আমরা ভালো আছি। পড়াশুনা-অফিস-ব্যবসায় কিংবা অন্যসব কাজ কোনোটাই তো থেমে নেই। বিছানায় গেলে ঘুমুতে দেরি হয় না। খাবারে অরুচি হয় না একটুও। এ যুগে এরচে’ ভালো থাকা আর কী হতে পারে?…গবেষকদের ধন্যবাদ, কতোটুকু ভালো থাকলে ভালো আছি বলা যায়- এ নিয়ে এখনো তারা কোনো মানদণ্ড দাঁড় করান নি। আমাদের ভালো থাকাটা আজকাল এতো ভালো অবস্থায় পৌঁছেছে যে, জীবনমৃত শব্দের অর্থ দেখতে এখন আর বাংলা একাডেমীর দ্বারস্থ হওয়া লাগে না। ফোনে অপরিচিত কণ্ঠের আভাস পেলে বুক কেঁপে ওঠে। মাঝরাতে হঠাৎ ঘুম ভাঙে, এমনিই। ভাবনারা সব কেমন গুলিয়ে যায়। প্রতিদিনের এতো ব্যস্ততা, জ্যাম-ধূলোবালির চিরচেনা এ ঢাকা দেখে কে আন্দাজ করবে- এই ক’দিন আগেই এখানে ঘটে গেছে ইতিহাসের নিষ্ঠুরতম হত্যাযজ্ঞ? স্বাধীন একটি দেশের রাজধানীর বুকে এভাবে মানুষ খুন হতে পারে, উত্তরাধুনিককালকে এক লমহায় অন্ধকার যুগে টেনে নেয়া যেতে পারে, এভাবে; তা-ই বা কে বিশ্বাস করতে চাইবে?
আমার এক বন্ধু, ক’মাস আগেও চাঁদপুরে গিয়ে দারুণ দু’টি দিন কাটিয়ে এসেছি ওর কাছ থেকে। আমাদের পুরো ক্লাস মাতিয়ে রাখতো সে একাই। এখন ও প্রায় বোবা। না, অসুস্থ নয়- কথা ঠিকই বলতে পারে। স্থানীয় একজনকে নিয়ে ৫ মে সকালে অন্য সবার মতো ঢাকায় এসেছিলো। ফিরতে হয়েছে একা। সঙ্গীর লাশ কাঁধে নিয়ে তার ভাষায় অসংখ্য মৃতদেহ মাড়িয়ে যাওয়ার ভয়াবহ অভিজ্ঞতা ওকে জীবন্ত লাশে পরিণত করেছে। জীবন থেমে নেই। চলছে কাজও। কিন্তু কবে কিংবা আদৌ কখনো স্বাভাবিক হতে পারবে এ তরুণ?…
ঢাকা তার পুরনো চেহারায় ফিরেছে একদিন পরই। মানুষগুলোও। কোনো পরিবর্তন কি তাহলে সত্যিই নেই! এতগুলো জীবন, নিষ্পাপ কিশোর-বৃদ্ধদের ওমন বুকফাটা আর্তনাদ একদমই হাওয়ায় মিলিয়ে গেলো?…বাস্তবতা তো এমনই। পরিবর্তন বলতে শুধু এটুকু-
রাজনীতির সমাপ্তিহীন সংলাপে এখন আর বিভোর হয় না ঢাকার মানুষ। তির্যক মন্তব্য আর প্রাণখোলা হাসিতে জমে ওঠে না লোকাল বাসগুলোর অনির্ধারিত আড্ডা।
ওরা এখন বড় শান্ত, বড়ই নিরীহ আর গোবেচারা টাইপের। কাজ আর বাসা ছাড়া অন্যকিছু বোঝে না। হয়তো ভাবেও না।
ঘটনার পর থেকেই হতাহতের সংখ্যা নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়েছে, এখনো চলছে। সন্দেহ নেই, ভবিষ্যতেও চলবে। আমাদের সাধু মিডিয়ায় নিহতের সর্বোচ্চ সংখ্যা এসেছে ৫০ এরও কম। নিশ্চিত না করলেও আল জাজিরাসহ আন্তর্জাতিক ক’টি মিডিয়া ও মানবাধিকার সংগঠন ‘শত শত’ তত্ত্বের সত্যতার প্রতি ইঙ্গিত জানিয়েছে। বিএনপি-জামায়াতের দাবি হাজার হাজার এবং এখনো পর্যন্ত হেফাজত নিখোঁজ সেলের অনুমান দু’হাজারের মতো। সংখ্যা যাই হোক, এসব নিরর্থক তর্কের জেরে হতাহতের মূল ব্যাপারটিই উপেক্ষিত থেকে গেছে।
একটা জীবনের মূল্য কতোটা নিচে নেমে গেলে, এবং…এবং আমার আপনার মতোই একটা মানুষের মৃত্যু কতোটা স্বাভাবিক হতে পারলে সংখ্যাতত্ত্বের এই নোংরামিতে আমরা মেতে উঠতে পারি- শাপলা চত্বরের নির্মম ট্রাজেডি চোখে আঙুল দিয়ে আসলে সেটাই দেখিয়ে দিচ্ছে।
বর্তমান সরকারের সাড়ে চার বছরে, বিশেষ করে গত ক’মাসে মানুষ হত্যা খুবরকম সাধারণ বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। কোন্ ঘটনা কতোটা গুরুত্ব পাবে বা পেতে পারে সেটা নির্ধারিত হচ্ছে ‘নিহতের’ সংখ্যা দিয়ে। কী অসাধারণ মানবিকতা!
মত আর স্বার্থের বিরোধী হলে আমরা প্রথমেই আজকাল বৈধতা দিই হত্যার। খুন ও গুমের। পাপের প্রায়শ্চিত্য করতে হয় জীবন দিয়ে। রাষ্ট্র এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিরোধী হওয়ার অভিযোগে ফেব্রুয়ারী-পরবর্তী জামায়াত শিবিরের দেড়শ’ দু’শ মানুষ হত্যা জায়েজ হয়ে গেলো। রাজধানীতে তা-ব এবং সরকার পতনে অংশ নেয়ার ‘অজুহাতে’ এখন বৈধ হলো হেফাজতের অজ্ঞাত সংখ্যক মানুষ হত্যার ঘটনা। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের (?) হওয়ায় একজন রাজীবের জীবন অনেক অনেক মূল্যবান, অপরাধ তার অজস্র খুনের সমানই হোক না কেনো। অন্যদিকে সরকারের বিপক্ষে দাঁড়ানোয় হেফাজতের অসংখ্য মানুষের জীবন অর্থহীন। এমনকি ওয়াসার দুর্গন্ধযুক্ত পানির চেয়েও! সরকারের বিরুদ্ধে গেলেই হতে হবে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী এবং তার আর যাই হোক বেঁচে থাকার অধিকার নেই!
৫ মে’ যতোই এগিয়ে আসছিলো, বাড়ছিলো শংকা। পটভূমি তৈরির মূল দায়িত্বটা মিডিয়াই নিয়েছিলো। একটা সমাবেশ কীভাবে কভারেজ করতে হয়, কোন বিবৃতিটা শিরোনাম হবে কোনটা হবে না, কোন কথাটা সংবাদে স্থান পাবে কোনটা পাবে না: এসব তারা খুব ভালো জানতেন, জানেন। বরাবরই খুবরকম দায়িত্ব নিয়ে এসব তারা করেন। ব্যাতিক্রম চলছিলো কেবল হেফজতের বেলায়। রাজনীতি ও কূটনীতির পাড়া এবং মিডিয়া- সবার দৃষ্টিভঙ্গি তখন এক হয়ে গিয়েছিলো। শ্লোগান একটাইÑ হেফাজত ঠেকাও। নিয়ন্ত্রণের সূতোটা কখন যে হাত থেকে খসে পড়েছে, হেফাজতের উজ্জীবিত নেতৃত্ব তা টেরই পাননি। এরপর কেবল তারা ব্যবহৃত হয়েছেন। ফুটবলের মতো। হাতে হাতে। দলে দলে। মধ্য দিয়ে জীবন দিতে হলো অসংখ্য নিরপরাধ মানুষকে, যারা রাজনীতি বোঝেন না। কূটনীতির মারপ্যাঁচে যান না। স্বার্থচিন্তার অবকাশ পান না। আগেও পাননি, পাচ্ছেন না জীবন দিয়েও।
বাঙালি বড় চতুর। তার বাইরের আর ভেতরের নীতি বোঝা কালের পক্ষেও বুঝি অসম্ভব। হেফাজতকে মাঠে নামাতে, উসকে দিতে, এমনকি রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করতেও চেষ্টার কোনো কমতি ছিলো না তার। মাঠের বক্তৃতা যতো বেসামাল হয়েছে, তার গলাও ততো উচ্চকিত হয়েছে। শ্লোগান প্রাণ পেয়েছে ততো বেশি। সুযোগ বুঝে কেটে পড়তেও তার সময় লাগেনি। এখন সব দায় হেফাজত নেতৃবৃন্দের, হুজুরদের। বীর বাঙালি এসবের কিছুই জানে না। জবানবন্দির নামে ক’টি পত্রিকার ‘চটি’ পড়ে তারা আজকাল জিভে কামড় দিয়ে আঁতকে ওঠেন- এসব কী! তেল-মসলা-লবণ দু’গ্রামের জায়গায় দু’শ’ গ্রাম দিতে বাধ্য করবো, তরাকারি নষ্ট হলে সব দোষ বউয়ের। বাঙালি নামের এই জনতার কণ্ঠ এখন বড় বেশি মেলে সৈয়দ আশরাফ আর বেনজির আহমেদদের সাথে। মোল্লারা আসলেই বদ! বড়ই খারাপ।
৫ মে’র পর হেফাজতের প্রায় সব নেতারাই আত্মগোপনে। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দুঃসময়ে দলের প্রয়োজনে মাঠে নেমে এলে তাদের পৌরুষ আর বীরত্বের কতখানি প্রকাশ ঘটতো জানি না, তবে সরকার ও প্রশাসনের ধারাবাহিক অভিযোগগুলোর একটারও সময়োচিত জবাব না দিতে পারার ব্যর্থতাও মেনে নেয়া যায় না। তারচে’ কষ্টের বিষয় ঘটছে ইসলামী একটি দলের ভ্রান্ত প্রচারণায়। একজন নেতাকে মঞ্চে স্থান না দেওয়ার ‘অপরাধে’ তারা হেফাজত ছাড়লেন। দেশসেরা সব আলেমদের বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখালেন। তাদের ভাষায় ঈমানী আন্দোলনের ঈমানিয়্যাতই চলে গেলো। আর এখন তারা মহান সাজার কোনো ভূমিকাই বাদ রাখছেন না। নিজেদের ব্যর্থতাকে, প্রশ্নবিদ্ধ ভূমিকাকে আড়াল করতে নাটক, প্ররোচনা কোনোটাই বাদ যাচ্ছে না। মাঠ পর্যায়ের বাস্তবতা আরো নির্মম, হেফাজতের সক্রিয় নেতাদের আতংকিত রাখার চেষ্টায় তারা আজকাল বড় বেশি তৎপর। কমিটির তালিকাগুলো তুলে দিচ্ছেন পুলিশের হাতে। ইসলামী রাজনীতি বা ইসলামী আন্দোলনের নামে ব্যক্তি পূজার মতো এসব ধান্দাবাজি তারা নিয়মিতই করেন। কোনো সমস্যা হয় না। সাপোর্ট দেওয়ার জন্য হুজুগে বাঙালি তো আছেই। চাটুকারেরও অভাব হয় না কখনো। বলি কেবল আমরা মূর্খের দল!
আমাদের কোনো আন্দোলনই পরিকল্পনা করে শুরু হয় না, তাই সফলভাবে শেষও করা যায় না। জমজমাট দরস-মিম্বর আর রাজনীতির গরম মাঠ যে এক নয় এই সত্য আমরা কোনোকালে সত্য বলে মানিনি। হেফাজতের এবারের ডাকটা এসেছিলো নিদারুণ দুঃসময়ে। দিনমজুর থেকে শিল্পপতি, পরম ধার্মিক থেকে চরম নাস্তিক সবার পিঠই দেয়ালে ঠেকে গিয়েছিলো। তাই বিবেচনায় অবকাশটুকু না মিলেছে নেতৃবৃন্দের, না সাধারণ মানুষের।
পেটের ক্ষুধায় একটা সময় পর্যন্ত হলেও ভদ্র থাকা যায়, কিন্তু লাথি লাগে যখন বুকে, আঘাত আসে যখন বিশ্বাসে; তখন আর পরিণতি ভাবার সুযোগ থাকে না।
হেফাজতের আন্দোলন তাই শুরুই হয়েছে বেসামাল হালত নিয়ে। লাগামহীনতার অভিযোগও ছিলো বরাবরই। কিন্তু ব্যাপকরকম জনসম্পৃক্ততা অর খুব কাছেই ভোটের রাজনীতি উপস্থিত থাকায় কোনোটাই আসলে হাওয়া পায়নি। সাথে যুগ হয়েছে শাহবাগের অন্তহীন বিরক্তি। এ সবকিছুর সম্মিলিত খেসারত কিংবা পরিণতি সবই অনুঘটক হিসেবে কাজ করেছে শাপলার ঘটনায়। শাহবাগের পরাজিত শক্তি, নতুন মুক্তিযুদ্ধোত্তর খুনী ছাত্র ও যুবলীগ, জেহাদি জামায়াত-শিবির, বামপ্রভাবিত ভয়ংকর আওয়ামী লীগ কিংবা দীর্ঘদিন স্বামীসোহাগ বঞ্চিত চরিত্রহীন রমণীর মতো বিএনপি- কোনো বিবেচনাই পাত্তা পায়নি হেফাজত নেতৃবৃন্দের কাছে।
বাঙালির আবেগের স্রোতে ভেসে তারা শাপলায় জড়ো হয়েছেন। গরম বক্তৃতা দিয়েছেন। তাদের মাঝখানে আটকে রেখে শিবির জেহাদ করেছে, ছাত্রলীগ-যুবলীগ করেছে দেশরক্ষা। দেশকে তালেবান রাষ্ট্র বানানোর ভয়ংকর ষড়যন্ত্র রোখার নিষ্ঠাবান দায়িত্ব নিয়েছে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আর সৈয়দ আশরাফদের দায়িত্বশীল প্রশাসন। এরপর?…সব পক্ষের চাওয়াই কমবেশি পূরণ হয়েছে। প্রাণ গেছে কেবল নিষ্পাপ মানুষের। মুখ থুবড়ে পড়েছে হেফাজত! কারো জেহাদ, কারো দেশরক্ষা, কারো সহযোগিতা, কারো অপরিহার্য অভিযান সবই একে একে বৈধতা পাচ্ছে, পাবে। অবৈধ কেবল হেফাজতের অবস্থান। দায় সবই হতাহত মানুষগুলোর!
বন্ধু অল্প হলেও আলেমদের শত্রুর অভাব নেই। এবং বেশির ভাগ শত্রুই নিজেদের তৈরি করা। এসব সত্য জেনেও মাঠের গরমে আমরা প্ররোচিত হয়েছি। দৃশ্যমান স্রোতে গা ভাসিয়েছি। ভেতরে- পর্দার আড়ালে কী খেলা চলছে তা পর্যবেক্ষণের সময় হয়নি। পুরো দু’মাস জুড়ে কতো তত্ত্ব আবি®কৃত হয়েছে, কতো থিসিস ডালপালা ছড়িয়েছে জানা তো মুশকিলই। তবে সৈয়দ আশরাফ-নাসিমদের টলায়মান কণ্ঠের হুমকি-ধমকিতে কিছুই যে প্রকাশ পায়নি তাও সত্য নয়। বিবৃতিজীবি সুশীল কিংবা কূটনীতির বাইরে এসে সম্পূর্ণ নির্লজ্জভাবে ক’জন রাষ্ট্রদূতের মন্তব্যগুলো যে কোনো বার্তা ছড়ায়নি, এমনও তো নয়। বিবেচনায় নিইনি, নেয়ার প্রয়োজন মনে করিনি কেবল আমরা।
ইসলামের বিষয় এলে , প্রিয় নবী আর মুসলিম ইস্যু হলে আমরা বরাবরই এভাবে খেই হারাই। পরিণতি হয় ভয়ংকর। সবকিছুকে এখন ভুল হিসেবে আখ্যায়িত করবো না সত্য দীনের প্রতি এই বিশ্বাস, প্রিয় নবীর প্রতি এই ভালোবাসার মূল্য হিসেবে ধরে নেবো- কে দেবে জবাব?…
৫ মে’র পর থেকে সারাদেশের মাদরাসাগুলোয় অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে। চাপ কিছুটা কমে এলেও এখনো স্বাভাবিক হয়নি বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠান। চরম অতংকে কাটছে লাখো আলেম-ছাত্রদের একেকটি দিন। দৃশ্যত সরকার যতোটা উদাসীন মাঠ পর্যয়ে ততোটাই কঠোর আর বেপরোয়া। কোনোরকম প্রোগ্রাম-অনুষ্ঠানে আলেমদের জড়ো হতে দেওয়া হচ্ছে না। মাইক ব্যবহারে চলছে অলিখিত নিষেধাজ্ঞা। স্থানীয় আওয়ামীলীগ তো আরো ভয়ংকর। সুযোগ পেলেই লাঞ্ছিত করছে ইমাম-খতিবদের। দেশটা হঠাৎ যেনো অন্যদের হয়ে গেলো। পুরোপুরিই। ক’দিন পরই মাদরাসাগুলোয় বার্ষিক পরীক্ষা। বেফাক মহাসচিব জানালেন, সরকারের সাথে যোগাযোগ করেও তারা কোনো সাড়া পাননি। সরকার অদৌ সহযোগিতা করবে কিনা তা স্পষ্ট নয়। সুতরাং একটা শংকা থেকেই যাচ্ছে। প্রতিবার পরীক্ষার্থী বাড়লেও এবার তা নিশ্চিত করতে পারেননি কওমী মাদরাসাগুলোর সবচে’ বৃহৎ এ শিক্ষাবোর্ডের মহাসচিব। এ কেমন হঠকারিতা? মাঠের দায় কেনো শিক্ষাব্যবস্থার ওপর চাপানো হবে?
হতাশা আর আক্ষেপের কথা তো অনেক বললাম। আশার আলো কি সত্যিই কিছু নেই? হেফাজত কি তবে এখানেই শেষ? এই সমীকরণে যারা বিশ্বাস করেন, জোয়ার-ভাটা কিংবা হঠাৎ জলোচ্ছ্বাসের মতো এলো-গেলো বলে ইতোমধ্যেই যারা হেফাজতের শেষ দেখছেন আমি তাদের ঘোর বিরোধী। সাফল্য-ব্যর্থতার কোনো খতিয়ান সামনে আনারই পক্ষপাতী নই আমি। কারণ, নির্দিষ্ট কোনো লক্ষ্যকে সামনে রেখে এসব আন্দোলন পরিচালিত হয় না। সম্ভবও নয়। গড়ে ওঠাটাই এর বড় সাফল্য। হেফাজতের প্রেক্ষাপট ও এমন সর্বব্যাপী হতে পারার রহস্য নিয়ে আগের দুটো লেখায় বিস্তারিত বলেছি। এখানে পুনরাবৃত্তির প্রয়োজন মনে করছি না।
দায় চাপানোর মানসিকতা তো আমাদের নতুন নয়, সুতরাং এ নিয়ে আলোচনাও কখনো শেষ হবে না। হেফাজতের যা চাওয়ার, যেটুকু প্রয়োজন; সেটা ৫ মে’র আগেই হয়ে গেছে। বহুলাংশেই। বাকি ছিলো কেবল আনুষ্ঠানিকতা। সব জট লাগলো কিনা ওখানেই। এ জটও তো কোনোদিন খুলবে না। থামবে না শহীদি পরিবারগুলোর কান্না। স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারবে না বিভিন্নভাবে আহত হওয়া, অঙ্গহারানো মানুষগুলো।
এর দায় যাদের, পবিত্র জীবন আর রক্ত নিয়ে যারা হোলি খেলায় মাতে; ওরাও কি ভালো থাকতে পারবে? ইতিহাস তেমন সাক্ষ্য দেয় না। ইতিহাসের আদালত বড় নিষ্ঠুর। বড়ই ইনসাফের।
ভাই হারানোর সবটুকু কান্না বুকে জমা করে, নির্মম হত্যাযজ্ঞের সবটুকু কষ্ট ভেতরে চেপে রেখে সেই ইনসাফের আদালতেই আমরা মামলা ঠুকলাম।
বিশ্বাস করি- ইসলাম যেমন শাশ্বত, আমাদের এ চেতনাও চিরন্তন। হেফাজত তাই ব্যর্থ নয়, শেষও নয়। ঠিক সময়ে স্বরুপেই ফিরবে হেফাজত। বিরোধীদের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে, ভণ্ড আর চাটুকারদের আরো হতাশ করে দিয়ে। জয়তু হেফাজত।
-শাকিল আদনান
হেফাজতবার্তা- মে ২০১৩
Leave a Reply