সভ্যতার পরিণতি ও আধুনিক সভ্যতা

আধুনিক সভ্যতা

Date

Author

Blog Duration

9 minutes

আমরা এখন উত্তরাধুনিক সভ্যতার যুগ পার করছি। পৃথিবীর সূচনা থেকে এ পর্যন্ত অনেক সভ্যতার উত্থান, বিকাশ ও পতনের মধ্য দিয়ে আমাদের আজকের অবস্থান। এ পর্যন্ত কতগুলো সভ্যতা পৃথিবীকে সমৃদ্ধ করেছে তার সঠিক হিসাব না থাকলেও যা আছে তাও কম নয়। প্রাগৈতিহাসিক কাল থেকে নিয়ে পৃথিবীকে ক্রমান্বয়ে আধুনিক যুগে নিয়ে আসার জন্য সৃজনশীল মানুষের উদ্ভাবনী শক্তির ভূমিকা অনস্বীকার্য। আবার সেইসব সভ্যতার দুঃখজনক পরিণতির জন্যও মানুষই দায়ী। দায়ী মানুষের অপরিণামদর্শী জীবনাচার।

ইতিহাসের চলমান গাড়িটিতে যেসব সভ্যতার কথা আছে এবং প্রত্নতাত্ত্বিক গবেষণায় যতগুলো সভ্যতার কথা আমরা জানতে পারি তার সবগুলোই তার চূড়ান্ত অবস্থানে গিয়ে ধ্বংসাত্মক পরিণতি বরণ করেছে।

আমাদের দেশেও আমরা অনেক প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন দেখি। দেখি নানা সভ্যতার ধ্বংসাবশেষ। এর মধ্যে বগুড়ার মহাস্থানগরের পুন্ড্রনগর অন্যতম। একসময় চরম জমজমাট অবস্থা থেকে স্থবির বিরান মাঠ হয়ে গেছে সেই নগর। তারপর গবেষকদের নিড়ানি আর গাইতির আঘাতে আমাদের গোচরে আসে সেই সভ্যতার কথা।

প্রাচীন নগর সভ্যতার নিদর্শন হিসেবে এখন পর্যটকদের আকর্ষণ হয়ে টিকে আছে একসময়ের দুর্দান্ত প্রতাপে শাসন চালানো রাজাদের আবাস ভূমি। এমনই আরো কয়েকটি হলো নরসিংদীর উয়ারি বটেশ্বর, কুমিল্লার ময়নামতি, নেত্রকোনার রয়েল কোর্ট বাড়ি।কালের ক্রমবিবর্তনে ইতিহাসের পাতায় আশ্রয় নিয়েছে এমন কতশত সভ্যতা ও শাসনের ইতিবৃত্ত!

পৃথিবীর সবচেয়ে প্রচীন সভ্যতা বলা হয় মিশরীয় সভ্যতাকে। খৃস্টপূর্ব ৫০০০ অব্দে তাদের উত্থান ঘটে। একসময় দুর্দান্ত প্রতাপে পৃথিবীর বুকে বিচরণ করে তারা।

নিজেদেরে ক্ষমতা আর শক্তির কারণে একসময় ঔদ্ধত্য আর অহংকার মিশরীয়দের জীবনের অপর নাম হয়ে যায়। তাদের ক্ষমতা ও অহংকারের নিদর্শন হিসেবে পিরামিডগুলো এখনো টিকে আছে। পিরামিডগুলো হয়তো বলছে দেখো কোন ক্ষমতাই চিরস্থায়ী নয়! কোন শক্তিই অমর নয়! কিন্তু আমাদের ক্ষমতান্ধ চোখ তা দেখে না। ভোগবধির কর্ণ তা শুনে না।

মিশরীয় সভ্যতার পর পৃথিবীতে একে একে উত্থান-পতনের নিদর্শন রেখে যায় সুমেরীয় সভ্যতা, ব্যাবিলনীয় সভ্যতা, অ্যাসিরীয় সভ্যতা, চৈনিক সভ্যতা, সিন্ধু সভ্যতা, হিব্রু সভ্যতা, গ্রীক সভ্যতা, রোমান সভ্যতা, মায়া সভ্যতা ও ইনকা সভ্যতা। কিন্তু এই সবগুলো সভ্যতাই উত্থান, বিকাশ ও পতনের ইতিহাস রেখে যায়। কেউই অজেয় হতে পারে নি। পারে নি নিজেদের উত্থানের পর বিকাশের ধারাবাহিক ক্রমধারা। একসময় না একসময় তাদের ইস্তফা দিতেই হয়েছে। কখনো শত্রুদের কাছে কখনো প্রকৃতির কাছে।

আদি সভ্যতা

প্রতিটি সভ্যতাই পৃথিবীর আধুনিকায়নে ভূমিকা রেখে গেছে। কোন সভ্যতাই আধুনিক যুগ পর্যন্তু টিকে থাকতে পারেনি। অথচ একটা সময় তারাই ছিল সবচেয়ে প্রতাপের অধিকারি। পৃথিবীতে আরো দুটি সভ্যতার ইতিহাস পাওয়া যায়। একটি আদ সভ্যতা ও অপরটি সামুদ সভ্যতা। এই দুটি সভ্যতাই নিজেদের অপকর্ম আর অপরাধের শাস্তি স্বরূপ মহান আল্লাহর গজবে ধ্বংস হয়ে যায়।

আদ জাতি ছিল পৃথিবীর জাতিগুলোর মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালি জাতি। অথচ নিজেদের অপ্রতিদ্বন্দ্বি ও অমর ভেবে ধরাকে সরা জ্ঞান করে প্রবৃত্তির খেয়ালে চলতে গিয়ে নিজেরাই নিজেদের পতন ডেকে এনেছিল।

পৃথিবীর সভ্যতার ইতিহাস আলোচনা করলে দেখা যায়, প্রতিটি সভ্যতাই তার চূড়ান্তু উত্থানের সময় ধ্বংস হয়ে গিয়েছে। নিজেদেরকে যখনই তারা ধরাছোঁয়ার বাইরে মনে করেছে অথবা নিজেদেরেকেই একমাত্র শক্তি মনে করে মহাবিশ্বের একমাত্র শাসক হয়ে উঠার চেষ্টা করেছে তখনই তার পতন অনিবার্য হয়ে ওঠেছে। তাসের ঘরের মতই মুহূর্তেই থেমে গেছে সব মুখরতা, সব কোলাহল, সব কর্মব্যস্ততা।

আমরা যদি ৬০ থেকে ৮০ খৃস্টাব্দের ইতালির দিকে নজর দিই, তাহলে দেখতে পাবো তখনকার ইতালিতে পম্পেই ও হেরকুলিনিয়াম নামক দুটি শহরের ইতিহাস। কী দুর্দান্ত প্রতাপেই না দিনগুজরান করছিল তারা। একসময় তারাও নিজেদেরকে অজেয় মনে করতে থাকলো। শুরু হয়ে গেল তাদের পতনের কাউন্টডাউন। ৬২ সালে এক ভূমিকম্পের মাধ্যমে প্রকৃতি তাদের মৃদু সতর্ক করে হেরকুলিনিয়ামের সামান্য ক্ষতি করে। কিন্তু তারা এতে সতর্ক না হয়ে শহর পূণর্গঠনে মনোনিবেশ করে। সেই সঙ্গে সমকামিতা ও পশুকামিতার মত ঔদ্ধত্য চালাতে থাকে।

৭৯ সালের ভিসুভিয়াস আগ্নেয়গিরির এক অগ্নুৎপাতে চিরজীবনের জন্য স্তব্ধ হয়ে যায় পম্পেই ও হেরকুলিনিয়াম। ১৭৪৮ সালে যখন এই শহরের ধ্বংসাবশেষের খবর জানতে পারে বিশ্ববাসী তখন সবাই অবাক হয়ে যায়।

আগ্নেয়গিরি-লাভায় ধ্বংস হওয়ার কারণে সেই সময়ের মানুষের দেহের কোন ক্ষতি হয়নি। প্রতিটা দেহ পাথরের মত হয়ে মূর্তিবৎ হয়ে যায়। তখন সেখানে দেখা যায়, শহরটি যখন ধ্বংসের পথে তখনও একদল মানুষ পশুমৈথুনে ব্যস্ত ছিল। ব্যস্ত ছিল সমকামিতায়। বিশ্বাসী মানুষেরা মনে করেন এদের পাপ ও প্রগলভতার কারণেই আল্লাাহর গজবে এরা ধ্বংস হয়ে ছিল।

প্রতিটি সভ্যতার একটি কমন বৈশিষ্ট্য হলো, চূড়ান্ত অবস্থানে গিয়ে সবাই বেয়াড়া ও স্বেচ্ছাচারী হয়ে ওঠে। সেই সভ্যতার মানুষেরা নিজেদেরকে যে কোন ধরণের নিয়ন্ত্রণের উর্ধ্বে মনে করে।

এককথায় চরম আত্মকেন্দ্রিক হয়ে মানবিক সীমানা ছিড়ে ফেলে। বিকৃত রুচি আর ইচ্ছার চর্চাই হয়ে যায় তাদের জীবন। জীবনের চূড়ান্ত লক্ষ্য বলতে তাদের আর কিছু থাকে না। পৃথিবীর জীবনই হয়ে ওঠে তাদের একমাত্র সাধনা। মৃত্যুর পর আরেকটি জগত আছে সেই জগতের কথা বেমালুম ভুলে যায় সভ্যতার শেষ ধাপে উন্নিতরা।

আমরা যদি পৃথিবীর আদি সভ্যতার ইতিহাস ধারাবাহিক আলোচনা করে আসতে থাকি তাহলে অবধারিতভাবে প্রশ্ন এসে দাঁড়ায় আধুনা সভ্যতা বা উত্তরাধুনিক সভ্যতার পরিণাম বা পরিণতি কী?

যদিও এখানে ইসলামি সভ্যতার কথা আসার প্রয়োজন। এই নিবন্ধে সবশেষে ইসলামি সভ্যতা নিয়ে আলোচনা করার চেষ্টা থাকবে।আধুনিক সভ্যতার অপর নাম প্রাযুক্তিক সভ্যতা। এই প্রাযুক্তিক সভ্যতাও হাটছে সেই পুরনো সব সভ্যতার দেখানো পথেই। এই সভ্যতায় যারা বেশি উন্নত তাদের জীবনে আছে ততবেশি প্রভুত্ব ও কর্তৃত্বপরায়ণতা। অধুনা সভ্যতার সবচেয়ে বড় শক্তি বিজ্ঞানের আবিষ্কার ও প্রযুক্তির ব্যবহার।

অথচ আমরা দেখতে পাচ্ছি বিজ্ঞানের প্রতিটি আবিষ্কার ও প্রযুক্তির ব্যবহার মানুষেরে জীবনকে যতটা সহজ করছে ঠিক ততটাই জটিল করে তুলছে। বিজ্ঞানের সবকটি আবিষ্কারের ইতিবাচক ব্যবহারের পাশাপাশি নেতিবাচক ব্যবহার বেড়ে যাচ্ছে। শুধু কি তাই! বিজ্ঞান আমাদের জীবনকে সহজ করতে চাচ্ছে। কিন্তু প্রকৃতি বিগড়ে যাচ্ছে। প্রকৃতি প্রতিনিয়ত প্রতিবাদ করে যাচ্ছে বিজ্ঞানের অনধিকার চর্চার! প্রশ্ন হতে পারে কীভাবে?

জানিসারি-দুর্ধর্ষ-যোদ্ধা-বাহিনী

সারা পৃথিবীকে এখন যে সমস্যাগুলো ভাবাচ্ছে সেগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো জলবায়ু পরিবর্তন, গ্রীন হাউজ ইফেক্ট, কার্বন নির্গমন, পারমানবিক বর্জ্য, ই-বর্জ্য ইত্যাদি। এইসব সমস্যার অন্যতম কারণ বিজ্ঞানের বাড়াবাড়ি। বিজ্ঞান স্থাপত্য উৎকর্ষে কাঁচের বিল্ডিং নির্মাণ করছে। কিন্তু বেড়ে যাচ্ছে পরিবেশের উষ্ণায়ন। বিজ্ঞান সহজ যোগাযোগের জন্য দামি দামি গাড়ি বানাচ্ছে কিন্তু বেড়ে যাচ্ছে বায়ু দূষণ। বাতাসে সীসা মিশে বাতাশ মানুষের জীবনের জন্য হুমকি হয়ে যাচ্ছে। বিজ্ঞান নিয়ে আসছে মোবাইল ফোন। সেই ফোন এখন অপরাধের অভয়রণ্য। ছিনতাই থেকে নিয়ে পরকিয়া মানুষের প্রাইভেসি ধ্বংস থেকে নিয়ে পর্ণো সবই সম্ভব হচ্ছে এই মোবাইল দিয়ে।

প্রযুক্তি কম্পিউটার দিয়েছে জীবনকে সহজ করতে। কিন্তু সেই সহজতা বাড়িয়ে দিয়েছে বেকারের হার। ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েব পৃথিবীকে নিয়ে এসেছে হাতের মুঠোয়। এখন আর বড় বড় ফাইল ও লেজারবই নিয়ন্ত্রণ করতে হয় না। কিন্তু ওৎ পেতে আছে হ্যাকার। বিজ্ঞানের প্রতিটি আবিষ্কার ও প্রযুক্তির প্রতিটি দান মানুষের জীবনকে সহজ করলেও জীবনে নেতিবাচক প্রভাব বাড়াচ্ছে দিন দিন।

ভোগবাদিতা হয়ে ওঠছে মানুষের জীবনের একমাত্র আদর্শ। টাকাই হয়ে যাচ্ছে জীবনের একমাত্র লক্ষ্য। শিক্ষা হয়ে ওঠছে পণ্য। প্রতিটা শিক্ষার মান নির্ণিত হচ্ছে সেই শিক্ষার কর্মমাঠের ওপর ভিত্তি করে।

মানুষের জীবনে এখন মনন ও শিক্ষার জন্য শিক্ষা এবং মানুষ হওয়ার জন্য শিক্ষার কোন স্থান নেই। ধর্ম ও ধর্মাচার হয়ে ওঠছে গৌণ। নীতি ও নৈতিক অবস্থানগুলো হয়ে ওঠছে ঠুনকো। অনাড়ম্বরতা হয়ে যাচ্ছে দারিদ্র্যের প্রতীক। সততা হয়ে ওঠছে মূর্খতা ও বোকামির প্রতিশব্দ।

একাধিক নারী বন্ধু এখন ফ্যাশন। পরকীয়া এখন স্মার্টনেস। বহুগামিতা এই সমাজের এখন আর অপরাধের পর্যায়ে নেই। এটা উপভোগের একটা মাধ্যম হয়ে যাচ্ছে। একদল মানুষ পতিতা বৃত্তিকে পেশার মর্যাদা দিতে আন্দোলন করছে। অন্যায়কে অন্যায় বলার সুযোগও কমে আসছে এই আধুনিক সভ্যতায়। কেউ কেউ আবার অজাচারকেও (সন্তান, ভাইবোনের সঙ্গে যৌনক্রিয়া) মানুষের অধিকারের নামে বৈধ করতে চাচ্ছে। ব্লগীয় নাস্তিকরা এ ক্ষেত্রে অগ্রগামি। যে সমকামিতার জন্য পৃথিবীর প্রায় দুইটা সভ্যতা চিরতরে ধ্বংস হয়ে গিয়েছিলো। বর্তমান বিকৃত রুচির এই এই সভ্যতায় সেই সমকামিতাকেও বৈধতা দিচ্ছে কোন কোন দেশ।

কিন্তু পৃথিবীর সবগুলো মুসলিম দেশ এই পাপ থেকে মুক্ত থাকলেও গত পহেলা বৈশাখে আমাদের এই পবিত্র বাংলাদেশে সমকামিরা প্রকাশ্যে মিছিল করেছে। তাহলে কি আমাদের ধ্বংস খুব নিকটে? আধুনিকত সভ্যতার এই সব বিকৃতির অন্যতম একটা কারণ এই সভ্যতা এখন তার চূড়ান্ত সাফল্যের দারপ্রান্তে।

পৃথিবীর অন্যান্য সভ্যতার ইতিহাসের ধারাবাহিকতায় এই সভ্যতার সয় ফুড়িয়ে এলো! এখন একটা ভয়বহ বিপর্যয় এবং সেই সাথে স্তব্ধ পরিণতি সময়ের ব্যাপার মাত্র! নিউক্লিয়ার শক্তি আবিষ্কার হয়েছিল মানুষের জীবনকে সহজ করার করার জন্য। কিন্তু সেই নিউক্লিয়ার বা পারমানবিক শক্তি এখন হয়ে ওঠছে মানুষকে জিম্মি করা ও জাতি থেকে জাতিকে পদানত করার অন্যতম মাধ্যম। নিউক্লিয়ার শক্তিধর প্রতিটা দেশ এখন মনে করে তারাই পৃথিবীর দ–মু-ের একমাত্র মালিক। পৃথিবীর ভাল-মন্দ বিচারের একমাত্র অথরিটি তাদের। কে সন্ত্রাসি কে ভাল তার সনদ এখন দিতে পারে কেবল পরমাণু শক্তিধর দেশগুলোই।

প্রাচীন সভ্যতাগুলোর ইতিহাসেও কিন্তু আমরা এমন আত্মবিকারের ইতিহাস দেখতে পাই। যা আমাদের শক্তিশালী দেশগুলো দেখাচ্ছে। আলফ্রেড নোবেল এটম বোম বানিয়েছিল মানবতার যে কোন কল্যাণে! কিন্তু হিরোশিমা নাগাসাকি সেই কল্যাণ আজও হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে। লিটল বয় নামক এটম বোম তাদের জীবনকে সুদীর্ঘ যন্ত্রণাকাতর করে দিয়েছে। বর্তমানে আসছে ন্যানো টেকনোলজি। সেইসব টেকনোলজি মানুষের কল্যাণ ব্যবহারের চেয়ে অকল্যাণে বেশি ব্যবহার করা হবে না এর নিশ্চয়তা কী?

নিউক্লিয়ার যেমন সস্তা শক্তির জন্য আবিষ্কার করা হয়েছিলো কিন্তু সেটা ব্যবহার করে আজ ভয়াবহ মারণাস্ত্র আবিষ্কার হয়েছে। তেমনি ন্যানো টেক ব্যবহার করেও সম্ভব ভয়াবহ মারণাস্ত্র বানানো। মোবাইল ফোন এখন যোগাযোগের আশির্বাদ কিন্তু এই ফোনের রেডিয়েশন মানুষের জীবনের জন্য মারাত্মক হুমকি।

পৃথিবীর প্রতিটা মানবীয় আবিষ্কার সবসময় তার বিপরীত ব্যবহারে সম্ভাবনাকে জিইয়ে রাখে। কিন্তু মহান আল্লাহ তাআলা মানুষের জন্য যা দিয়েছেন তা কখনই অকল্যাণের জন্য বেশি ব্যবহার হয় না।

অথবা অকল্যাণ ব্যবহারের সুযোগই কম রাখা হয়। মানুষের জন্য আল্লাহ যে সব অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ দিয়েছেন তা কখনই মানুষের জন্য পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে না। কৃত্রিম অঙ্গগুলো কিন্তু নিয়মিতই সেই সমস্যটা তৈরি করে। পৃথিবীর প্রতিটি টেকনোলজির যখন এই অবস্থা তখন মানুষ হণ্যে হয়ে খুঁজছে নিরাপদ জীবনের টুটকা। কিন্তু বৈশ্বিক বাণিজ্যিক সভ্যতা মানুষের জীবনকে করে দিয়েছে জটিল থেকে জটিলতর। সেই জটিল জীবনের মারপ্যাঁচ থেকে বেড়িয়ে আসার জন্য মানুষের চেষ্টা নিরন্তর। অপরদিকে মানুষকে পরোক্ষ দাস বানানোর চেষ্টায় বিভোর পরাশক্তিগুলো। অন্যদিকে প্রকৃতির নিয়ন্ত্রণের প্রচেষ্টায় পৃথিবী আজ তার ভারসাম্য হারাচ্ছে প্রতিনিয়ত।তাহলে প্রশ্ন একটাই! কী হচ্ছে উত্তরাধুনিক সভ্যতার পরিণতি?

ইসলামী সভ্যতা

এই সভ্যতার পরিণতি কি আবারো মানুষের গুহাজীবন? নাকি আরেকটা ধ্বংসপ্রলয়। যে প্রলয়ের পর মানুষের জীবন আবারো কৃষি সভ্যতার মত নতুন করে শুরু হবে। মানুষ আবারো প্রযুক্তিহীন হস্তচালিত যান্ত্রিক সভ্যতায় ফিরে যাবে? বর্তমান পৃথিবীর মানুষের পরকালবিমুখতা দেখে এইসব প্রশ্ন এখন ধেয়ে আসছে চিন্তাশীলদের মনে।ব্যতিক্রম ইসলামী সভ্যতা

ইসলামী সভ্যতা। রাসূল মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের হাত ধরে যে সভ্যতার উন্মেষ এবং বিকাশ। সেই সভ্যতা চূড়ান্ত সফলতা লাভ করে চার খলিফার শাসনামলে।

কিন্তু পরবর্তীকালে মুসলমানদের আত্মতৃপ্তি ও জীবনবিমুখ শাসনব্যবস্থা ইসলামি সভ্যতার ক্ষমতা কেন্দ্রিক উত্থান থামিয়ে দিলেও আদর্শিক উত্থান সচল রয়েছে। হয়তো আগামি কোন একসময় নতুন করে ফিনিক্স পাখির মতই জেগে ওঠবে ইসলামি সভ্যতার ক্ষমতা কেন্দ্রিক নেতৃত্ব। কিন্তু তার আগে মুসলিমদেরকেও মুসলিম হতে হবে শতভাগ। নইলে আল্লাহর গজবে পৃথিবীর অধিকাংশ মুসলিম দেশের মুসলমানিত্বই গ্রহণীয় হবে না। মহাবিপর্যয়ের প্রবল স্রোতে ভেসে যাবে অন্য সব জাতির মতই।

এখনো সময় আছে পৃথিবীর সব মুসলিমের একটি ঐক্যবদ্ধ প্লাটফর্মের। নইলে অধুনা সভ্যতার প্রভাবে আমাদের মুসলমানিত্ব কেবল নামে আর উৎসবে অবশিষ্ট থাকবে। অন্তর্গতভাবে আমরা এক একটা কুফরের ক্রীড়ানকে পরিণত হবো।


Author: সাইফ সিরাজ

২৯.০৪.২০১৪

Source: Natun Dak

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *