শবে বরাত ২০২৩

শবে বরাত 2023

Date

Author

Blog Duration

3 minutes

চাঁদের হিসেবে পৃথিবীর অনেক দেশে আজকে শাবান মাসের মধ্য-রজনী। আমাদের দেশে আগামীকাল।

শাবান মাসের এই মধ্য-রজনী বা শবে বরাতের বৈশিষ্ট্য নিশ্চিতরূপে প্রমাণিত। তবু সমাজে বিভিন্নরকম বক্তব্য ও প্রচলন থাকায় অনেকে বাড়াবাড়িতে যুক্ত হয়ে পড়েন, অনেকে ইগনোর করতে গিয়ে ফজিলত থেকে বঞ্চিত হন।

শবে বরাত- এ রাতে মধ্যপন্থা বা সতর্ক অবস্থানটা আসলে কী?

আধুনিক সভ্যতা

عن معاذ بن جبل عن النبي صلى الله عليه وسلم قال : يطلع الله إلى خلقه في ليلة النصف من شعبان، فيغفر لجميع خلقه إلا لمشرك أو مشاحن

হযরত মুআয ইবনে জাবাল রা. থেকে বর্ণিত, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন ‘অর্ধ শাবানের রাতে আল্লাহ সৃষ্টির প্রতি দৃষ্টিপাত করেন। অতপর শিরককারী ও বিদ্বেষপোষণকারী ছাড়া তার সমগ্র সৃষ্টিকে ক্ষমা করে দেন।’

[ইবনে হিববান, ‘কিতাবুস সহীহ’, হাদীস নং ৫৬৬৫]

এই হাদিস সবাই সহীহ মানেন। সুতরাং এ রাতের বিশেষ মর্যাদা নিয়ে সন্দেহের অবকাশ নেই।

আলোচনা নিচের এই হাদিস নিয়ে।

قوموا ليلها وصوموا نهارها

এই রাত জেগে ইবাদত কর এবং দিনে (অর্থাৎ পনেরো শা’বান) রোযা রাখ।

[সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস নং : ১৩৮৮]

এই হাদিসের সনদে একজন বর্ণনাকারী আছেন যার স্মৃতিশক্তি দূর্বল ছিল বলে কারো কারো প্রশ্ন আছে। তাই এই হাদীসটির সনদ দুর্বল মানা হয়।

এখন হানাফী ও অন্য অনেক আলেমদের মতামত হলো এই হাদিস যেহেতু আমল সংক্রান্ত তাই এর ভিত্তিতে শবে বরাতের রাতে নামাজ পড়া এবং পরদিন রোজা রাখা যেতে পারে। পূর্বসূরিদের আমল আছে সুতরাং আমল করা মুস্তাহাব।

হাম্বলী বা আরও কারো কারো মত হলো সনদ যেহেতু দুর্বল তাই এই হাদিসের উপর আমল না করাই ভালো।

আমাদের জন্য সতর্ক অবস্থান তাহলে কোনটা?

“একজন মুমিন বান্দার উচিত, এ রাতে যিকির ও দুআর জন্য পুরোপুরি অবসর হওয়া। প্রথমে খাঁটি মনে তওবা করবে; এরপর মাগফেরাত ও ক্ষমা প্রার্থনা করবে; আপদ-বিপদ দূর হওয়ার জন্য দুআ করবে এবং নফল নামায পড়বে। সবসময় সেসব গুনাহ থেকে বিরত থাকবে যেগুলো ওই রাতের বিশেষ ফযীলত (ব্যাপক ক্ষমা) থেকে মানুষকে বঞ্চিত করে। যেমন শিরক, হত্যা, যিনা, হিংসা ইত্যাদি।”
[পূর্বসূরি আলেমদের বক্তব্যের সারাংশ এটাই]

শবে বরাতে কী নেই বা করা উচিৎ না?

ukrenian-muslims

তৃতীয় একটা হাদিসে জীবনে একবার আল্লাহর রাসূল শবে বরাতের রাতে কবর জিয়ারতে গিয়েছিলেন এমন প্রমাণ পাওয়া যায়। প্রতিবছর যাওয়া বা আয়োজন করে যাওয়ার ব্যাপারে আলেমদের সমর্থন নেই। এর বাইরে আর কিছু নেই এই রাতে। যেমন-

-আলোকসজ্জার কোনো বিষয় নেই
-নামাজের বিশেষ কোনো নিয়ম নেই (রেগুলার নফল নামাজ, ২ রাকাত করে)
-বিশেষ খাবার বা হালুয়া-রুটির বিষয় নেই
-মাহফিল বা সম্মিলিত জিকিরের কথা নেই
-বা আরো যা যা বলা বা করা হয় ইত্যাদি

আমার বিশেষ নোট

আমি শিরক করি না বা আমার মনে কোনো অহঙ্কার নেই এটা মনে করে এই রাতে জাস্ট ঘুমিয়ে থাকা ঠিক না। শিরক বা অহঙ্কার এগুলো মানুষের চিন্তা বা আচরণের সাথে সম্পৃক্ত, বা একপ্রকার চেইন। সুতরাং শবে বরাতের রাতে বাড়তি কিছু আমল করা বা অন্তত দুআ করা যে আল্লাহ পাক আমাকে অহঙ্কার থেকে মুক্ত করো, মুক্ত রাখো এবং ক্ষমা করে দাও; এটা জরুরি। ঐ রকম প্রবাদের মতো যেন না হয়ে যায় যে – ‘তার অহংকার নাই, এই নিয়ে অহংকারের শেষ নাই। ‘

যারা রোজা রাখবো, ২টা রাখার চেষ্টা করি। আইয়ামে বীজের ৩টা যারা রাখছেন ভালো আলহামদুলিল্লাহ।

সবাই বিশেষ এই রাতকে ইবাদত ও মুনাজাতে কাটাবার চেষ্টা করি। গুনাহ ও বিদয়াত থেকে বেঁচে থাকি। সবার জন্য দুআ করি। ক্ষমা করে দিই।

সারা বছর শিরিক ও হিংসা-বিদ্বেষ থেকে বেঁচে থাকার চেষ্টা করি। আল্লাহ পাক আমাদের সবাইকে তাওফিক দিন।

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *