বৈরি হাওয়ার তোড়ে

ইসলামের শ্রমনীতি, কর্পোরেট কালচার, অফিস কালচার, কর্মীর হক, মালিকপক্ষের হক, সহকর্মীর হক, লোক দেখানো কাজ, হিংসা,

Date

Author

Blog Duration

9 minutes

বৈরি হাওয়ার তোড়ে

কী অবস্থা এখন?

আগের চেয়ে খারাপ… বলে ফের মাথা নোয়ালো কবির।

আর কোনো কথা নয়। কয়েক মুহূর্তের ব্যবধানে ডাক্তার আর তার দীর্ঘ নিঃশ্বাসটাই এপাশ-ওপাশ হলো শুধু। কবিরকে নিয়ে ডাক্তারের চেম্বার থেকে বেরিয়ে আসার সময় খেয়াল করলাম, সবাই অবাক চোখে দেখছে আমাদের।অবাক হওয়ারই কথা।

কথা নেই, রোগের বর্ণনা নেই, শুধু দীর্ঘক্ষণ ধরে রোগির এটা-ওটা পরীক্ষা। লাল কলমে প্রেসক্রিপশন রক্তাক্ত করে দিয়ে এরপর ছুটি।

ধীর পায়ে বাইরে বেরিয়ে এলাম। কবিরের কী রোগ- বলে নি সে কাউকে। পরিবারের কাউকে না, আমাকেউ না। ‘প্লিজ দোস্ত, প্রশ্ন করিস না। সময় হলে তোকে সব বলবো’- এই বলে সে আমাকে থামিয়ে দিয়েছিলো দেশে ফেরার প্রথমদিকেই।

আমিও এ নিয়ে আর ওকে ঘাটাঘাটি করি নি। কিন্তু ক’দিন পরই ওর স্বাস্থ্যের ভগ্নপ্রায় অবস্থা দেখে জোর করে ডাক্তারের কাছে নিয়ে এলাম। কী নিয়ে ডাক্তারের সাথে কবিরের কথা হয়, কী ওর রোগ, আমি জানি না। আমাকে বলে না সে, ডাক্তারও না।

হিজরতের গল্প

গল্পটা আব্বু প্রায়ই শোনান। ঢাকা থেকে গাজীপুরে ‘হিজরতের’ গল্প।

sakil blog
নতুন ডাক

আশির দশকের শেষ পর্যায়, ক্ষমতায় তখন জেনারেল এরশাদ। আমরা তখন ঢাকার বাংলাদেশ ব্যাংক কলোনিতে থাকি। ব্যাংক কর্মকর্তা-কর্মচারী ছাড়াও টিচারদের জন্য ওখানে কোয়ার্টার ছিলো।

আগেকার কোয়ার্টারগুলোও যেনো ছিলো একটা অটুট গ্রামের মতোই।

সেখানের কয়েকজন সৌখিন কর্মকর্তা রিটায়ারমেন্টের পরেও যেনো একসাথে থাকতে পারেন- এমন বাসনায় গাজীপুর চৌরাস্তার কাছে বেশ কিছু জায়গা কেনেন। সবাই মিলে। জায়গাটির একটি নামও দিয়ে দেন তারা- মুসলিমনগর। এরপরের সবকিছু তো আমাদের সামনেই ঘটেছে ।

ধীরে ধীরে স্কুল হলো, মসজিদ হলো। পত্তন হলো একটি নতুন আবাসস্থলের, নতুন নগরের।

গ্রামের নির্মল পরিবেশ আর স্কুল মিলে আমাদের শৈশব-কৈশরটা হয়ে ওঠলো রূপকথার গল্পের মতোই। গিন্নিরা বাড়ির চারপাশ গোছাতে ব্যস্ত, বিকেল হলেই কর্তারা চলে আসেন স্কুল মাঠের আড্ডায়।

আর দুরন্ত কৈশরের সেই দিনগুলোতে আমাদের কাজ ছিলো কার গাছে নতুন ফল ধরলো, কার বাগানটা বেশি সুন্দর হলো এইসব নিয়ে মেতে থাকা।

জিরো পয়েন্ট ও আমাদের ক্লাব

কলেজে ভর্তি হয়ে আমরা আরেক ধাপ অগ্রসর হলাম। স্কুলের যে পাশটায় বড়রা আড্ডা দিতেন সে জায়গাটা ততোদিনে জিরো পয়েন্ট হিসেবে খ্যাতি পেয়েছে। সেখানে একটা ক্লাব গড়ে তুললাম। খেলাধূলা, বিভিন্ন অনুষ্ঠান আর স্কুলের বার্ষিক প্রতিযোগিতার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে ওঠলো এ ক্লাব।

ছিলো বেশ সমৃদ্ধ একটা লাইব্রেরিও। তখন এসব নিয়ে বেশ কেটে যেতো দিনগুলো।

আব্বুর মুখে হিজরতের কথা শুনলে সেই দুরন্ত দিনগুলোর কথা খুব মনে পড়ে যায়

এমনই এক দিনের কথা। বাড়ি ফিরতে ফিরতে বিকেল। ঘরে ঢুকে দেখি নতুন আপদ। আব্বু কোত্থেকে এক ছেলে নিয়ে এসেছেন। সাত-আট বছর বয়সী। এতিম। মা-বাবার কোনো খোঁজ নেই। জীবিত না মৃত তাও বলতে পারে না। দু’বছর নাকি খালার কাছে ছিলো। খালুর আচরণ সহ্য করতে না পেরে পথে নেমেছে। আব্বুর সাথে দেখা, নিয়ে এসেছেন।

বাংলাদেশের-রাজনীতি-বৈরি হাওয়ার তোড়ে

তিনি দিলদরিয়া মানুষ। মানুষের দু:খ-কষ্ট তার মোটেও সহ্য হয় না। এটি অবশ্য তার নতুন উপসর্গ নয়, বেশ পুরোনো। একবার বণ্যাপীড়িত এক ছেলেকে নিয়ে এসেছিলেন। তিন দিনের মাথায় সে ছেলে আব্বুর টেপ রেকর্ডার নিয়ে লাপাত্তা। আরেকবার এক কিশোরী মেয়েকে এনেছিলেন। সে বাসার কিছু না নিলেও এক ফেরিওলার সাথে ভেগে গেছে।

কাহিনীর মাঝপথে ‘মানুষ এতো নিষ্ঠুর হয় কী করে’… বলতে বলতে দেখি আম্মুর গলার স্বর খাদে নামছে। তাকে আর বাড়তে না দিয়ে নিজের ঘরে ঢুকলাম। বারান্দা থেকে আব্বুর হাস্যরসের আওয়াজ শোনা গেলো। অবসরের নতুন শ্রোতা পেয়ে তিনি ভীষণ খুশি।

শুভ

আমাদের ঘরে একসাথে খাওয়াটা নিয়ম। রাতে খেতে বসে আব্বু ঘটনাটা ফের শোনাতে লাগলেন। আম্মুর মতোই। বাড়তি হিসেবে যোগ করলেন- ছেলেটা বুদ্ধিমান। একে তিনি রেখে দেবেন। ভালো কথা। আমি হ্যাঁ-না কিছুই বললাম না। খাওয়া শেষ করে রুমে ফিরে এলাম। ঘরে এসে আব্বুর কথা শুনে আমার কান খাড়া হলো।

এই ছেলে নাকি আমার সাথে আমার রুমেই থাকবে। মহা মুশকিল!

আমি অপেক্ষা করছিলাম। ছেলেটা এলো একটু পর। দরজার পাশে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে রইলো। না তাকিয়েই আমি ডাকলাম- এদিকে আয়। কাছে এলো। মাথা তখনো নোয়ানো। পায়ের আঙুল দিয়ে মেঝে খুটছে।

কী নাম তোর?

শুভ।

পুরো নাম?

তোরাব হাসান শুভ। পরের প্রশ্নটা করার সুযোগ পেলাম না। সেই আমাকে জিজ্ঞেস করে বসলো।

মামা, তুমি আমাকে রাখবে না?… কণ্ঠে ওর রাজ্যের আকুতি। সে আকুতি অবাজ্ঞা করার মতো সক্ষমতা আমার মতো আবেগী আদমের নেই। তখনও সে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আর আমি ভাবছি-

প্রভাবিত করার এই টেকনিকটা পিচ্চি শিখলো কোত্থেকে? অসহায়ত্বই বুঝি মানুষকে সাহসী করে তোলে!

থাকবি, থাকবি। কোনো অসুবিধে নেই বলে আমি ওকে আশ্বস্ত করি।

কিছুটা সাহস পেয়ে এবার সে আমাকে প্রশ্ন করা শুরু করলো। নানা কিসিমের প্রশ্ন। আমি মাস্টার মশাই হয়ে উত্তর দিতে লাগলাম। যা আশঙ্কা করছিলাম তা সত্য নয়।

এ ছেলের কথাবার্তা আর দশটা পথশিশুদের মত নয় । আদব-লেহাজেও বেশ ঘরোয়া। তবু আরেকটু পরীক্ষা করার জন্য শোয়ার সময় ওকে বললাম নিচে বিছানা করতে।

পথশিশু
পথশিশু

শুভ প্রথমে অবাকই হলো। এতোক্ষণ খাতির করার পর তাকে আমি মেঝেতে শুতে বলবো- এ কথা সে ভাবতে পারেনি। কিছু না বলে দ্রুত শুয়ে পড়লো। কৌতূহল হোক আর এই প্রথম ঘরে একটা কর্তৃত্ব ফলাতে পারার উত্তেজনায় হোক- ভেতরে বেশ সুখ অনুভব করলাম। ঘুমও এলো দ্রুত।

মাঝরাতে কান্নার আওয়াজে ঘুম ভেঙে গেলো। বাতি জ্বেলে শুভকে দেখে নিজের ওপর রাগ হলো বেশ। মশার কামড়ে ওর শরীর গোটা গোটা হয়ে গেছে। দাঁড়িয়ে কাঁদছে আর শরীর চুলকাচ্ছে। রাতের আচরণের পর এখন আর আমার খাটের কাছে আসার সাহস পাচ্ছে না। হাত বাড়িয়ে খাটে মশারির ভেতর নিয়ে এলাম। কোনো অনুযোগ না করে ও শুয়ে পড়লো।

নিজের গালে নিজেরই একটা থাপ্পড় দিতে ইচ্ছে হলো আমার। এইটুকুন ছেলেকে এভাবে কষ্ট দিলাম! ছেলেটা কি এখনো কাঁদছে? শুভর পিঠে হাত রাখলাম। অনিয়মিত হলেও একটু পরপর কান্নায় ফুলে ওঠছে পিঠটা।

আমার নিজের চোখেও পানি চলে এলো। আলতো করে ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিলাম। এই ¯েœহটুকু ওর পাওনা ছিলো। এর জন্যই হয়তো বেশ লালায়িত ছিলো ওর শিশুমন। আমার হাতের স্পর্শেই কিনা হঠাতই যেনো কান্নাটা থেমে গেলো। ঘুমিয়েও গেলো সাথে সাথেই। …

এভাবেই শুভ আস্তে আস্তে আমাদের একজন হয়ে উঠলো। বেড়ে ওঠতে লাগলো আমাদের পরিবারের একজন হয়ে।

আমার বন্ধু কবির

নাশতা সেরে পেপার নিয়ে বসেছি। শুভ এসে জানালো, আব্বু ডাকছে। একটু দম নিয়ে বললো, কবিরের আব্বু বসে আছে। আমার ভেতরটা মোচর দিয়ে ওঠলো কেনো যেনো। কবিরের কিছু হয় নি তো?

আব্বুর ঘরে গেলাম। কবিরের আব্বু উদ্বিগ্ন হয়ে বসে আছেন। আমাকে দেখে দৌড়ে এলেন-‘কবিরের অবস্থা তো ভালো না, সকাল থেকে জ্ঞান নেই।’ যা বোঝার বুঝে ফেললাম আমি। তখনই রওয়ানা দিলাম ওদের বাড়ির উদ্দেশ্যে।

পুরো বাড়িটাই কেমন স্তব্ধ হয়ে আছে। আমি ওর মাথার কাছে বসলাম। না, কবির নেই। আমাদের ছেড়ে চলে গেছে বহুদূরে। রেখে গেছে কেবল প্রাণহীন রোগজীর্ণ দেহটা। চেহারাটা শুষ্ক, কালো; চোখ দুটো কোটরে দেবে আছে।

অজানা রোগটা ওর রস-রক্ত সব শুষে নিয়েছে। কবির, আমার বন্ধু কবির। আমার শৈশব-কৈশরের শ্রেষ্ঠ বন্ধু কবির! আমি কবিরের দিকে নিষ্পলক তাকিয়ে রইলাম আর মনের পর্দায় এক এক করে ভেসে উঠতে থাকলো মুসলিমনগরের বদলে যাওয়া এবং উত্থান-পতনের দৃশ্যাবলি।

বদলে যাওয়া মুসলিমনগর

মুসলিসনগর ততোদিনে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। ঢাকায় চাপ বাড়ায় সচেতন আর প্রকৃতিবিলাসী মানুষ আশপাশে ছড়াতে শুরু করেছে। মুসলিম নগরেও গড়ে উঠতে থাকলো নতুন নতুন বসত-বাড়ি।

এলাকার অধিকাংশ তরুণ তখন উচ্চশিক্ষা বা কাজ নিয়ে বাইরে চলে গেলো। চাকরি শেষ করে বুড়োরা এলাকায় থিতু হলেন। হঠাৎ এই ভারসাম্যহীনতায় ফিকে হয়ে আসতে লাগলো মুসলিমনগরের ঐতিহ্য। এই পরিবর্তন দ্রুতই বিপর্যয়ে রূপ নিলো যখন পাশেই গড়ে ওঠলো বেশ ক’টি গামেন্টস ফ্যাক্টরি।

সারাদেশ থেকে তরুণ-তরুণীরা এসে আশ্রয় নিতে লাগলো মুসলিমনগর ও এর আশপাশের এলাকাগুলোতে। ফল যা হবার তা-ই হলো। নৈতিক অবক্ষয় ও অবৈধ সম্পর্ক বেড়ে যেতে লাগলো। একপর্যায়ে শুরু হলো দেহব্যবসা। এলাকার বেকার যুবকরা হয়ে উঠলো কর্তৃত্ব পরায়ণ ।

এবং এই কর্তৃত্বের হাত ধরে অবধারিতভাবে এলো, শিকড় গাড়লো রাজনীতির নখর থাবা।

এই সময় অনার্স করতে আমি চলে এসেছিলাম রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে। আমাদের তরুণদের বড় গ্রুপটা এলাকার বাইরে চলে আসার সময় কবিরকে ক্লাব সভাপতি বানিয়ে এসেছিলাম। বেশ ভালোই চালাচ্ছিলো কবির। কিন্তু বেকারত্বের হতাশা থেকে কবির একসময় রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়ে। নতুন ছেলেদের পাশাপাশি তখন বাইরের এলাকার বখাটে ছেলেরাও ক্লাবে আসার সুযোগ পায় । এতেই বদলে যায় ক্লাবের চেহারা।

গার্মেন্টস, রাজনীতি, কর্তৃত্ব পরায়ণতা সবমিলে এলাকার পরিবেশ পুরোই পাল্টে যায়। শান্ত মুসলিমনগর হয়ে ওঠে বখাটেদের আখড়া। আর কবির এসবের অঘোষিত লিডার। বেশকিছু অঘটন ঘটিয়ে কবির ততোদিনে পুলিশের বিশেষ লিস্টেও নাম লিখিয়ে ফেলে। তবে রাজনৈতিক ছত্রছায়া থাকায় কিছুই হয় না ওর।

আমরা বাড়ি এলেও তার পাত্তা পাওয়া যেতো না। আমরাও ওর অধঃপাতের কারণে ওকে বেশি ঘাটাতাম না। কিছুদিন পর রাজনীতির পট পরিবর্তিত হওয়ার প্রেক্ষাপটে কবির বিদেশে গা ঢাকা দেয়। সেই কবির দুবছর পর দেশে ফিরলো। সাথে নিয়ে এলো অজ্ঞাত এক রোগ। আজ তার মৃত্যুদিন।

আমাকে লেখা একটি চিঠি উদ্ধার হলো কবিরের ডায়েরি থেকে। সে লিখেছে-

‘সাবের, কখনো অস্বীকার করিনি আমার কিছু হয়ে উঠতে পারাাটা তোর কারণেই। শুরুতে যেমন ছিলি জীবনের শেষ কটা দিন গাইড করেও তুই আমাকে চিরঋণী করে রাখলি। ভীষণ অভিমান হয়, মাঝখানের বিব্রত সময়টাতে কেনো আমাকে দূরে ঠেলে দিলি?

তুই পাশে থাকলে এ মুহূর্তে আমার জীবনটাও তো অন্যরকম হতে পারতো। আমার অসুখটার কথা জানার অধিকার পৃথিবীর কারো যদি থেকে থাকে তা তোরই আছে। কিন্তু আমি তোকে পরাজিত দেখতে চাইনি। আমার পরাজয় তো তোরও পরাজয়। রাজনীতিই একদিন আমাকে তোর থেকে দূরে সরিয়ে দিয়েছিলো।

সরে যাওয়ারই কথা। রাজনীতির ছত্রছায়ায় আমি যে তখন কর্তৃত্ব ও নারীতে মত্ত হয়ে ওঠেছি। শত চেষ্টা করেও আমি এর থেকে সরে আসতে পারলাম না। পরিণতিতে যা হবার তাই হলো। মরণব্যাধি জেঁকে ধরলো আমাকে। মৃত্যুই যার একমাত্র গন্তব্য। সব আশা ক্ষুইয়ে ফিরে এলাম দেশে। শেষ ক’টা দিন মুসলিমনগরে কাটিয়ে যেতে। মেতে উঠতে সেই শৈশবের স্কুলমাঠে।… তোর কাছে একটাই আকুতি আমার, যদি পারিস ক্লাবটাকে বাঁচিয়ে তুলিস।’

তোর কাছে একটাই আকুতি আমার, যদি পারিস ক্লাবটাকে বাঁচিয়ে তুলিস।

কবিরের অকাল মৃত্যু পুরো মুসলিমনগরকে নাড়িয়ে দিয়েছিলো। ওর কথা রাখতে আবারো আমরা ক্লাবটাকে বাঁচিয়ে তুলেছিলাম। ফের সরগরম হয়ে উঠেছিলো জিরো পয়েন্ট। বার্ষিক প্রতিযোগিতা, অনুষ্ঠান-উৎসবের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছিলো কবিরের ক্লাব। শুভ ততোদিনে দুরন্ত এক তারুণ্যে পা দিয়েছে। ক্লাবের সবকিছু সেই সামাল দিতো।

যদিও আশপাশের ক্যাডাররা প্রায়ই অপচেষ্টা চালাতো ক্লাবটাকে দখলে নেয়ার। কিন্তু শুভর মারমুখি অবস্থানের কারণে সুবিধে করতে পারতো না কখনোই। মাস্টার্স শেষ করে পিএইচডি করার জন্য আমি জার্মানিতে চলে আসি। ক্লাবের পুরো দায়িত্ব দিয়ে আসি ওর হাতে।

কে জানতো, এই দায়িত্ব একদিন ওরও শেষ পরিণতি ডেকে আনবে?

বৈরি হাওয়ার তোড়ে

পাঁচ বছর পর।

জার্মানির রাজধানী বার্লিনের এক ব্যস্ত সড়কের পাশে বসে আছি। একটু পরেই ভার্সিটিতে যাবো। কোর্সের শেষ থিসিসগুলো জমা দিতে। এসময় হঠাৎ মোবাইল ফোনটা বেজে উঠলো। দেশ থেকে আব্বু ফোন করেছে। বাংলাদেশে এখনো শেষ রাত। আব্বু এতো ভোরে ফোন দিলো?

অজানা শঙ্কায় বুকটা কেমন করে ওঠলো আমার। ফোন রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে শুনতে পেলাম আব্বুর ফোঁপানোর শব্দ। তার কান্নামাখা কন্ঠে এরপর যা শুনলাম, মনে হলো- ভেতরটা হঠাৎই কেউ শূন্য করে দিয়ে গেছে। একদম শূন্য।

গতকাল বিকেল থেকে শুভকে পাওয়া যাচ্ছিলো না কোথাও। অনেক খোঁজাখুজির পর রাতে মুসলিমনগরের পাশেই এক ঝিলে পাওয়া গেছে শুভর লাশ! বুকে ও মাথায় গুলিবিদ্ধ অবস্থায়।

মনে পড়লো কবিরের কথা। কবিরের ডায়েরির সেই কথাগুলো। নিজেকে বড় বেশি অপরাধী মনে হলো আমার। আরো একবার। সেই একই রাজনীতি আবারো ছোবল হেনেছে। কেড়ে নিয়েছে আমার ভাই শুভর প্রাণ।

শান্ত মুসলিমনগরে ছড়িয়ে পড়েছে অশুভ রাজনীতির বিষবাষ্প। কারো আর মুক্তি নেই।বৈরি হাওয়ার তোড়ে টেকা যে বড় দায়!


Bangla Story by Sakil Adnan. August, 2011. [বাংলা গল্প- শাকিল আদনান]

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *