প্রয়োজনের মুহূর্তে মুফতি আমিনী চলে গেলেন- মাওলানা মুহিউদ্দীন খান (সাক্ষাৎকার)

Date

Author

Blog Duration

10 minutes

শাকিল আদনান : আপনার ঢাকা আগমন পঞ্চাশের দশকে। সে তুলনায় আমিনী সাহেব ঢাকায় আসেন আরো অনেক পরে, ষাটের শুরুতে। তো কখন কোথায় প্রথম তাকে দেখেন?

মাওলানা মুহিউদ্দীন খান : আমি আমিনী সাহেবকে প্রথম দেখি করাচীর নিউ টাউনে। একটি কনফারেন্সে যোগ দিতে পাকিস্তানে গিয়েছিলাম। সেখানকার বাংলাদেশী ছাত্ররা আমাকে দাওয়াত করে নিয়ে গিয়েছিলো। সেখানেই আমি তাকে প্রথম দেখি। আর সে প্রথম দেখাতেই আমার মনে হয়েছিলো ছেলেটি মেধাবী এবং সচেতন।

শাকিল আদনান : কেনো এমন মনে হলো, কী আলাপ হয়েছিলো তখন?

মুহিউদ্দীন খান : না, ছালাম আর কুশলবিনিময় ছাড়া তেমন কিছু আলাপ হয়নি। চেহারা দেখেই আমার এমন মনে হয়েছিলো। ওখানে বাংলাদেশী ছাত্রদের মধ্যে দুটো ছেলে আমার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিলো। একজন মুফতি আমিনী। আর অন্যজন যাত্রাবাড়ীর মাওলানা মাহমূদুল হাসান। মুফতি আমিনী সাহেবের সাথে তেমন কথা না হলেও ময়মনসিংহের ছেলে হিসেবে মাহমূদুল হাসানের সাথে বেশ কথা হয়।…

Mufti Amini and Maulana Muhiuddin Khan

শাকিল আদনান : বয়সে অনেক জুনিয়র হলেও আপনারা দীর্ঘদিন একত্রে রাজনীতি করেছেন। এই রাজনৈতিক পথচলার শুরু কখন, কীভাবে হয়েছিলো?

মুহিউদ্দীন খান : হাফেজ্জী হুজুর তার রাজনৈতিক সংস্কারের কাজ শুরু করলে আমি মাওলানা আমিনীকে বললাম, আপনি এ কাজে প্রত্যক্ষ ভূমিকা নিচ্ছেন না কেন? তখনো তিনি সরাসরি যুক্ত ছিলেন না। তিনি বললেন, এটাতো হাফেজ্জী হুজুরও চান না। আমি আবার লালবাগের উস্তাদ। হাফেজ্জী হুজুর রাজনীতিতে নেমেছেন দেখে লালবাগ মাদরাসা-মসজিদ কমিটি এমনিতেই নারাজ। আমাদের উস্তাদদের প্রতিও তাদের সুধারণা নেই। আর আমি তো নবীন শিক্ষক। এখনই তাই ঝামেলায় জড়াতে চাই না। আমি তখন বলেছিলাম, মিয়া কয় টাকা বেতন পান? আইসা পড়েন না চাকরি ছেড়ে…। যাহোক, পরে তিনি ইলেকশনের কাজে জড়ালেন। তার অল্প দিনের কাজ দেখেই আমরা তাকে কাছে টেনে নিলাম। ইলেকশন সামনে রেখে হাফেজ্জী হুজুর খেলাফত আন্দোলন প্রতিষ্ঠা করলেন। তাতেও আমি আমিনী সাহেবকে জোড়ালোভাবে যুক্ত হওয়ার কথা বলেছি। হাফেজ্জী হুজুরের ইন্তেকালের পর আমি যতোগুলো ইসলামী আন্দোলন করেছি, সবকটিতেই আমিনী সাহেবকে হাফেজ্জী হুজুরের কায়েম মাকাম মনে করেছি।

শাকিল আদনান : তখন তো শায়খুল হাদীসসহ বড় বড় উলামায়ে কেরাম ছিলেন। আমিনী সাহেবকে কেনো হাফেজ্জী হুজুরের কায়েম মাকাম মনে করলেন?
মুহিউদ্দীন খান : তার মধ্যে সে ধরনের যোগ্যতা ছিলো বলেই এমন মনে হতো। তার সাহস, গোছালো কথা-বার্তা, বডি লেঙ্গুয়েজ ইত্যাদি দেখে মনে হতো হাফেজ্জী হুজুরের কায়েম মাকাম হতে পারে একমাত্র সেই। এরপর তো খেলাফত আন্দোলন পড়ে গেলো ইরানীদের খপ্পরে। মাওলানা আজিজুল হক সাহেব, মাওলানা আখতার ফারুক তাদের প্রভাবেই কিছুটা ইরানী প্রভাবে প্রভাবিত হলো।

শাকিল আদনান : এটা কোন সময়ের ঘটনা, হাফেজ্জী হুজুরের ইন্তেকালের পরে?
মুহিউদ্দীন খান : না, এটা হাফেজ্জী হুজুর থাকা অবস্থাতেই শুরু হয়েছিলো। তাঁর জীবনের শেষ পর্যায়ে। আর আমি তখন ঘটনাচক্রে পড়ে গেলাম সৌদি বলয়ে। আসল কথা হলো, রাজনীতি বা আন্দোলন চালানোর ক্ষেত্রে আমি আমিনী সাহেবকে ছাড়িনি। আরো পরে এসে তো তাঁকে নিয়ে ইসলামী ঐক্যজোটও করলাম।

শাকিল আদনান : ইসলামী ঐক্যজোট গঠনের প্রক্রিয়াটা কোন সালের দিকে?
মুহিউদ্দীন খান : এটা ‘৯৭ সালের দিকে। ইসলামী ঐক্যজোটে শাইখুল হাদীস সাহেব সদর ছিলেন। তবে শাইখুল হাদীস সাহেব সদর হলেও আমি আমিনী সাহেবকে একটু সাইট করতাম। একান্তই ব্যক্তিগত ব্যাপার ছিলো। শেষ পর্যন্ত শাইখুল হাদীস সাহেব আর মাওলানা আমিনীর মধ্যে মতবিরোধ হলো, আমি মাওলানা আমিনীকেই সাপোর্ট করলাম।

শাকিল আদনান : আপনি তো শুরু থেকেই ঐক্যজোটের ভাইস চেয়ারম্যান ছিলেন। তো নতুন জোটের চেয়ারম্যান তো আপনারই হওয়ার কথা?..
মুহিউদ্দীন খান : নিয়ম অনুযায়ী আজিজুল হক সাহেবের অনুপস্থিতে আমারই চেয়াম্যান হওয়ার কথা। কিন্তু আমি মাওলানা আমিনীকে আগাইয়া দিলাম। বললাম, আমি না, মাওলানা আমিনী হোক। কারণ সে বড় আলেম। তাছাড়া হাফেজ্জী হুজুরের কাজ তার দ্বারা আদায় করতে হলে তাকেই এগিয়ে দিতে হবে। আমাদের টার্গেট ছিলো মাওলানা আমিনীকে হাফেজ্জী হুজুরের কায়েম মাকাম করা। এবং শেষ পর্যন্ত নিজের যোগ্যতা, সাহস ও ব্যাপক কার্যক্রমের মধ্য দিয়ে তিনি হাফেজ্জী হুজুরের স্থলাভিষিক্ত হয়েই বিদায় নিলেন।

শাকিল আদনান : আপনি তো আগে থেকেই রাজনীতি করতেন। জমিয়তের সাথে যুক্ত ছিলেন। হাফেজ্জী হুজুরের সাথে কখন কীভাবে যুক্ত হওয়া?..
মুহিউদ্দীন খান : আমরা জমিয়ত করতাম। জমিয়ত তাদের নিজস্ব একটা প্রস্তাব অনুযায়ীই হাফেজ্জী হুজুরের সাথে কাজ করার সিদ্ধান্ত নেয়। জমিয়তে আমি তখন কার্যনির্বাহী সভাপতি ছিলাম। তবে আখতার ফারুক সাহেবরা আমাকে হাফেজ্জী হুজুরের কাছে ভিড়তে দিলেন না। তারা হাফেজ্জী হুজুরের দলের সদস্য ছিলেন। হুজুরের মুরীদ হলেন। হঠাৎ কোর্ট প্যান্ট ছেড়ে লম্বা কুর্তা ধরলেন। আমার পক্ষে তো আর বেশ বদলে নতুন রূপ ধারণ করা সম্ভব না। আমি এসব নিয়ে কখনো কম্পিটিশনে যেতাম না।

Mufti Amini, Muhiuddin Khan and Allama Azizul Haque

শাকিল আদনান : আপনারা তো হাফেজ্জী হুজুরের ইন্তেকালের পর খেলাফত আন্দোলন ছাড়লেন..।
মুহিউদ্দীন খান : ইন্তেকালের পর খেলাফত আন্দোলন থেকে বের হয়েছি এমনটা ঠিক নয়। আমি তো আগে থেকেই সাইট কেটে থাকতাম। পরে মাওলানা আমিনী যখন কাজ করতে চাইলো, তাকে নিয়ে কাজ করলাম। বিভিন্ন আন্দোলন এ সময় আমরা চালিয়ে গিয়েছি।
শাকিল আদনান : খেলাফত আন্দোলন থেকে বের হবার পর বাবরী মসজিদমুখী লংমার্চ আপনাদের স্বতন্ত্র বড় আন্দোলন। মাঝখানের ক’বছরের কার্যক্রম কী ছিলো?
মুহিউদ্দীন খান : বাবরী মসজিদমুখী লংমার্চের আগ পর্যন্ত আমরা বিভিন্ন ইস্যুকেন্দ্রিক আন্দোলন করেছি। বিভিন্ন নামে এসময় অনেকগুলো কমিটিও হয়েছে।
শাকিল আদনান : আমরা বলতে কাদের বোঝাচ্ছেন, আর খেলাফত তখন কাদের কাছে?
মুহিউদ্দীন খান : আমরা বলতে আমি, শাইখুল হাদীস সাহেব এবং মাওলানা আমিনী। আমরা তখন একত্রেই ছিলাম। আর খেলাফত ছিলো আহমদুল্লাহ আশরাফের কাছে। বাবরী মসজিদ আন্দোলনে এবং তসলিমাবিরোধী আন্দোলনেও আমিনী সাহেবের ভূমিকা ও কার্যক্রম বেশি ছিলো। বয়সে তরুণ ছিলেন। শ্রম বেশি দিতেন। সাহসের পাশাপাশি গুছিয়ে কথা বলার অসাধারণ ক্ষমতা তার ছিলো।..আসলে অসুস্থতার কারণে হুবহু সব আজকাল মনে করতে পারি না।

শাকিল আদনান: রাজনীতি, আন্দোলন যা-ই বলি আমাদের কাছে আপনার মূল পরিচয় তো লেখক হিসেবে। সারাজীবন লেখালেখিতেই ব্যস্ত ছিলেন। আমিনী সাহেবকে কি কখনো বলেছেন লেখালেখির কথা?
মুহিউদ্দীন খান : আমি সবসময় তাকে উৎসাহ দিতাম। বলতাম দেখেন, পাকিস্তান এবং হিন্দুস্তানে এমন কোনো বিখ্যাত আলেম নেই যাদের কিছু না কিছু লেখা আছে। কিন্তু বাংলাদেশী আলেমদের মধ্যে একমাত্র শামছুল হক ফরিদপুরী ছাড়া আর কারো কোনো খেদমত নেই। কতো বড় বড় আলেম ছিলেন, মাওলানা আতহার আলী সাহেব, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ফখরে বাঙ্গাল মাওলানা তাজুল ইসলাম সাহেব, কুমিল্লা বরুড়ার একজন বড় আলেম নাম বোধ হয় মাওলানা ইয়াসীন হবে- তারা কোনো মিরাস রেখে যেতে পারেনি। তাদের মৃত্যুর পর তাদের কাছ থেকে আমাদের কিছু পাওয়ার নেই। তো আমি প্রায়ই তাকে বলতাম। পরে কিছু কিছু ঐ যে ফতোয়ার কিতাবসহ অন্যান্য কিছু কিছু লেখা শুরু করেন।

Mufti Amini, Khatib Unaidul Haque and Allama Azizul Haque

শাকিল আদনান : ওলামায়ে কেরামের সংগ্রামের দীর্ঘ এ পথপরিক্রমার ফলাফল কি, আমরা কী পেয়েছি বলে মনে করেন?
মুহিউদ্দীন খান : আমাদের দীর্ঘ এ পথপরিক্রমায় কোনো সাফল্য নেই। যে সমস্ত ইস্যু সামনে এসছে সেগুলোর সাথে সু-বিচার করে আমরা এগুতে পারিনি। পারিনি সাহসের পরিচয় দিতে। এর কারণ ছিলো দুটো। এক তো যোগ্যতার অভাব। দ্বিতীয় ছিলো নিজেদের মধ্যে আন্তরিকতার অভাব। আমিনী সাহেবের ক্ষেত্রে যেটা হয়েছে যে, তাঁর বয়স কম ছিলো। বড়রা তাকে কম বয়সি মনে করে শুরু থেকেই যথাযথ গুরুত্ব দিতে চাননি। তাছাড়া আজিজুল হক সাহেবের সাথে তাঁর দ্বন্দ্বের একটা প্রভাবও এক্ষেত্রে কাজ করেছে।

শাকিল আদনান : আমাদের ওলামায়ে কেরাম তো এমনিতেই রাজনীতি থেকে দূরে। এখন আবার আপনি যা বলছেন তা সত্য হলে তো সামনে মহাবিপদ…।
মুহিউদ্দীন খান : আমি তো বলি নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে। শুধু বিপদ বলবো না। আল্লাহ পাক বিশেষভাবে হেফাজত করলে অন্যকথা। আমার কাছে খারাপ লাগে কি, নদভী হলে দেওবন্দীরা পছন্দ করে না। দেওবন্দী হলে আলিয়াওয়ালারা পছন্দ করে না। আলিয়াওয়ালা হলে আবার অন্যরা পছন্দ করে না। এগুলো তো আমরা পদে পদে ভোগ করে এসেছি। আমরা এগুলো মিরাস হিসেবে পেয়েছি। যেমন আমরা শামছুল হক ফরিদপুরীকে রহ. খুব গুরুত্ব দিয়েছি। কিন্তু দেওবন্দীরা মাওলানা নূরুদ্দীন আজমীকে কোনো গুরুত্ব দেয়নি। অথচ তিনি আলেম হিসেবে অনেক বড় ছিলেন। লেখক হিসেবেও অনেক শক্তিশালী ছিলেন। আর একজন লেখক ছিলেন আব্দুল জলীল মাজাহেরী। আমাদের আবু তাহের মিসবাহ’র নানা। তিনিও খুব শক্তিমান লেখক ছিলেন। এমদাদিয়া লাইব্রেরির প্রাথমিক কিতাবগুলোতে ‘জনৈক অভিজ্ঞ আলেম দ্বারা অনূদিত’ লেখা আছে। সবগুলো তার দ্বারা লিখিত। নাম উল্লেখ নেই। এই যে একজন আরেকজনকে দেখতে না পারা, এটাই আমাদের বড় সমস্যা। আমি তো দেখেছি ক্লাসে পর্যন্ত উস্তাদরা ছাত্রদের সামনে সুযোগ পেলেই খোঁচা মারে…।

শাকিল আদনান: এক্ষেত্রে তো প্রায়ই ভারত-পাকিস্তানের উদাহরণ টানা হয়। তারা পারলেও কেবল আমরা পারছি না।…
মুহিউদ্দীন খান : এগুলো রাজনীতি থেকে হয়েছে। বিশেষকরে ’৪৭ এ ভারত বিভাগের সময় দেওবন্দে দু’টি দল হলো। মুফতি শফী ও শিব্বীর আহমদ উসমানী রহ.সহ বড় একটি দল পাকিস্তানের পক্ষে দাঁড়িয়ে গেলো। আরেক দল দাঁড়ালো সাইয়্যেদ হুসাইন আহমদ মাদানী ও তার অনুসারী দ্বারা। তো এভাবেই ওলামায়ে কেরামের মধ্যে দিল্লিকেন্দ্রিক বা নিজামুদ্দিনকেন্দ্রিক বিরোধ তৈরি হলো। সাধারণত একজন আরেকজনের কাছ থেকে ইস্তেফাদা নিয়েছে। কিন্তু সুযোগ পেলেই খোঁচা মারার স্বভাবটা সবসময় ছিলো। আমরা ঢাকা আলিয়ায় হাদীস পড়েছি যফর আহমদ উসমানীর কাছে…।

মুহিউদ্দীন খান

শাকিল আদনান : আপনাকে আলিয়ায় ভর্তি হওয়ার পরামর্শ তো ফরিদপুরীই রহ. দিয়েছিলেন?..
মুহিউদ্দীন খান : হ্যাঁ, তখন আন্তরিকতা ছিলো। খোঁচা মারার বিষয়টি এতো ব্যাপক ছিলো না। পরে বেড়েছে।
শাকিল আদনান : এটাকে আপনি ওলামাদের সামগ্রিক অবস্থার প্রতিফলন বলবেন না ফরিদপুরীর রহ. উদারতা?
মুহিউদ্দিন খান : ফরিদপুরীর রহ. উদারতা।

শাকিল আদনান : তো আমাদের উলামাদের এ বিরোধটাকে আমরা শিক্ষা আর রাজনীতির মর্যাদায় বিরোধ বলতে পারি?
মুহিউদ্দীন খান : অনেকটা তা-ই।
শাকিল আদনান: আপনি বাংলাদেশের ইতিহাসে রাজনীতি ও আন্দোলনের শুরু থেকেই যুক্ত ছিলেন। ভবিষ্যতের ব্যাপারে কি বলবেন?
মুহিউদ্দীন খান : আমার অভিজ্ঞতার আলোকে যা মনে হয় তা বড়ই হতাশাজনক। বড়রাই যখন কিছু করে যেতে পারেনি, ছোটরা সেখানে কি করবে? তারা তো নিজেদের অস্তিত্ব নিয়েই ব্যস্ত থাকবেন।
শাকিল আদনান : এক্ষেত্রে অনেকেই বলেন- ইসলাম জিন্দা হোতা হায় হার কারবালাকে বা’দ। ভারত পাকিস্তান এরকম অবস্থার মধ্য দিয়ে গেছে বলেই তারা এক হতে পেরেছে। ভালো কিছু করতে পেরেছে। বাংলাদেশে এখনো তেমন কিছু হয়নি। হলে ঐক্য ঠিকই গড়ে উঠবে। ছোটখাটো উদাহরণ তো নিকট অতীতেও বিদ্যমান…
মুহিউদ্দীন খান : আল্লাহ পাক যদি ভবিষ্যতে কারো দ্বারা কাজ নিতে চান। তাহলে তো তিনিই যোগ্য লোক তৈরি করে দিবেন। মানে হেফাজতে দ্বীনের জন্য আল্লাহ পাক তো পৃথিবীর শেষ দিন পর্যন্ত ওলামায়ে কেরামকে রাখবেন। দারুল উলূম দেওবন্দও তো ১০০/১৫০ বছর আগে ছিলো না। তো যখন দরকার হবে আল্লাহ পাক পথ ধরে দিবেন।

Monthly Madina

শাকিল আদনান : মুফতি আমিনী সাহেব ছোট থেকেই বড় বড় আলেমেদ্বীনের তত্ত্বাবধানে বড় হয়েছেন। এখনকার আলেমদের অবস্থা দেখে তেমন কারো গড়ে ওঠার লক্ষণ দেখেন কি?
মুহিউদ্দীন খান : মুফতি আমিনী সাহেবের কতোগুলো প্লাস পয়েন্ট ছিলো। তিনি আজীবন উলামায়ে কিরাম দ্বারা পরিবেষ্টিত ছিলেন। আবার প্রতিষ্ঠানগত দিকে দিয়ে লালবাগের মতো সেরা প্রতিষ্ঠান পেয়েছেন। এগুলো তার জন্য প্লাস পয়েন্ট ছিলো। এসবের মধ্য দিয়েই হাফেজ্জী হুজুরের উত্তরসূরী হওয়ার গৌরব যেমন অর্জন করেছেন, তেমনি কাজও করে গেছেন। অন্যকারো ক্ষেত্রে এমনকিছু তো দেখি না।

শাকিল আদনান : আর একটা বিষয়, আরবদের সাথে আমাদের দূরত্বটা কমলো না কেনো। বিশেষকরে ’৯৩ এর লংমার্চের সময় ব্যাপক সাড়া ওখানেও লক্ষ্য করা গেছে। আপনার এক লেখাতেও এটা ওঠে এসেছে। তারপরও আমরা পারলাম না কেন?
মুহিউদ্দীন খান : আরবের সাথে আমাদের দূরত্বটা মিরাস সূত্রে প্রাপ্ত। দেওবন্দের সঙ্গে আরবের সম্পর্ক কখনো ভালো ছিলো না। দেওবন্দের ইতিহাসে রাবেতার সদস্য হিসেবে এ বছরই প্রথম কেউ মনোনীত হয়েছেন। তবুও বলতে হয়, এটা আমাদের ব্যর্থতা। আমরাই যোগাযোগ করিনি। এই সুযোগটা অন্যরা নিয়েছে।

শাকিল আদনান : আমিনী সাহেবের ইন্তেকালের পর এখন ইসলামী রাজনীতির ভবিষ্যত কেমন দেখছেন?

মুহিউদ্দীন খান : আমিনী নেই, এখন আমি কোনো আশা দেখি না। চারদিকে শুধু হতাশা। এমনটা আমার দীর্ঘ অসুস্থতাজনিত মানসিক অবসাদ থেকেও মনে হতে পারে। তবুও, আশার কিছু তো দেখি না আমি।

শাকিল আদনান: আমিনী সাহেবের গৃহবন্দিত্ব এবং ইন্তেকাল নিয়ে আপনার ব্যক্তিগত উপলব্ধির কথা জানতে চাই। কী মন্তব্য করবেন এক্ষেত্রে?
মুহিউদ্দিন খান : বাংলাদেশে তো বটেই সারাবিশ্বেও ওলামায়ে কেরামের ক্ষেত্রে এটি একটি বিরল ঘটনা। শেষ দিকে তিনি আমার সাথে সাক্ষাতের প্রশ্নেও কিছুটা শঙ্কায় ভূগতেন। আমাকেও তো গৃহবন্দী করে রাখা হয়েছে। জানো না?…
শাকিল আদনান: না তো!
মুহিউদ্দীন খান : একসময় থেকেই। এখনো পুলিশ/এসপি এসে বসে থাকে। আমার মনে হয় মানসিক চাপ সৃষ্টি করে তাকে মেরে ফেলা হয়েছে। একটা মানুষকে মানসিক চাপ দিতে দিতে শেষ করে দেওয়া।

শাকিল আদনান : আমিনী সাহেবের সবচেয়ে বড় সাফল্য বা অর্জন কী বলে মনে করেন?
মুহিউদ্দীন খান : তার সবচেয়ে বড় সাফল্য হলো মানুষের মনে স্থান করে নেওয়া। এর বাস্তব প্রমাণ হলো লালবাগ ও বড় কাটারার মতো ঐতিহ্যবাহী দুটো প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা। গৃহবন্দী থেকেও নির্বিবাদে দুটো মাদরাসা পরিচালনা করেছেন। আরেকটি হলো তাঁর জানাজায় অভূতপূর্ব জনসমাগম। আমার মনে হয় ঢাকার ইতিহাসে সবচেয়ে বড় জানাজা।

শাকিল আদনান : আপনাকে অনেক শুকরিয়া। দুয়া করি আল্লাহপাক আপনাকে দ্রুত সুস্থ করুন। আমাদের মাঝে দীর্ঘদিন বাঁচিয়ে রাখুন।
মুহিউদ্দীন খান : তোমাদের জন্যও শুভকামনা। আসলে আজকাল উঠতে-বসতে পারি না। ধরে বসতে হয়। শেষ রাতের দিকে অবস্থা একটু খারাপ হয়। মনে হয়, আজকেই বুঝি দুনিয়া ছেড়ে চলে যাবো।.. তো তোমরা দুয়া করো। ভালো থেকো!

মাওলানা মুহিউদ্দীন খান। সম্পাদক, মাসিক মদীনা

natun-dak-mufti-amini

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *