, এইসব হাদীসের সমর্থনে মহিলাদের নামাজ আদায়ের পদ্ধতির পার্থক্য ও ভিন্নতাকে নির্দেশ করে এমন আরো কিছু হাদীস বয়েছে। পক্ষান্তরে এগুলোর সাথে বিরোধপূর্ণ একটি হাদীস কোথাও পাওয়া যাবে না যাতে বলা হয়েছে যে, পুরুষ ও মহিলার নামাজের পদ্ধতিতে কোন পার্থক্য নেই বরং উভয়ের নামাজই এক বা অভিন্ন।
সাহাবায়ে কেরামের ফাতাওয়া


১- হযরত আলী রা. বলেছেন-
اذا سجدت المرأة فلتحتفزو لتلصق فخذيها ببطنها (رواه عبد الرزاق فى مصنفه واللفظ له)
মহিলা যখন সেজদা করবে তখন সে যেন খুব জড়সড় হয়ে সেজদা করে এবং উভয় উরু পেটের সাথে মিলিয়ে রাখে।
(মুসনাদে আব্দুর রাজ্জাক ৩/১৩৮)

২- হযরত ইবনে আব্বাস রা. এর ফাতাওয়া:
عن ابن عباس انه سئل عن صلاة المرأة فقال يجتمع وتحتقض (رواه ابن ابي شيبه)
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. কে জিজ্ঞাস করা হয়েছে, মহিলা কীভাবে নামাজ আদায় করবে? তিনি বললেন, খুব জড়সড় হয়ে অঙ্গের সঙ্গে অঙ্গ মিলিয়ে নামাজ আদায় করবে।
(মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা ১/৩০২)

উপরে মহিলাদের নামাজ আদায় সম্পর্কে দুজন সাহাবির যে মত বর্ণিত হলো, আমাদের জানামতে কোন হাদীস গ্রন্থের কোথাও এর বিপরীত কিছু বিদ্যমান নেই। রাসূলে কারিম স. থেকে সাহাবায়ে কেরাম যে দ্বীন শিখেছেন, তাদের কাছ থেকে তা শিখেছেন তাবেয়ীগণ, তাদের ফাতাওয়া থেকেও একথাই প্রতীয়মান হয়- মহিলাদের নামাজ পুরুষের নামাজ থেকে ভিন্ন।

নিম্নে তাদের মধ্য থেকে কয়েক জনের ফাতাওয়া উল্লেখ করা হল।

১- হযরত আতা ইবনে আবী রাবাহ রা. কে জিজ্ঞাসা করা হল-
كيف ترفع يديها فى الصلاة؟ قال حذو ثدييها.
নামাজে মহিলারা কতটুকু হাত উঠাবে?
তিনি বললেন বুক বরাবর।
(মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা ১/২৭০)

২- ইবনে জুরাইজ র. বলেন,
قلت لعطاء تصير المرأة بيديها بالتكبير كالرجل قال لاترفع بذالك يديها كالرجل واشار فخفض يديه جدا وجعلهما اليه جدا وقال ان للمرأة هيئة ليست للرجل وان تركت ذلك فلا حرج

আমি আতা ইবনে আবি রাবাহকে জিজ্ঞাসা করলাম, মহিলারা তাকবিরের সময় পুরুষের সমান হাত তুলবে?

তিনি বললেন, মহিলা পুরুষের মত হাত উঠাবে না। এরপর তিনি (মহিলাদের হাত তোলার ভঙ্গি দেখালেন এবং তার উভয় হাত (পুরুষে অপেক্ষা) অনেক নীচুতে রেখে শরীরের সাথে খুব মিলিয়ে রাখলেন এবং বললেন, মহিলাদের পদ্ধতি পুরুষ থেকে ভিন্ন। তবে এমন না করলেও অসুবিধা নেই।
(মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা ১/২৭০)

৩- মুজাহিদ ইবনে জাবর রা. থেকে বর্ণিত,
عن مجاهد ابن جبر انه: كان يكره ان يضع الرجل بطنه على فخذيه اذا سجدكما تضع المرأة
তিনি পুরুষের জন্য মহিলাদেরমত উরুর সাথে পেট লাগিয়ে সেজদা করাকে অপছন্দ করতেন। (
মুসন্নাফে ইবনে আবি শায়বা ১/৩০২)

৪- যুহরি রহ. বলেন,
يرفع يديها حذو منكبيه
মহিলারা কাধ পর্যন্ত হাত উঠাবে।

৫- হাসান বসরী রহ. ও কাতাদাহ রহ. বলেন,
اذا سجدت المرأة فانها تنظم ما استطاعت ولا تتجافى لكيلا ترفع عجيزتها
মহিলা যখন সেজদা করবে তখন সে যথাসম্ভব জড়সড় হয়ে থাকবে। অঙ্গ প্রত্যঙ্গ ফাঁকা রেখে সিজদা দিবে না, যাতে কোমর উচু হয়ে থাকে।
(মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা ১/৩০৩)


৬-ইব্রাহীম নাখয়ী রহ. বলেন,
اذا سجدت المرأة فالتضم فخذيها ولتضع بطنها عليهما
মহিলা যখন সিজদা করবে তখন যেন সে উভয় উরু মিলিয়ে রাখে এবং পেট উরুর সাথে মিলিয়ে রাখে।
(মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা ১/৩০২)


৭- ইব্রাহীম নাখয়ী আরো বলেন-
كانت تؤمر المرأة ان تضع ذراعها وبطنها على فخذيها اذا سجدت ولا تتجافى كما بتجافى الرجل لكيلا ترفع عجيزتها

মহিলাদের আদেশ করা হত তারা যেন সেজদা অবস্থায় হাত ও পেট উরুর সাথে মিলিয়ে রাখে। পুরুষেরমত অঙ্গ প্রত্যঙ্গ ফাকা না রাখে। যাতে কোমর উঁচু হয়ে না থাকে।
(মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা ৩/১৩৭)


হযরত খালেদ ইবনে লাজলাজ রহ. বলেন-


كان النساء يؤمرن ان يتربعن اذا جلسن فى الصلاة ولايجلسن جلوس الرجال على أوراكهن يتقى ذلك على المرأة مخافة ان يكون منها الشيئ


মহিলাদের আদেশ করা হত তারা যেন নামাজে দুইপা ডান দিক দিয়ে বের করে নিতম্বের উপর বসে। পুরুষেরমত না বসে। আবরণযোগ্য কোন কিছু প্রকাশিত হয়ে যাওয়ার আশংকায় মহিলাদেরকে এমনটি করতে হয়।
(মুসন্নাফে ইবনে আবি শায়বা ১/৩০৩)


উল্লেখিত বর্ণনাগুলো ছাড়াও আয়িম্মায়ে তাবেয়ীনের আরো কিছু বর্ণনা এমন আছে যা মহিলা-পুরুষের নামাজের পার্থক্য নির্দেশ করে। পক্ষান্তরে একজন তাবেয়ী থেকেও এর বিপরীত বক্তব্য প্রমানীত নেই।


চার ইমামের ফিকহের আলোকে

ফিকহে ইসলামীর চারটি মাজহাব সকল মুসলিম উম্মাহর মাঝে প্রচলিত। ফিকহে হানাফি, ফিকহে মালেকি, ফিকহে হাম্বলি, ফিকহে শাফেয়ি। এবার আমরা এই চার ফিকহের ইমামের মতামত উল্লেখ করছি।


১- ফিকহে হানাফি:-

ইমাম আবু হানিফা রহ. এর অন্যতম প্রধান শিষ্য ইমাম মুহাম্মদ র. বলেন,
احب الينا ان تجمع رجليها فى جانب ولا تنتصت انتصار الرجل
আমাদের নিকট মহিলাদের নামাজে বসার পছন্দনীয় পদ্ধতি হলো, উভয় পা এক পাশে মিলিয়ে রাখবে। পুরুষেরমত এক পা দাঁড় করিয়ে রাখবে না।
(মুসন্নাফে ইবনে আবি শায়বা ১/৬০৯)


২- ফিকহে মালেকি
মালেকী মাযহাবের প্রসিদ্ধ ফকীহ ইমাম আবুল আব্বাস আল কারাকী রহ. ইমাম মালেক রহ. এর মত উল্লেখ করেন,
واما مساواة النساء للرجال ففى النوادر عن مالك تضع فخذها اليمنى على اليسرى وتضم قدر طاقتها ولا تفرج فى ركوع ولا سجود ولا جلوس بخلاف الرجال
নামাজে মহিলা পুরুষের মতো কি না। ইমাম মালেক র. থেকে বর্ণিত, মহিলা ডান উরু বাম উরুর উপর রাখবে এবং যথা সম্ভব জড়সড় হয়ে বসবে। রুকু, সেজদা ও বৈঠক কোন সময়ই প্রশস্ততা অবলম্বন করবে না। পক্ষান্তরে পুরুষের পদ্ধতি ভিন্ন।


৩- ফিকহে হাম্বলী।
ইমাম আহমদ র. এর ফতোয়া উল্লেখ আছে ইমাম ইবনে কুদামা রহ. কৃত আল-মুগনিতে:-
فأما المرأة فذكر القاضي فيها روايتين عن أحمد إحداهما ترفع لما روى الخلال بإسناده عن أم الدرداء وحفصة بنت سيرين أنهما كانتا ترفعان أيديهما وهو قول طاوس ولأن من شرع في حقه التكبير شرع في حقه الرفع كالرجل فعلى هذا ترفع قليلا قال أحمد رفع دون الرفع والثانية لا يشرع لأنه في معنى التجافي ولا يشرع ذلك لها بل تجع نفسها في الركوع والسجود وسائر صلاتها
তাকবিরের সময় মহিলারা হাত উঠাবে কি উঠাবে না এ বিষয়ে কাজী (আবু ইয়ায) ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল থেকে দুইটি মত উল্লেখ করেছেন। প্রথম মত অনুযায়ী হাত তুলবে। কেননা, খাল্লাল রহ. হযরত উম্মে দারদা ও হযরত হাফসা বিনতে সিরিন থেকে সনদসহ বর্ণনা করেন, তারা হাত উঠাতেন। ইমাম তাউসের বক্তব্যও তাই। উপরন্ত যার ব্যাপারে তাকবির বলার নির্দেশ রয়েছে তার ব্যাপারে হাত উঠানোরও নির্দেশ রয়েছে। যেমন পুরুষ করে থাকে। এ হিসাবে মহিলা হাত উঠাবে। দ্বিতীয় মত হলো যে, মহিলাদের জন্য হাত উঠানোরই হুকুম নেই। কেননা, হাত উঠালে কোন অঙ্গকে ফাক করতেই হয় অথচ মহিলাদের জন্য এর বিধান দেওয়া হয়নি। বরং তাদের জন্য নিয়ম হল রুকু, সেজদাসহ পুর্ণ নামাজে নিজেকে গুটিয়ে রাখবে।
(আলমুগনী ২/১৩৯)


৪- ফিকহে শাফেয়ী
وقد أدب الله تعالى النساء بالاستتار وأدبهن بذلك رسول الله صلى الله عليه وسلم وأحب للمرأة في السجود أن تضم بعضها إلى بعض وتلصق بطنها بفخذيها وتسجد كأستر ما يكون لها وهكذا أحب لها في الركوع والجلوس وجميع الصلاة أن تكون فيها كأستر ما يكون لها وأحب أن تكفت جلبابها وتجافيه راكعة وساجدة عليها لئلا تصفها ثيابها
ইমাম শাফেয়ী র. বলেন, আল্লাহপাক মহিলাদেরকে পুরোপুরি আবৃত থাকার শিক্ষা দিয়েছেন। তার রাসূলও অনুরুপ শিক্ষা দিয়েছেন। তাই আমার নিকট পছন্দনীয় হল, সেজদা অবস্থায় এক অঙ্গের সাথে অপর অঙ্গ মিলিয়ে রাখবে। পেট উরুর সাথে মিলিয়ে রাখবে এবং সেজদা এমনভাবে করবে যাতে সতরের চূড়ান্ত হেফাজত হয়।
(কিতাবুল উম্ম ১/১৩৮)


দেখা যাচ্ছে, হাদীসে রাসূল স. সাহাবা ও তাবেয়ীনের ফাতাওয়া ও আসারের মতই চার মাজহাবের প্রত্যেকেই পুরুষের সাথে মহিলাদের নামাজের পার্থক্যের কথা বলেছেন। মুসলিম উম্মাহর অনুসৃত উপরোক্ত কেউই বলছেন না, মহিলাদের নামাজ পুরুষের নামাজের অনুরুপ। বরং সকলেই বলছেন, পুরুষের নামাজ থেকে মহিলার নামাজ কিছুটা ভিন্ন।


নারী পুরুষের পার্থক্য শুধু যে এ চার মাজহাবের উলামায়ে কেরাম ও অনুসারীগণই স্বীকার করেন বিষয়টি এমন নয়। বরং আমাদের যে আহলে হাদীস বা লামাজহাবী ভাইরা এ পার্থক্যকে অস্বীকার করেন তাদেরও কোন কোন অনুসৃত আলেম এ পার্থক্যকে স্বীকার করেছেন। মাওলানা মুহাম্মদ দাউদ গজনভী রহ. এর পিতা আল্লামা আব্দুল জাব্বার গাজনভী রহ. কে জিজ্ঞেস করা হল, মহিলাদের নামাজে জড়সড় হয়ে থাকা কি উচিত?


জবাবে তিনি একটি হাদীস উল্লেখ করে লেখেন, এর উপরই আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাত ও অন্যান্যদের মাঝে আমল চলে আসছে। এরপর তিনি চার মাজহাবের কিতাবের উদ্ধৃতি প্রদান করার পর লেখেন, মোটকথা মহিলাদের জড়সড় হয়ে নামাজ পড়ার বিষয়টি হাদীস ও চার মাযহাবের ইমামগণ ও অন্যান্যের সর্বসম্মত আমলের আলোকে প্রমাণিত। এর অ¯ী^কারকারী হাদীসের কিতাবসমূহ ও উম্মতের সর্বসম্মত আমল সম্পর্কে বেখবর ও অজ্ঞ।
(ফাতাওয়া উলামায়ে আহলে হাদীস ৩/১৪৮)


আল্লাহ তায়ালা আমাদের সকলকে বিষয়টি সহীহভাবে অনুধাবন করার তৌফিক দান করুন। আমীন।


পুরুষ এবং স্ত্রীলোকের নামাজের পার্থক্য


প্রশ্ন: পুরুষ এবং স্ত্রীলোকের নামাজের মধ্যে কোন পার্থক্য আছে কি?
উত্তর: পুরুষ এবং স্ত্রীলোকের নামাজ প্রায় একইরকম, মাত্র কয়েকটি বিষয়ে পার্থক্য রয়েছে। নিম্নে তা উল্লেখ করা হল-


১- তাকবিরে তাহরিমা। অর্থাৎ আল্লাহু আকবার বলার সময় পুরুষ চাদর ইত্যাদি থেকে হাত বের করে কান পর্যন্ত উঠাবে, যদি প্রবল শীত বা এমন কোনো সমস্যার কারণে হাত ভিতরে রাখার প্রয়োজন না হয়। স্ত্রীলোক হাত বের করবে না। কাপড়ের ভেতরে রেখেই কাধ পর্যন্ত উঠাবে।
(তাহতাভী)
২- তাকবিরে তাহরিমা বলে পুরুষ নাভির নিচে হাত বাধবে। স্ত্রীলোক বুকের উপর হাত বাধবে।
(তাহতাভী)
৩-পুরুষ হাত বাধার সময় ডান হাতের বৃদ্ধা ও কনিষ্ঠা আঙ্গুলী দ্বারা হালকা বানিয়ে বাম হাতের কব্জি ধরবে এবং ডান হাতের মধ্যমা, অনামিকা ও শাহাদাত আঙ্গুলী বাম হাতের কব্জির ওপর বিছিয়ে রাখবে। আর স্ত্রীলোক শুধু ডান হাতের পাতা বাম হাতের পাতার পিঠের ওপর রাখবে। কব্জি ধরবে না।
(দুররুল মানসুর)
৪- রুকু করবার সময় পুরুষ এমনভাবে ঝুঁকবে যেন মাথা, পিঠ ও নিতম্ব এক বরাবর হয়। স্ত্রীলোক এই পরিমাণ ঝুঁকবে যাতে হাত হাটু পর্যন্ত পৌঁছে।
৫- রুকুর সময় পুরুষ হাতের আঙ্গুলগুলি ফাঁক করে হাঁটু ধরবে। আর স্ত্রীলোক আঙ্গুল বিস্তার করবে না। বরং মিলাইয়া হাঁটুর উপর রাখবে।
৬- রুকু অবস্থায় পুরুষ কনুই পাজর থেকে এবং বাজু বগল থেকে পৃথক রাখবে। স্ত্রীলোক কনুই পাঁজরের সঙ্গে মিলিয়ে রাখবে।
(মারাকীল ফালাহ)
৭- সেজদায় পুরুষের পেট উরু থেকে এবং বাজু বগল থেকে পৃথক রাখবে। পক্ষান্তরে স্ত্রীলোক পেট রানের সঙ্গে এবং বাজু বগলের সঙ্গে মিলিয়ে রাখবে।
৮- সেজদায় পুরুষ কুনই মাটি থেকে উপরে রাখবে। পক্ষান্তরে স্ত্রীলোক মাটির সাথে মিলিয়ে রাখবে। (মারাকিল ফালাহ)
৯- সেজদায় পুরুষ পায়ের আঙ্গুলগুলো কেবলার দিকে মুড়িয়ে রেখে তার উপর ভর দিয়ে পায়ের পাতা দুখানা খাড়া রাখবে। পক্ষান্তরে স্ত্রীলোক উভয় পায়ের পাতা ডান দিকে বের করে মাটিতে বিছিয়ে রাখবে।
১০- বসার সময় পুরুষ ডান পায়ের আঙ্গুলগুলি কেবলার দিকে মুড়িয়ে রেখে তার উপর ভর দিয়ে বাম পায়ের পাতাটি খাড়া রাখবে এবং বাম পায়ের পাতা বিছিয়ে তার উপর বসবে। আর স্ত্রীলোক পায়ের উপর বসবে না। বরং নিতম্ব মাটিতে লাগিয়ে বসবে এবং উভয় পায়ের পাতা ডান দিকে বের করে দিবে। এবং ডান রান বাম রানের উপর এবং ডান নলা বাম নলার উপর রাখবে।

১১- স্ত্রীলোকের জন্য উচ্চ শব্দে কেরাত পড়ার বা তাকবির বলারও অনুমতি নেই। তারা সবসময় সব নামাজের কেরাত (তাকবির, তাসবিহ, তাহমিদ- চুপে চুপে পড়বে।
(ফতোয়ায়ে শামী)


মহিলাদের নামাজ সংক্রান্ত কিছু মাসায়েল
প্রশ্ন: মহিলাদের উপর কখন নামাজ পড়া ফরয হয় বা কত বছর বয়সে নামাজ পড়া ফরয হয়?
উত্তর: যখন থেকে যুবতী হওয়ার আলামত বুঝা যায় তখন থেকে নামাজ পড়া ফরয হয়। অন্যথায় ১০ বছর বয়স থেকে নামাজ ফরয হয়।
(দুররে মুখতার)
নামাজে মহিলাদের কতটুকু অংশ ঢাকা আবশ্যক
প্রশ্ন: মহিলাদের নামাজের মধ্যে কতটুকু অংশ ঢাকা আবশ্যক?
উত্তর: মহিলাদের নামাজে হাত, পা এবং চেহারা ব্যতীত পূর্ণ শরীর ঢাকা আবশ্যক।
(হেদায়া, আপকে মাসায়েল)
মহিলাদের মাথা খোলা রাখা অবস্থায় নামাজ পড়া
প্রশ্ন: মহিলাদের মাথা খোলা রাখা অবস্থায় নামাজ পড়া যাবে কি?
উত্তর: চেহারা, উভয় হাত কব্জি পর্যন্ত এবং উভয় পা টাখনু পর্যন্ত এই তিনটি অঙ্গ ব্যতীত সম্পূর্ণ শরীর ঢেকে রাখা ফরয। সুতরাং মাথা খোলা রাখা অবস্থায় নামাজ পড়লে নামাজ হবে না।
(হালবী কাবীর)
নামাজের মধ্যে বাচ্চা মাথার কাপড় সরিয়ে দিলে।
পশ্ন: ছোট বাচ্চা নামাজের মাঝখানে মাথার কাপড় খুলে ফেললে নামাজ হবে কি?
উত্তর: তিন বার সুবহানাল্লাহ পড়া যায় এই পরিমাণ সময় যদি মাথা খোলা থাকে তাহলে নামাজ হবে না।
(ফতোয়ায়ে শামী)
শাড়ি পরে নামাজ পড়া
প্রশ্ন: শাড়ি কাপড় পরে বসে নামাজ পড়া যাবে কি?
উত্তর: নফল নামাজ বসে পড়ার অনুমতি আছে। তবে সওয়াব কম হবে। তবে ফরজ নামাজ বসে পড়লে নামাজ হবে না।
(ফতোয়ায়ে শামী)
মহিলাদের জন্য আযানের অপেক্ষা করা
প্রশ্ন: মহিলাদের জন্য নামাজের সময় হওয়ার পর আযানের অপেক্ষা করতে হবে কি?
উত্তর: মহিলাদের জন্য সময় হওয়ার পর প্রথম ওয়াক্তেই নামাজ পড়া উত্তম। তাদের আযানের অপেক্ষা করতে হবে না। তবে নামাজের ওয়াক্ত সম্পর্কে না জানলে আযানের অপেক্ষা করবে।
(ফতোয়ায়ে শামী)
নামাজের মধ্যে স্ত্রী স্বামীর ইকতেদা
প্রশ্ন: নামাজের মধ্যে স্ত্রী স্বামীর ইকতেদা করতে পারবে কি?
উত্তর: হ্যাঁ, স্বামীর পিছনে স্ত্রী নামাজ পড়তে পারবে তবে স্বামীর বরাবর দাড়াবে না বরং পেছনে দাঁড়াবে।
(বাদায়েয়ুস সানায়েহ)


মহিলাদের ইমামতি করা
প্রশ্ন: মহিলাদের জন্য ইমামতি করা জায়েয আছে কি?
উত্তর: মহিলারা পুরুষদের ইমামতি করতে পারবে না। তবে শুধু মহিলাদেরই ইমামতি করা মাকরুহ।
(আলমগীরীয়া)
মহিলাদের জুমার দিনের নামাজ
প্রশ্ন: মহিলারা জুমার দিন কত রাকাত পড়বে।
উত্তর: জুমার দিন অন্যান্য দিনের মতই যোহরের নামাজ পড়বে।
(ফতোয়ায়ে হিন্দিয়া)
মহিলাদের জন্য জুমা এবং ঈদের নামাজে শরীক হওয়া
প্রশ্ন: মহিলাদের জন্য জুমা এবং ঈদের নামাজে শরীক হওয়া জায়েয আছে কি?
উত্তর: মহিলাদের জন্য জুমা এবং ঈদের জামাতে শরীক হওয়া মাকরুহ। তাই তারা এগুলোতে শরীক হবে না।
(ফতোয়ায়ে শামী)
মহিলাদের জন্য মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়া
প্রশ্ন: বর্তমানে কিছু মহিলাদেরকে মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়তে দেখা যায় এটা জায়েয আছে কি?
উত্তর: মহিলাদের জন্য মসজিদে উপস্থিত হয়ে নামাজ আদায় করা মাকরুহ। কিন্তু যদি সেখানে পর্দার পরিবেশ থাকে তাহলে অনুমতি আছে। তবে না যাওয়াটাই উত্তম।
(ফতোয়ায়ে শামী)
মহিলাদের নামাজ সংক্রান্ত আরো কিছু মাসআলা
১- নামাজের সামনে দিয়ে কেউ যদি অতিক্রম করে আর তাকে বাধা দেওয়ার উদ্দেশ্য হয় তাহলে ডান হাতের আঙ্গুলের পিঠ বাম হাতের তালুর উপর মারবে। আর এক্ষেত্রে পুরুষরা সুবহানাল্লাহ বলবে।
(ফতোয়ায়ে হিন্দিয়া)
২- মহিলারা পুরুষদের ইমামতি করবে না।
(ফতোয়ায়ে হিন্দিয়া)
৩- মহিলাদের যদি ইমামতি করে তাহলে কাতারের মাঝখানে দাঁড়াবে। সামনে দাঁড়াবে না। তবে ইমামতি করা মাকরুহ।
(ফতোয়ায়ে হিন্দিয়া)
৪- ফেৎনা ফাসাদের কারণে মহিলাদের জন্য মসজিদের জামাতে শরীক হওয়া মাকরুহ।
(ফতোয়ায়ে হিন্দিয়া)
৫- মহিলারা যদি মসজিদে শরীক হয় তাহলে পুরুষ এবং বাচ্চাদের পিছনে দাঁড়াবে।
(ফতোয়ায়ে হিন্দিয়া)
৬- মহিলাদের উপর জুমার নামাজ ফরয নয়। তবে যদি জুমার নামাজে শরীক হয় তাহলে আদায় হয়ে যাবে। যোহর পড়তে হবে না।
(হেদায়া)
৭- মহিলাদের ঈদের নামাজ ওয়াজিব নয়।
(ফতোয়ায়ে হিন্দিয়া)
৮- মহিলাদের জন্য আয়্যামে তাশরীকের সময় তাকবিরে তাশরীক বলা ওয়াজিব নয়। (ফরয নামাজের পর)।
(বাহরুর রায়েক)
৯- মহিলাদের জন্য ফজরের নামাজ তাড়াতাড়ি পড়া মুস্তাহাব।
(ফতোয়ায়ে শামী)
১০- মহিলাদের জন্য নামাজে আওয়াজ করে তেলাওয়াত করার অনুমতি নেই। যদি আওয়াজ করে তেলাওয়াত করে নামাজ ফাসেদ হয়ে যাবে।
(ফতোয়ায়ে শামী)
১১- মহিলারা আযান দিবে না।
১২-মহিলারা মসজিদেতে কাজা পড়বে না। বরং তারা ঘরে কাজা করবে।
(ফতোয়ায়ে হিন্দিয়া)
সিজদায় মহিলাদের পা উঠে যাওয়া
প্রশ্ন: সিজদা থেকে উঠা ও যাওয়ার সময় মহিলাদের পা যদি জমিন থেকে উঠে যায় তাহলে তাদের নামাজ হবে কি?
উত্তর: হ্যাঁ, তাদের নামাজ হয়ে যাবে। তবে যদি পায়ের আঙ্গুলও উঠে যায় তাহলে নামাজ হবে না।
(ফতোয়ায়ে হিন্দিয়া)
সেজদা অবস্থায বাচ্চা ঘাড়ে কিংবা পিঠের উপর বসলে
প্রশ্ন: সেজদা অবস্থায় বাচ্চা যদি ঘাড়ে কিংবা পিঠের উপর বসে থাকে তাহলে কি করবে?
উত্তর: এ অবস্থায় যদি সম্ভব হয় তাহলে এক হাতে আস্তে করে বাচ্চাকে সরিয়ে দিয়ে সিজদা করে নিবে। এটাই উত্তম। অন্যথায় সিজদা লম্বা করবে।
(মেশকাতুল মাসাবিহ)
মহিলাদের সেজদা করার পদ্ধতি
প্রশ্ন: মহিলারা কীভাবে সিজদা করবে?
উত্তর: তারা উভয় পা ডান দিকে বের করে দিবে এবং এমনিভাবেই সিজদায় চলে যাবে।
(হালবী কাবীর)
ঋতুবতী মহিলার নামাজের সময়গুলোতে করণীয়
প্রশ্ন: মহিলারা ঋতু¯্রাবের সময়ের দিনগুলোতে নামাজের সময় কি করবে?
উত্তর: মহিলারা ঐ সময় ওজু করে তসবিহ ইত্যাদি পড়তে থাকবে। তাদের নামাজের অভ্যাস যাতে বজায় থাকে।
(আপকে মাসায়েল)


মহিলাদের সাদা স্রাবের বিধান
প্রশ্ন: মহিলাদের ঋতুশ্রাবের পূর্বে ও পরে যে সাদা শ্রাব দেখা যায় তা কি নাপাক? এ কারণে কি নামাজ-রোজা নিষেধ হবে?
উত্তর: উক্ত শ্রাব অবশ্যই নাপাক। কিন্তু এর কারণে গোসল ওয়াজিব হবে না। বরং ওজু করে নামাজ আদায় করবে এবং রোজাও রাখতে হবে।
(আপকে মাসায়েল)


গোসল ফরয অবস্থায় কুরআনের আয়াত টাইপ করা
প্রশ্ন: ওজুবিহীন কিংবা হায়েজ, নেফাজ ও অপবিত্র অবস্থায় কুরআন শরীফের আয়াত লিখা বা কম্পিউটারে টাইপ করা জায়েয আছে কি?
উত্তর: ওজুবিহীন কিংবা হায়েজ, নেফাস ও অপবিত্র অবস্থায় কুরআন লেখা বা কম্পিউটারে কম্পোজ করা জায়েয আছে। কেননা, এতে কুরআন শরীফ বা তার লিখিত আয়াত স্পর্শ করা হয় না। যা ওজুবিহিন বা হায়েজ, নেফাজ ও অপবিত্র অবস্থায় স্পর্শ করা নিষিদ্ধ।
(ফতোয়ায়ে শামী, হাশিয়াতুত তাহতাভী)


ঋতুস্রাব অবস্থায় কুরআনের আয়াত পড়া
প্রশ্ন: যে মহিলা প্রতিদিন ঘুমানোর পূর্বে পাচ কালিমা, আয়াতুল কুরসি, চার কুল এবং সুরায়ে ফাতেহা পড়ে ঘুমায়। এই মহিলা ঋতু¯্রাব অবস্থায় তা পড়তে পারবে কি?
উত্তর: ঋতুস্রাব অবস্থায় কুরআনের আয়াত ব্যতীত অন্যান্য দোয়া, কালিমা পড়া জায়েয আছে। আর যে সমস্ত কুরআনের আয়াতে দোয়া বা সানার অর্থ আছে সেগুলো দোয়ার উদ্দেশ্যে পড়া জায়েয আছে। সুতরাং যেহেতু সুরা ফাতেহা, চারকুল ও আয়াতুল কুরসীর মধ্যে দোয়া ও ছানার অর্থ আছে তাই এগুলোও দোয়ার উদ্দেশ্যে ঋতুস্রাব অবস্থায় পড়তে পারবে। তেলাওয়াতের উদ্দেশ্যে নয়।
(বাহরুর রায়েক)


নারীদের হায়েজ-নেফাস সংক্রান্ত মাসায়েল
প্রশ্ন: যদি মহিলাদের অসম্পূর্ণ গর্ভপাত হয় অর্থাৎ এমন মাংসপি- বের হয় যাতে এখানে কোন অঙ্গপ্রত্যঙ্গ প্রকাশ পায়নি কিংবা সামান্য প্রকাশ পেয়েছে। এর পরে যে রক্তশ্রাব হবে তা কি হায়েজ বা ঋতু¯্রাব হিসাবে গণ্য হবে না কি নেফাস হিসাবে?
উত্তর: ভ্রুণের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ প্রকাশিত না হলে এবং নিয়মিত মাসিক ছাড়া অসময়ে গর্ভপাত হলে অসুস্থতা জনিত রক্ত¯্রাব হিসেবে গণ্য হবে। আর ভ্রুণের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ প্রকাশিত হলে রক্তস্রাব হিসাবে গণ্য হবে।
(ফাতাওয়ায়ে হক্কানিয়া)


ইঞ্জেকশন বা ট্যাবলেট সেবনের মাধ্যমে ঋতুস্রাব বন্ধ রাখা
প্রশ্ন: বর্তমানে অনেক মহিলা ই্েঞ্জকশন বা ট্যাবলেট সেবনের মাধ্যমে ঋতুস্রাব বন্ধ রাখে। এর হুকুম কি? এভাবে ঋতুস্রাব বন্ধ করে নামাজ, রোজা ইত্যাদি আদায় করলে আদায় হবে কি?
উত্তর: বিশেষ কোন কারণ ছাড়া ইঞ্জেকশন বা ট্যাবলেট ইত্যাদির মাধ্যমে রক্তশ্রাব, নিফাস ও হায়েজ বন্ধ করা উচিৎ নয়। কারণ, ডাক্তারি মতে এটা বন্ধ করা শরীরের জন্য ক্ষতীকর। তবে এভাবে বন্ধ করলে নামাজ রোজা ইত্যাদি পালন করা তার জন্য আবশ্যক। কারণ, ঋতুস্রাব, প্রসূতি অবস্থার শ্রাবের রক্ত দেখা বা না দেখার উপর। যেহেতু ট্যাবলেট সেবন করলে রক্ত বন্ধ থাকে, তাই নামাজ রোজার হুকুম পালন করা আবশ্যক।
(হিন্দীয়া, এমদাদুল ফাতাওয়া)


ঋতুস্রাব অবস্থায় কুরআনের আয়াত লেখা
প্রশ্ন: অনেক সময় পরীক্ষার মধ্যে কুরআনের আয়াত এবং তার অর্থ লিখতে হয়। ঋতুবতি মেয়েরা এগুলো কীভাবে লিখবে?
উত্তর: পরীক্ষার মধ্যে ঋতুবতী মেয়েরা শুধু আয়াতের অর্থ এবং তার ব্যাখ্যা লিখবে।
(ফতোয়ায়ে শামী, এমদাদুল ফাতাওয়া)


অপারেশন হয়েছে এমন মহিলার নামাজ-রোজার হুকুম
প্রশ্ন: কোন মহিলার অপারেশনের মাধ্যমে বাচ্চা প্রশব হওয়ার কারণে যদি যৌনাঙ্গ দিয়ে রক্ত বের না হয় তাহলে উক্ত মহিলা নেফাসগ্রস্ত হিসাবে গণ্য হবে কি? তার নামাজ-রোজার হুকুম কি?
উত্তর: কোন মহিলাকে নেফাসগ্রস্ত তখনই বলা হবে, যখন তার বাচ্চা ভূমিষ্ট হওয়ার পর যৌনাঙ্গ দিয়ে রক্ত বের হবে। সুতরাং যদি কোন মহিলার সন্তান ভূমিষ্ট হওয়ার পর যৌনাঙ্গ দিয়ে রক্ত বের না হয় তাহলে সে নেফাসগ্রস্ত না এবং তার উপর নামাজ-রোজা আবশ্যক। সুতরাং কোন মহিলার অপারেশনের মাধ্যমে বাচ্চা হলে যদি যৌনিপথে রক্ত শ্রাব না হয় তাহলে সে নেফাসগ্রস্ত বলে গণ্য হবে না। তার উপর নামাজ-রোজা করা আবশ্যক।
(ফতোয়ায়ে হিন্দিয়া)


ঋতুস্রাব অবস্থায় দ্বীনি বই পড়া
প্রশ্ন: ঋতুস্রাব, নেফাস ও গোসল ফরয অবস্থায় দ্বীনি বই পড়তে পারবে কি?
উত্তর: প্রশ্নোক্ত অবস্থায় কুরআন শরীফ ব্যতীত অন্যান্য দ্বীনি বই পড়তে কোন বাধা নেই। পড়ার সময় কোন কাপড় ইত্যাদি ব্যতীত সরাসরী স্পর্শ করা মাকরুহ।
(ফাতহুল কাদির, বাহরুর রায়েক)


গর্ভবতীর যোনির রক্তের হুকুম
প্রশ্ন: গর্ভ অবস্থায় মহিলার যোনি পথ দিয়ে যদি রক্ত বের হয় তাহলে তাকি ঋতু শ্রাব বলে গণ্য হবে? সে ক্ষেত্রে নামাজ-রোজার হুকুম কি?
উত্তর: গর্ভ অবস্থায় যে রক্ত বের হয় তা ঋতুশ্রাবের রক্ত নয় বরং তা অসুস্থতার রক্ত। এর কারণে নামাজ রোজায় বাধা হবে না। বরং তা আদায় করতে হবে। (ফতোয়ায়ে হিন্দিয়া)


জুমার নামাজ
জুমার নামাজ মাদরাসায় পড়া
প্রশ্ন: মাদরাসার ভবনে জুমার নামাজ পড়লে কি সহীহ হবে?
উত্তর: জুমার নামাজ সহীহ হওয়ার জন্য জামে মসজিদ হওয়া জরুরি নয়। বিধায় সর্বসাধারণের প্রবেশের অনুমতি থাকলে মাদরাসার ভবনেও জুমার নামাজ সহীহ হবে। তবে শরয়ী মসজিদের সওয়াব পাবে না।
(ফাতাওয়ায়ে মাহমুদিয়া)


সংরক্ষিত স্থানে জুমার নামাজ
প্রশ্ন: সংরক্ষিত স্থানে যেখানে সর্বসাধারণের প্রবেশ নিষেধ। যেমন জেলখানা, বিমানবন্দর ইত্যাদি স্থানে জুমার নামাজ সহীহ হবে কি? যদি সহীহ হয় তাহলে ফুকাহায়ে কেরামের কথা জুমার নামাজ সহীহ হওয়ার জন্য “ইজনে আম” অর্থাৎ ‘জনসাধারণের অবাধ প্রবেশের অনুমতি ’র শর্ত করার দ্বারা উদ্দেশ্য কি?
উত্তর: ক) ইযনে আম ছাড়া জুমা সহীহ হওয়ার জন্য বাকী অন্য যে সমস্ত শর্ত রয়েছে তা যদি সংরক্ষিত স্থানে পাওয়া যায় তাহলে জুমা সহীহ হবে।
খ) ইযনে য়াম এর উদ্দেশ্য হলো যে স্থানে বিশেষ কোন কারণ ছাড়া জুমা আদায় করা হবে সে স্থানে সকলের আসার অনুমতি থাকতে হবে।
(উসমানিয়া)


মহিলাদের জন্য ঈদ ও জুমার নামাজের জামাতে শরীক হওয়া
প্রশ্ন: মহিলাদের জন্য ঈদ ও জুমার নামাজের জামাতে শরীক হওয়া জায়েয আছে কি?
উত্তর: যে সমস্ত নামাজ মহিলাদের উপর ফরজ ঐ সমস্ত নামাজের জামাতে শরীক হওয়াই তাদের জন্য মাকরুহ। ঈদ ও জুমার নামাজ তো তাদের উপর ফরয নয়। তাই এগুলোর জামাতে শরীক হওয়ার প্রশ্নই আসে না।
(মুসলিম শরীফ, হিন্দীয়া)


মসজিদে চেয়ারে বসে বয়ান করা
প্রশ্ন: মসজিদে চেয়ারে বসে বয়ান করা উত্তম না মিম্বারে?
উত্তর: জুমার নামাজের আগে বা পরে চেয়ারে বসে বয়ান করা উত্তম। এবং সুন্নাত। আর মিম্বারে বসে বয়ান করা সুন্নত পরিপন্থি।
(ফতোয়ায়ে রহিমিয়া)


মিম্বারে উঠে সালাম দেওয়া
প্রশ্ন: খতিব সাহেব মিম্বারে উঠে খুতবার পূর্বে মুসল্লিদেরকে সালাম দিতে পারবে কি?
উত্তর: খতিব সাহেব মিম্বারে উঠে খুতবার পূর্বে মুসল্লিদেরকে সালাম দিতে পারবে না। কারণ, সালাম হলো কথা বা কালামের অন্তর্ভুক্ত। আর এসময় কথা বলা নিষেধ।
(ফতোয়ায়ে মাহমুদিয়া)


খুতবার সময় থেকে লাঠি নেওয়া
প্রশ্ন: খুতবার সময় খতিবের জন্য হাতে লাঠি নেওয়া সুন্নত না বেদয়াত?
উত্তর: খুতবার সময় খতিবের জন্য হাতে লাঠি নেয়া সুন্নাতে যায়েদা। আর এটাকে আবশ্যক মনে করলে বেদয়াত হবে।
(আহসানুল ফাতাওয়া)


খুতবা চলাকালীন খতিব সাহেবের দিক নির্দেশনা দেওয়া
প্রশ্ন: খুতবা চলাকালীন খতিব সাহেব কোন মুসল্লিকে বাংলা ভাষায় বিশেষ কোন দিক নির্দেশনা দিতে পারে কি?
উত্তর: হ্যাঁ, বিশেষ প্রয়োজনে খতিব সাহেব খুতবা চলাকালীন কোন মুসল্লিকে নির্দেশ দিতে পারবেন। চাই সেটা বাংলা ভাষায় বা অন্য কোন ভাষায় হোক।
(ফতোয়ায়ে শামী)


খুতবা শেষ হওয়ার আগেই দাঁড়ানো
প্রশ্ন: খতিব সাহেব যখন জুমার দ্বিতীয় খুতবার শেষের দিকে পৌঁছে, দুই তিন বাক্য বাকী থাকে, তখন থেকে মুসল্লিরা দাঁড়াতে শুরু করে। এর হুকুম কি?
উত্তর: যেহেতু খুতবা নামাজের হুকুমে। নামাজের মধ্যে যেসকল কাজ করা মাকরুহ খুতবা চলাকালীন ঐ সকল কাজ করা মাকরুহ। সুতরাং খতীব সাহেব দ্বিতীয় খুতবা শেষ করে মিম্বর থেকে নামার আগ পর্যন্ত মুসল্লিদের নামাজের জন্য দাঁড়ানো মাকরুহ।
(ফাতাওয়ায়ে মাহমুদিয়া)


একজন খুতবা প্রদান অন্যজন নামাজ পড়ানো
প্রশ্ন: যদি একজন খুতবা দেয় আর আরেক জন জুমার নামাজ পড়ায় তাহলে কি নামাজ সহীহ হবে?
উত্তর: যদি একজন খুতবা দেন আর অপর জন জুমার নামাজ পড়ান এবং খুতবা শুনে থাকেন তাহলে নামাজ সহীহ হবে। তবে মুস্তাহাব হচ্ছে যে, একই ব্যক্তি খুতবা দিবে এবং নামাজ পড়াবে।
(ফাতাওয়ায়ে মাহমুদিয়া)


কিছুক্ষণ আরবিতে কিছুক্ষণ বাংলায় খুতবা দেওয়া
প্রশ্ন: কিছুক্ষণ আরবিতে কিছুক্ষল বাংলায় খুতবা দেওয়ার বিধান কি?
উত্তর: এভাবে খুতবা দেওয়া মাকরুহে তাহরিমী। কারণ, সম্পূর্ণ আরবিতে খুতবা দেওয়া সুন্নাতে মুয়াক্কাদা। যা নবী কারীম স. এর যুগ থেকে এ পর্যন্ত চলে এসেছে।
(ফাতাওয়ায়ে দারুল উলূম)


জুমার দিন যোহরের নামাজ জামাতে পড়া
প্রশ্ন: কোন কারণবশত কয়েক জন জুমার নামাজ পড়তে পারে নাই। তারা ঐ ওয়াক্তের নামাজ জামাতের সাথে পড়েছে। এখন প্রশ্ন হলো যোহরের নামাজ জামাতে পড়া উত্তম না একাকি পড়া উত্তম?
উত্তর: প্রশ্নোল্লেখিত সুরতে একাকি নামাজ পড়া উত্তম।
(বাহরুর রায়েক)


খুৎবার সময় হাত তুলে দোয়া করা
প্রশ্ন: জুমার দুই খুতবার মাঝে হাত উঠিয়ে মৌখিক দোয়া করা জায়েয আছে কি?
উত্তর: প্রশ্নোল্লেখিত সুরতে দোয়া করা মাকরুহ তবে মনে মনে দোয়া করতে পারবে।
(ফাতাওয়ায়ে হক্কানিয়া)

ঈদের নামাজ

মসজিদে ঈদের নামাজ পড়া

প্রশ্ন: কোন ওযর ব্যতীত ঈদের নামাজ মসজিদে পড়া কেমন?
উত্তর: কোন ওযর ব্যতীত ঈদের নামাজ মসজিদে পড়া মাকরুহ।

মহিলাদের জন্য ঘরে ঈদের নামাজ পড়া
প্রশ্ন: মহিলাদের জন্য ঘরে ঈদের নামাজ পড়া জায়েয আছে কি?
উত্তর: মহিলাদের উপর ঈদের নামাজ ওয়াজিব নয়। তাই তারা ঈদের নামাজ পড়বে না।
(হালবী কাবীর)

মহিলাদের জন্য ঈদগাহে যাওয়া।
প্রশ্ন: মহিলাদের জন্য ঈদগাহে গিয়ে নামাজ পড়া জায়েয আছে কি?
উত্তর: মহিলাদের জন্য ঈদগাহে গিয়ে নামাজ পড়া মাকরুহ।
(ফতোয়ায়ে শামী)

ঈদের নামাজে ইমাম কোন ভুল করলে
প্রশ্ন: ঈদুল ফিতরে বা ঈদুল আজহায় নামাজ পড়ানো অবস্থায় ইমাম সাহেব ভুল করলে নামাজ পুনরায় পড়তে হবে কি?
উত্তর: যদি এমন ভুল হয়, যে কারণে নামাজ ফাসেদ হয় না, তাহলে নামাজ দ্বিতীয় বার পড়ার প্রয়োজন নেই।
(ফতোয়ায়ে হিন্দিয়া)

ঈদের নামাজের তাকবির ভুলে গেলে
প্রশ্ন: ইমাম সাহেব যদি ঈদের নামাজে ছয় তাকবিরের কম বা বেশি বলে ফেলে তাহলে তার বিধান কি?
উত্তর: ঈদের নামাজে মুসল্লি যদি বেশি হয় তাহলে কোন সেজদায়ে সাহু করবে না। আর যদি মুসল্লি কম হয় তাহলে শেষে সেজদায়ে সাহু আদায় করবে।
(ফতোয়ায়ে শামী)

একজন ঈদের নামাজ পড়ানো আর অন্য জন খুতবা দেওয়া
প্রশ্ন: যদি ইমাম সাহেব ঈদের নামাজ পড়ান এবং অন্য জন খুতবা দেন তাহলে এতে কোন সমস্যা আছে কি?
উত্তর: না, নামাজে কোন সমস্যা হবে না।

খুতবা ব্যতীত ঈদের নামাজ পড়া
প্রশ্ন: যদি কোন ইমাম সাহেব ঈদের নামাজের পর ভুলে খুতবা না দেয় তাহলে নামাজ হবে কি?
উত্তর: ঈদের নামাজে খুতবা দেওয়া সুন্নাত। সুতরাং ঈদের নামাজ খেলাফে সুন্নাত হবে।
(ফতোয়ায়ে হিন্দিয়া)

ঈদের সুন্নাত ও মুস্তাহাবসমূহ

প্রশ্ন: ঈদের সুন্নাত ও মুন্তাহাবসমূহ কি কি?
উত্তর: ঈদের দিন তেরটি জিনিস সুন্নাত:- ১) গোসল করা। ২) মেসওয়াক করা। ৩) উত্তম কাপড় পরিধান করা। ৪) সুগন্ধি ব্যবহার করা। ৫) ঘুম থেকে তাড়াতাড়ি উঠা। ৬) পায়ে হেঁটে ঈদগাহে যাওয়া। ৭) ঈদগাহে যাওয়ার আগে মিষ্টি জাতীয় কিছু খাওয়া। ৮) ঈদগাহে যাওয়ার পূর্বে সদকায়ে ফিতর আদায় করা। ৯) ঈদগাহে গিয়ে ঈদের নামাজ আদায় করা। ১০) যে রাস্তায় যাবে সে রাস্তা ব্যতীত অন্য রাস্তায় আসা। ১১) প্রফুল্লতা ও আনন্দ প্রকাশ করা। ১২) তাকবির বলতে বলতে ঈদগাহে যাওয়া। (তাকবির ঈদুল ফিতরে আস্তে বলবে) ১৩) আগে আগে ঈদগাহে যাওয়া।
ঈদুল আজহার নামাজের পূর্বে কিছু না খাওয়া। চাই কুরবানী করুক বা না করুক। ঈদুল আজহার তাকবির জোড়ে পড়া সুন্নাত।

ঈদের রাতের ফজিলত
প্রশ্ন: উভয় ঈদের রাতের ফজিলত কি?
উত্তর: হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূল স. বলেন যে ব্যক্তি উভয় ঈদের রাতে সাওয়াবের আশায় জাগ্রত থাকে ইবাদত করে কিয়ামতের দিন তার অন্তর মৃত্যু বরণ করবে না। যে দিন ভয়ে সমস্ত মানুষের অন্তর মরে যাবে।
(মাসায়েলে ঈদাইন)

ঈদগাহে হারাম টাকা খরচ করা
প্রশ্ন: যে ঈদগাহে হারাম টাকা খরচ করা হয়েছে সেই ঈদগাহে নামাজ পড়ার বিধান কি?
উত্তর: এমন ঈদগাহে ঈদের নামাজ পড়া মাকরুহ।
(মাসায়েলে ঈদাইন)

ঈদের নামাজে তাকবির বলা
প্রশ্ন: ঈদের নামাজে দ্বিতীয় রাকাতে রুকুর তাকবির বলা কি?
উত্তর: ঈদের নামাজে দ্বিতীয় রাকাতে রুকুর তাকবির বলা ওয়াজিব।

ঈদ মোবারক বলা
প্রশ্ন: বর্তমানে ঈদের দিন ঈদ মোবারক বলার ব্যাপক প্রচলন রয়েছে। শরীয়তের দৃষ্টিতে এর কোন ভিত্তি আছে কি?
উত্তর: শরীয়তে এর কোন ভিত্তি নেই। গুরুত্যপূর্ণ মনে করে করলে মাকরুহ হবে। আর সাওয়াব মনে করে করলে বেদআত হবে। যা মারাত্মক গুনাহ।
(আহসানুল ফাতাওয়াহ)

সেজদায়ে তেলাওয়াত

সেজদায়ে তেলাওয়াতে বিলম্ব বরা
প্রশ্ন: যদি কোন ব্যক্তি সেজদার আয়াত তেলাওয়াত করে সাথে সাথে সেজদা আদায় না করে তাহলে কোনো গুনাহ হবে কি?
উত্তর: যদি সেজদার আয়াত তেলাওয়াতের পর সেজদার কথা স্মরণ না হয়। বরং আরো দুই তিন আয়াত পড়ার পর স্বরণ হয় এবং সেজদা করে নেয় তাহলে সেজদায়ে সাহু আবশ্যক হবে না। যদি তিন আয়াতের বেশি পড়ে ফেলে এরপর আদায় করে তাহলে সেজদায়ে সাহু আবশ্যক হবে। আর যদি সেজদাই না করে তাহলে গুনাহগার হবে। তার জন্য তাওবা ও এস্তেগফার করা আবশ্যক।
(ফতোয়ায়ে শামী)


রুকুর মধ্যে সেজদায় তেলাওয়াত
প্রশ্ন: ইচ্ছাকৃতভাবে বা ভুলে সেজদার আয়াত তেলাওয়াত করে রুকুতে চলে গেলে তেলাওয়াতে সেজদা আদায় হবে কি?
উত্তর: যদি নামাজের মধ্যে সেজদার আয়াত তেলাওয়াত করে ইচ্ছাকৃত বা ভুলে রুকুতে চলে যায় এবং রুকুতে সেজদায়ে তেলাওয়াতের নিয়ত করে বা না করে সর্বাবস্থায় তেলাওয়াতে সেজদা আদায় হয়ে যাবে।
(ফাতাওয়ায়ে তাতারখানিয়া)


সেজদায়ে তেলাওয়াতের স্থানে রুকু
প্রশ্ন: যদি কোন ব্যক্তি ফরজ নামাজে اقربسم ربك الذى خلقপড়ে এবং সুরা শেষে তেলাওয়াতে সেজদা না করে রুকুতে চলে যায় তাহলে কি নামাজের সেজদা দ্বারা সেজদায়ে তেলাওয়াতের সেজদা আদায় হয়ে যাবে?
উত্তর: যদি ঐ সুরা শেষ করে সেজদা না করে রুকুতে চলে যায় তাহলে তার সেজদায়ে তেলাওয়াত আদায় হয়ে যাবে।
(ফতোয়ায়ে শামী)


সেজদায়ে তেলাওয়াত নামাজের সেজদার মতই
প্রশ্ন: ফরজ নামাজে যদি সেজদায়ে তেলাওয়াত এসে যায় তাহলে কীভাবে আদায় করবে?
উত্তর: সেজদায়ে তেলাওয়াতের নিয়ম নামাজের সেজদার মতই। অর্থাৎ সেজদার আয়াত তেলাওয়াত করলে সাথে সাথে আল্লাহু আকবার বলে একটি সেজদা করে নিবে।
(ফতোয়ায়ে শামী)


সেজদায়ে তেলাওয়াতের কাজা
প্রশ্ন: কারো জিম্মায় যদি অনেক তেলাওয়াতে সেজদা বাকি থাকে তাহলে কি তার কাজা করতে হবে?
উত্তর: হ্যাঁ, কারো যদি একাধিক তেলাওয়াতে সেজদা বাকি থাকে তাহলে তার কাজা করতে হবে।
(হালবী কাবির)


তেলাওয়াতে সেজদা বিলম্ব করা
প্রশ্ন: তেলাওয়াতে সেজদা বিলম্ব করলে গুনাহ হবে কি?
উত্তর: তেলাওয়াতে সেজদা সাথে সাথে আদায় করা মুস্তাহাব। তবে বিলম্ব করলে মাকরুহ হবে।
(মারাকিল ফলাহ)


রেডিওতে সেজদার আয়াত শ্রবণ
প্রশ্ন: রেডিওতে সেজদার আয়াত শ্রবণ করলে সেজদা করতে হবে কি?
উত্তর: হযরত আশরাফ আলী থানভী র. বলেন রেডিওতে সেজদার আয়াত শ্রবণে সেজদা করা ওয়াজিব নয়।
(ফতোয়ায়ে শামী)


কোন ক্বারী সাহেবের আওয়ায রেকর্ড করা
প্রশ্ন: কোন ক্বারী সাহেবের সেজদার আয়াত রেকর্ড করে শ্রবণ করলে সেজদা করা ওয়াজিব হবে কি?
উত্তর: না, কোনো ক্বারী সাহেবের সেজদার আয়াত রেকর্ড করে শ্রবণ করলে সেজদা করা ওয়াজিব হবে না।
(মারাকিল ফালাহ)

কেসেটের মাধ্যমে কুরআন শরীফ তেলাওয়াত করা
প্রশ্ন: কেসেটের মাধ্যমে কুরআন শরীফ তেলাওয়াত করলে সওয়াব পাওয়া যাবে কি?
উত্তর: যদি নিজে কুরআন শরীফ না পড়তে পারে কেসেট ছেড়ে তার সাথে সাথে তেলাওয়াত করে তাহলে সে সওয়াব পাবে।
(ফাতাওয়ায়ে মাহমুদিয়া)


মনে মনে সেজদার আয়াত পড়া
প্রশ্ন: যদি কোনো ব্যক্তি সেজদার আয়াত মনে মনে পড়ে তাহলে তার ওপর সেজদা করা জরুরি কি?
উত্তর: মনে মনে সেজদার আয়াত পড়ার দ্বারা সেজদা করা ওয়াজিব হবে না। বরং মুখে পড়ার দ্বারা সেজদা করা ওয়াজিব হয়।
(ফতোয়ায়ে শামী)

সেজদার আয়াত লেখা
প্রশ্ন: সেজদার আয়াত লেখার দ্বারা সেজদা করা জরুরি কি?
উত্তর: যদি কোন ব্যক্তি সেজদার আয়াত লেখে বা অন্তরে চিন্তা করে তাহলে তার উপর সেজদা করা জরুরি নয়।
(ফতোয়ায়ে শামী)


সুরা “সদ” এর কোন আয়াতে সেজদা?
প্রশ্ন: সুরা “সদ” এর কত নাম্বার আয়াতটি সেজদার আয়াত?
উত্তর: সুরা “সদ” এর ২৫ নম্বর আয়াতটি সেজদার আয়াত। তবে যদি কোন ব্যক্তি ২৪ নাম্বার আয়াত واناب পড়ে সেজদা করে তাহলেও সেজদা সহীহ হবে।
(ফতোয়ায়ে শামী)


সেজদার আয়াত তেলাওয়াত করে শ্রবণকারীদের স্বরণ করিয়ে দেওয়া
প্রশ্ন: শ্রবণকারীদের অনেকেই যদি অমনোযোগী হয় তাহলে তাদেরকে স্বরণ করিয়ে দিতে হবে কি?
উত্তর: হ্যাঁ, শ্রবণকারীগণ যদি অমনোযোগি হয় তাহলে তাদেরকে সেজদার আয়াত সম্পর্কে অবগত করিয়ে দেওয়া চাই। তবে এ অবস্থায় সেজদার আয়াত আস্তে পড়বে।
( ফতোয়ায়ে শামী, ফাতাওয়ায়ে মাহমুদিয়া)


একটি সেজদার আয়াত বারবার পড়া
প্রশ্ন: কোন ব্যক্তি যদি একটি সেজদার আয়াত একাধিকবার তেলাওয়াত করে তার ওপর কয়টি সেজদা করা জরুরি?
উত্তর: যদি একই মজলিসে বসে একটি সেজদার আয়াত একাধিকবার তেলাওয়াত করে তাহলে একটি সেজদা ওয়াজিব হবে।
(মাজমাউল আনহুর)


সেজদায়ে তেলাওয়াতের শর্ত
প্রশ্ন: নামাজ সহীহ হওয়ার জন্য যে সমস্ত শর্ত রয়েছে সেজদায়ে তেলাওয়াত সহীহ হওয়ার ক্ষেত্রেও কি তা পালন করা আবশ্যক?
উত্তর: হ্যাঁ, নামাজের শর্তসমূহ সেজদায়ে তেলাওয়াতের জন্য আবশ্যক।
(বাদায়েয়ুস সানায়েহ)
সেজদায়ে তেলাওয়াত আদায় করার পদ্ধতি


প্রশ্ন: সেজদায়ে তেলাওয়াত আদায় করার পদ্ধতি কি?
উত্তর: যখন সেজদার আয়াত তেলাওয়াত করবে তখন যদি ওযু থাকে তাহলে সাথে সাথে সেজদা করে নিবে। তবে শর্ত হলো ঐ সময়টি মাকরুহ সময় না হতে হবে। আর যদি ওযু না থাকে তাহলে ওযু করে সেজদা করে নিবে। আর সেজদা করার পদ্ধতি হলো এই যে, ওযু সহকারে কেবলার দিকে মুখ করে তাকবির বলে সেজদায় চলে যাবে এবং সেজদায় তিন বার سبحان ربى الاعلى পড়ে তাকবির বলে উঠে যাবে।
(মারাকিল ফালাহ)


সেজদায়ে তেলাওয়াতের নিয়ত
প্রশ্ন: সেজদায়ে তেলাওয়াতের নিয়ত কীভাবে করবে?
উত্তর: সেজদায়ে তেলাওয়াতের নিয়ত এভাবে করবে যে, আমি সেজদায়ে তেলাওয়াত আদায় করছি। আরবিতে-
نويت ان اسجد الله تعالى سجدة التلاوة الله اكبر
(ফতোয়ায়ে হিন্দিয়া)


সেজদায়ে তেলাওয়াত কয়টি?
প্রশ্ন: সেজদায়ে তেলাওয়াতের ক্ষেত্রে কয়টি সেজদা করতে হয়?
উত্তর: সেজদায়ে তেলাওয়াতের ক্ষেত্রে একটি সেজদা করতে হয়।
(ফতোয়ায়ে শামী)

কুরআন শরীফ পড়া অবস্থায় সেজদায়ে তেলাওয়াত করা
প্রশ্ন: কুরআন শরীফ পড়া অবস্থায় সেজদায়ে তেলাওয়াত করতে হবে, না পরে করবে?
উত্তর: কুরআন শরীফ তেলাওয়াত করা আবস্থায়ও আদায় করা যায়। আবার পরেও আদায় করা যায়।
(হালবী কাবীর)

ওজর ও আসরের নামাজের পর সেজদা করা
প্রশ্ন: ওজর ও আসরের নামাজের পর সেজদায়ে তেলাওয়াত আদায় করা জায়েয আছে কি? .
উত্তর: ইমাম আবু হানিফা র. বলেন, ওজর ও আসরের নামাজের পর সেজদায়ে তেলাওয়াত আদায় করা জায়েয আছে।
(ফতোয়ায়ে হিন্দিয়া)

সেজদার আয়াত নামাজের বাইরে থেকে শ্রবণ করা
প্রশ্ন: যদি কোন ব্যক্তি নামাজের বাইরে থাকা অবস্থায় ইমাম সাহেব থেকে সেজদার আয়াত শুনতে পায় তাহলে তার উপরেও কি সেজদা করা ওয়াজিব?
উত্তর: হ্যাঁ, কোন ব্যক্তি যদি নামাজের বাইরে থাকা অবস্থায় ইমাম সাহেব থেকে সেজদার আয়াত শুনতে পায় তাহলে তার উপরেও সেজদা করা ওয়াজিব। (ফতোয়ায়ে হিন্দিয়া)

সুরা হজ্বে কয়টি সেজদা করতে হয়?
প্রশ্ন: সুরা হজ্ব তেলাওয়াতে দুইটি সেজদা দেখা যায়। দুইটিই কি আদায় করতে হবে?
উত্তর: হযরত ইমাম আবু হানিফা র. এর মতে সুরা হজ্বের দ্বিতীয় সেজদাটি তেলাওয়াতে সেজদা নয়। কেননা এই আয়াতে রুকু ও সেজদা উভয়টির আদেশ করা হয়েছে। সুতরাং শুধু প্রথম সেজদার আয়াত পড়লে সেজদা করে নিবে দ্বিতীয়টিতে করবে না।
(বাদায়েয়ুস সনায়েহ)

কুরআন শরীফে মোট কয়টি সেজদা আছে?
উত্তর: ইমাম আবু হনিফা র. এর নিকট পবিত্র কুরআন শরীফে মোট ১৪টি সেজদার আয়াত আছে। এবং প্রত্যেকটি আদায় করা ওয়াজিব।
(ফতোয়ায়ে হিন্দিয়া)

সেজদায়ে তেলাওয়াতের এলান করা
প্রশ্ন: তারাবির নামাজে সেজদায়ে তেলাওয়াতের এলান করা হয় যে, অমুক রাকাতে সেজদায়ে তেলাওয়াত আছে। শরীয়তে এর হুকুম কি?
উত্তর: সেজদায়ে তেলাওয়াতের জন্য এলান করার প্রয়োজন নেই। তবে মুক্তাদীদের সতর্কতার জন্য এলান করার অবকাশ রয়েছে।
(আপকে মাসায়েল আওর উনকা হল)

অসুস্থতা বশত ইশারায় সেজদায়ে তেলাওয়াত আদায় করার বিধান
প্রশ্ন: অসুস্থতা বসত ইশারায় সেজদায়ে তেলাওয়াত আদায় করলে কি তা আদায় হবে?
উত্তর: হ্যাঁ, অন্যান্য নামাজের মত অসুস্থতাবশত ইশারায় সেজদায়ে তেলাওয়াত আদায় হয়ে যাবে।
(ফাতাওয়ায়ে নাওয়াজেল)

তেলাওয়াতে সেজদা আদায় করার জন্য দাঁড়ানোর বিধান
প্রশ্ন: তেলাওয়াতে সেজদা আদায় করার জন্য দাঁড়ানোর বিধান কি?
উত্তর: তেলাওয়াতে সেজদা আদায় করার জন্য দাঁড়ানো মুস্তাহাব। ফরজ নয়।
(ফাতহুল কাদীর)

সিজদা ওয়াজিব হওয়া পরিমাণ সেজদার আয়াত
প্রশ্ন: সেজদার আয়াত কতটুকু পড়লে সেজদা ওয়াজিব হয়?
উত্তর: আয়াতে সেজদা পূর্ণ বা সেজদার বাক্যসহ আয়াতের অধিকাংশ পড়লে সিজদা ওয়াজিব হবে।
(ফতোয়ায়ে হিন্দিয়া)

যানবাহনে একটি সেজদার আয়াত কয়েক বার পড়া
প্রশ্ন: যানবাহনে একই সেজদার আয়াত যতবার পড়বে ততবারই কি সেজদা ওয়াজিব?
উত্তর: যানবাহন চলমান অবস্থায় একই সেজদার আয়াত যতবার পড়বে ততটি সেজদা ওয়াজিব হবে।
(আহসানুল ফাতাওয়া)

সেজদায়ে সাহু

সন্দেহের কারণে সেজদায়ে সাহু
প্রশ্ন: যদি কারো ওয়াজিব ছুটে যাওয়ার কারণে সন্দেহ হয় তাহলে তার সেজদায়ে সাহু আদায় করতে হবে কি?
উত্তর: শুধুমাত্র সন্দেহের কারণে সেজদায়ে সাহু আদায় করতে হবে না বরং না করা উচিৎ। যদি কেউ করে ফেলে তাহলে তার নামাজ হয়ে যাবে। দ্বিতীয় বার পড়তে হবে না।
(ফতোয়ায়ে শামী)

ইমাম সেজদায়ে সাহু করতে ভুলে গেলে
প্রশ্ন: ইমাম সাহেব যদি সেজদায়ে সাহু আদায় করতে ভুলে যান তাহলে মুসল্লিগণ কি তা আদায় করে নিবে?
উত্তর: যদি ইমাম সাহেবের ওপর ওয়াজিব হয় আর তা তিনি আদায় করতে ভুলে যান তাহলে মুক্তাদীদের উচিৎ তাকে স্বরণ করিয়ে দেওয়া। মুক্তাদীদের উপর সেজদায়ে সাহু করা ওয়াজিব নয়। তবে ঐ নামাজকে পুনরায় পড়া ওয়াজিব।
(ফতোয়ায়ে হিন্দিয়া)

সেজদায়ে সাহুর পর নামাজে শরীক হওয়া
প্রশ্ন: ইমামের সেজদায়ে সাহুর পর কেউ জামাতে শরীক হলে তার ইকতেদা সহীহ হবে কি?
উত্তর: হ্যাঁ, ইমাম সেজদায়ে সাহু করার পর কেউ জামাতে শরীক হলে তার ইকতেদা সহীহ হবে। সে বসে তাশাহহুদ পড়বে এবং ইমাম সালাম ফিরানোর পর দাঁড়িয়ে বাকী নামাজ পূর্ণ করবে।
(ফতোয়ায়ে হিন্দিয়া)

সেজদায়ে সাহু ওয়াজিব কিনা তা জানা না থাকলে
প্রশ্ন; যদি কারো নামাজে ভুল হয় কিন্তু তার জানা নেই যে, এধরনের ভুলের কারণে সেজদায়ে সাহু ওয়াজিব হয় কি না তাহলে তার করণীয় কি?
উত্তর: এমন ব্যক্তির জন্য সতর্কতামূলক সেজদায়ে সাহু করে নেয়া উত্তম।
(ফাতাওয়ায়ে দারুল উলূম দেওবন্দ)

চার রাকাত বিশিষ্ট নামাজের শেষ দুই রাকাতে সুরা মিলালে
প্রশ্ন: চার রাকাত বিশিষ্ট নামাজের শেষ দুই রাকাতে ভুলবশত সুরা মিলালে সেজদায়ে সাহু ওয়াজিব হবে কি?
উত্তর: না, সেজদায়ে সাহু করতে হবে না।
(ফাতাওয়ায়ে তাতারখানিয়া)

সুরা ফাতেহা একাধিক বার পড়া
প্রশ্ন: সুরা ফাতেহা একাধিক বার পড়লে সেজদায়ে সাহু করতে হবে কি?
উত্তর: হ্যাঁ, একই রাকাতে একাধিক বার সুরা ফাতেহা পড়লে সেজদায়ে সাহু করা আবশ্যক।
(ফতোয়ায়ে শামী)

জুমা ও ঈদের নামাজে সেজদায়ে সাহু।
প্রশ্ন: জুমা অথবা ঈদের নামাজে ভুলবশত কোনো ওয়াজিব ছুটে গেলে ইমামের করণীয় কি?
উত্তর: যদি জামাত এতো ছোট হয় যে, ইমাম সেজদায়ে সাহু করলে মুসল্লিরা বুঝতে পারবে। তাহলে সেজদায়ে সাহু করবে। আর যদি জামাত বড় হয় এবং মুসল্লিগণ বিভ্রান্তিতে পড়ার আশংকা হয় তাহলে সেজদায়ে সাহু করবে না।
(ফতোয়ায়ে শামী)

প্রথম বৈঠক না করলে
প্রশ্ন: যদি কেউ মাগরিবের নামাজে এক রাকাত পায় এবং বাকি নামাজ আদায় করতে গিয়ে মাঝের রাকাতে না বসে তথা প্রথম বৈঠক না করে। তাহলে তার উপর সেজদায়ে সাহু ওয়াজিব হবে কি?
উত্তর: প্রথম বৈঠক যদিও ওয়াজিব যা ছুটে যাওয়ার কারণে সেজদায়ে সাহু ওয়াজিব হয়। কিন্তু উল্লেখিত সুরতে ইসতেসনাহ বা ব্যতিক্রম। সুতরাং সেজদায়ে সাহু ওয়াজিব হবে না।
(ফতোয়ায়ে শামী)

কিসের কারণে সেজদায়ে সাহু ওয়াজিব হয়
প্রশ্ন: কোন কোন জিনিসের কারণে সেজদায়ে সাহু ওয়াজিব হয়?
উত্তর: সেজদায়ে সাহু ওয়াজিব হওয়ার মূল নীতি হল এই যে, অর্থাৎ ফরয ও ওয়াজিব বিলম্ব করার দ্বারা এবং ওয়াজিব ছেড়ে দেওয়ার দ্বারা। এসমস্ত কারণে সেজদায়ে সাহু ওয়াজিব হয়।
(আলমগিরী)

সেজদায়ে সাহু আদায় করা
প্রশ্ন: সেজদায়ে সাহু আদায় করার পদ্ধতি কি?
উত্তর: সেজদায়ে সাহু আদায় করার পদ্ধতি হলো, শেষ বৈঠকে শুধু তাশাহহুদ পড়ে ডান দিকে সালাম ফিরিয়ে দুইটি সেজদা করবে এবং পুনরায় তাশাহহুদ পড়বে, দরুদ শরীফ ও দোয়ায়ে মাছুরা পড়বে। এরপর সালাম ফিরাবে।
(ফতোয়ায়ে হিন্দিয়া)

নামাজে একটি সেজদা করলে
প্রশ্ন: নামাজের মধ্যে যদি স্বরণ হয় যে, একটি সেজদা ছুটে গেছে তাহলে এখন করণীয় কি?
উত্তর: যখন স্বরণ হবে তখন সেজদাটি করে নিবে এবং নিয়ম অনুযায়ী সেজদায়ে সাহু করে নিবে।
(ফতোয়ায়ে হিন্দিয়া)

ভুলে ফরয ছুটে গেলে
প্রশ্ন: নামাজের মধ্যে ভুলে কোন ফরয ছুটে গেলে করণীয় কি?
উত্তর: নামাজের মধ্যে ভুলে কোন ফরয ছুটে গেলে নামাজ পুনরায় পড়তে হবে।
(ফতোয়ায়ে হিন্দিয়া)

তৃতীয় রাকাতে ভুলে বসে গেলে
প্রশ্ন: যদি কোনো ব্যক্তি চতুর্থ রাকাত বিশিষ্ট নামাজের তৃতীয় রাকাতেও বসে যায় তাহলে তার উপর সেজদায়ে সাহু ওয়াজিব হবে কি?
উত্তর: হ্যাঁ, তার উপর সেজদায়ে সাহু ওয়াজিব হবে। সেজদায়ে সাহু না করলে নামাজ হবে না। পুনরায় পড়া ওয়াজিব।
(ফতোয়ায়ে শামী)

নামাজের মধ্যে রাকাত কম-বেশি
প্রশ্ন: যদি নামাজের মধ্যে এক রাকাত কম বা বেশি হয়ে যায় তাহলে সেজদায়ে সাহু ওয়াজিব হবে কি?
উত্তর: যদি কোন ব্যক্তি চার রাকাত বিশিষ্ট নামাজের তৃতীয় রাকাত পড়ে ভুলে সালাম ফিরিয়ে দেয় তাহলে দাঁড়িয়ে গিয়ে ঐ রাকাত পূর্ণ করবে। এবং সেজদায়ে সাহু আদায় করে নিবে। আর যদি চার রাকাত পড়ে না বসে ভুলে দাঁড়িয়ে যায়। তাহলে উচিৎ হলো ফিরে এসে সেজদায়ে সাহু করে নামাজ পূর্ণ করবে। আর যদি পঞ্চম রাকাত পড়ে ফেলে তাহলে তার ফরয বাতিল হয়ে যাবে। আরেক রাকাত পড়ে সেজদায়ে সাহু করে নামাজ পূর্ণ করে সালাম ফিরাবে। তার নামাজ নফল বলে গণ্য হবে। ফরয নামাজ পুনরায় পড়তে হবে।
(ফতোয়ায়ে হিন্দিয়া)

বিতিরের শেষ রাকাতে দোয়ায়ে কুনুত না পড়া
প্রশ্ন: বিতিরের শেষ রাকাতে দোয়ায়ে কুনুত না পড়ে রুকু করলে সেজদায়ে সাহু ওয়াজিব হবে কি?
উত্তর: হ্যাঁ, সেজদায়ে সাহু ওয়াজিব হবে। কারণ দোয়ায়ে কুনুত পড়া ওয়াজিব।
(ফতোয়ায়ে হিন্দিয়া)

প্রথম বৈঠকে দুরুদ শরীফ পড়া
প্রশ্ন: তিন রাকাত বা চার রাকাত বিশিষ্ট নামাজে প্রথম বৈঠকে দুরুদ শরীফ পড়ে ফেললে সেজদায়ে সাহু ওয়াজিব হবে কি?
উত্তর: হ্যাঁ, সেজদায়ে সাহু ওয়াজিব হবে।
(ফতোয়ায়ে হিন্দিয়া)

সেজদায়ে সাহু করতে ভুলে গেলে
প্রশ্ন: নামাজের মধ্যে সেজদায়ে সাহু ওয়াজিব হওয়া সত্ত্বেও ভুলে আদায় করতে না পারলে নামাজ হবে কি?
উত্তর: নামাজের মধ্যে সেজদায়ে সাহু ওয়াজিব হলে ভুলে তা আদায় করতে না পারলে নামাজ পুনরায় পড়া ওয়াজিব।
(ফতোয়ায়ে শামী)

মুক্তাদীর ভুলের কারণে সেজদায়ে সাহু
প্রশ্ন: নামাজের মধ্যে যদি কোন মুক্তাদী ভুল করে তাহলে এতে কি সেজদায়ে সাহু ওয়াজিব হবে?
উত্তর: না, মুক্তাদীর ভুলের কারণে ইমাম বা মুক্তাদী কারো সেজদায়ে সাহু করা ওয়াজিব হবে না।
(বাদায়েয়ুস সনায়েহ)

শেষ বৈঠকে শরীক মুক্তাদী ইমামের সাথে সেজদায়ে সাহু করা
প্রশ্ন: যে ব্যক্তি শেষ বৈঠকে ইমামের সাথে শরীক হয়েছে তারও কি ইমামের সাথে সেজদায়ে সাহু করতে হবে?
উত্তর: হ্যাঁ, সেও সেজদায়ে সাহু করবে। অন্যথায় গুনাহগার হবে।
(বাদায়েয়ুস সনায়েহ)
এক সুরা বাদ দিয়ে সামনে পড়া
প্রশ্ন: যদি কোন ব্যক্তি প্রথম রাকাতে ছোট সুরা আর দ্বিতীয় রাকাতে বড় সুরা তেলাওয়াত করে তাহলে কি সেজদায়ে সাহু ওয়াজিব হবে?
উত্তর: প্রথম রাকাতে ছোট সুরা যেমন সুরা কাউসার এবং দ্বিতীয় রাকাতে বড় সুরা যেমন কাফিরুন পড়লে মাকরুহ হবে। তবে সেজদায়ে সাহু ওয়াজিব হবে না।
(ফতোয়ায়ে হিন্দিয়া)

নামাজের মধ্যে সুরা পড়তে ভুলে গেলে সেজদায়ে সাহু
প্রশ্ন: চার রাকাত বিশিষ্ট নামাজের প্রথম দুই রাকাতে সুরা ফাতেহার সাথে অন্য সুরা মিলাতে ভুলে গেলে সেজদায়ে সাহু ওয়াজিব হবে কি?
উত্তর: প্রথম দুই রাকাতে সুরা ফাতেহার সাথে অন্য সুরা মিলানো ওয়াজিব। যদি কোন ব্যক্তি তা পড়তে ভুলে যায় তাহলে তার উপর সেজদায়ে সাহু ওয়াজিব হবে।
(ফতোয়ায়ে হিন্দিয়া)

নামাজে সুরা ফাতেহা ভুলবশত ছুটে গেলে
প্রশ্ন: কারো যদি নামাজে সুরা ফাতেহা ভুলবশত ছুটে যায় তাহলে তার উপর সেজদায়ে সাহু ওয়াজিব হবে কি?
উত্তর: প্রথম দুই রাকাতে সুরা ফাতেহা পড়া ওয়াজিব। সুতরাং কারো যদি প্রথম দুই রাকাতে সুরা ফাতেহা ছুটে যায় তাহলে তার উপর সেজদায়ে সাহু ওয়াজিব।
(ফতোয়ায়ে আলমগিরি)

মাসবুক ইমামের সাথে সালাম ফিরাবে
প্রশ্ন: মাসবুক ব্যক্তি ইমামের সেজদায়ে সাহুর সালামের সাথে সালাম ফিরালে তার নামাজের হুকুম কি?
উত্তর: মাসবুক ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে ইমামের সেজদায়ে সাহুর সালামের সাথে সালাম ফিরালে তার নামাজ ভেঙ্গে যাবে। আর যদি ভুলে সালাম ফিরায় তাহলে তার নামাজ ভঙ্গ হবে না এবং ভুলের কারণে তার উপর সেজদায়ে সাহু ওয়াজিব হবে না। কারণ সে মুক্তাদী আর মুক্তাদীর ভুলের কারণে সেজদায়ে সাহু ওয়াজিব হয় না।
(ফতোয়ায়ে শামী)

দোয়ায়ে কুনুত রুকুতে পড়া
প্রশ্ন: বিতিরের নামাজে দোয়ায়ে কুনুত পড়তে ভুলে গেলে রুকুতে পড়া যাবে কি? যদি পড়া যায় তাহলে এরপর পুনরায় রুকু করতে হবে কি? এবং সেজদায়ে সাহু করতে হবে কি?
উত্তর: বিতির নামাজের তৃতীয় রাকাতে রুকুর পূর্বে দোয়ায়ে কুনুত পড়া ওয়াজিব। সুতরাং কোন ব্যক্তি যদি দোয়ায়ে কুনুত পড়তে না পারে এবং রুকুতে তা স্বরণ হয় তাহলে রুকুতে দোয়ায়ে কুনুত পড়ার প্রয়োজন নেই। এবং রুকু থেকে উঠেও পড়ার প্রয়োজন নেই। বরং নামাজ সম্পূর্ণ করবে। আর যদি রুকু থেকে উঠে দোয়ায়ে কুনুত পড়েও ফেলে তাহলে পুনরায় রুকু করবে না। এবং সর্ব অবস্থায় সেজদায়ে সাহু ওয়াজিব হবে।
(ফাতাওয়ায়ে কাজীখান)

রুকুতে সুরা তেলাওয়াত করা
প্রশ্ন: রুকুতে কেউ সুরা তেলাওয়াত করলে তার নামাজের হুকুম কি?
উত্তর: রুকু-সেজদা কেরাত পাঠের জায়গা নয়। তাছাড়া এখানে কেরাত পাঠের দরুন তাখিরে রুকন হয়। তাই রুকুতে কেউ সুরা তেলাওয়াত করলে তার উপর সেজদায়ে সাহু ওয়াজিব হবে।
(ফাতাওয়ায়ে তাতারখানিয়া)

জানাযার নামাজে পঞ্চম তাকবির বলা
প্রশ্ন: যদি কোনো ইমাম জানাযার নামাজে তাকবির পাঁচটি বলে ফেলে তাহলে কি নামাজ পুনরায় পড়তে হবে?
উত্তর: না, কোনো ইমাম সাহেব যদি জানাযার নামাজে পঞ্চম তাকবির বলে ফেলে তাহলে নামাজ পুনরায় পড়তে হবে না।
(ফতোয়ায়ে শামী)

এশার নামাজের আগে বিতির পড়া
প্রশ্ন: কেউ ভুলে এশার নামাজের আগে বিতির পড়ে ফেলে তার বিতির পুনরায় পড়তে হবে কি?
উত্তর: না, কেউ ভুলে এশার নামাজের আগে বিতির পড়ে ফেললে তা পুনরায় পড়তে হবে না। কারণ তার ভুলের কারণে তারতিব রহিত হয়ে গেছে।
(ফতোয়ায়ে শামী)

প্রথম বৈঠকে দুরুদ শরীফ পড়া
প্রশ্ন: চার রাকাত বিশিষ্ট নামাজের প্রথম বৈঠকে কেউ দুরুদ শরীফের কিছু পড়ে ফেললে তার উপর কি সেজদায়ে সাহু ওয়াজিব হবে?
উত্তর: চার রাকাত বিশিষ্ট নামাজের প্রথম বৈঠকে কেউ যদি দুরুদ শরীফের কিছু অংশ যথা اللهم صلى على محمد পর্যন্ত পড়ে ফেলে তাহলে তার উপর সেজদায়ে সাহু ওয়াজিব হবে। (ফতোয়ায়ে কাজীখান)

রুকুতে তাশাহহুদ পড়া
প্রশ্ন: কেউ রুকুতে যাওয়ার পর রুকুর তাসবিহ এর পরিবর্তে আত্তাহিয়্যাতু পড়তে শুরু করলো এতে কি তার উপর সেজদায়ে সাহু ওয়াজিব হবে?
উত্তর: না, কেউ রুকুতে যাওয়ার পর রুকুর তাসবিহ পরিবর্তে আত্তাহিয়্যাতু পড়তে শুরু করলে তার উপর সেজদায়ে সাহু ওয়াজিব হবে না।
(ফতোয়ায়ে হিন্দিয়া)

দাঁড়ানো অবস্থায় আত্তাহিয়্যাতু পড়া
প্রশ্ন: যদি কোন ব্যক্তি দাঁড়ানো অবস্থায় কেরাতের স্থানে আত্তাহিয়্যাতু বা তাসবিহ পড়ে তাহলে তার উপর সেজদায়ে সাহু ওয়াজিব হবে কি?
উত্তর: হ্যাঁ, যদি কোন ব্যক্তি কেরাতের স্থানে আত্তাহিয়্যাতু বা তাসবিহ ইত্যাদি পড়ে ফেলে তাহলে তার উপর সেজদায়ে সাহু ওয়াজিব হবে।
(ফতোয়ায়ে হিন্দিয়া)

যোহর আসরে জোড়ে কেরাত পড়া
প্রশ্ন: যদি কোন ব্যক্তি যোহর বা আসরের নামাজে ভুলে সুরা ফাতেহা আওয়ায দিয়ে পড়তে শুরু করে তাহলে তার উপর সেজদায়ে সাহু ওয়াজিব হবে কি?
উত্তর: যদি তিন আয়াতের চেয়ে কম পড়ে তাহলে সেজদায়ে সাহু ওয়াজিব হবে না। এর চেয়ে বেশি পড়লে সেজদায়ে সাহু ওয়াজিব হবে। (ঐ)

তিনটি সেজদা করলে কি হুকুম
প্রশ্ন: যদি কোনো ব্যক্তি দুইটির জায়গায় তিনটি সেজদা করে ফেলে তাহলে তার উপর সেজদায়ে সাহু ওয়াজিব হবে কি?
উত্তর: হ্যাঁ, যদি কোনো ব্যক্তি ভুলে দুইটির জায়গায় তিনটি সেজদা করে ফেলে তাহলে তার উপর সেজদায়ে সাহু ওয়াজিব হবে।
(হালবী কাবীর)

তাকবির বলার স্থানে سمع الله لمن حمده বলা।
প্রশ্ন: যদি কোন ব্যক্তি তাকবির বলার স্থানে سمع الله لمن حمده বলে ফেলে তাহলে তার উপর সেজদায়ে সাহু ওয়াজিব হবে কি?
উত্তর: না, তাকবিরে তাহরিমা ব্যতীত অন্য তাকবির বলার স্থানে سمع الله لمن حمده বলে ফেলে, তাহলে সেজদায়ে সাহু ওয়াজিব হবে না।
(ফতোয়ায়ে হিন্দিয়া)

প্রথম বৈঠকের ব্যাপারে সন্দেহ সৃষ্টি হলে
প্রশ্ন: যদি কোন ব্যক্তি প্রথম বৈঠকের ব্যাপারে সন্দেহ করে (করেছে কি করে নি) তাহলে সে শেষে কি করবে?
উত্তর: যদি কারো প্রথম বৈঠকের ব্যাপারে সন্দেহ হয় তাহলে যদি গালেবে গুমান (প্রবল ধারনা) বৈঠক না করার ব্যাপারে হয়। তাহলে শেষে সে সেজদায়ে সাহু করে নিবে। আর যদি প্রথম বৈঠক করার ব্যাপারে গালেবে গুমান হয় তাহলে সেজদায়ে সাহু করবে না।
(ফতোয়ায়ে শামী)

উভয় দিকে সালাম ফিরানোর পর সেজদায়ে সাহু করা
প্রশ্ন: যদি কোন ব্যক্তি ডানে-বামে সালাম ফিরানোর পর সেজদায়ে সাহু করে তাহলে তার নামাজ হবে কি?
উত্তর: যদি ভুলে উভয় দিকে সালাম ফিরিয়ে দেয় তাহলে সেজদায়ে সাহু করতে পারবে। তবে শর্ত হলো নিজ স্থান থেকে না উঠতে হবে (কেবলা পরিবর্তন না করতে হবে)।
(ফতোয়ায়ে শামী)

দোয়ায়ে কুনুত ভুলে গেলে
প্রশ্ন: বিতির নামাজে দোয়ায়ে কুনুত পড়তে ভুলে গেলে নামাজ সহীহ হবে কি?
উত্তর: বিতির নামাজে দোয়ায় কুনুত পড়তে ভুলে গেলে শেষে সেজদায়ে সাহু করে নিবে তাহলে নামাজ সহীহ হয়ে যাবে।
(ফতোয়ায়ে হিন্দিয়া)

আত্তাহিয়্যাতু পড়ার পর ভুল হলে
প্রশ্ন: আত্তাহিয়্যাতু পড়ার পর যদি কোনো ভুল হয়ে যায় তাহলে সেজদায়ে সাহু ওয়াজিব হবে কি?
উত্তর: না, আত্তাহিয়্যাতু পড়ার পর কোনো ভুল হয়ে গেলে সেজদায়ে সাহু ওয়াজিব হবে না। বরং সালাম ফিরিয়ে নামাজ শেষ করবে।
(ফতোয়ায়ে শামী)

বিতির নামাজের প্রথম বৈঠক করা
প্রশ্ন: বিতির নামাজের প্রথম বৈঠক করা কি ওয়াজিব?
উত্তর: হ্যাঁ, বিতির নামাজের প্রথম বৈঠক করাও ওয়াজিব। যদি বৈঠক করা ভুলে যায় তাহলে সেজদায়ে সাহু ওয়াজিব হবে।
(ফতোয়ায়ে হিন্দীয়া, হেদায়া)

আত্তাহিয়্যাতুর স্থানে সুরা পড়া
প্রশ্ন: যদি কোন ব্যক্তি আত্তাহিয়্যাতুর স্থানে কোন সুরা পড়ে তাহলে তার উপর সেজদায়ে সাহু ওয়াজিব হবে কি?
উত্তর: হ্যাঁ, যদি কোন ব্যক্তি আত্তাহিয়্যাতুর স্থানে কোন সুরা পড়ে তাহলে তার উপর সেজদায়ে সাহু ওয়াজিব হবে।
(ফতোয়ায়ে হিন্দিয়া)

মাসবুকের নামাজ

মাসবুকের পরিচয়

প্রশ্ন: মাসবুক কাকে বলে?
উত্তর: যে ব্যক্তির ইমামের সাথে কিছু নামাজ ছুটে গেছে বাকি নামাজগুলো ইমামের সাথে পড়েছে তাকে মাসবুক বলে। যেমন- কোন ব্যক্তি ইমামের সাথে এসে দ্বিতীয় রাকাতে শরীক হয়েছে তাকেই মাসবুক বলে।
(হালবী কাবীর)

লাহেকের পরিচয়
প্রশ্ন: লাহেক কাকে বলে?
উত্তর: যে ব্যক্তি প্রথম থেকে ইমামের সাথে শরীক ছিল কিন্তু কোন কারণ বশত পরের রাকাতগুলো ইমামের সাথে থাকতে পারে নি। তাকেই লাহেক বলে। যেমন- কোন ব্যক্তি প্রথম থেকে ইমাম সাহেবের সাথে ছিল কিন্তু কোন কারণবশত ইমাম সাহেবের সাথে থাকতে পারে নি তাকেই লাহেক বলে।
(হালবীয়ে কবীর)

মাসবুক ব্যক্তির নামাজ আদায় করার তরিকা
প্রশ্ন: মাসবুক ব্যক্তি কীভাবে নামাজ আদায় করবে?
উত্তর: যার এক বা দুই রাকাত ছুটে গেছে তাকেই মাসবুক বলে। আর মাসবুকের হুকুম হলো, ইমাম সালাম ফিরানোর দিক থেকে প্রথমে। সুতরাং মাসবুক প্রথম রাকাতে সানা, তাওয়ায়ুয, তাসমিয়া, সুরা ফাতিহা ও তার সাথে অন্য সুরা পড়বে এবং দ্বিতীয় রাকাতে বিসমিল্লাহসহ সুরা ফাতিহা ও অন্য সুরা পড়বে এবং তৃতীয় রাকাতে শুধু সুরা ফাতেহা পড়বে অন্য সুরা পড়বে না। আর বসার দিক থেকে এটা হলো পরের রাকাত। সুতরাং যদি কোন রাকাত পড়া থাকে তাহলে আরেক রাকাত পড়ে বৈঠক করবে। আর এটা তার প্রথম বৈঠক হবে। অত:পর দুই রাকাত পড়ে শেষ বৈঠক করবে।
(ফতোয়ায়ে হিন্দিয়া)

ফরয নামাজের শেষ রাকাতে শরীক হলে বাকী নামাজ আদায় করার পদ্ধতি
প্রশ্ন: যদি কোনো ব্যক্তি চার রাকাত বিশিষ্ট নামাজের শেষ রাকাতে শরীক হয় তাহলে সে বাকী নামাজ কীভাবে আদায় করবে?
উত্তর: উক্ত ব্যক্তি ইমামের সালাম ফিরানোর পর এক রাকাত পড়ে বৈঠক করবে। এরপর দুই রাকাত পড়ে পুনরায় বৈঠক করবে। উক্ত ব্যক্তি প্রথমে যে রাকাত পড়বে ঐ রাকাতে সানা (সুবহানাকা আল্লাহুম্মা) পড়বে এবং আন্যান্য সুরা পড়বে। দ্বিতীয় রাকাতে শুধু আলহামদু লিল্লাহ সুরা ও অন্যান্য সুরা পড়বে। তৃতীয় রাকাতে শুধু সুরা ফাতেহা পড়বে।
(হালবী কাবীর)

মাসবুক ইমাম সাহেবের পিছনে কত রাকাতের নিয়ত করবে
প্রশ্ন: মাসবুক ব্যক্তি ইমাম সাহেবের পিছনে কত রাকাতের নিয়ত করবে?
উত্তর: মাসবুক ব্যক্তি ইমাম সাহেবের পিছনে ইমামের ইকতেদার নিয়ত করবে। রাকাত নির্দিষ্ট করার প্রয়োজন নেই। বরং ছুটে যাওয়া নামাজগুলো ইমাম সাহেব সালাম ফিরানোর পর পড়ে নিবে।
(হিন্দিয়া)

রুকুতে শরীক হওয়া ব্যক্তি নিয়ত ও সানা ব্যতীত শরীক হতে পারবে
প্রশ্ন: যদি কোন ব্যক্তি ইমাম সাহেবকে রুকুতে এসে পায় তাহলে তার কি সানা ও নিয়ত করতে হবে?
উত্তর: না, যদি কোন ব্যক্তি ইমাম সাহেবকে রুকুতে পেয়ে যায় তাহলে সানা ও নিয়ত করার প্রয়োজন নেই। বরং এসেই তাকবির বলে রুকুতে চলে যাবে। আর নিয়ত মনে মনে করে নিবে।
(বাহরুর রায়েক/ফতোয়ায়ে হিন্দিয়া)

মাগরিবের তৃতীয় রাকাতে শরীক হলে কীভাবে নামাজ আদায় করবে।
প্রশ্ন: যদি কোন ব্যক্তি মাগরিবের তৃতীয় রাকাতে শরীক হয় তাহলে সে কীভাবে নামাজ আদায় করবে?
উত্তর: উক্ত ব্যক্তি প্রথম রাকাতে সানা, সুরা ফাতেহা ও অন্য একটি সুরা পড়বে। এর পর বৈঠক করবে এবং শুধু আত্তাহিয়্যাতু পড়ে দাঁড়িয়ে যাবে। দ্বিতীয় রাকাতে সুরা ফাতেহা ও অন্য একটি সুরা পড়বে এবং শেষ বৈঠক করবে। তাতে আত্তাহিয়্যাতু, দুরুদ শরীফ ও দোয়ায়ে মাসুরা পড়ে সালাম ফিরাবে।
(হালবী কাবীর)

মাসবুক ব্যক্তি ইমামের শেষ বৈঠকে আত্তাহিয়্যাতু পড়বে
প্রশ্ন: মাসবুক ব্যক্তির ইমামের শেষ বৈঠকে কি কি পড়তে হবে?
উত্তর: মাসবুক ইমাম সাহেবের শেষ বৈঠকে শুধু আত্তাহিয়্যাতু পড়বে। উত্তম হলো এমনভাবে পড়া যাতে ইমাম সাহেবের সালাম ফিরানে পর্যন্ত পড়তে পারে।
(ফতোয়ায়ে হিন্দিয়া)

মাসবুক ইমামের সাথে সালাম ফিরায়
প্রশ্ন: মাসবুক যদি ভুলে ইমামের সাথে সালাম ফিরিয়ে ফেলে তাহলে বাকি নামাজ কিভাবে আদায় করবে জানালে উপকৃত হবো।
উত্তর: ভুলে যদি ইমামের সাথে সালাম ফিরিয়ে ফেলে, তাহলে দাঁড়িয়ে বাকি নামাজ পূর্ণ করবে। সেজদায়ে সাহু করার প্রয়োজন নেই। আর যদি ইমাম সাহেবের নামাজ শেষ হওয়ার পর সালাম ফিরায় তাহলে নামাজ পূর্ণ করে সেজদায়ে সাহু আদায় করতে হবে।
(বাদায়েয়ুস সানায়ে)

মাসবুক কখন দাঁড়াবে
প্রশ্ন: মাসবুক ব্যক্তি নামাজ আদায় করার জন্য কখন দাঁড়াবে?
উত্তর: ইমাম সাহেব যখন দ্বিতীয় সালাম ফিরানো শুরু করবে তখন মাসবুক ব্যক্তি দাঁড়িয়ে যাবে। প্রথম দিকে সালাম ফিরানোর সাথে সাথে দাঁড়াবে না। কারণ, হতে পারে ইমাম সাহেবের সিজদায়ে সাহু ওয়াজিব আছে।
(বাদায়েয়ুস সানায়ে)

মাসবুক ইমাম সাহেবের সালাম ফিরানোর পর তাকবির বলা
প্রশ্ন: ইমাম সাহেবের সালাম ফিরানের পর মাসবুক কি তাকবির বলে নামাজে দাঁড়াবে?
উত্তর: হ্যাঁ, ইমাম সাহেব সালাম ফিরানোর পর মাসবুক তার নামাজ পূর্ণ করার জন্য তাকবির দিয়ে দাঁড়িয়ে যাবে।
(বাদায়েয়ুস সানায়ে)

ইমাম পঞ্চম রাকাতের জন্য দাঁড়িয়ে গেলে মাসবুকের করণীয়
প্রশ্ন: ইমাম পঞ্চম রাকাতের জন্য দাঁড়িয়ে গেলে মাসবুক শেষ বৈঠক করার পর কি করবে?
উত্তর: ইমাম যদি শেষ বৈঠকের পর দাঁড়িয়ে যায় তাহলে মাসবুক ইমামের অনুসরণ করা থেকে বিরত থাকবে। অপেক্ষা করবে ইমাম যদি পঞ্চম রাকাতের সেজদার আগে ফিরে আসে তাহলে তার অনুসরণ করবে। নিয়মানুযায়ী নামাজ আদায় করবে। আর শেষ বৈঠক না করে ইমাম দাঁড়িয়ে গেলে সেও দাঁড়িয়ে যাবে। তবে এতে ফরয নামাজ নফল হয়ে যাবে।
(ফতোয়ায়ে শামী)

দ্বিতীয় রাকাতে শেষ সেজদায় ঘুমিয়ে পড়লে
প্রশ্ন: জামাতে নামাজ পড়াকালীন কেউ যদি দ্বিতীয় রাকাতের শেষ সেজদায় গিয়ে ঘুমিয়ে পড়ে। পরে ইমাম সাহেবের সালামের আওয়াযে উঠে বসে দ্রুত আত্তাহিয়্যাতু পড়ে সালাম ফিরায় তাহলে এতে তার নামাজ সহীহ হবে কি?
উত্তর: হ্যাঁ, ঐ ব্যক্তির নামাজ হয়ে যাবে। (ফতোয়ায়ে হিন্দিয়া)

লাহেক ব্যক্তির মেসওয়াক করা
প্রশ্ন: লাহেক ব্যক্তি ওজু করার সময় মেসওয়াক করতে পারবে কি?
উত্তর: হ্যাঁ, লাহেক ব্যক্তির ওযু করার সময় মেসওয়াক করেত পরবে।
(ফতোয়ায়ে শামী)

ইমামকে রুকুতে পাওয়া
প্রশ্ন: ইমামকে কতটুকু সময় রুকুতে পেলে রাকাত পাওয়া হিসাবে গণ্য হবে?
উত্তর: যদি কোন ব্যক্তি ইমামকে শুধু রুকুর কাছাকাছি পায় কিন্তু সে রুকুর তাসবীহ পড়তে পারলো না এরপরও সে ইমামের অনুসরণ করে দাঁড়িয়ে যাবে। ( ফতোয়ায়ে মাহমুদিয়া)

মাসবুকের বাকি নামাজ আদায় করতে গিয়ে ভুল হলে
প্রশ্ন: মাসবুক তার নামাজ আদায় করতে গিয়ে তার উপর সেজদায়ে সাহু ওয়াজিব হলে তা আদায় করতে হবে কি?
উত্তর: হ্যাঁ, মাসবুক তার অবশিষ্ট নামাজ আদায় করতে গিয়ে সেজদায়ে সাহু ওয়াজিব হলে তা আদায় করা তার উপর আবশ্যক। কারণ, এক্ষেত্রে সে একা একা নামাজ আদায়কারীর হুকুমে।
(ফতোয়ায়ে শামী)

মাসবুকের উপর সেজদায়ে সাহু ওয়াজিব হলে
প্রশ্ন; মাসবুক যদি ইমামের সাথে সেজদায়ে সাহু আদায় না করে দাঁড়িয়ে যায় এবং তার অবশিষ্ট নাামজেও সেজদায়ে সাহু ওয়াজিব হয় তাহলে তার উপর কয়টি সেজদা করা আবশ্যক হবে?
উত্তর: প্রশ্নোক্ত সুরতে উক্ত মাসবুকের উপর একটি সেজদায়ে সাহু ওয়াজিব হবে। তবে ইমাম সাহেবের সাথে সেজদায়ে সাহু আদায় না করার কারণে তার গুনাহ হবে। (ফতোয়ায়ে শামী)

মাসবুক আত্তাহিয়্যাতু পুরো করবে
প্রশ্ন: যদি মাসবুক শেষ বৈঠকে শরীক হয় এবং আত্তাহিয়্যাতু পূর্ণ করার আগেই ইমাম সাহেব সালাম ফিরিয়ে দেয় তাহলে মাসবুক কি আত্তাহিয়্যাতু পূর্ণ করবে?
উত্তর: প্রশ্নোক্ত সুরতে মাসবুকের জন্য আত্তাহিয়্যাতু পূর্ণ করা উত্তম। তথাপি উক্ত ব্যক্তি যদি আত্তাহিয়্যাতু পূর্ণ না করে তার উপর সেজদায়ে সাহু ওয়াজিব হবে না।
(ফতোয়ায়ে হিন্দিয়া)
মাসবুক কখন সানা পড়বে
প্রশ্ন: মাসবুক কখন সানা পড়বে?
উত্তর: মাসবুক যখন ইমাম সাহেবের সাথ শরীক হবে তখন যদি ইমাম সাহেব কেরাত না পড়ে থাকে তাহলে ঐ সময়ই সানা পড়বে। আর যদি ইমাম সাহেব ঐ সময় কেরাত পড়তে থাকে তাহলে সানা পড়বে না। কিন্তু যদি ইমাম সাহেব কেরাত আস্তে পড়তে থাকে যেমন যোহর ও আসরের নামাজ, তাহলে ঐ সময় সানা পড়বে। তবে সর্বাবস্থায় নিজের নামাজ শুরু করার সময় দ্বিতীয় বার সানা, তায়াওয়ুয ও তাসমিয়া (আউযুবিল্লাহ ও বিসমিল্লাহ) পড়বে। (ফতোয়ায়ে হিন্দিয়া)

মাসবুক থেকে ফরয ছুটে গেলে
প্রশ্ন: যদি মাসবুক থেকে কোন ফরয ছুটে যায় আর তা আদায় না করে, তাহলে তার নামাজ সহীহ হবে কি?
উত্তর: প্রশ্নোক্ত সুরতে উক্ত মাসবুকের নামাজ দ্বিতীয় বার আদায় করতে হবে।
(ফতোয়ায়ে শামী)

মাসবুকের ইকতেদা করা
প্রশ্ন: মাসবুকের নামাজ আদায় করলে যদি কোন ব্যক্তি এসে মাসবুকের ইকতেদার নিয়ত করে তাহলে তার ইকতেদা করা সহীহ হবে কি?
উত্তর: প্রশ্নোক্ত সুরতে ঐ ব্যক্তির ইকতেদা করা সহীহ হবে না। কারণ, মাসবুক সে নিজেই অন্য ইমামের মুক্তাদী। আর যে অন্য ইমামের মুক্তাদী সে অন্য মুক্তাদীর ইমাম হতে পারে না।
(খুলাসাতুল ফাতাওয়া)

এক মাসবুক অন্য মাসবুককে দেখে নামাজ পূর্ণ করা
প্রশ্ন: যদি দুজন ব্যক্তি এসে এক সাথে জামাতে শরীক হয় এবং কিছু রাকাত ছুটে যায় তাহলে কত রাকাত ছুটে গেছে তা যদি কারো খেয়াল না থাকে তাহলে সে কিভাবে নামাজ পড়বে?
উত্তর: প্রশ্নোক্ত সুরতে উক্ত ব্যক্তির যদি রাকাতের ব্যাপারে সন্দেহ সৃষ্টি হয় তাহলে সে তার সাথীর প্রতি লক্ষ্য রেখে তার মত নামাজ পড়ে নিজের নামাজ পূর্ণ করবে। সেক্ষেত্রে তার নামাজও সহীহ হয়ে যাবে। তবে খেয়াল রাখতে হবে সে যেন নিজের সাথীকে ইমাম মনে না করে। যেমন তার সাথী রুকু করলে সেও সাথে সাথে রুকু করলো, সেজদা করলে সেও সাথে সাথে সেজদা করলো। এভাবে নামাজ পড়লে নামাজ হবে না। এই নামাজ দ্বিতীয় বার পড়তে হবে।
(ফতোয়ায়ে শামী)

মাসবুক যদি বৈঠক না করে
প্রশ্ন: কেউ যদি মাগরিবের নামাজ ইমাম সাহেবের সাথে এক রাকাত পায় আর দুই রাকাত ছুটে যায় এবং ইমাম সাহেবের সালাম ফিরানোর পর নিজের ছুটে যাওয়া নামাজ আদায় করতে গিয়ে প্রথম বৈঠক না করে তাহলে তার নামাজের হুকুম কি?
উত্তর: প্রশ্নোক্ত সুরতে উক্ত ব্যক্তির জন্য ছুটে যাওয়া দুই রাকাত আদায় করার সময় উভয় রাকাতের শেষে বৈঠক করা জরুরি হবে। যেহেতু সে প্রথম বৈঠক আদায় করে নি তাই তার ওপর সেজদায়ে সাহু আদায় করা আবশ্যক।
(ফতোয়ায়ে শামী)

মুস্তাহাব ছুটে গেলে
প্রশ্ন: নামাজে মুস্তাহাব ছুটে গেলে নামাজ হবে কি?
উত্তর: হ্যাঁ, নামাজ হয়ে যাবে। তবে ইচ্ছাকৃতভাবে মুস্তাহাব ছেড়ে দেওয়া ঠিক নয়।
(ফতোয়ায়ে শামী)

মুস্তাহাব নামাজের সময়

প্রশ্ন: কোন কোন সময় নামাজ পড়া মুস্তাহাব?
উত্তর:
১) বিতিরের নামাজের পর দুই রাকাত।
২) ওযু করার পর দুই রাকাত। যদি মাকরুহ ওয়াক্ত না হয়।
৩) সফরে বের হওয়ার সময় দুই রাকাত।
৪) এস্তেখারার দুই রাকাত।
৫) আওয়াবীনের ছয় রাকাত।
৬) সালাতুল হাজতের দুই রাকাত।
৭) সালাতুত তাসবিহের দুই রাকাত।
৮) সালাতুত তওবার দুই রাকাত।
৯) জিহাদে বের হওয়ার পূর্বে দুই রাকাত।
১০) তাহিয়াতুল মসজিদ দুই রাকাত। এই নামাজ গুলো মুস্তাহাব নামাজ।
(বুখারী শরীফ)

নামাজ ছেড়ে দেওয়ার ওযরসমূহ

সম্পদের ক্ষতি হলে নামাজ ছেড়ে দেওয়া জায়েয

প্রশ্ন: কত টাকা সমমূল্যের মাল-সম্পদ চুরি হওয়ার আশংকা হলে নামাজ ছেড়ে দেওয়া জায়েয আছে?
উত্তর: এক দেরহাম পরিমাণ মাল-সম্পদ চুরি হওয়ার আশংকা হলে নামাজ ছেড়ে দেওয়া জায়েয আছে। উল্লেখ্য, রুপার ভরি হিসেবে এক দিরহাম এর বর্তমান আনুমানিক মূল্য প্রায় ২১০/- (দুইশত দশ) টাকা।
(ফতোয়ায়ে হিন্দিয়া)

নামাজে হারানো বস্তু স্বরণ হলে
প্রশ্ন: যদি কারোর নামাজে হারানো বস্তুর কথা স্বরণ হয় তাহলে কি নামাজ ছেড়ে দেওয়া জায়েয আছে?
উত্তর: যদি নামাজে কারো হারানো বস্তুর কথা স্বরণ হয় এবং নামাজ শেষে তা না পাওয়ার প্রবল ধারণা হয়, তাহলে নামাজ ছেড়ে সে বস্তুটি গ্রহণ করার অনুমতি আছে।
(ফতোয়ায়ে শামী)

কারো জীবন রক্ষার্থে নামাজ ছেড়ে দেওয়া
প্রশ্ন: এক ব্যক্তি অসুস্থ অবস্থায় আছে এবং তার পাশে একজন পুরুষ ও একজন মহিলা আছে। কিন্তু পুরুষ ব্যক্তি নামাজে নিয়ত বাধার পর মহিলাটি চিৎকার দেওয়া শুরু করলো যে, অসুস্থ ব্যক্তিটি মারা যাচ্ছে, এমতাবস্থায় ঐ ব্যক্তির জন্য নামাজ ছেড়ে দেওয়ার অনুমতি আছে কি?
উত্তর: প্রশ্নোক্ত সুরতে যদি ঐ অসুস্থ ব্যক্তির জীবন রক্ষার জন্য কোন তদবীরের ব্যবস্থা করতে পারা যায় তাহলে নামাজ ছেড়ে দিবে। আর যদি মৃত্যু বরণই করে থাকে তাহলে নামাজ ছেড়ে দেওয়ার দ্বারা কোন ফায়দা আছে কি? সুতরাং সে নামাজ শেষ করবে। (ফতোয়ায়ে শামী)

বেহুস ব্যক্তিকে উঠানোর জন্য নামাজ ছেড়ে দেওয়া
প্রশ্ন: যদি জামাতের সাথে নামাজ পড়া অবস্থায় এক ব্যক্তি বেহুস হয়ে পড়ে যায়, তাহলে পাশের ব্যক্তির জন্য নামাজ ছেড়ে তাকে উঠানো কি ওয়াজিব?
উত্তর: হ্যাঁ, যদি কোন ব্যক্তি বেহুস হয়ে পড়ে যায় তাহলে তার পাশের ব্যক্তি নামাজ ছেড়ে তাকে উঠিয়ে নিবে।
(ফতোয়ায়ে শামী)

নামাজে বিষাক্ত পোকা মারা
প্রশ্ন: যদি নামাজে হঠাৎ কোন বিষাক্ত পোকা এসে পড়ে তাহলে কি নামাজ ছেড়ে দেওয়া জায়েয আছে?
উত্তর: প্রশ্নোক্ত সুরতে যদি উক্ত বিষাক্ত পোকাটিকে নামাজ ছেড়ে দেওয়া ছাড়াই যদি মারা যায় তাহলে নামাজ ভঙ্গ করবে না। আর যদি ছেড়ে দেওয়া ব্যতীত পোকাটি মারা সম্ভব না হয় তাহলে নামাজ ভেঙ্গে দিয়ে পোকাটি মেরে ফেলবে। পরে নামাজ পড়ে নিবে।
(ফতোয়ায়ে শামী)

নামাজে ভিমরুল, মৌমাছি ইত্যাদি মারা
প্রশ্ন: নামাজ পড়া অবস্থায় যদি ভিমরুল, মৌমাছি ইত্যাদি কামর দেয় তাহলে নামাজ ছেড়ে তা মারার অবকাশ আছে কি?
উত্তর: যদি এগুলো থেকে কষ্ট পাওয়ার আশংকা হয় এবং নামাজ ছেড়ে দেওয়া ব্যতীত এগুলোকে প্রতিহত করা যায়, তাহলে নামাজ ভঙ্গ করবে না। অন্যথায় নামাজ ছেড়ে দিয়ে এগুলো মারার অনুমতি আছে।
(ফতোয়ায়ে শামী)

পিতা-মাতা ডাক দিলে কখন নামাজ ছাড়া যাবে
প্রশ্ন: যদি কোনো ব্যক্তি নামাজে থাকা অবস্থায় তার পিতা-মাতা ডাক দেয় তাহলে নামাজ ছেড়ে তাদের ডাকে সাড়া দেওয়া যাবে কি?
উত্তর: প্রশ্নোক্ত সুরতে উক্ত ব্যক্তি যদি ফরজ নামাজে থাকে তাহলে নামাজ ছেড়ে দিবে না। কিন্তু যদি উল্লেখযোগ্য কোন বিপদে পড়ে তাকে ডাকে তাহলে নামাজ ছেড়ে দিয়ে তাদের সাহায্য করবে। আর যদি নফল নামাজে থাকে আর সে সম্পর্কে পিতা-মাতা অবগতও থাকে তাহলে নামাজ ভঙ্গ করবে না। তবে যদি তাদের না জানা থাকে তাহলে নামাজ ছেড়ে দিয়ে তাদের ডাকে সাড়া দিবে।
(ফতোয়ায়ে শামী)

মুসাফিরের নামাজ

মুসাফির ইমাম সেজদায়ে সাহু করলে মুকিম মুক্তাদীর করণীয়
প্রশ্ন: যদি কোনো মুকিম ব্যক্তি মুসাফির ইমামের পিছনে ইকতেদা করে এবং ইমামের ওপর সেজদায়ে সাহু ওয়াজিব হয় তাহলে মুকিম মুক্তাদীকে ইমামের সাথে সেজদায়ে সাহু আদায় করতে হবে কি?
উত্তর: প্রশ্নোক্ত সুরতে উক্ত মুকিম ব্যক্তি ইমামের সাথে সেজদায়ে সাহু করবে কি না এ ব্যাপারে দুইটি মত পাওয়া যায়।
১- মুকিম ব্যক্তি ইমামের সাথে সেজদায়ে সাহু আদায় করবে এবং ইমামের সালাম ফিরানোর পর নিজের বাকি নামাজ পূর্ণ করবে।
২- মুকিম ব্যক্তি সেজদায়ে সাহুতে ইমামের অনুসরণ করবে না বরং ইমামের সালাম ফিরানোর পর তার অবশিষ্ট দুই রাকাত আদায় করার পর সেজদায়ে সাহু আদায় করলেই চলবে।
(ফতোয়ায়ে শামী)

মুসাফির ইমাম প্রথম বৈঠকের পর দাঁড়িয়ে গেলে
প্রশ্ন: মুসাফির ইমাম যদি চার রাকাত বিশিষ্ট নামাজের প্রথম বৈঠকের পর দাঁড়িয়ে যায় তাহলে মুকিম মুক্তাদীদের জন্য করণীয় কি?
উত্তর: প্রশ্নোক্ত সুরতে মুকিম মুক্তাদীগণ ইমামের ফিরে আসার অপেক্ষা করবে। ইমাম যদি তৃতীয় রাকাতের সেজদা করার পূর্বেই ফিরে এসে বসে যায় তাহলে মুকিমগণ তার সাথে সেজদায়ে সাহু আদায় করবে। এবং তার সালাম ফিরানোর পর নিজেদের অবশিষ্ট নামাজ পূর্ণ করবে। আর যদি ইমাম সাহেব তৃতীয় রাকাতের সেজদা করে ফেলে তাহলে এক্ষেত্রে অনুসরণ করবে না। নিজে দাঁড়িয়ে নিজের অবশিষ্ট নামাজ আদায় করবে। আর যদি মুক্তাদীগণ তৃতীয় ও চতুর্থ রাকাতে ইমামের অনুসরণ করে তাহলে নামাজ ভেঙ্গে যাবে। কারণ বাকী দুই রাকাত ইমামের জন্য নফল। আর নফল আদায়কারীর পিছনে ফরজ আদায়কারীর ইকতেদা করা জায়েয নেই।
(ফতোয়ায়ে শামী)

মুকিম মুসাফির ইমামের পিছনে লাহেকের মত
প্রশ্ন: মুসাফির ইমামের পিছনে মুকিম ব্যক্তি বাকি নামাজ কি মাসবুকের মত আদায় করবে?
উত্তর: না, মাসবুকের মত আদায় করবে না। বরং উক্ত ব্যক্তি বাকী নামাজ লাহেকের মত কেরাত পড়া ছাড়াই আদায় করবে।
(ইমদাদুল ফাতাওয়া)

মুসাফির জুমার নামাজের ইমামতি করা
প্রশ্ন: মুসাফিরের জন্য জুমার নামাজের ইমামতি করা জায়েয আছে কি?
উত্তর: মুসাফির ব্যক্তি জুমার নামাজ নিজেও পড়তে পারবে এবং এর ইমামতিও করতে পারবে। এতে কোন সমস্যা নেই।
(ফতোয়ায়ে শামী)

মুসাফিরের জন্য তারাবিহ পড়া
প্রশ্ন: মুসাফিরের জন্য তারাবিহ নামাজ পড়া কি জরুরি?
উত্তর: যদি শরয়ী সফর হয় এবং বেশি ব্যস্ততা থাকে তাহলে ফজরের সুন্নাত বাদে বাকী সুন্নাত গুলো ছেড়ে দেওয়ার সুযোগ আছে। কিন্তু যদি পড়ার সুযোগ পাওয়া যায় তাহলে ছেড়ে দেওয়া আদৌ উচিৎ নয়।
(ফতোয়ায়ে হিন্দিয়া)

মুসাফির মুক্তাদী মুসাফির ইমামকে মুকিম মনে করলে
প্রশ্ন: মুসাফির মুক্তাদী যদি মুসাফির ইমামকে মুকিম মনে করে চার রাকাত নামাজের নিয়ত করে আর পরে জানতে পারে ইমাম সাহেব মুসাফির তাহলে তার নামাজের হুকুম কি?
উত্তর: উক্ত মুসাফির ব্যক্তি ইমাম সাহেবের সাথে সালাম ফিরিয়ে দিলেই নামাজ সহিহ হয়ে যাবে এবং তার এ নামাজ দ্বিতীয় বার পড়ার প্রয়োজন নেই। (ফতোয়ায়ে শামী)

মুসাফির মুক্তাদী মুকিম ইমামের পেছনে দুই রাকাত পড়ে সালাম ফিরিয়ে দিলে
প্রশ্ন: মুসাফির মুক্তাদী যদি মুকিম ইমামের পেছনে দুই রাকাত শেষে সালাম ফিরিয়ে দেয় তাহলে তার নামাজের হুকুম কি?
উত্তর: প্রশ্নোক্ত সুরতে উক্ত মুসাফির মুক্তাদী যদি দুই রাকাত শেষে সালাম ফিরিয়ে দেয় তাহলে তার নামাজ ফাসেদ হয়ে যাবে। কারণ, সে মুকিম ইমামের ইকতেদা করার দ্বারা তার উপর চার রাকাত পূর্ণ করা আবশ্যক হয়ে গেছে। সুতরাং সে যেহেতু পূর্ণ করেনি তাই নামাজ ফাসেদ হয়ে গিয়েছে। দ্বিতীয় বার তার জন্য নামাজ পড়া আবশ্যক।
(ফতোয়ায়ে শামী)

মুসাফির ভুলে চার রাকাতের নিয়ত করলে
প্রশ্ন: যদি মুসাফির ব্যক্তি দুই রাকাতের স্থানে চার রাকাতের নিয়ত করে ফেলে তাহলে তার নামাজের হুকুম কি?
উত্তর: যদি কোন মুসাফির ব্যক্তি দুই রাকাতের স্থানে চার রাকাতের নিয়ত করে তাহলে তার এই নিয়তের কোন ধর্তব্য নেই। বরং সে দুই রাকাতই আদায় করবে এবং মনে মনে নিয়তকে শুদ্ধ করে নিবে। কিন্তু মুখে আওয়াজ করবে না এবং তার উপর সেজদায়ে সাহুও ওয়াজিব হবে না।
(ফতোয়ায়ে শামী)

সফর পরিমাণ দূরত্বের সীমারেখা
প্রশ্ন: সফর পরিমাণ দূরত্বের সীমারেখা কতটুকু?
উত্তর: সফর পরিমাণ দূরত্বের সীমারেখা হলো, আট চল্লিশ মাইল।
(ফতোয়ায়ে শামী)

৪৮ মাইল সমান কত কিলোমিটার
প্রশ্ন: বর্তমান সময়ে কিলোমিটার অনুযায়ী ৪৮ মাইলের পরিমাণ কতো?
উত্তর: বর্তমান সময়ের কিলোমিটার অনুযায়ী ৪৮ মাইল হলো ৭৭.২৪৮৫১২ কিলোমিটার।
(আহসানুল ফাতাওয়া)

সফর অবস্থায় নামাজ কাজা হলে
প্রশ্ন: কারো যদি সফর অবস্থায় নামাজ কাজা হয়ে যায় তাহলে মুকিম হলে ঐ নামাজ কি কসরই পড়বে?
উত্তর: সফর অবস্থায় যে নামাজ কাজা হয়ে হয়েছে মুকিম হলে ঐ নামাজ কসর হিসাবেই আদায় করবে। (ফতোয়ায়ে শামী)

চিল্লার জামাত একই ইউনিয়নে ১৫ দিনের বেশি অবস্থান করলে
প্রশ্ন: শরয়ী ৪৮ মাইল দূরে চিল্লার জামাত গেলে এবং একই ইউনিয়নে ঘুরাফেরা করে ১৫ দিনের বেশি অবস্থানের নিয়ত করলে সে জামাত মুসাফির থাকবে না মুকিম?
উত্তর: প্রশ্নে উল্লেখিত সুরতে উক্ত জামাত মুসাফিরই থাকবে।
(শামী, হিন্দীয়া, ইমদাদুল ফাতাওয়া)

ঘর থেকে বের হলেই মুসাফির নাকি স্টেশনে যাওয়া লাগবে
প্রশ্ন: ঘর থেকে বের হলেই কি মুসাফির হবে? নাকি স্টেসন পর্যন্ত যেতে হবে?
উত্তর: যখন মানুষ নিজের শহরের সীমা অতিক্রম করে বাহিরে চলে যাবে তখন সে মুসাফির হিসাবে গণ্য হবে। যতক্ষণ পর্যন্ত সে নিজ শহরে থাকবে মুকিম হিসাবেই থাকবে।
(হালবী কাবীর)

শহরের ভিতর গাড়িতে দুই রাকাত পড়া
প্রশ্ন: অনেক ব্যক্তিকে দেখা যায় ঘর থেকে বের হয়েই স্টেশনে বা গাড়িতে দুই রাকাত করে নামাজ পড়ে। এভাবে নামাজ পড়লে সঠিক হবে কি?
উত্তর: গাড়ি যখন শহর থেকে বের হয়ে যাবে তখন মুসাফির হিসাবে গণ্য হবে। শহরের ভিতর স্টেশন বা গাড়িতে দ্ইু রাকাত নামাজ পড়া ঠিক হবে না।
(ফতোয়ায়ে হিন্দিয়া)

মহিলা বাবার বাড়িতে নামাজ কসর করবেকি?
প্রশ্ন: যদি মহিলা নিজের বাবার বাড়িতে বেড়াতে আসে তাহলে উক্ত মহিলার জন্য নামাজের বিধান কি?
উত্তর: বিবাহের পর মেয়েদের স্বামীর ঘর হর আসল বাড়ি। মেয়েলোক যদি তার বাবা-মায়ের বাড়িতে ১৫ দিনের কম বেড়াতে আসে তাহলে সে নামাজ কসর করবে। আর যদি ১৫ দিনের বেশি সময় থাকার নিয়ত করে তাহলে নামাজ কসর করবে না। বরং মুকিমের মত চার রাকাত নামাজ পড়বে। এমনিভাবে স্বামীও যদি ১৫ দিনের কম থাকার নিয়তে শশুরবাড়িতে যায় তাহলে নামাজ কসর করবে।
(ফতোয়ায়ে শামী)

বিমানে বসে বসে নামাজ পড়া ও টেবিলের ওপর সেজদা করা
প্রশ্ন: বিমানে বসে নামাজ পড়লে এবং টেবিলের ওপর সেজদা করলে নামাজ আদায় হবে কি?
উত্তর: না, এভাবে নামাজ পড়লে নামাজ আদায় হবে না। বরং দাঁড়িয়ে কেবলামুখি হয়ে নামাজ পড়তে হবে।
(ফতোয়ায়ে শামী, হিন্দীয়া)

বিমানে/প্লেনে নামাজ আদায় করার বিধান
প্রশ্ন: বিমানে নামাজ পড়লে নামাজ আদায় হবে কি?
উত্তর: অধিকাংশ উলামায়ে কেরামের নিকট বিমানে নামাজ পড়লে নামাজ আদায় হয়ে যাবে। তবে শর্ত হলো নামাজের সমস্ত শর্ত সঠিকভাবে আদায় করতে হবে। তবে কতিপয় উলামায়ে কেরাম বলেন, বিমানে নামাজ পড়ার পর সতর্কতামূলকভাবে জমিনে পুনরায় নামাজ পড়ে নেয়া উত্তম। তবে এটা জরুরি কিংবা ওয়াজিব নয়।
(মায়ারিফুস সুনান)

পরিবহনে চাকরিরত অবস্থায় নামাজ
প্রশ্ন: যারা পরিবহনে তথা বাস, লঞ্চ, স্টিমার ইত্যাদিতে চাকরি করে তারা কি কসর নামাজ পড়বে না পূর্ণ নামাজ পড়বে?
উত্তর: যারা সর্বদা পরিবহনে চাকরি করে এবং পরিবহনের শেষ গন্তব্য স্থল নিজ বাড়ি থেকে ৪৮ মাইল দূর হয় তারা সফর অবস্থায় কসর পড়বে। বাড়িতে ফিরে গেলে পূর্ণ নামাজ পড়বে।
(ফতোয়ায়ে শামী, দারুল উলূম)

হজ¦ পালনরত অবস্থায় নামাজ
প্রশ্ন: বাংলাদেশ থেকে যারা হজ¦ করতে যায় তারা সেখানে ১৫ দিনের বেশিও থাকে প্রশ্ন হলো তারা যদি সেখানে একামতের নিয়ত করে তাহলে পূর্ণ নামাজ পড়তে পারবে কি?
উত্তর: যারা হজ¦ করতে যায় তারা সাধারণত এক জায়গায় অবস্থান করে না। আর মুকিম হওয়ার জন্য শর্ত হলো ১৫ দিন বা তার চেয়ে বেশি এক জায়গায় অবস্থান করা। তবে যদি এক জাগায় অবস্থান করে এবং একামতের নিয়ত থাকে তাহলে মুকিম বলে গণ্য হবে ও পূর্ণ নামাজ পড়তে হবে।
(শামী, হক্কানীয়া, তাবয়ীনুল হাকায়েক)

জেলখানার নামাজ
প্রশ্ন: জেলখানায় আসামীগণ পূর্ণ নামাজ পড়বে না কসর নামাজ পড়বে?
উত্তর: জেলখানা যদি তার বাড়ি থেকে সফর পরিমাণ দূরে থাকে আর তাদের স্থান পরিবর্তন হবে কিনা তা জানা না থাকে তাহলে তারা সেখানে কসর পড়তে থাকবে। আর যদি ১৫ দিন বা তার উর্ধ্বে থাকার সিদ্ধান্ত জানা যায় তাহলে পূর্ণ নামাজ পড়বে।
(হিন্দীয়া, বাহরুর রায়েক, রহিমিয়া)

অসুস্থ ব্যক্তির নামাজ

চেয়ারে বসে নামাজ পড়া
ঈমানের পরই ইসলামের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ রুকন হলো নামাজ, যা বর্ণনার অপেক্ষা রাখে না। জ্বিন-ইনসান, ধনী-গরীব, নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সকল মুসলমানে উপর নামাজ ফরয। এমন কি যদি কেউ অসুস্থতার কারণে দাঁড়াতে সক্ষম না হয় তাহলে বসে রুকু সেজদা করবে। বসে রুকু সেজদা করতে সক্ষম না হলে বসে ইশারায় নামাজ পড়বে এবং বসতে সক্ষম না হলে শুয়ে ইশারায় নামাজ আদায় করতে হবে। উল্লেখিত বর্ণনা দ্বারা সহজেই বুঝা যাচ্ছে যে নামাজ ও নামাজের প্রত্যেকটা কাজ কতটা গুরুত্বপূর্ণ। প্রত্যেক নামাজির জন্য আবশ্যক হল একাগ্রতার সাথে সমস্ত ফরজ, সুন্নাত, মুস্তহাব আদায়ের মাধ্যমে নামাজ সম্পন্ন করা। নামাজের রুকনসমূহের অন্যতম হলো, দাঁড়িয়ে নামাজ পড়া ও রুকু সেজদা করা। যদি কেউ দাঁড়াতে সক্ষম না হয় শরীয়ত তাকে মাটিতে বসে নামাজ পড়ার, এমনিভাবে রুকু সেজদায় সক্ষম না হলে ইশারায় নামাজ আদায়ের সুযোগ দিয়েছে। বসে নামাজ আদায়ের ক্ষেত্রে বসার কোন পদ্ধিতিকে নির্দিষ্ট করা হয়নি। তাই বসার যত পদ্ধতি হতে পারে সব পদ্ধতিতেই নামাজ আদায়ের অবকাশ আছে। তবে সবচেয়ে উত্তম হলো, আত্তাহিয়্যাতুর সুরতে বসে নামাজ আদায় করা। বসে রুকু সেজদা করতে সক্ষম হলে বসে রুকু সেজদা করবে। অন্যথায় ইশারায় নামাজ আদায় করবে।

বসার পদ্ধতিগুলো থেকে একটি হলো চেয়ারে বসে নামাজ আদায় করা। যা সবচেয়ে আরামদায়ক ও নামাজের বাইরের সাথে অধিক সাদৃশ্য পূর্ণ। চেয়ারে বসে নামাজের ক্ষেত্রে অধিকাংশ লোকই ইশারায় নামাজ আদায় করে থাকে। বসে নামাজের এ পদ্ধতিটি অন্যান্য পদ্ধতি থেকে কিছুটা ভিন্ন হওয়ায় এক্ষেত্রে কিছু লক্ষ্যণীয় বিষয় রয়েছে। যেমন:-

১-যারা মাটি বা ফ্লোরে বসে নামাজ আদায় করলে রুকু সেজদা আদায় করতে পারেন কিন্তু চেয়ারে বসে রুকু সেজদা করতে পারেন না তাদের জন্য চেয়ারে বসে নামাজ পড়া জায়েয নেই। এতে নামাজ সহীহ হবে না। হ্যাঁ, রুকু সেজদার সময় চেয়ার থেকে নেমে রুকু সেজদা করলে নামাজ হয়ে যাবে।
(ফতোয়ায়ে হিন্দিয়া)
২- যারা মাটি বা ফ্লোরে বসে নামাজ পড়তে সক্ষম তাদের জন্য চেয়ারে বসে নামাজ পড়া উচিৎ না। অনেকেই এই ব্যাপারে ফুকাহায়ে কেরামের একমত হওয়ার দাবি করেছেন যে বসে নামাজ আদায়কারী যেভাবেই আদায় করুক আত্তাহিয়্যাতুর সময় আত্তাহিয়্যাতুর সুরতেই বসতে হবে। কিন্তু আল্লামা শামী র. বলেন, আত্তাহিয়্যাতুর সময় বসতে সক্ষম হলে নামাজে সর্ব হালতে আত্তাহিয়্যাতুর সুরতেই বসা উত্তম। সক্ষম না হলে সর্বহালতে যেকোন পদ্ধতীতে নামাজ আদায় করা যেতে পারে।
(ফতোয়ায়ে শামী)
বর্তমান যুগের বিবেচনায় যারা নামাজের বাইরে মাটিতে বা সোফায় বসে গল্পগুজব, খাওয়া-দাওয়া ইত্যাদি করতে পারেন তাদের জন্য চেয়ারে বসে নামাজ পড়া খুবই নিন্দনীয়। এতে নামাজের প্রতি অবজ্ঞা প্রদর্শন হয়।
৩-অনেকেই চেয়ারের সামনে টেবিল ইত্যাদি রেখে সেজদা করে থাকেন, এতে সেজদা আদায় হবে না বরং ইশারা বলে গণ্য হবে। যারা রুকু সেজদা করতে সক্ষম তারা এভাবে নামাজ পড়লে তাদের নামাজ সহীহ হবে না।
(ফতোয়ায়ে শামী)
৪) যদি কোন ব্যক্তি বাড়িতে নামাজ আদায় করলে বেশি জায়গা নিয়ে দাঁড়িয়ে বা বসে রুকু সেজদার সাথে নামাজ পড়তে পারে কিন্তু মসজিদে নামাজ পড়তে গেলে জায়গা স্বল্পতার কারণে দাঁড়িয়ে বা চেয়ারে বসে রুকু সেজদার সাথে নামাজ আদায় করতে পারে না। এমন ব্যক্তিরা বাড়িতেই নামাজ আদায় করবে।
(আল আশবাহ ওয়ান নাযায়ের)
৫- যারা দাঁড়াতে সক্ষম কিন্তু রুকু সেজদা করতে সক্ষম নন, তাদের জন্য বসে ইসারায় বা দাঁড়িয়ে ইশারায় উভয়ভাবে নামাজ আদায় করা জায়েয। তবে উত্তম হলো বসে ইশারায় নামাজ আদায় করা। কেননা, বসা সেজদার অধিক নিকটবর্তী। অবশ্য সমসাময়িক অনেক অভিজ্ঞ মুফতিয়ানে কেরাম দাঁড়াতে সক্ষম হলে দাঁড়িয়ে ইশারায় নামাজ পড়াকেই উত্তম বলেছেন। কারণ, দাঁড়িয়ে নামাজ পড়া নামাজের একটি পৃথক ফরয যা সম্ভব হলে ছেড়ে দেওয়া ঠিক নয়।
৬- চেয়ারে বসে জামাতের সাথে নামাজ আদায় করলে কাতারে চেয়ার রাখার নিয়ম হলো, চেয়ারের পিছনের পায়া দুটি কাতার বরাবর রাখবে, যেখানে অন্যান্য মুসল্লিরা পা রাখে।
(মিশকাত শরীফ)

বিশেষ একটি আহ্বান:- বিগত আট দশ বছর ধরে মসজিদগুলোতে আশংকাজনকভাবে চেয়ারের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। অনেকেই শরয়ী উযরের কারণে চেয়ারে বসে নামাজ আদায় করলেও তাদের সংখ্যা অতি নগণ্য। অধিকাংশই সামান্য ওজুহাতেই চেয়ারে বসে ইশারায় নামাজ পড়েন। যারা নামাজের পরপরই মসজিদের কোন ফ্লোরে বসে আড্ডা দেন। ফ্লোরে বসেই খাওয়া দাওয়া করেন। আসলে চেয়ারে বসে নামাজ একটা ফ্যাশনে পরিণত হয়েছে। ফলে নামাজ তো হচ্ছেই না বরং ইসলামের শ্রেষ্ঠতম রুকন ও শিয়ারের প্রতি অবজ্ঞা প্রদর্শন হচ্ছে। মসজিদের পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। সাহাবা তাবেয়ীন তাবে-তাবেয়ীনের যুগেও চেয়ার ছিল কিন্তু তাদের থেকে চেয়ারে বসে নামাজ আদায় করার কোন প্রমাণ পাওয়া যায় না। এ বিষয়ে আমরা সতর্ক না হলে ইসলামের শ্রেষ্ঠ রুকন নামাজ অবহেলার শিকার হবে। কাফের মুশরিকদের উপহাসের পাত্র হবে। তাই এখনই আমাদেরকে আলেম-উলামা আইম্মায়ে মাসাজিদ, মুয়াজ্জিন ও মসজিদ কমিটিকে কঠোর হতে হবে। প্রথমত ফ্লোরে বসতে পারলে চেয়ারে নামাজের অনুমতিই দিবে না। যদি একান্তই দিতে হয় তাহলে তার অসুস্থতা যাচাই করে ফ্লোরে বসলে ক্ষতির ব্যাপারে নিশ্চিত হয়েই কেবল অনুমতি দিবে। সবাই সতর্ক হলেই ইসলামের পছন্দনীয় পদ্ধতি বাস্তবায়ন সহজ হবে ইনশাআল্লাহ।

চেয়ারে নামাজ আদায় করলে চেয়ারের সামনের পায়া রাখার স্থান
প্রশ্ন: চেয়ারে বসে নামাজ আদায়কারী ব্যক্তি কাতার সোজা করার জন্য চেয়ারের সামনের পায়া দাগ বরাবর রাখবে না পিছনের পায়া?
উত্তর: চেয়ারে বসে নামাজ আদায়কারী চেয়ারের পিছনের দুই পায়াকে দাগ বরাবর রাখবে। যাতে চেয়ারে বসা ব্যক্তির কাঁধ তার দুই পাশের্^র মুসল্লিদের কাঁধের বরাবর হয়।(ফাতাওয়ায়ে তাতারখানিয়া)

ওযর প্রমাণিত হওয়ার জন্য নিজের ধারণার উপর নির্ভর করা
প্রশ্ন: ওযর প্রমাণিত হওয়ার জন্য নিজের ধারণারই যথেষ্ট নাকি দ্বীনদার কোন ডাক্তারের স্বীকৃতি জরুরি?
উত্তর: অসুস্থ ব্যক্তি যদি এ ব্যাপারে নিশ্চিত হয় যে, দাঁড়িয়ে নামাজ পড়লে তার অসুস্থতা বেড়ে যাবে তাহলে তার জন্য বসে নামাজ পড়া জায়েয। ডাক্তারের স্বীকৃতী বা রায় জরুরি নয়। তবে অধিক সতর্কতা হল, কোন অভিজ্ঞ ডাক্তারকে জিজ্ঞাস করে নেয়া।
(ফতোয়ায়ে হিন্দিয়া)

দাঁড়িয়ে নামাজ পড়া ব্যক্তির বসা অবস্থায় রুকু সেজদার হুকুম
প্রশ্ন: যে ব্যক্তি দাঁড়িয়ে নামাজ পড়তে অক্ষম এবং বসে নামাজ পড়া অবস্থায় রুকু সেজদা করতে পারে না। এমন অসুস্থ ব্যক্তি চেয়ারে বসে নামাজ পড়তে পারবে কি?
উত্তর: অসুস্থ ব্যক্তি যদি দাঁড়িয়ে নামাজ পড়তে সক্ষম না হয়, সে ক্ষেত্রে তার জন্য চেয়ারে বসে ইশারায় নামাজ পড়া জায়েয। তবে জমিনে যে কোনভাবে ইশারায় নামাজ পড়া জায়েয। আর জমিনে বসে নামাজ পড়াই উত্তম।
(কিফায়াতুল মুফতি)
জানাযার নামাজ

বেনামাজির জানাযার নামাজ
প্রশ্ন: যে ব্যক্তি দুনিয়াতে জীবিত থাকা অবস্থায় নামাজ পড়ত না সে মারা গেলে তার জানাযা পড়তে হবে কি?
উত্তর: বেনামাজি যদি আল্লাহ এবং তার রাসূলের কোনো হুকুমকে অস্বীকার না করে থাকে তাহলে তার জানাযা পড়তে হবে।
(বাদায়েয়ুস সানায়েহ)

আত্মহত্যাকারীর জানাযার নামাজ
প্রশ্ন: আত্মহত্যাকারীর জানাযার নামাজ পড়তে হবে কি?
উত্তর: আত্মহত্যা করা যেহেতু অনেক বড় এক অপরাধ তাই ফুকাহায়ে কেরাম বলেছেন তার জানাযা কোনো অনুসরণীয় (বড় আলেম) ব্যক্তি পড়াবে না। বরং সাধারণ মানুষ পড়াবে। যেন মানুষ এর থেকে উপদেশ গ্রহণ করে।
(বাদায়েয়ুস সনায়েহ)

মসজিদে জানাযার নামাজ
প্রশ্ন: মসজিদের ভিতরে জানাযার নামাজ পড়ানো জায়েয হবে কি?
উত্তর: মসজিদে জানাযার নামাজের তিনটি সুরত হতে পারে।
১) জানাযা, ইমাম ও মুক্তাদী সবাই মসজিদে।
২) জানাযা বাইরে কিন্তু ইমাম ও মুক্তাদী মসজিদে।
৩) জানাযা, ইমাম ও কিছু মুক্তাদী মসজিদের বাইরে আর কিছু মুক্তাদী মসজিদের ভিতরে। এই তিনটি সুরতই মাকরুহ। হ্যাঁ, তবে যদি গ্রহণযোগ্য কোন ওযর থাকে

তাহলে জায়েয আছে।
(ফতোয়ায়ে শামী)
ভূমিষ্ট বাচ্চার দাফনের পর জানা গেল বাচ্চা জীবিত ছিল
প্রশ্ন: ভূমিষ্ট বাচ্চাকে দাফনের পর জানা গেল যে বাচ্চাটা জীবিত ভূমিষ্ট হয়ে তারপর মারা যায় অথচ আমরা জানাযা পড়াই নি এমতাবস্থায় আমাদের কি গুনাহ হবে?
উত্তর: জানাযা না পড়াটা যেহেতু ভুলের কারণে হয়েছে সেহেতু এই কারণে কোন গুনাহ হবে না। আর এখন যেহেতু জানাযা পড়ার কোন সুরত নেই তাই শুধু বাচ্চাটির নাম রেখে দিবে।
(ফতোয়ায়ে হিন্দিয়া)

বাজারে জানাযার নামাজ পড়ানো
প্রশ্ন: আমাদের বাজারে অধিকাংশ সময় জানাযার নামাজ পড়ানো হয় যার কারণে রাস্তা বন্ধ হয়ে যায় এবং মানুষের আসা-যাওয়াও বন্ধ হয়ে যায়- এতে কি কোনো গুনাহ হবে?
উত্তর: গ্রহণযোগ্য কোন ওযর ব্যতীত রাস্তায় বা বাজারে জানাযার নামাজ পড়া মাকরুহ। সুতরাং এর থেকে বিরত থাকবে।
(ফতোয়ায়ে শামী)

ওজর এবং আসরের পর জানাযার নামাজ
প্রশ্ন: ওজর ও আসরের পর জানাযার নামাজ পড়লে কোন গুনাহ হবে কি?
উত্তর: ওজর ও আসরের নামাজের পর জানাযার নামাজ পড়া জায়েয আছে। তবে নফল পড়া জায়েয নেই।
(ফতোয়ায়ে হিন্দিয়া)

জুতা পরিধান করে জানাযার নামাজ পড়া
প্রশ্ন: জুতা পরিধান করে জানাযার নামাজ পড়া জাযেয় আছে কি?
উত্তর: জুতা পাক হলে তা সহকারে জানাযার নামাজ পড়া জায়েয আছে। আর যদি নাপাক থাকে তাহলে জুতা পরিধান করে নামাজ পড়া জায়েয নেই এবং তার উপর দাড়িয়েও নামাজ পড়া জায়েয নেই।
(তাহতাবী আলা মারাকিল ফালাহ)

জানাযার নামাজ তায়াম্মুমের মাধ্যমে আদায় করা
প্রশ্ন: যদি জানাযা উপস্থিত থাকে আর সময়ের সল্পতার কারণে ওযু করতে না পারে তাহলে এমতাবস্থায় তায়াম্মুম করে জানাযার নামাজ পড়া জায়েয হবে কি?
উত্তর: জানাযা উপস্থিত থাকা অবস্থায় যদি এ আশংকা হয় যে, ওযু করতে গেলে জানাযা পাওয়া যাবে না তাহলে তায়াম্মুমের মাধ্যমে জানাযার নামাজ পড়া যাবে। অন্যথায় না। আর এই তায়াম্মুমের মাধ্যমে শুধু জানাযাই পড়া যাবে। অন্য কোনো নামাজ পড়া যাবে না।
(ফতোয়ায়ে শামী)

জানাযা পড়াবার হকদার কে
প্রশ্ন: জানাযার নামাজে ইমামতি করার সবচেয়ে বেশি হকদার কে?
উত্তর: জানাযার নামাজের ইমামতি করার সবচেয়ে বেশি হকদার হলেন মহল্লার ইমাম সাহেব। তবে হ্যাঁ, ওয়ারিসদের মধ্য থেকে যদি কেউ উপযুক্ত থাকেন তাহলে তিনিই হলেন সবচেয়ে বেশি হকদার।
(মারাকিল ফালাহ)

জানাযার নামাজ পড়ার পদ্ধতি
প্রশ্ন: জানাযার নামাজ পড়ার পদ্ধতি কি?
উত্তর: জানাযার নামাজে চারটি তাকবির রয়েছে। প্রথম তাকবিরের পর সানা। দ্বিতীয় তাকবিরের পর দুরুদ শরীফ। তৃতীয় তাকবিরের পর জানাযার নামাজের দোয়া। চতুর্থ তাকবিরের পর সালাম ফিরানো।
(তানভীরুল আবসার)

মৃত ব্যক্তি যদি বালেগ হয় তাহলে এই দোয়া পড়বে-
اللهم اغفرلحينا و ميتنا و شاهدنا و غائبنا و صغيرنا و كبيرنا وذكرنا و انثانا اللهم من احييته منا فأحيه علي الأسلام ومن توفيته منا فتوفه علي الإيمان
বাংলা উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা ইগফিরলি হাইয়িনা ও মাইয়িতিনা ও শাহিদিনা ও গায়িবিনা ও সগিরিনা ও কাবিরিনা ও জাকারিনা ও উনসানা আল্লাহুম্মা মান আহইয়াই তাহু মিন্না ফা আহয়িহি আলাল ইসলাম ও মান তা ও ফ্ফাইতাহু মিন্না ফাতাওয়াফ্ফাহু আলাল ঈমান।

নাবালেগ ছেলে বাচ্চা হলে এই দোয়া পড়বে-
اللهم اجعله لنا فرطا واجعله لنا اجرا وذخرا واجعله لنا شافعا ومشفعة
বাংলা উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা ইজয়ালহু লানা ফারতাও অজয়ালহু লানা আজরাও অজুখরাও অজায়ালহু লানা শাফিয়াও ও অমুশাফ্ফায়াহ।

নাবালেগ মেয়ে বাচ্চা হলে এই দোয়া পড়রে-
اللهم اجعلها لنا فرطا واجعلها لنا اجرا وذخرا واجعلها لنا شافعة ومشفعة
বাংলা উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা ইজয়ালহা লানা ফারতাও অজয়ালহা লানা আজরাও অজুখরাও অজায়ালহা লানা শাফিয়াতাও ও অমুশাফ্ফায়াহ।

জানাযার নামাজে তাকবির বলা
প্রশ্ন: জানাযার নামাজে তাকবির বলা কি?
উত্তর: জানাযার নামাজের চারটি তাকবিরই ইমাম ও মুক্তাদী উভয়ের জন্য বলা ফরয।
(ফতোয়ায়ে শামী)

জানাযা নামাজের দোয়া পড়া
প্রশ্ন: জানাযার নামাজে দোয়া পড়া কি?
উত্তর: জানাযার নামাজে দোয়া পড়া সুন্নাত কেউ পড়তে না পারলেও তাকবির বলার কারণে নামাজ হয়ে যাবে। তবে দোয়া শিখে নেওয়া চাই।
(ফতোয়ায়ে শামী)

শোক পালনে নিরবতা
প্রশ্ন: কোন মৃত ব্যক্তির শোক পালনে নীরবতা পালন করা যাবে কি?
উত্তর: তাজিয়া বা শোক পালনের সুন্নাত তরীকা হলো দাফনের পরে বা পূর্বে মাইয়্যেতের পরিবারের লোকদের কাছে গিয়ে তাদেরকে সান্তনা দেওয়া। ধৈর্য্য ধারণের প্রতি উৎসাহ প্রদান করা এবং তাদের জন্য দোয়া করা। আর আয়োজন করে নিরবতা পালন করা ইহুদী, খ্রিস্টান, হিন্দু ও বেদ্বীনদের সংস্কৃতি। বিধায় মুসলমানদের জন্য তা বর্জন করা আবশ্যক।
(ফাতাওয়ায়ে হক্কানিয়া)

কবরে ফুল দেওয়া
প্রশ্ন: কবরে ফুল দেওয়া কেমন?
উত্তর: কবরে ফুল দেওয়া ঠিক না। কারণ, এটা ইয়াহুদী-নাসারাদের একটি রীতি। (দরসে তিরমিযি)

কবরে এপিটাফ লাগানো
প্রশ্ন: কবরে এপিটাফ লাগানো যাতে মৃত ব্যক্তির নাম, জন্ম ও মৃত্যু তারিখ ইত্যাদি লিখে রাখা- কতটুকু শরীয়ত সম্মত?
উত্তর: কবর চিন্হিত করার প্রয়োজনে কবরের পাশে মৃত ব্যক্তির নাম ঠিকানা সংক্ষিপ্ত পরিচিতি লিখে রাখার অবকাশ আছে। তবে সেখানে কোনো প্রকার ছন্দ, কবিতা, মৃতের প্রশংসায় কুরআনের আয়াত ইত্যাদি লেখা নিষেধ। (ফতোয়ায়ে শামী)

দাফনের পর জানাযা
প্রশ্ন: জানাযাবিহীন দাফনকৃত লাশ যদি এক বছর পর তার কবরে অক্ষত পাওয়া যায় তাহলে তার জানাযা উক্ত কবরে পড়া যাবে কি?
উত্তর: মৃত ব্যক্তির উপর জীবিতদের হকসমূহের মধ্যে থেকে অন্যতম হক হলো, তার জানাযা পড়া। তাই যত দিন পরই হোক লাশ অক্ষত অবস্থায় পাওয়া গেলে জানাযার নামাজ তার কবরের উপরেই পড়তে হবে। (ফতোয়ায়ে শামী)

কফিনে ভরে দাফন
প্রশ্ন: কফিনসহ মাইয়েত কে দাফন করার বিধান কি?
উত্তর: সুন্নাত হলো মাটিতে দাফন করা। তাই কফিনে ভরে দাফন করা মাকরুহ। তবে প্রয়োজনে তা ব্যবহার করার অনুমতি আছে। এক্ষেত্রে উত্তম হলো কফিনের ভিতরে চতুর্পাশ্বে কিছু মাটি দেওয়া।
(ফতোয়ায়ে শামী)

শোক প্রকাশের জন্য কালো পোষাক
প্রশ্ন: শোক প্রকাশ করতে গিয়ে কালো ব্যাজ বা কালো কাপড় পরা জায়েয আছে কি?
উত্তর: শোক প্রকাশ করতে গিয়ে কালো ব্যাজ বা কালো কাপড় পরা ইসলামী রীতি বহির্ভূত কাজ, তাই তা বৈধ নয়।
(ফতোয়ায়ে হিন্দিয়া)

মাইয়েতকে পাগড়ি পরানো
প্রশ্ন: মাইয়েতকে পাগড়ি পরানোর হুকুম কি?
উত্তর: মাইয়েতকে পাগড়ি পরানো মাকরুহ।
(ফতোয়ায়ে শামী)

জানাযার পর মাইয়েতকে সামনে রেখে দোয়া করা।
প্রশ্ন: জানাযার পর মাইয়েতকে সামনে রেখে সম্মিলিতভাবে হাত উঠিয়ে দোয়া করা জায়েয আছে কি?
উত্তর: এমনভাবে দোয়ার প্রচলন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর যুগে বা সাহাবায়ে কেরামের রা. যুগে ছিল না। তাই তা নাজায়েয ও বেদয়াত।
(খুলাসাতুল ফাতাওয়া)

মুসলিম নারী ও অমুসলিম পুরুষের সহবাসে জন্ম নেয়া বাচ্চার হুকুম
প্রশ্ন: যদি কোনো মুসলমান নারী এবং কাফের পুরুষের সহবাসে বাচ্চা হয় এবং সেই বাচ্চা নাবালেগ অবস্থায় মৃত্যু বরন করে তাহলে তার জানাযার হুকুম কি?
উত্তর: যেহেতু যেনার মাধ্যমে জন্মলাভকৃত বাচ্চার নসব (বংশপরম্পরা) তার মা থেকে গণ্য করা হয় তাই সে মায়ের তাবে (অধীন) হিসাবে মুসলমান বলে গণ্য হবে। এবং তার জানাযা পড়া হবে।
(ফাতাওয়ায়ে মাহমুদিয়া)

স্বপ্নে মৃত ব্যক্তির উপদেশপ্রাপ্তি ও করণীয়
প্রশ্ন: মৃত ব্যক্তি কাউকে স্বপ্নে তার লাশ স্থানান্তর করতে বললে তার করণীয় কি?
উত্তর: স্বপ্ন শরীয়তের কোন দলীল নয়। তাই স্বপ্নের ওপর ভিত্তি করে লাশ স্থানান্তর করা যাবে না।
(ফাতাওয়ায়ে মাহমুদিয়া)

মৃত মহিলার পেটে জীবিত বাচ্চা
প্রশ্ন: প্রশবের আগ মুহুর্তে মহিলার মৃত্যু হলে পরে পরীক্ষার মাধ্যমে যদি জানা যায় তার পেটে বাচ্চা এখনো জীবিত আছে এ অবস্থায় করণীয় কি?
উত্তর: যদি বাচ্চার জীবিত থাকা নিশ্চিত হওয়া যায় তাহলে মায়ের পেট কেটে বাচ্চা বের করে নিবে। অন্যথায় পেট কাটা যাবে না।
(ফতোয়ায়ে শামী)

আগুনে পোড়া লাশ
প্রশ্ন: যে ব্যক্তির গোশত-চামরা সব আগুনে পুড়ে গেছে শুধু হাড্ড্ িআছে তার জানাযার হুকুম কি?
উত্তর: জানাযার শর্ত হলো, মৃত ব্যক্তির অর্ধেকের বেশি বা মাথাসহ অর্ধেক শরীর বিদ্বমান থাকা। উক্ত ব্যক্তির শরীর যেহেতু পুড়ে ভষ্ম হয়ে গিয়েছে তাই জানাযা পড়া যাবে না। তবে তার হাড্ডিগুলো কাপড়ে পেচিয়ে গর্তে রাখবে।
(ফতোয়ায়ে হিন্দিয়া)

কবরে পানি ছিটানো
প্রশ্ন: দাফনের পর কবরের উপরে পানি ছিটানো যাবে কি?
উত্তর: দাফনের পর কবরের মাটি জমানোর জন্য পানি ছিটানো মুস্তাহাব।
(ফতোয়ায়ে শামী)

নদীতে ভাসমান লাশ
প্রশ্ন: নদীতে ভাসমান লাশ যা মুসলমানের না কাফেরের তা কোনোভাবেই নির্ণয় করা যাচ্ছে না এমতাবস্থায় করণীয় কি?
উত্তর: লাশটি যেখানে পাওয়া গেছে তা যদি মুসলমানদের বসতি হয়, তাহলে তাকে মুসলমান বলে গণ্য করা হবে। আর যদি তা অমুসলিমদের বসতি হয়, তাহলে তাকে অমুসলিম বলে গণ্য করা হবে। এবং সে অনুযায়ী তার কাফন দাফনের ব্যবস্থা করা হবে।
(ফতোয়ায়ে হিন্দিয়া)

পোস্টমর্টেম
প্রশ্ন: শরীয়তের দৃষ্টিতে পোস্টমর্টেমের হুকুম কি?
উত্তর: শরীয়তের দৃষ্টিতে পোস্টমর্টেম জায়েয নেই। কারণ এতে মাইয়্যেতের অসম্মানী হয়। তবে একান্ত প্রয়োজনে যেমন মামলা-মুকাদ্দমা উদঘাটনের জন্য প্রয়োজন অনুপাতে তা জায়েয আছে।
(ফতোয়ায়ে শামী)

ঈদের দিন কবর জিয়ারত
প্রশ্ন: ঈদের দিন কবর জিয়ারত কেমন?
উত্তর: ঈদের দিন কবর জিয়ারত করা ভালো। তবে তা আবশ্যক মনে করা যাবে না এবং কেউ না করলে তাকে নিন্দা করা যাবে না।
(ফতোয়ায়ে শামী)

জানাযার নামাজ পড়িয়ে বিনিময় গ্রহণ করা
প্রশ্ন: জানাযার ইমামতি করে বিনিময় গ্রহণ করা জায়েয আছে কি?
উত্তর: জানাযার নামাজের ইমামতি করে বিনিময় গ্রহণ করা জায়েয নেই।
(কেফায়াতুল মুফতি)

রওজাপাক জিয়ারতের আদব
প্রশ্ন: নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের রওজা জিয়ারতের আদব কি?
উত্তর: সম্ভব হলে মিম্বরের নিকটে দুই রাকাত নামাজ আদায় করা। এরপর রওজা পাকে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মাজার বরাবর কিবলামুখি হয়ে নামাজের মত দাঁড়িয়ে দুরুদ ও সালাম পাঠানো বা পৌঁছে দেওয়া।
(ফতোয়ায়ে হিন্দিয়া)

জানাযার খাটে চাদর রাখা
প্রশ্ন: জানাযার খাটে কুরআনের আয়াত সম্বলিত চাদর রাখা যাবে কি?
উত্তর: কুরআনের আয়াত সম্বলিত চাদর জানাযার খাটের উপর রাখা জায়েয নেই।
(ফতোয়ায়ে শামী)

দাফনের পর কবর খনন করে লাশ দেখা
প্রশ্ন: দাফনের পর কবর খনন করে কেউ মাইয়েতকে দেখতে পারবে কি?
উত্তর: দাফন সম্পন্ন হওয়ার পর কারো সান্তনার জন্য কবর খনন করা জায়েয হবে না।
(ফতোয়ায়ে হিন্দিয়া)

মরা বাড়িতে আত্মীয়দের খাওয়ার ব্যবস্থা
প্রশ্ন: মরা বাড়িতে পাড়া-প্রতিবেশী, আত্মীয়-স্বজনদের পক্ষ থেকে তিন দিন যে খানার ব্যবস্থা করা হয় তা কতটুকু শরিয়ত সম্মত?
উত্তর: পাড়া-প্রতিবেশী বা আত্মীয়-স্বজনদের জন্য মরা বাড়িতে দু-বেলা তথা একদিনের (প্রথম দিনের) খাবার ব্যবস্থা করা মুস্তাহাব। হাদীসে এ ব্যাপারে নির্দেশও এসেছে। আর একদিনের বেশি খাওয়ানোর ব্যবস্থা করা প্রতিবেশীদের উপর সম্পূর্ণ ঐচ্ছিক ব্যাপার। তবে বর্তমানে তিনদিন খাওয়ানোর যে ব্যাপক প্রচলন রয়েছে তা সামাজিকভাবে এমন অবস্থায় পৌছেছে যে, মানুষ এটাকে শরীয়তের বিধান ভাবছে। কেউ কেউ এটা চাপে পরে করছে, যা সম্পূর্ণ মাকরুহ।
(ফতোয়ায়ে শামী)

জানাযার পর মৃত ব্যক্তির মুখ দেখা
প্রশ্ন: জানাযার পর মৃত ব্যক্তির মুখ দেখানোর শরয়ী বিধান কি?
উত্তর: রেওয়াজ করে জনসম্মুখে মৃত ব্যক্তির মুখ দেখানো শরীয়ত পছন্দ করে না। এটা জানাযার আগে হোক কিংবা পরে। কারণ, অনেক সময় মৃত ব্যক্তির চেহারা বিকৃত হয়ে যায়। যা অন্যদের নিকট প্রকাশ করা উচিৎ নয়। তবে যদি কোন নিকট আত্মিয় বা বিশেষ কেউ মানসিক প্রশান্তির জন্য জানাযার পরেও মৃত ব্যক্তির চেহারা দেখতে চায় তাহলে দেখতে পারবে। কিন্তু না দেখাই উত্তম।
(শামী, ফাতাওয়ায়ে রহিমিয়া)

লাশ এ্যাম্বুলেন্সে রেখে জানাযা পড়া
প্রশ্ন: লাশ এ্যাম্বুলেন্সে রাখা অবস্থায় জানাযা পড়লে জানাযা সহীহ হবে কি?
উত্তর: না, সহীহ হবে না। কারণ, জানাযা সহীহ হওয়ার অন্যতম শর্ত হলো লাশ জমিনে ইমামের সামনে থাকা।
(শামী, হিন্দীয়া)

পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ও অন্যান্য নামাজের নিয়তসমূহ

ফজরের দুই রাকাত সুন্নতের নিয়ত এভাবে করা যায়:-
نَوَيْتُ أَنْ اُصَلِّىَ لَلهِ تَعَاْلَى رَكَعَتَىْ صَلَوةِ الْفَجْرِ سُنَّةَ رَسُوْلِ اللهِ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مُتَوَجِّهًا إِلَى جِهَةِ الْكَعْبَةِ الْشَّرِيْفَةِ اللهُ أَكْبَرْ
আরবি উচ্চারণ: নাওয়াইতু আন উসাল্লিয়া লিল্লাহি তায়ালা রাকআতাই সালাতিল ফাজরি সুন্নাতা রাসূলিল্লাহি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুতাওজ্জিহান ইলা জিহাতিল কা‘বাতিশ শারিফাতি আল্লাহু আকবার।
বাংলায় বললে: আমি আল্লাহ তায়ালার জন্য ফযরের দুই রাকাত সুন্নাত নামাজ পড়ছি, আল্লাহু আকবার।


ফজরের দুই রাকাত ফরজের নিয়ত এইভাবে করা যায়:-
نَوَيْتُ أَنْ اُصَلِّىَ لِلهِ تَعَاْلَى رَكَعَتَىْ صَلَوةِ الْفَجْرِ فَرْضِ اللهِ تَعَاْلَى مُتَوَجِّهًا إِلَى جِهَةِ الْكَعْبَةِ الْشَّرِيْفَةِ اللهُ أَكْبَرْ
আরবি উচ্চারণ: নাওয়াইতু আন উসাল্লিয়া লিল্লাহি তায়ালা রাকআতাই সালাতিল ফাজরি ফারজিল্লাহি তায়ালা মুতাওজ্জিহান ইলা জিহাতিল কা‘বাতিশ শারিফাতি আল্লাহু আকবার।
বাংলায় বললে: আমি আল্লাহ তায়ালার জন্য ফযরের দুই রাকাত ফরজ নামাজ পড়ছি, আল্লাহু আকবার।


যোহরের চার রাকাত সুন্নতের নিয়ত এইভাবে করা যায়:-
نَوَيْتُ أَنْ اُصَلِّىَ لِلهِ تَعَاْلَى أَرْبَعُ رَكَعَاْتِ صَلَوةِ الْظُهْرِ سُنَّةَ رَسُوْلِ اللهِ صَلّى اللهِ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مُتَوَجِّهًا إِلَى جِهَةِ الْكَعْبَةِ الْشَّرِيْفَةِ اللهُ أَكْبَرْ
আরবি উচ্চারণ: নাওয়াইতু আন উসাল্লিয়া লিল্লাহি তায়ালা আরবায়া রাকাআতি সালাতিজ জুহরি সুন্নাতা রাসূলিল্লাহি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুতাওজ্জিহান ইলা জিহাতিল কা‘বাতিশ শারিফাতি আল্লাহু আকবার।
বাংলায় বললে: আমি আল্লাহ তায়ালার জন্য যোহরের চার রাকাত সুন্নত নামাজ পড়ছি, আল্লাহু আকবার।

যোহরের চার রাকাত ফরজের নিয়ত এইভাবে করা যায়:-
نَوَيْتُ أَنْ اُصَلِّىَ لَلهِ تَعَاْلَى أَرْبَعُ رَكَعَاْتِ صَلَوةِ الْظُهْرِفَرْضِ اللهِ تَعَاْلَى مُتَوَجِّهًا إِلَى جِهَةِ الْكَعْبَةِ الْشَّرِيْفَةِ اللهُ أَكْبَرْ
আরবি উচ্চারণ: নাওয়াইতু আন উসাল্লিয়া লিল্লাহি তায়ালা আরবায়া রাকাআতি সালাতিজ জুহরি ফারজিল্লাহি তায়ালা মুতাওজ্জিহান ইলা জিহাতিল কা‘বাতিশ শারিফাতি আল্লাহু আকবার।
বাংলায় বললে: আমি আল্লাহ তায়ালার জন্য যোহরের চার রাকাত ফরজ নামাজ পড়ছি, আল্লাহু আকবার।

যোহরের দুই রাকাত সুন্নতের নিয়ত এইভাবে করা যায়:-
نَوَيْتُ أَنْ اُصَلِّىَ لَلهِ تَعَاْلَى رَكَعَتَىْ صَلَوةِ الْظُهْرِ سُنَّةَ رَسُوْلِ اللهِ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مُتَوَجِّهًا إِلَى جِهَةِ الْكَعْبَةِ الْشَّرِيْفَةِ اللهُ أَكْبَرْ
আরবি উচ্চারণ: নাওয়াইতু আন উসাল্লিয়া লিল্লাহি তায়ালা রাকআতাই সালাতিজ জুহরি সুন্নাতা রাসূলিল্লাহি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুতাওজ্জিহান ইলা জিহাতিল কা‘বাতিশ শারিফাতি আল্লাহু আকবার।
বাংলায় বললে: আমি আল্লাহ তায়ালার জন্য যোহরের দুই রাকাত সুন্নাত নামাজ পড়ছি, আল্লাহু আকবার।

মাগরিবের তিন রাকাত ফরজের নিয়ত এইভাবে করা যায়:-
نَوَيْتُ أَنْ اُصَلِّىَ لَلهِ تَعَاْلَى ثَلَاْثُ رَكَعَاْتِ صَلَوةِ الْمَغْرِب فَرْضِ اللهِ تَعَاْلَى مُتَوَجِّهًا إِلَى جِهَةِ الْكَعْبَةِ الْشَّرِيْفَةِ اللهُ أَكْبَرْ
আরবি উচ্চারণ: নাওয়াইতু আন উসাল্লিয়া লিল্লাহি তায়ালা সালাসা রাকআতি সালাতিল মাগরিবি ফরজিল্লাহি তায়ালা মুতাওজ্জিহান ইলা জিহাতিল কা‘বাতিশ শারিফাতি আল্লাহু আকবার।
বাংলায় বললে: আমি আল্লাহ তায়ালার জন্য মাগরিবের তিন রাকাত ফরজ নামাজ পড়ছি, আল্লাহু আকবার।

আসরের চার রাকাত ফরজের নিয়ত এইভাবে করা যায়:-
نَوَيْتُ أَنْ اُصَلِّىَ لَلهِ تَعَاْلَى أَرْبَعُ رَكَعَاْتِ الْعَصْرِفَرْضِ اللهِ تَعَاْلَى مُتَوَجِّهًا إِلَى جِهَةِ الْكَعْبَةِ الْشَّرِيْفَةِ اللهُ أَكْبَرْ
আরবি উচ্চারণ: নাওয়াইতু আন উসাল্লিয়া লিল্লাহি তায়ালা আরবায়া রাকাআতি সালাতিল আসরি ফারজিল্লাহি তায়ালা মুতাওজ্জিহান ইলা জিহাতিল কা‘বাতিশ শারিফাতি আল্লাহু আকবার।
বাংলায় বললে: আমি আল্লাহ তায়ালার জন্য আসরের চার রাকাত ফরজ নামাজ পড়ছি, আল্লাহু আকবার।

মাগরিবের দুই রাকাত সুন্নতের নিয়ত এইভাবে করা যায়:-
نَوَيْتُ أَنْ اُصَلِّىَ لَلهِ تَعَاْلَى رَكَعَتَىْ صَلَوةِ الْمَغْرِبِ سُنَّةَ رَسُوْلِ اللهِ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مُتَوَجِّهًا إِلَى جِهَةِ الْكَعْبَةِ الْشَّرِيْفَةِ اللهُ أَكْبَرْ
আরবি উচ্চারণ: নাওয়াইতু আন উসাল্লিয়া লিল্লাহি তায়ালা রাকআতাই সালাতিল মাগরিবি সুন্নাতা রাসূলিল্লাহি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুতাওজ্জিহান ইলা জিহাতিল কা‘বাতিশ শারিফাতি আল্লাহু আকবার।
বাংলায় বললে: আমি আল্লাহ তায়ালা জন্য মাগরিবের দুই রাকাত সুন্নত নামাজ পড়ছি, আল্লাহু আকবার।

এশার চার রাকাত ফরজ নামাজ এর নিয়ত এইভাবে করা যায়:-
نَوَيْتُ أَنْ اُصَلِّىَ لَلهِ تَعَاْلَى أَرْبَعُ رَكَعَاْتِ صَلَوةِ الْعِشَاْءِفَرْضِ اللهِ تَعَاْلَى مُتَوَجِّهًا إِلَى جِهَةِ الْكَعْبَةِ الْشَّرِيْفَةِ اللهُ أَكْبَرْ
আরবি উচ্চারণ: নাওয়াইতু আন উসাল্লিয়া লিল্লাহি তায়ালা আরবাউ রাকাআতি সালাতিল ইশা ফারজিল্লাহি তায়ালা মুতাওজ্জিহান ইলা জিহাতিল কা‘বাতিশ শারিফাতি আল্লাহু আকবার।
বাংলায় বললে: আমি আল্লাহ তায়ালার জন্য এশার চার রাকাত ফরজ নামাজ পড়ছি, আল্লাহু আকবার।

এশার দুই রাকাত সুন্নতের নিয়ত এইভাবে করা যায়:-
نَوَيْتُ أَنْ اُصَلِّىَ لَلهِ تَعَاْلَى رَكَعَتَىْ صَلَوةِ الْعِشَاْءِ سُنَّةَ رَسُوْلِ اللهِ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مُتَوَجِّهًا إِلَى جِهَةِ الْكَعْبَةِ الْشَّرِيْفَةِ اللهُ أَكْبَرْ
আরবি উচ্চারণ: নাওয়াইতু আন উসাল্লিয়া লিল্লাহি তায়ালা রাকআতাই সালাতিল ইশায়ি সুন্নাতা রাসূলিল্লাহি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুতাওজ্জিহান ইলা জিহাতিল কা‘বাতিশ শারিফাতি আল্লাহু আকবার।
বাংলায় বললে: আমি আল্লাহ তায়ালার জন্য এশার দুই রাকাত সুন্নত নামাজ পড়ছি, আল্লাহু আকবার।

বিতির এর তিন রাকাত ওয়াজিব নামাজ এর নিয়ত এইভাবে করা যায়:-
نَوَيْتُ أَنْ اُصَلِّىَ لَلهِ تَعَاْلَى ثَلَاْثُ رَكَعَاْتِ صَلَوةِ الْوِتْرِ وَاْجِبِ اللهِ تَعَاْلَى مُتَوَجِّهًا إِلَى جِهَةِ الْكَعْبَةِ الْشَّرِيْفَةِ اللهُ أَكْبَرْ
আরবি উচ্চারণ: নাওয়াইতু আন উসাল্লিয়া লিল্লাহি তায়ালা ছালাছা রাকআতি সালাতিল বিতরি ওয়াজিবিল্লাহি তায়ালা মুতাওজ্জিহান ইলা জিহাতিল কা‘বাতিশ শারিফাতি আল্লাহু আকবার।
বাংলায় বললে: আমি আল্লাহ তায়ালার জন্য বিতরের তিন রাকাত ওয়াজিব নামাজ পড়ছি, আল্লাহু আকবার।

চার রাকাত কবলাল জুমার সুন্নাতের নিয়ত এইভাবে করা যায়:-
نَوَيْتُ أَنْ اُصَلِّىَ لَلهِ تَعَاْلَى أَرْبَعُ رَكَعَاْت قَبْلَ الْجُمْعَةِ سُنَّةَ رَسُوْلِ اللهِ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مُتَوَجِّهًا إِلَى جِهَةِ الْكَعْبَةِ الْشَّرِيْفَةِ اللهُ أَكْبَرْ
আরবি উচ্চারণ: নাওয়াইতু আন উসাল্লিয়া লিল্লাহি তায়ালা আরবাউ রাকাআতি সালাতি কবলাল জুমআতি সুন্নাতা রাসূলিল্লাহি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুতাওজ্জিহান ইলা জিহাতিল কা‘বাতিশ শারিফাতি আল্লাহু আকবার।
বাংলায় বললে: আমি জুমার পূর্বের চার রাকাত সুন্নত নামাজ পড়ছি, আল্লাহু আকবার।

জুমার দুই রাকাত ফরজ নামাজের নিয়ত এইভাবে করা যায়:-
نَوَيْتُ أَنْ اُصَلِّىَ لَلهِ تَعَاْلَى رَكَعَتَىْ صَلَوةِ الْجُمْعِة فَرْضِ اللهِ تَعَاْلَى مُتَوَجِّهًا إِلَى جِهَةِ الْكَعْبَةِ الْشَّرِيْفَةِ اللهُ أَكْبَرْ
আরবি উচ্চারণ: নাওয়াইতু আন উসাল্লিয়া লিল্লাহি তায়ালা রাকআতাই সালাতিল জুমআতি ফারজিল্লাহি তায়ালা মুতাওজ্জিহান ইলা জিহাতিল কা‘বাতিশ শারিফাতি আল্লাহু আকবার।
বাংলায় বললে: আমি আল্লাহ তায়ালার জন্য জুমার দুই রাকাত ফরজ নামাজ পড়ছি, আল্লাহু আকবার।

চার রাকাত বা’দাল জুমার সুন্নাতের নিয়ত এইভাবে করা যায়:-
نَوَيْتُ أَنْ اُصَلِّىَ لَلهِ تَعَاْلَى أَرْبَعُ رَكَعَاْتِ بَعْدَ الْجُمْعَةِ سُنَّةَ رَسُوْلِ اللهِ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مُتَوَجَّهًا إِلَى جِهَةِ الْكَعْبَةِ الْشَّرِيْفَةِ اللهُ أَكْبَرْ
আরবি উচ্চারণ: নাওয়াইতু আন উসাল্লিয়া লিল্লাহি তায়ালা আরবাউ রাকাআতি সালাতি বায়দাল জুমআতি সুন্নাতা রাসূলিল্লাহি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুতাওজ্জিহান ইলা জিহাতিল কা‘বাতিশ শারিফাতি আল্লাহু আকবার।
বাংলায় বললে: আমি আল্লাহ তায়ালার জন্য জুমার পরের চার রাকাত সুন্নত নামাজ পড়ছি, আল্লাহু আকবার।

ঈদুল ফিতরের নামাজ

ঈদুল ফিতরের দুই রাকাত ওয়াজিব নামাজ এর নিয়ত এইভাবে করা যায়:-
نَوَيْتُ أَنْ اُصَلِّىَ لَلهِ تَعَاْلَى رَكَعَتَىْ صَلَوةِ عِيْدِ الْفِطْرِ مَعَ سِتَّةِ تَكْبِيْرَاتٍ وَاْجِبِ اللهِ تَعَاْلَى مُتَوَجِّهًا إِلَى جِهَةِ الْكَعْبَةِ الْشَّرِيْفَةِ اللهُ أَكْبَرْ
আরবি উচ্চারণ: নাওয়াইতু আন উসাল্লিয়া লিল্লাহি তায়ালা রাকাআতাই সালাতিল ঈদিল ফিতরি মাআ সিত্তাতি তাকবিরাতিন ওয়াজিবিল্লাহি তায়ালা মুতাওজ্জিহান ইলা জিহাতিল কা‘বাতিশ শারিফাতি আল্লাহু আকবার।
বাংলায় বললে: আমি আল্লাহ তায়ালার জন্য ঈদুল ফিতরের দুই রাকাত ওয়াজিব নামাজ পড়ছি, আল্লাহু আকবার।

ঈদুল ফিতরের নামাজ আদায় করার তরিকা
-আল্লাহু আকবার বলে নিয়ত বাধবে
-তারপর সানা পড়বে
-তারপর নামাজের তাকবিরে তাহরিমার ন্যায় কান পর্যন্ত হাত উঠিয়ে আল্লাহু আকবার বলবে এবং হাত ছেড়ে দিবে।

তিন বার সুবহানাল্লাহ বলা যায় পরিমাণ বিলম্ব করে আবার অনুরুপ হাত উঠিয়ে আল্লাহু আকবার বলবে এবং হাত ছেড়ে দিবে।

আবার অনুরুপ বিলম্ব পূর্বক হাত উঠিয়ে আল্লাহু আকবার বলে হাত বেধে আউজুবিল্লাহ, বিসমিল্লাহসহ সুরা ফাতিহা ও কেরাত ইত্যাদি সহকারে প্রথম রাকাত শেষ করে দ্বিতীয় রাকাত এর জন্য উঠবে এবং সুরা ফাতিহা ও সুরা-কেরাত মিলিয়ে তারপর প্রথম রাকাতের ন্যায় অতিরিক্ত তিনটি তাকবির বলবে।

এখানে তৃতীয় রাকাতের পর ও হাত ছাড়া অবস্থায় রাখবে। তারপর রুকুর তাকবির বলে রুকুতে যাবে এবং যথা নিয়মে এই রাকাত শেষ করবে।
(আহকামে যিন্দেগি)

ঈদুল আযহার নামাজ

দ্ইু রাকাত ঈদুল আযহার নামাজ এর নিয়ত এভাবে করা যায়:-
نَوَيْتُ أَنْ اُصَلِّىَ لَلهِ تَعَاْلَى رَكَعَتَىْ صَلَوةِ عِيْدِ الْأَضْحَى مَعَ سِتَّةِ تَكْبِيْرَاتٍوَاْجِبِ اللهِ تَعَاْلَى مُتَوَجِّهًا إِلَى جِهَةِ الْكَعْبَةِ الْشَّرِيْفَةِ اللهُ أَكْبَرْ
আরবি উচ্চারণ: নাওয়াইতু আন উসাল্লিয়া লিল্লাহি তায়ালা রাকাআতাই সালাতিল ঈদিল আজহামাআ সিত্তাতি তাকবিরাতিন ওয়াজিবিল্লাহি তায়ালা মুতাওজ্জিহান ইলা জিহাতিল কা‘বাতিশ শারিফাতি আল্লাহু আকবার।
বাংলায় বললে: আমি আল্লাহ তায়ালার জন্য ঈদুল আজহার দুই রাকাত ওয়াজিব নামাজ পড়ছি, আল্লাহু আকবার।

তাহাজ্জুদের নামাজ
তাহাজ্জুদ এর নামাজ যে কোন সুরা দিয়ে পড়া যায় উত্তম হলো দুই রাকাত করে নিয়ত করা।
তাহাজ্জুদ নামাজ এর নিয়ত:
نَوَيْتُ أَنْ اُصَلِّىَ لَلهِ تَعَاْلَى رَكَعَتَىْ صَلَوةِ الْتَّهًجُّد نَفْلِ اللهِ تَعَاْلَى مُتَوَجِّهًا إِلَى جِهَةِ الْكَعْبَةِ الْشَّرِيْفَةِ اللهُ أَكْبَرْ
আরবি উচ্চারণ: নাওয়াইতু আন উসাল্লিয়া লিল্লাহি তায়ালা রাকআতাই সালাতিল তাহাজ্জুদি সুন্নাতা নফলিল্লাহি তায়ালা মুতাওজ্জিহান ইলা জিহাতিল কা‘বাতিশ শারিফাতি আল্লাহু আকবার।
বাংলায় বললে: আমি আল্লাহ তায়ালার জন্য তাহাজ্জুদের দুই রাকাত নফল নামাজ পড়ছি, আল্লাহু আকবার।


সংকলন
মুফতি মিজানুর রহমান মাহমুদী
ইফতা: ফতোয়া ও ইসলামী আইন গবেষণা বিভাগ
(জামিয়া ইসলামিয়া দারুল উলূম মাদানিয়া, যাত্রাবাড়ী, ঢাকা-১২০৪)

সম্পাদনা: শাকিল আদনান

Tags:

নামাজ
নামাজ শিক্ষা
নামাজ পড়ার নিয়ম
ফজরের নামাজ
তারাবির নামাজ
এশার নামাজ
তাহাজ্জুদ নামাজ
ঈদের নামাজ পড়ার নিয়ম
শবে কদরের নামাজ
জুম্মার নামাজ
যোহরের নামাজ কয় রাকাত
জুমার নামাজ
জানাজার নামাজ
এশরাকের নামাজ
নামাজ শিক্ষা বই
তারাবির নামাজ কত রাকাত
যোহরের নামাজ
শবে কদরের নামাজ পড়ার নিয়ম
নামাজ পড়ার নিয়ম ও দোয়া
এশার নামাজ কয় রাকাত
ঈদের নামাজ
নামাজ শিক্ষা বই ফ্রি ডাউনলোড pdf
মাগরিবের নামাজ কয় রাকাত
জোহরের নামাজ
সালাতুল তাসবিহ নামাজ পড়ার নিয়ম
সালাতুল তাসবিহ নামাজ
কসর নামাজ
তারাবীর নামাজ
বেতের নামাজ
তারাবীহ নামাজ
নামাজ সম্পর্কিত হাদিস
শবে মেরাজ এর নামাজ
মাগরিবের নামাজ
নামাজ না পড়ার শাস্তি
নামাজ পড়ার নিয়ম কানুন
নামাজ কত রাকাত
তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ার নিয়ম
এশার নামাজ পড়ার নিয়ম
জুম্মার নামাজ কত রাকাত
শবে বরাতের নামাজ পড়ার নিয়ম
বিতর নামাজ পড়ার নিয়ম
ইহুদিদের নামাজ
বুখারী শরীফ নামাজ অধ্যায়
ফজরের নামাজ কত রাকাত
ফজরের নামাজ কয় রাকাত
নফল নামাজ পড়ার নিয়ম
জোহরের নামাজ কত রাকাত
নামাজ শিক্ষা pdf
যোহরের নামাজ কত রাকাত
বিতর নামাজ
আসরের নামাজ কয় রাকাত
নামাজ শিক্ষা বই ফ্রি ডাউনলোড
এশার নামাজ কত রাকাত
নূরানী নামাজ শিক্ষা বই ডাউনলোড
নামাজ পড়ার সঠিক নিয়ম
সহীহ নামাজ শিক্ষা বই pdf
তাহাজ্জুদের নামাজ
যোহর নামাজ কয় রাকাত
নামাজ শিক্ষার নিয়ম
সহি নামাজ শিক্ষা
শবে মেরাজের নামাজ
ইস্তেখারার নামাজ
কাজা নামাজ
নামাজ শিক্ষা বই ডাউনলোড
তারাবি নামাজ কত রাকাত
নামাজ বেহেস্তের চাবি
ইশরাকের নামাজ
জানাজার নামাজ পড়ার নিয়ম
চাশতের নামাজ
বিতরের নামাজ পড়ার নিয়ম
কাজা নামাজ পড়ার নিয়ম
নামাজ সম্পর্কে কোরআনের আয়াত
ফজর নামাজ
নামাজ ও রোজার চিরস্থায়ী ক্যালেন্ডার
তারাবির নামাজ পড়ার নিয়ম
নামাজ শিক্ষা ও প্রয়োজনীয় সূরা
নামাজ শিক্ষা বই pdf
তারাবির নামাজ ৮ না ২০ রাকাত
বেতের নামাজ পড়ার নিয়ম
জুমার নামাজ পড়ার নিয়ম
যোহর নামাজ
তাহাজ্জুদ নামাজ কয় রাকাত
তাহাজ্জত নামাজ
মহিলাদের নামাজ পড়ার নিয়ম
পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ
রাসূল সাঃ এর নামাজ
পূর্ণাঙ্গ নামাজ শিক্ষা pdf
নামাজ ভঙ্গের কারন
নামাজ শিখা
তাহাজ্জুদ নামাজ কিভাবে পড়তে হয়
আসরের নামাজ পড়ার নিয়ম
নুরানী নামাজ শিক্ষা বই
নামাজ শিক্ষার বই
নাপাক অবস্থায় নামাজ
নামাজ পরার সঠিক নিয়ম
ইমামের পিছনে নামাজ পড়ার নিয়ম
জোহরের নামাজ কয় রাকাত
মেয়েদের নামাজ পড়ার সঠিক নিয়ম
স্বপ্নদোষ হলে কি নামাজ হবে
মহিলাদের নামাজ
কছর নামাজ
নামাজ রোজার স্থায়ী সময়সূচী
নামাজ শিক্ষা বই pdf download
নামাজ photo
মুসাফিরের নামাজ
সফরের নামাজ
নামাজ না পড়ার শাস্তি হাদিস
আছরের নামাজ
জামাতে নামাজ পড়ার নিয়ম
নফল নামাজ সমূহ
কসরের নামাজ
বিতরের নামাজ
পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ এর নিয়ম
রাসুল সাঃ এর নামাজ
স্বপ্নে নামাজ পড়তে দেখলে কি হয়
তারাবীহ নামাজ কয় রাকাত
ইস্তিখারার নামাজ
জানাযার নামাজ শিক্ষা
শিয়াদের নামাজ
৫ ওয়াক্ত নামাজ
নামাজ শিক্ষা বই পিডিএফ
সহীহ নামাজ শিক্ষা
জানাযার নামাজ পড়ানোর নিয়ম
তাহাজ্জুদ নামাজ কত রাকাত
নামাজ সম্পর্কে হাদিস
জানাযার নামাজ
নামাজ পড়ার ছবি
তাহাজ্জুদের নামাজ পড়ার নিয়ম
যোহরের নামাজ কয় রাকাত
তারাবীর নামাজ পড়ার নিয়ম
দোয়া কবুলের নামাজ
নামাজ কয় রাকাত
নামাজ শিক্ষা বই ডাউনলোড pdf
শবে বরাত নামাজ পড়ার নিয়ম
হাজতের নামাজ
তারাবি নামাজ
নামাজ পড়ার নিয়ম
যোহরের নামাজ কয় রাকাত ও কি কি
নামাজ পড়ার ফজিলত
নামাজ কয় রাকাত
আসরের নামাজ টাইম
জানাযা নামাজ
নামাজ ও রোযার স্থায়ী সময়সূচী
মেয়েদের নামাজ পড়ার নিয়ম
জুম্মার নামাজ কয় রাকাত
তাহিয়াতুল ওজুর নামাজ
জুম্মার নামাজ ফরজ না ওয়াজিব
তওবার নামাজ
কোন নামাজ পড়লে কি হয়
নামাজ কত রাকাত ও কি কি
জামাতের সাথে নামাজ পড়ার নিয়ম
পাচ ওয়াক্ত নামাজ
সুন্নত নামাজ পড়ার নিয়ম
কদরের নামাজ পড়ার নিয়ম
নামাজ সংক্রান্ত আয়াত
তারাবির নামাজ ফরজ না সুন্নত
অসুস্থ ব্যক্তির ঈদের নামাজ
সহীহ নামাজ শিক্ষা pdf
ইসলামিক নামাজ শিক্ষা বই
ক্বাযা নামাজ
নামাজ কত প্রকার
রাতের নামাজ
নামাজ ভঙ্গের কারণ সমূহ
আউয়াবিন নামাজ
জুম্মার নামাজ শিক্ষা
নামাজ শেষে দোয়া
নূরানী নামাজ শিক্ষা বই
নামাজ কি?
কিভাবে নামাজ পড়তে হয়
নামাজ আমার হইল না আদায়
মেয়েদের নামাজ
কাবা শরীফের নামাজ
কাযা নামাজ
জানাজার নামাজ পড়ানোর নিয়ম
জুমার নামাজ কয় রাকাত

Comments

2 responses to “প্রশ্নোত্তরে নামাজের মাসায়েল”

  1. Rasel Mia Avatar

    পোষ্টটি পড়ে ইসলামের বিভিন্ন মাসায়ালে সম্পর্কে অনেক অজানা বিষয় জানতে পারলাম। এবং অনেক বিষয় শিখতে পারলাম। আলোচনাটি শেয়ার করার জন্য অনেক ধন্যবাদ।

    1. sakiladnan Avatar
      sakiladnan

      ধন্যবাদ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *