আমি কেনো ইসলাম গ্রহণ করলাম -ডক্টর খালেদ শেলড্রক

what is the purpose of my life

Date

Author

Blog Duration

15 minutes

আমি আজকের বক্তৃতাটি কালিমায়ে তাইয়্যেবা- লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ’র মাধ্যমে শুরু করতে চাই।

আমার বিমুগ্ধ আবেগের দাবি এটাই। কারণ আমি যথেষ্ট চিন্তা-ভাবনার পরই ইসলামকে ধর্ম হিসেবে গ্রহণ করেছি। আর আপনারা শুনে অবাক হবেন- আমার এ বিষয়ক পাঠের সূচনা ও পূর্ণতা ইসলামের পক্ষের লেখা পাঠের মাধ্যমে নয় বরং ইসলামবিরোধী লেখকদের লেখা পাঠের মাধ্যমে হয়েছে।

কীভাবে, সেটাই আজ আপনাদের জানাতে চাই।

আমার জন্ম ও পরিবার

আমার জন্ম বৃটেনের দু’জন নারী-পুরুষের ঘরে। তারা প্রটেস্ট্যান্ট চার্চের সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন। আমার বাবার ইচ্ছে ছিলো- তিনি আমাকে সেই চার্চের একজন পাদ্রীতে পরিণত করবেন। এ কারণে আমাকে ধর্মীয় কিতাবাদি পাঠ এবং মাযহাবী বিষয়ে তর্ক-বিতর্কে যুক্ত হতে দেখে তিনি খুশিই হতেন।

what is the purpose of my life

আমার আগেভাগেই এটা পরিষ্কার করে নেয়া উচিত যে ইংল্যান্ড যদিও খৃষ্টান ধর্ম বা খৃষ্টবাদের দেশ হিসেবে পরিচিত, তথাপি সেখানকার নব্বই শতাংশ মানুষই বলা চলে ধর্মীয় বিষয়ে একেবারেই অজ্ঞ। তবে আমি গর্বের সাথে উঁচু গলায় এই দাবি করতে পারি- আমার পক্ষে কোনোদিন খৃষ্টবাদের প্রচলিত রীতি-নীতির অনুসারী হওয়া সম্ভব হয়নি।

আপনারা জানেন আজকের খৃষ্টান ধর্মের ভিত্তি এক সৃষ্টিকর্তার তিন তিনটি সত্তার উপর প্রতিষ্ঠিত। আর এটি এমন একটি মতবাদ যেটি বিশ্বাস করার ক্ষেত্রে বিবেক বরাবরই বাধা হয়ে দাঁড়ায়।

খ্রিস্টান ধর্ম বিষয়ে আমার অভিজ্ঞতা

এটা কীভাবে সম্ভব হতে পারে যে বাবা-ছেলে সকল যুগে একত্রে বিদ্যমান থাকবে? কোনো এক যুগকে যদি পিতার যুগ হিসেবে নির্ধারণ করা হয় তাহলে সে যুগে পুত্রের উপস্থিতির বিষয়টি মেনে নেয়া কোনো সাধারণ বিবেকবান ব্যক্তির পক্ষেও সম্ভব নয়।

আজকের খৃষ্টান ধর্ম এমন বিপরীতমুখি ত্রিত্তবাদের উপর দাঁড়িয়ে আছে।

আপনারা এটাও জানেন যে খৃষ্টান ধর্মাবলম্বীরা ২৫ ডিসেম্বরকে ঈসা আ. এর জন্মদিন হিসেবে পালন করে। অথচ এ ব্যাপারে তারা তখনকার কোনো ব্যক্তি বা আত্মীয়ের পক্ষ থেকে প্রদত্ত কোনো প্রমাণ দেখাতে পারে না। মূলত এটি একজন পোপের মগজ থেকে সৃষ্ট অদ্ভুত ধারণা- যার ঐতিহাসিক কোনো ভিত্তি নেই। হিসেব বিজ্ঞান একে বরং ভুল হিসেবেই আখ্যায়িত করে।

Islam in europe

আসল কথা হলো- ২৫ ডিসেম্বর প্রাচীন মূর্তিপূজকদের কাছে একটি পবিত্র দিন ছিলো। তারা সূর্যের পূজা করতো। সুতরাং যখন তাদের সূর্য দেবতা- (যাকে তারা নিজেদের অস্তিত্বে আসার এবং জীবনের আশা-ভরসার কেন্দ্র মনে করতো) বছর ঘুরে এই দিনে পৌঁছলে এ দিনটিকে তারা ঈদ হিসেবে উদযাপন করতো এবং একে নিজেদের সূর্যদেবতার জন্মদিন হিসেবে পালন করতো।

পরবর্তীতে এই দিনটিকেই খৃষ্টান পাদ্রীরা ঈসা-মাসীহের আ. জন্মদিন হিসেবে ঘোষণা করে এবং এ দিনে ঈদ উদযাপন শুরু করে। কারণ, এ ব্যাপারে তাদের কাছে না ঐতিহাসিক, না প্রামাণ্য কোনো প্রকারেরই কোনো তথ্য বা দলীল নেই, যার ভিত্তিতে তারা এ দিনটিকে হযরত ঈসার আ. জন্মদিন হিসেবে পালন করে।

এমনিভাবে বছরে একদিন চাঁদের পূর্ণতাপ্রাপ্তি তথা পূর্ণিমার আগেরদিন প্রাচীন মূর্তিপূজকেরা উৎসব পালন করতো। তারা মনে করতো এদিনেই তাদের সূর্যদেবতা অন্ধকারের উপর বিজয় অর্জন করতে সক্ষম হয়। সুতরাং এদিন তাদের প্রভুর সামনে থেকে বাধা দূর হয়ে তার শক্তি আরো বৃদ্ধি পায়।

এই দিনটিকেও খৃষ্টান পাদ্রীরা নিজেদের উৎসব হিসেবে পালন করার জন্য বেছে নিলেন। ওদের সূর্যদেবতার মতো এ দিনটিকে খৃষ্টানরা ঈসার আ. শক্তিপ্রাপ্তির দিন হিসেবে গণ্য করে এবং ‘ইস্টার’ উৎসব পালন করে থাকে।

পিতা-পুত্রের খৃষ্টীয় বিশ্বাসও নি:সন্দেহে প্রাচীন মূর্তিপূজকদের অন্ধবিশ্বাসগুলো থেকেই নেয়া। প্রমাণ, বৌদ্ধ ধর্মের অনুসারীরা যেভাবে তাদের বুদ্ধের শৈশবকে আড়ম্বরের সাথে পালন করে খৃষ্টানরাও ঈসার আ. শৈশবকে সেভাবেই পালন করে থাকে। আজকের খৃষ্টীয় আচারগুলো মূলত এভাবেই বিভিন্ন ধর্ম ও সম্প্রদায় থেকে ধার করা।

খৃষ্টানরা যেভাবে ঈসা-মাসীহের জীবনকে তুলে ধরতে চায় বাস্তবতা হলো এর ঐতিহাসিক কোনো ভিত্তি নেই।

কোনো উৎসাহী ব্যক্তি যদি তথ্যের আলোকে এসব বিচার-বিশ্লেষণ করতে শুরু করে তাহলে নিশ্চিতভাবে তাকে খালি হাতেই ফিরতে হবে। এসবের অনুমান আপনারা বিভিন্ন দেশের খৃষ্টানদের বিভিন্ন রকম উদযাপন ও উপস্থাপনার বৈচিত্র্য দেখেই অনুমান করে নিতে পারেন।

অস্ট্রেলিয়ার গির্জায় আপনি এক ধরণের ইবাদত দেখতে পাবেন এবং ইটালিতে আবার অন্যরকম। দেশ ও সম্প্রদায়ভেদে এভাবেই বদলাতে থাকে তাদের ইবাদত। সবমিলিয়ে হযরত ঈসা-মাসীহের নিশ্চিত কোনো স্বরূপ আপনি কিছুতেই উপলব্ধি করতে পারবেন না।

খৃষ্টানদের বিভিন্ন গ্রুপে খৃষ্টবাদের মূলনীতি এবং সৃষ্টিকর্তার সত্তা বিষয়ক মৌলিক বহুরকম দ্বন্দ্ব রয়েছে। খৃষ্টবাদের এই দ্বন্দ্বগুলোই আমাকে অন্যান্য ধর্ম বিষয়ে পাঠ করতে উদ্বুদ্ধ করে তোলে।

সুতরাং ইংল্যান্ডের লাইব্রেরিতে বিদ্যমান পৃথিবীর বিভিন্ন ধর্মের প্রায় সবগুলো বই-ই আমি পড়া শুরু করলাম।

পাশ্চাত্যের ইসলামোফোবিয়া বা ইসলামভীতির কারণ

সেখানে আমি সব ধর্মেরই মৌলিক ইলমী কিতাবগুলো পেয়েছি যেগুলোর মাধ্যমে মূল বিষয়াদি সম্পর্কে পর্যাপ্ত পরিমাণে অবগত হওয়ার সুযোগ পেয়েছি। তবে ইসলাম সম্পর্কে আমি যেসব কিতাব পেয়েছি সেগুলো সবই ছিলো ঘৃণা ও বিদ্বেষে ভরপুর। ওসবের নির্যাস ছিলো ইসলাম কোনো পূর্ণাঙ্গ ধর্মমত নয়, খৃষ্টবাদ থেকে ধারে সংগৃহীত কিছু বাণীর সমন্বয়ে এই ধর্মটির উদ্ভব ঘটেছে।

অলৌকিকভাবে আমার মনে তখন প্রশ্ন তৈরি হলো- ইসলাম যদি এমনই দুর্বল, অপূর্ণ এবং অবাস্তব একটি ধর্ম হবে তাহলে শুধু এই ধর্মটির বিরুদ্ধেই এতো প্রশ্ন, অভিযোগ, বিদ্বেষ ও ঘৃণা এবং শক্তি ব্যয়ের কী এমন ঠেকা পড়লো?

কীভাবে যেনো এমন একটি ধারণা আমার মনে বদ্ধমূল হয়ে বসে গেলো যে অপূর্ণতা বা দুর্বলতা নয় বরং ইসলামের পূর্ণতা, শক্তি এবং জীবনাচার সম্পর্কে এদের যথেষ্ট পরিমাণ ভীতি এবং শংকা না থাকলে এরা ইসলামের বিরুদ্ধে এভাবে সর্বশক্তি নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়তো না।

আমি তখনই প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হলাম ইসলাম সম্পর্কে আমি যতগুলো বই পাবো সবগুলো এক এক করে পড়ে শেষ করবো।

অভিযোগকারীদের প্রশ্ন ও আপত্তি নিয়ে ইসলামের কোনো ক্ষতি নেই। এই লোকগুলো যদিও খুবই হিং¯্র ও অমানবিকভাবে ইসলামের বিরুদ্ধে আক্রমণ করে থাকে তবুও তাতে করে বরং ইসলামের শক্তি এবং ব্যাপকতা সম্পর্কেই ধারণা পাওয়া যায় এবং এতে করে দাওয়াতের নতুন সব পথ খুলে যায়।

কবি বলেন- ইসলাম তো আল্লাহর নূর। কাফেরদের দুর্বল ফুৎকারে দ্বীনের এই চেরাগ নিভে যাবে না।

হেদায়াত লাভের সৌভাগ্য ও পারিবারিক টানাপোড়েন

এ পর্যায়ে যখন আমি হেদায়াত লাভের দুর্লভ সৌভাগ্য অর্জন করলাম এবং আমার হৃদয়ের পর্দা থেকে প্রতিনিয়ত আওয়াজ পেতে থাকলাম যে আমি তো মুসলমান; তখনই আমি সরাসরি মুসলমানদের দলবদ্ধ হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললাম।

 আমি কেনো ইসলাম গ্রহণ করলাম

আমাকে একজন বললো- আপনি প্রখ্যাত ইংলিশ নওমুসলিম ব্যারিস্টার আব্দুল্লাহর সাথে যোগাযোগ করুন, তিনি আপনাকে সবরকম সহযোগিতা করবেন। আপনারা অনুমান করতে পারেন এমন একজন ব্যক্তির সাথে মিলিত হতে পারাটা আমার জন্য কতোটা আনন্দের ব্যাপার ছিলো?

কারণ একমাত্র তিনিই এমন একজন ব্যক্তি ছিলেন যার সাথে আমি সবকিছু খুলে বলতে পারতাম এবং স্বাধীনভাবে নিজের ধর্মীয় চিন্তা ও বিশ্বাসগুলো শেয়ার করতে পারতাম। আর এই ব্যারিস্টার আব্দুল্লাহই এমন একজন ব্যক্তি ছিলেন যার একক প্রচেষ্টায় ইংল্যান্ডে পাঁচ শয়েরও বেশি মানুষ ইসলাম গ্রহণের সৌভাগ্য অর্জন করেছে।

এসময় আমি ইচ্ছে করলাম আমার ইসলাম গ্রহণের সংবাদ আমার বাবাকে জানিয়ে দেবো এবং জানিয়েও দিলাম। আমার ধারণা ছিলো আমার ইসলাম গ্রহণের খবর শুনে বাবা তো মনক্ষুণ্য হবেন তবে সেটা খুব মারাত্মক হবে না। কিন্তু আমার ধারণাকে ভুল প্রমাণিত করে তিনি মারাত্মকরকম মর্মাহত হলেন। শুধু তিনিই নন আমার পুরো বংশের লোকেরাই খুব কষ্ট পেলেন।

তাদের এই মনোকষ্ট কমাতে পারার একটাই মাধ্যম ছিলো- সেটা হলো আবারো আমার (নাউযুবিল্লাহ) খৃষ্টধর্মে ফিরে যাওয়া। আজ আমি অত্যন্ত আনন্দের সঙ্গে ঘোষণা করছি, ইসলামের আঁচল আঁকড়ে ধরে প্রায় পঁয়ত্রিশ বছর কেটে গেলো, আমি উত্তোরোত্তর ইসলামের মৌলিক আকিদায় আরো বেশিরকম বিশ্বাসী এবং ইসলামের ফাজায়েল এবং সৌন্দর্য্যের উপলব্ধি করার ক্ষেত্রে আরো বেশিরকম সমর্থ হয়েছি।

আল্লাহর কাছে অধম আমার নিবেদন

 ইসলাম- আমি কেনো ইসলাম গ্রহণ করলাম

আমি যখন থেকে ইসলাম গ্রহণ করেছি তখন থেকেই পুরোপুরি এর যাবতীয় বিধিবিধান মেনে চলেছি। এমন দাবি করছি না যে আমি আল্লাহর ওলী, তবে এটুকু বলতে পারি- ইসলামের ফারায়েজ আদায়ে আমি কোনো ত্রুটি করি না।

আমার পরিপূর্ণ বিশ্বাস আছে, একদিন পুরো দুনিয়াটাই ইসলামের ছায়াতলে আসবে।

তার মানে এই নয় যে ইসলাম শুধু নিজের শক্তি আর সৌন্দর্য্যরে মাধ্যমেই পুরো পৃথিবীতে আধিপত্য বিস্তার করেবে। এক্ষেত্রে আমাদেরকে আরো সতর্ক হতে হবে এবং ইসলামের মূলনীতিগুলোকে আমলের মাধ্যমে নিজেদের জীবনে প্রতিষ্ঠিত করে সারা পৃথিবীর সামনে পেশ করতে হবে।

আমরা ঠিকঠাক ইসলাম মানছি তো?

বিভিন্ন ইসলামী রাষ্ট্র সফর করে আমি এই বাস্তবতায় এসে উপণীত হয়েছি যে, যেসকল রাষ্ট্রে মুসলমানেরা সংখ্যাগুরু সেখানে তারা আমলের ক্ষেত্রে যথেষ্ট দুর্বল, অসচেতন এবং বিভিন্ন গ্রুপে বিভক্ত।

আর যেসব রাষ্ট্রে তারা সংখ্যায় কম সেখানে তারা আমলে এবং ইসলামের আকায়েদ ও ফারায়েজগুলো নিজেদের জীবনে বাস্তবায়নে সদা তৎপর এবং খুবই আন্তরিক। যদি দেশে দেশে আমরা ইসলামের আমলী বাস্তবতা নিজেদের জীবনে ফুটিয়ে তুলতে পারি তবে এটা এক অনন্য ব্যাপার হবে।

সারা পৃথিবী অবাক বিস্ময়ে দেখবে ইসলামের সৌন্দর্য্য। এটা হবে ইসলামের আমলী দাওয়াত, যা বিমুগ্ধ করবে বিশ্ববাসীদের।

এটা এক সাধারণ কথা যে অমুসলিমেরা যখন কোনো মুসলিমকে ইসলামের বাইরে বা বিপরীতে কাজ করতে দেখে তখন তারা নিজেদের দৃষ্টিভঙ্গির আলোকে ইসলামের দুর্বল স্বরূপটি কল্পনা করে নেয় এবং চূড়ান্তরকম হতাশ হয়।

আমি তো মনে করি তাদেরকে যদি বলাও হয় এসব একান্তই ব্যক্তির দুর্বলতা বা ত্রুটি, ইসলামের নয়; তখন তো তারা বলে বসবে বা বলার সুযোগ পাবে যে এসবে যদি কল্যাণ ও সৌন্দর্য্যই থেকে থাকে তাহলে ইসলামের অনুসারীরাই সেসব উপেক্ষা করছে কেনো?…

তাদেরই তো বেশি করে এসব মেনে চলার দরকার! উদাহরণস্বরুপ বলা যায় কোনো মুসলিম যদি অমুসলিম কারো সাথে বৈঠকে মিলিত হয় এবং সেখানে যদি শরাব পেশ করা হয় আর মুসলমান ব্যক্তি সেটাকে নিজের মুক্ত চিন্তার অবকাশ বা এমন কিছু একটা ভেবে গ্রহণ করে নেয় তাহলে তার এই কাজ অমুসলিমদের কাছে এ কথার প্রমাণ হবে যে মুসলিমেরাই নিজেদের ধর্মীয় শিক্ষার বিস্তৃতি ও শক্তির বিষয়টি বিশ্বাস করে না।

নয়তো তারা নিজেরা প্রথমে এসবের উপর আমল করতো এবং অন্যদের সামনে ইসলামের শিক্ষগুলোকে আদর্শ হিসেবে উপস্থাপন করার প্রয়াস পেতো।

এজন্যই বলি যে প্রতিটি ব্যক্তিই নিজ নিজ ধর্মের একজন যোগ্য দাঈ হবার সুযোগ রাখে। এটা খুব সহজে হতে পারে কেবল নিজেদের ধর্মীয় নির্দেশাবলী পালন করা এবং নিষেধাজ্ঞাগুলো বর্জন করে চলার মাধ্যমেই।

কুরআনে কারীম শুধু ধর্মীয় বিধানাবলীরই সংকলন নয় বরং কুরআন হলো মানুষের ব্যক্তিগত এবং গোষ্ঠীগত জীবনের সকল বিষয়েরই পথপ্রদর্শক। আর এই বাস্তবতাটা আমি তখনই বুঝতে পেরেছিলাম যখন আমি ইসলাম বিষয়ক অধ্যয়ন সবেমাত্র শুরু করেছি।

যদিও যেসব অনুবাদের সাহায্যে আমি আমার পাঠ শুরু করেছিলাম সেগুলো থেকে ইসলামের পবিত্র শিক্ষাকে অপসারনের চূড়ান্ত অপচেষ্টা করা হয়েছে।

ইসলাম ছাড়া আর কোনো ধর্মই নেই যাতে সব রকমের ইবাদাতকে সরাসরি মহান রবের প্রতি নির্দিষ্ট করে দেয়া হয় এবং বিশুদ্ধ একক সৃষ্টিকর্তার ঘোষণা করা হয়।

খৃষ্টবাদ তো মানুষের মাথাকে নিজেদের হাতে তৈরি মূর্তিগুলোর সামনে অবনত করতে বাধ্য করে। সূরায়ে ইখলাসে ইসলামের যে তাওহীদের বর্ণনা এসেছে তার মোকাবেলায় খৃষ্টবাদের এই প্রকাশ্য শিরকের কী জবাব আছে?

“হে নবী আপনি বলে দিন যে আল্লাহ এক। তিনি অমুখাপেক্ষী। তিনি কারো থেকে জন্মগ্রহণ করেননি। তাঁর থেকেও কেউ জন্মগ্রহণ করেনি। তাঁর সমকক্ষ কেউ নেই।” (সূরা ইখলাস)

কোনো সন্দেহ নেই, যে প্রভুর ইবাদাতের জন্য আল কুরআন পথ প্রদর্শন করে তার মধ্যে কোনো ত্রুটি নেই। তিনি সকল গুণের আধার। মানবতা যখন মূর্খতা এবং অজ্ঞতার ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছিলো, তখন তাদের হাতে-কলমে বানানো প্রভু তাদের সাথে পরিহাস করছিলো।

আফসোস, আজকের আধুনিক যুগে এসেও প্রভু বিষয়ক মনুষ্য চিন্তার সেই একই অজ্ঞতার চর্চা আমাদেরকে দেখে যেতে হচ্ছে। কিন্তু ইসলামের যৌবনের প্রকাশ আমাদের মসজিদগুলোতে দেখা যাবে বা যেতে পারে যেখানে না থাকবে কোনো মূর্তি না থাকবে কোনো ছবি, যা মানুষের মনকে আল্লাহ ছাড়া অন্য কোনো দিকে আকৃষ্ট করতে পারে।

কেননা একক আল্লাহই সকল পরিপূর্ণতার কেন্দ্র এবং তিনিই সব ইবাদাতের উপযুক্ত। মানবতাকে এই উন্নত স্তরে পৌঁছানোর একমাত্র কৃতিত্ব নবীয়ে আরাবী মুহাম্মাদ সা. এর, যিনি মূর্তিসমূহ ভেঙেছেন, গোপন-প্রকাশ্য সকল শিরকের পুরনো চেহারাকে মিটিয়ে দিয়েছেন এবং মানবতাকে লাঞ্চণার জায়গা থেকে রক্ষা করে মর্যাদার এমন স্তরে উন্নীত করে দিয়েছেন, সবদিক থেকেই সে যার উপযুক্ত ছিলো।

ইসলামের সৌন্দর্য

ইসলামী ভ্রাতৃত্বের বিমুগ্ধকর বৈশিষ্ট এই যে, পৃথিবীর যে কোনো প্রান্ত যেখানে মুসলিমদের বসতি আছে আপনি সেখানে যান- দেখবেন একবারের জন্যও নিজেকে আপনার আগন্তুক মনে হবে না। আপনি বরং চারপাশে আরো বেশি করে প্রিয়, পরিচিত এবং ভাইয়ের মতো আপন মানুষের চরিত্র দেখতে পাবেন।

সুতরাং ইসলামই আমাদের জন্য যথেষ্ট, সাম্যবাদ-মানবতাবাদ ইত্যাদির নামে কমিউনিজম বা অন্য কোনো ইজমের দরকার নেই।

রাজনৈতিক মতবাদগুলো যে সকল সৌন্দর্য্যরে দাবিদার সেগুলো তো আমাদের ধর্মে আরো পূর্ণ ও বিকশিতরূপে বিদ্যমান। আর যেসব মন্দ বিষয় থেকে তারা মুক্ত হওয়ার দাবিদার, সেগুলো থেকে আমাদের ধর্ম সম্পূর্ণরূপে পবিত্র।

ইসলাম হলো ভারসাম্যপূর্ণ একটি ধর্ম। একই সাথে ইসলাম হলো একটি আমলী প্রোগ্রামের নাম, যা প্রতি যুগে প্রতিটি দেশে মানব সমাজের সাফল্য ও কল্যাণের ধারক-বাহক। ইসলামী ভ্রাতৃত্ব সর্বপ্রথম এসবের মাধ্যমেই জানা যায়।

এটি মূলত একটি আন্ত:সাম্প্রদায়িক প্লাটফর্ম- যা পারিপার্শ্বিক উদ্দেশ্য ও শর্তাদি থেকে মুক্ত, আর এর খুঁটি জাতি ও রাষ্ট্রসংক্রান্ত মতানৈক্যসমূহ থেকে শুধু মুক্তই নয় বলা যায় অজ্ঞ।

ইসলামী ভ্রাতৃত্বের এই বন্ধন এতোটাই সুদৃঢ় যে ধনী-গরীব বা এই জাতীয় সামাজিক অসাম্য সে বন্ধনকে এতটুকুন আলাদা করতে পারে না।

যখন আমি দ্বীনে ইসলামের এই মূলনীতি সম্পর্কে অবগত হতে পারলাম তখনই বুঝে গেলাম যে ইসলাম নিজস্ব সৌন্দর্য্যের আলোকেই দুনিয়াবী বা আসমানী সকল ধর্ম বা মতবাদ থেকে স্বতন্ত্র বা স্বমহিমায় উজ্জ্বল। এ পর্যায়ে আমি আমার ধর্ম পরিবর্তনের সার্থকতার বিষয়ে আরো নি:সন্দেহ হয়ে গেলাম।

আজকের আমরা বনাম সাহাবায়ে কেরাম

ইসলামের আরো একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য যা অমাকে খুবরকম আকৃষ্ট এবং আমার দিলকে খুব প্রভাবিত করেছে তা হলো শরাব নিষিদ্ধ করা।

এটি এমনই বিরল এক সৌন্দর্য্য যা থেকে অন্যান্য ধর্মীয় কিতাবাদি পুরোপুরি নীরব। আর খৃষ্ট ধর্মে তো এই সকল অনিষ্টের মূলকে আমরা উৎসাহিত করতে দেখি। যেমন সেন্ট পোলিস নিজের অনুসারীদের উপদেশ দিচ্ছেন- পরিপাকতন্ত্রের সুস্থতার জন্য অল্প-বিস্তর শরাব পান করো বা পানিতে ভর্তি পাত্রের মদের পাত্রে পরিণত হওয়ার ঘটনা – আমি মানছি যে এ ধর্মে মদের বিষয়ে অনুৎসাহ প্রদান ও নিষেধাজ্ঞার কথাও এসেছে।

alcohol is haram in islam-  ইসলাম

তবে আমি সেসব বাক্যগুলোকেও ভুলে যেতে পারি না যেগুলোতে মদ পানকে উৎসাহিত করা হয়েছে। এখন বলুন তাহলে আমরা কোনটা মানবো?… শরাব পানের স্বাধীনতা না শরাব বর্জনের নিষেধাজ্ঞা?

এই কিছুদিন আগে যুক্তরাষ্ট্র মদ-পানীয়ের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছিলো। কিন্তু নতুন সাংস্কৃতিক বিপ্লবের সকল উপাদান বিদ্যমান থাকার পরও তাদেরকে পিছু হটে যেতে হয়েছে। ওদের এই যুদ্ধপ্রচেষ্টাকে কি আর রাসূলে আরাবীর সা. সে প্রচেষ্টার সাথে তুলনা করা যায়- আল্লাহর হুকুম আসার পর তিনি শুধু মুসলিমদের জানালেন যে মদ-শরাব হারাম, তো সাথে সাথে সাহাবারা মদের সকল পাত্র ছুড়ে ফেলেছেন।

অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে মদীনার সড়কগুলো মদের নদীতে পরিণত হয়েছিলো। ইউরোপ-আমেরিকার সেসব জ্ঞানী ব্যক্তি যাদের পরামর্শে কিছুদিনের জন্য শরাব পানে অনুৎসাহিত করে অভিযান পরিচালিত হলো তারা মুখে হয়তো স্বীকার করবে না, তবে তাদের অন্তর নিশ্চয়ই মানব জাতির সংশোধনে মহানবীর সা. উত্তম প্রভাব এবং পথ প্রদর্শনের সাফল্যের স্বীকার করছে।

স্বাস্থ্যবিদ্যা আমাদের জানাচ্ছে যে শূকরের গোশত শরীরের জন্য ক্ষতিকর। কারণ, গবেষণালব্ধ অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে যে এর মাংসে এমন কিছু নাপাকি আছে যাতে আগুনও কোনো প্রভাব ফেলতে পারে না। বরং রান্নার পরও তা থেকে যায়।

halal vs haram in islam

যদিও খৃষ্টধর্মের কিতাবে শুকরের গোশতের বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা এসেছে তবুও পৃথিবীজুড়ে ব্যাপকভাবে তারাই শূকরের মাংস ভক্ষণ করে থাকে। এক্ষেত্রে তারা চিকিৎসা শাস্ত্র বা ধর্মীয় নিষেধাজ্ঞা কোনোটারই পরোয়া করে না।

এর ঠিক বিপরীতে মুসলিমদের অবস্থান। তারা ধর্মীয় নিষেধাজ্ঞার কারণে সম্পূর্ণরূপে এটা বর্জন করে চলে। সন্দেহ নেই, যেহেতু অধিকাংশ খৃষ্টানরা জানে- তাদের কাছে বিদ্যমান ইঞ্জিল শরীফটি হযরত ঈসার আ. ইন্তেকালের পর লিখিত এবং যেহেতু তাদের সেসব মৌলিক বিতর্কসমূহ সম্পর্কিত জ্ঞান রয়েছে যা তাদের কিতাবগুলোতে অধিকাংশরূপে পাওয়া যায় এজন্য সেই জ্ঞান ও অবগতি তাদেরকে তাদের ধর্মীয় বিধান উপেক্ষা করতে একপ্রকার বাধ্য করেছে।

অন্যদিকে মুসলিমদের পূর্ণ বিশ্বাস রয়েছে, যে কুরআন আজ তাদের হাতে বিদ্যমান সেটাই ঐ কুরআন যা নবীজীর সা. প্রতি অবতীর্ণ হয়েছিলো। তাতে বিন্দুমাত্র পরিবর্তন আসেনি।

উল্লেখিত বাস্তবতাগুলোকে জানার পর আমি যখন সাধারণ ইসলামী বিশ্বাসগুলো পর্যবেক্ষণ করতে শুরু করলাম তো সকল ইসলামী বিশ্বাসকে আমি যুক্তির নিরিখেও পুরোপুরি সঠিক পেলাম।

বিশুদ্ধ একত্ববাদ যা ইসলামের মৌলিক আকিদা, এটাই বিশুদ্ধতম অকিদা। যার মাধ্যমে মানুষ অবগত হতে পেরেছে প্রভুর একত্ব, সৃষ্টিকতার একত্ব, পৃথিবীর স্রষ্টা যিনি সকল গুণের পূর্ণতায় একাই পরিপূর্ণ ও সুষমামন্ডিত। এর পাশাপাশি একমাত্র ইসলামই পৃথিবীর সকল নবী-রাসূলের সত্যতার বিষয়ে স্বীকারোক্তি দিয়েছে।

মুসলিম জাতি পরস্পরকে যে সালাম দেয় তা কতোই না চমৎকার। এর অর্থ কতোই না হৃদয়গ্রাহী। আর যে পদ্ধতিতে সালাম দেয়া হয় তা কতোই না আকর্ষণীয়। বিশেষ করে মাথা ও হৃদয় বরাবর হাতে ইশারা করা যা কিনা শরীরের অন্যসব অঙ্গ থেকে উত্তম।

এই সালামের সাথে পৃথিবীর আর সকল জাতি ও গোত্রের সালামের সাথে কিসের তুলনা?

ইসলামের বিরুদ্ধে যত অভিযোগ

কিছু ইউরোপীয় অপবাদ আরোপ করে- ইসলাম বিস্তৃতি লাভ করেছে তরবারীর জোরে, এটা অত্যন্ত নীচু পর্যায়ের মিথ্যে। যারা অভিযোগ করে তারাও জানে এটা ভ্রান্ত এবং অযৌক্তিক এক অভিযোগ। কারণ এটা একদিকে যেমন প্রকৃত ইতিহাসের বিকৃতি তদ্রুপ ইসলামের মূলনীতিরও বিরোধী।

ইসলাম যদি তরবারির জোরেই বিস্তৃতি লাভ করে থাকে তাহলে ইসলামী রাষ্ট্রসমূহে যেসকল গীর্জা, মূর্তিসমূহ বা অন্যান্য ইসলামবিরোধী বিষয় ও জিনিস যা ইসলামের সূচনাকাল থেকে চলে আসছে এসবের অস্তিত্বও থাকতো না।

তারপর আবার কুরআনে কারীমের অকাট্য আয়াতগুলোর সামনে এসব অর্থহীন মন্তব্যের কী জবাব আছে? কুরআন বলছে- দ্বীনের বিষয়ে কোনো জবরদস্তি চলবে না। হে নবী, আপনাকে কাফেরদের ব্যাপারে কর্র্তৃত্বকারী বানানো হয়নি। বলে দিন- ‘তোমাদের দ্বীন তোমাদের। আমার দ্বীন আমার’।

তরবারির জোরে ধর্মের প্রসার ঘটাবার চেষ্টা তো তাদের প্রক্রিয়া, ধর্মের নামে স্পেনের মুসলিমদের ওপর তারা যে নির্যাতন চালিয়েছে সেসবের বর্ণনায় ইতিহাসের পাতা আজো রক্তাক্ত হয়ে আছে।

আর খৃষ্টানরা তো নিজেরাই স্বীকার করে যে তাদের এক রাজা যখন জার্মানীতে প্রবেশ করে তখন নির্দেশ দিয়েছিলো- কোনো ব্যক্তি খৃষ্টধর্ম গ্রহণ না করলে তাকে হত্যা করতে হবে। সুতরাং বলাই যায় তরবারির জোরে যদি কোনো ধর্ম বিস্তার লাভ করেই থাকে সে ইসলাম নয়, অন্য কোনো ধর্ম।

অনেক তো বলা হলো। আমি এ বিষয়ে আপনাদের কাছে যা বলতে চাই সব বলা তো সম্ভব না। আমি আবারো আপনাদের সামনে ঘোষণা করছি- যতো বেশি করে আমি ইসলাম সম্পর্কে অবগত হওয়ার সুযোগ পাই ইসলাম সম্পর্কে আমার শ্রদ্ধা-ভক্তি ততোই বেড়ে যায়।

আমি এটা বলতে চাচ্ছি না যে ইসলাম সম্পর্কে আমি পুরোপুরি জেনে ফেলেছি। তবে প্রয়োজন অনুযায়ী আমি জানার প্রচেস্টা চালিয়ে যাচ্ছি। অল্লাহ এবং রাসূলের সা. তরবারি উপাধিপ্রাপ্ত বীর মুজাহিদ খালেদ বিন ওয়ালিদ ইসলামের বিজয়সমূহে যে বীরত্ব, বাহাদুরি এবং বুদ্ধিমত্তার সাথে নিজের ভূমিকা পালন করে গেছেন তাতে মুগ্ধ হয়ে আমি তার নামে আমার নাম রেখেছি।

যুবকদের ওপর ইসলামের বড় যিম্মাদারি অর্পিত হয়েছে

আজকের যুবকদের ওপর ইসলামের বড় যিম্মাদারি অর্পিত হয়েছে। তাদের বীরত্ব এবং উদ্যমের দরকার মনে করে ইসলাম। ইসলামের সেবক এই আমরা তো বৃদ্ধ হয়ে গেছি। যুবকরা কিন্তু ইসলামের প্রসার ও বিস্তারে অনেক ভূমিকা পালন করে যেতে পারে।

এজন্য নিজের সম্ভাব্য কোনো সুযোগ অবহেলায় নষ্ট করা যাবে না। তাহলে এই আঞ্জুমান আপন লক্ষ্যপানে দ্রুত এগিয়ে যেতে পারবে। তাতে ব্যাপক উপকৃত হতে পারবে ইসলাম এবং বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে থাকা আজকের বিপর্যস্ত মুসলিমেরা।

বড়দের অপেক্ষায় বসে থাকা ঠিক হবে না। আসল ও মৌলিক কাজটা যুবকদেরই করতে হবে। কারণ, যুবকরা পূর্ণ উদ্যমে এগিয়ে এলে মুসলিম জাতির অগ্রযাত্রা কেউ আটকাতে পারবে না।

অতীতে পারে নি, ইনশাল্লাহ ভবিষ্যতেও পারবে না।

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *